বিমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ‘অত্যন্ত বিরল’: ডা. তেরেসা তাম

ডিসেম্বর 3, 2020

হিউস্টনে একজন যাত্রী মাস্ক পরে বিমানে আরোহন করছেন। ছবি : ডেভিডজে. ফিলিপ/দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১০ নভেম্বর ২০২০: কানাডার মুখ্য জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা আজ বলেছেন, বিমানে ভ্রমণ করা কোনও যাত্রীর কোভিড-১৯-এ সংক্রমণের ঘটনা যদি থেকেও থাকে তবে তেমন দৃষ্টান্ত খুবই কম।

কোভিড-১৯ সম্পর্কে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ডা. তেরেসা তাম বলেন, কানাডার জনস্বাস্থ্য সংস্থা এমন খবর সম্পর্কে সচেতন যে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত কিছু লোক বিমানযোগে কানাডায় ঢুকেছে, কিন্তু ওই একই ফ্লাইটে ভ্রমণকারী অন্যদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটেছে এমন প্রামাণ্য ঘটনা খুবই সামান্য। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন জন পল তাস্কার।

তাম বলেন, “প্রকৃতপক্ষে, বিমানে চড়ার পরই সংক্রমিত হয়েছে এমন রিপোর্ট অতি অল্প, একেবারেই বিরল। খুব, খুবই সামান্য।”

আসলে, তাম বলেন, বিমান থেকে সংক্রমণের বিষয়ে প্রাদেশিক জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও রিপোর্ট করা হয়েছে এমনটা তার জানা নেই। তিনি বলেন, “সেরকম কোনও রিপোর্ট আমরা পাইনি।” তিনি আরও বলেন, সেরকম কোনও রিপোর্ট পেলে তার সংস্থার কর্মকর্তাদের সেটা তাকে জানানোর কথা।

হিউস্টনে একজন যাত্রী মাস্ক পরে বিমানে আরোহন করছেন। ছবি : ডেভিডজে. ফিলিপ/দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

তাম বলেন, বিমানের ফ্লাইট থেকে সংক্রমণের ঘটনা নগণ্য হবার কারণ এই মহামারি শুরুর সময় থেকেই এয়ারলাইনগুলোর বিমানে কঠোর পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম হাতে নেওয়া।

উদাহরণ স্বরূপ, দেশের বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার কানাডা তাদের ফ্লাইটে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ২০ থেকে ৩০ বার কেবিনের বাতাসকে উচ্চ মানের উপাদানসমৃদ্ধ (HEPA) ফিল্টারের ভেতর দিয়ে সঞ্চালন করে। এর ফল হলো, ফিল্টার করা বাতাস এবং বাইরে থেকে আসা বিশুদ্ধ বাতাসের মিশ্রণ তৈরি হয়।

এসব ফিল্টার হাসপাতালের অপরেশন রুমে ব্যবহৃত ফিল্টারের অনুরূপ এবং এয়ার কানাডার তথ্য অনুযায়ী, এগুলি ধূলিকণা, পরাগ রেণু ও আর্দ্রতার পাশাপাশি একেবারে ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়ার মত অতিক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক কণা আহরণ করার মত অত্যন্ত কার্যকর।

ওয়েস্ট জেটও একই ফিল্টার ব্যবহার করে এবং তারা “বাতাসে ভাসমান সব অণু বা কণার ৯৯.৯৯ শতাংশই আহরণ ও ফিল্টার করে যাতে যাত্রীরা আরও সহজে শ্বাস নিতে পারেন।”

ডা. তাম অবশ্য এটাও উল্লেখ করেন যে, ফ্লাইটের ভেতরের অভিজ্ঞতা হলো বিমানে ভ্রমণের মাত্র একটি দিক। যাত্রীরা বিমানবন্দরে যাওয়া-আসা কিংবা কোনও বিমান বন্দরের লাউঞ্জে অপেক্ষার সময়ও কোভিড-১৯ এর সংস্পর্শে আসতে পারেন।

তিনি বলেন, সমাজে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনতে কানাডা এই মুহূর্তে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ১৪দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা অনুসরণ করবে।

ভ্রমণের ওপর সরকার আরোপিত বিধি নিষেধ এবং কোয়ারেন্টিনের কারণে এয়ারলাইন শিল্প তছনছ হয়ে গেছে; কেবল এয়ার কানাডা একাই কোটি কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানায়।

তাম বলেন, সরকার কানাডার জনস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে আলবার্টায় একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে যার আওতায় বিদেশ ফেরত যাত্রীদের দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনের পরিবর্তে বেশ কতগুলি পরীক্ষা করা হবে। অন্টারিওর মুখ্যমন্ত্রী ড্যাগ ফোর্ড বলেছেন, তিনিও দেশের এই বৃহত্তম প্রদেশে অনুরূপ একটি কর্মসূচি চালুর পক্ষে।

শপিংয়ের চেয়ে নিরাপদ?

