মন্ট্রিয়লে হিজাব খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়া বিচারক ক্ষমা চাইলেন পাঁচ বছর পর
অক্টোবর 8, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০: শুধু হিজাব পরার কারণে মন্ট্রিলের এক নারীর মামলা শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন কুইবেকের একটি আদালতের এক বিচারক। ঘটনার পাঁচ বছর পর অবশেষে সেই বিচারক ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন স্টিভ রুকাভিনা।
গত মঙ্গলবার কুইবেকের ম্যাজিস্ট্রেট কাউন্সিলের (Council of the Magistrature) অনলাইন শুনানীতে কাউন্সিলের একজন আইনজীবী ঘটনার শিকার রানিয়া এল-আলোউলকে সেই বিচারক এলিয়ানা মারেঙ্গোর ক্ষমা প্রার্থনা করে দেয়া বক্তব্য পড়ে শোনান। এই ম্যাজিস্ট্রেট কাউন্সিল হলো কুইবেক প্রদেশে বিচারকদের কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠুতা দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থা।
বিবৃতিতে মারেঙ্গো বলেন, তিনি স্বীকার করছেন যে, এল-আলোউলকে হিজাব খুলতে বলে তিনি ভুল করেছিলেন। এজন্যে এল-আলোউলকে যে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে সেজন্যে তিনি দুঃখিত। তবে এল-আলোউলকে আঘাত করার বা তার প্রতি কোনও রকম অশ্রদ্ধা থেকে মারেঙ্গো এটা করেননি বলে জানান।
মারেঙ্গো ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ওই সময় তিনি এল-আলোউলের হিজাবকে মাথায় টুপি পরা এবং সানগ্লাস পরার মত ব্যাপার বলেই ধরে নিয়েছিলেন।
মারেঙ্গো তার বিবৃতিতে বলেন, “আমি হ্যাট ও সানগ্লাস পরার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম নিছক আদালতের শোভনতার বিষয়টি বিবেচনায় যেটা সাধারণভাবে আদালতকক্ষে অনুসরণ করা হয়। আমি কোনওভাবেই আপনার প্রতি বা আপনার বিশ্বাসের প্রতি অশ্রদ্ধা থেকে এটা করিনি।”
এল-আলোউলের কাছে সর্বান্তকরণে ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের বিবৃতি শেষ করেন মারেঙ্গো।
মারেঙ্গোর বিবৃতির জবাবে এল-আলোউলও এক বিবৃতি দেন এবং তাতে তিনি মারেঙ্গোর ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি মেনে নেন।
এল-আলোউল বলেন, “আদালত কক্ষের সেই দিনটির কথা আমার মনে এখনও এতটাই তীব্র যেন সেটি গতকালের ঘটনা। আমি কল্পনাও করতে পারছিলাম না যে, কেবল আমার হিজাবের জন্য আমাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হবে, আমার বিশ্বাসের কারণে আমার অধিকার কেড়ে নেয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সেদিন তিনি আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছেন এবং তার কাজের জন্য কেন তাকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে আশা করি মারেঙ্গো সেটি বুঝবেন। এমন নয় যে, আমাদের বিচার ব্যবস্থা কিছু মানুষের জন্য তৈরি এবং অন্যদের জন্য নয়। না, এখানে গণতন্ত্র আছে যেখানে আইনের চোখে সবাই সমান।”
“আমি তার ক্ষমা প্রার্থনা মেনে নিচ্ছি। আমার বিশ্বাস আমাকে সেই শিক্ষাই দিয়েছে।”
‘পোশাক যথাযথ ছিলো না’
বিতর্কের সূচনা ঘটে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন এল-আলোউল তার বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি ফিরে পাবার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন।
মারেঙ্গো তখন এল-আলোউলকে বলেছিলেন, “আমার বিবেচনায় আপনার পোশাক যথাযথ নয়।” বিচারক মারেঙ্গো বলেন, আদালত হলো একটি ধর্মনিরপেক্ষ জায়গা। তাই আদালতের সামনে কেউ ধর্মীয় প্রতীক পরতে পারেন না।
মারেঙ্গো মামলাটি স্থগিত রাখেন। আর শেষ পর্যন্ত এল-আলোউল তার গাড়ি ফিরে পান। কিন্তু ঘটনাটি সারা বিশ্বে সংবাদ শিরোনাম হয়।
এল-আলোউলসহ অসংখ্য মানুষ এ নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট কাউন্সিলের কাছে নালিশ জানায়।
টেকনিক্যাল একটি কারণে এল-আলোউলের অভিযোগ কাউন্সিলে খারিজ হয়ে যায়। তবে কাউন্সিল অন্য সবার অভিযোগ অনুযায়ী বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজি হয়।
এদিকে মারেঙ্গো এই বিষয়টি খতিযে দেখার এখতিয়ার আছে কিনা সেই প্রশ্নে খোদ ম্যাজিস্ট্রেট কাউন্সিলকেই চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি কুইবেকের আপিল বিভাগে আপিল করেন। সেই আপিলের রায়ে আদালত সর্বসম্মতভাবে বলেন, নিজের আদালতকক্ষে এল-আলোউলকে ঢুকতে না দিয়ে মারেঙ্গো ভুল করেছিলেন।
তবে এর আগে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট কাউন্সিলের বিরুদ্ধে মারেঙ্গোর চ্যালেঞ্জ প্রত্যাখ্যান করেন।