তামের এসব মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা গেছে, বিমানে ভ্রমণের কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা একেবারেই সামান্য।

গত মাসে প্রকাশিত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ, যেমন মুদির দোকানে শপিংয়ে যাওয়ার চেয়ে বিমান ভ্রমণ বেশি নিরাপদ।

ওই ইউনিভার্সিটির টি এইচ চ্যান জনস্বাস্থ্য স্কুলের গবেষকদের সমীক্ষায় দেখা যায়, বিমানের ভেতর ফিল্টার করা বাতাস যদিও কেবিনের ভেতরেই পুনরায় সঞ্চালিত হয় তবু বেশিরভাগ এয়ারলাইন যে উচ্চ মানের ফিল্টার ব্যবহার করে তাতে একজন যাত্রীর কাছ থেকে ভাইরাসযুক্ত বিন্দু (droplets) আরেকজনের কাছে যাবার সম্ভাবনা কম।

সমীক্ষায় বলা হয়, মহামারির সময়ে বিমানে ভেন্টিলেশনসহ কয়েক স্তরের ব্যবস্থা প্রতিদিনের নিয়মিত কর্মকাণ্ড যেমন গ্রোসারি শপে কেনাকাটা এবং বাইরে খেতে যাওয়ার চেয়েও সার্স-করোনাভাইরাস-২তে সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

অবশ্য ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা এককভাবে যথেষ্ট নয়। হার্ভার্ডের গবেষকরা বলেন, মাস্ক, কেবিনের বেতরটা বারবার পরিস্কার করা এবং লক্ষণযুক্ত যাত্রীদের শণাক্তকরণের জোরালো ব্যবস্থা ইত্যাদিও বিমানযাত্রীদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

প্রকৃতপক্ষে, সমীক্ষায় এই বলে উপসংহার টানা হয় যে, “মুখে মাস্ক পরাই হলো বিমান ভ্রমণকালে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হ্রাসের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে অবশ্যকীয় অংশ।”

এই সমীক্ষার অর্থ স্পন্সর করেছে আমেরিকার বিমান সংস্থাগুলোর পক্ষে লবি করা একটি প্রতিষ্ঠান এয়ারলাইন্স ফর আমেরিকা। তবে হার্ভার্ডের গবেষকরা বলেন, তাদের সমীক্ষার ফলাফল ও সুপারিশমালা আসলে “স্বাধীন উপসংহার।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের করা আরেকটি সমীক্ষায়ও দেখা গেছে, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা এবং মাস্ক পরার ব্যাপারে কঠোরতর নীতির কারণেই বিমানে সংক্রমণের ঘটনা বিরল।

ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স-এর একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের উড়ালকালে এর ভেতরের বায়ুপ্রবাহ নিয়ে সিমুলেশন ব্যবস্থায় করা এক সমীক্ষায় সেনাবাহিনীর গবেষকরা দেখতে পান, দ্রুত বায়ু সঞ্চালন, নিম্নমুখি বায়ুর ভেন্টিলেশন এবং বিমানের ফিল্টার ব্যবস্থার কারণে প্রথম ছয় মিনিটের মধ্যেই কেবিনের ভেতরের বাতাসের প্রায় ৯৯.৯৯ শতাংশ কণা ফিল্টার হয়ে যায়।

এতে হিসাব করে দেখা হয়েছে যে, বিমানের ভেতর একজন যাত্রী যদি একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ৫৪ ঘণ্টা ভ্রমণ করেন তাহলেই কেবল তিনি সংক্রমিত হতে পারেন।

৩৮ ঘণ্টার উড়াল এবং ৪৫ ঘণ্টার গ্রাউন্ড টেস্টসহ এই গবেষণাটি করা হয় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এবং এতে ৩০০ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাগুলি করা হয়, পুরো কেবিনের প্রতিটি সেকশনে নোভেল করোনাভাইরাসের সমান আকৃতির কণা ছড়িয়ে দিয়ে। আর প্রতিটি সেকশনে ৪২ জন যাত্রীর জায়গায় ছিলো ৪২টি সেন্সর।