করোনাকালে কিভাবে নিরাপদে খাদ্যপণ্য সরবরাহ ও সংগ্রহ করবেন

জুন ১৬, ২০২০

কানাডায় খাবার থেকে কোবিড-১৯-এর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কোনও ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ছবি: সাটারস্টক

সাদাফ আহসান : কানাডায় খাবার থেকে কোবিড-১৯-এর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কোনও ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আর আমরা জানি, খাবারের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তারের আশঙ্কা খুবই কম। এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। কিন্তু তার পরও মহামারিকালের আগে ঘটেছিলো এমন কোনও পারস্পরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ বোধ করতেই পারেন। মহামারির সময় খাবার সংগ্রহের সবচেয়ে ভালো উপায় কোনটি সে বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্য ও খাদ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি।

খাদ্যের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে কি?

এক কথায় জবাব হলো, না। রান্না করা খাবার নিরাপদ হবার সম্ভাবনাই বেশি। আর খাবারটা যখন রান্নাঘর থেকে সরাসরি সরবরাহের পাত্রে ঢেলে দেয়া হয় তখন সেই আশঙ্কা আরও কমে যায়।

কানাডায় খাবার থেকে কোবিড-১৯-এর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কোনও ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ছবি: সাটারস্টক

এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক জবাব তুলে দিচ্ছি:

ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির কৃষি ও পরিবেশ বিষয়ক সহকারী অধ্যাপিকা জেনিফার রনহম ব্যাখ্যা করে বলেন, “সচরাচর খাবারের মাধ্যমে ছড়ায় এমন বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের চেয়ে এই ভাইরাসটি একেবারেই ভিন্ন।” তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ হলো একটি আচ্ছাদিত (বহাবষড়ঢ়বফ ারৎঁং) ভাইরাস। এর অর্থ হলো, এটি ফসফোলিপিড, প্রোটিন এবং গ্লাইকোপ্রোটিন নামের ঝিল্লি (সবসনৎধহব) দিয়ে ঢাকা। ঝিল্লিগুলো ভাইরাসটির অস্তিত্বের জন্য খুবই জরুরী। ঝিল্লিগুলোর বেশিরভাগ অক্ষত না থাকলে এ ভাইরাস আপনাকে সংক্রমিত করতে পারবে না।

তিনি আরও জানান, “তাছাড়া এই ঝিল্লিগুলো পানিশূন্যতা, তাপ, পাচক রস, পিএইচ ও সাবানের মত বিভিন্ন উপাদানের কাছে খুবই সংবেদনশীল। তার মানে হলো, আবরণহীন ভাইরাস, যেমন নরোভাইরাস-এর তুলনায় এই ভাইরাসটি ওইসব উপাদানের সংস্পর্শে এলে দ্রুত মরে যায়। নরোভাইরাস খাবারকে বাহক হিসাবে ব্যবহার করে খুব সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

কিভাবে নিরাপদ সরবরাহ ও সংগ্রহ নিশ্চিত করবেন

যখন সরবরাহের প্রশ্ন আসে, তখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন সরবরাহকারী লোকটি। তাকে রেস্টুরেন্ট ও গ্রাহক উভয়ের সংস্পর্শে আসতে হয়। কোভিড-১৯ ছড়ায় মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরুনো তরলের মাধ্যমে, তার মানে, খাবার সরবরাহের সময় হাঁচি, কাশি বা নিঃশ্বাসের সংস্পর্শে এলে- কিন্তু খাবারের প্যাকেট থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা তখনও কমই থাকে।

এমতাবস্থায়, সম্ভব হলে আপনি সংস্পর্শ এড়িয়ে খাবারের দাম পরিশোধ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি ইলেক্ট্রোনিক মেশিনে দাম পরিশোধ করতে কিংবা টাকাটা খামে ভরে দরজার বাইরে রেখে দিতে পারেন। এতে করে সরবরাহকারীর সঙ্গে আপনার শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকবে। খাবার নেয়ার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন।

যে লোকটি খাবার সরবরাহ করেছে তাকে কোভিড সংক্রমিত ধরে নেয়াই ভালো। তখন আপনি প্যাকেটটির বাইরের আবরণে ভাইরাস আছে ধরে নিয়ে সেটি জীবাণুমুক্ত করে নেবেন।

খাবারের প্যাকেট পাবার পর সেটি থেকে খাবারের বাক্সটা বের করে নিন এবং মোড়ক বা থলে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিন। খাবারের বাক্স খুলে নিজের হাত ধুয়ে নিন, তারপর খাবার প্লেটে ঢেলে বাক্সটাও ফেলে দিন। আবারও হাত ধুয়ে নিন এবং খাবার খান। আপনি যদি রান্না না করা খাবার যেমন, শবজি বা ফলমূল খেতে চান তাহলে সেগুলো খুব ভালো করে ধুয়ে বা পানি দিয়ে মুছে নিন।

আপনি যখন কারও কাছ থেকে কিছু সংগ্রহ করবেন তখন সরবরাহকারীর কাছ থেকে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি অসুস্থ হন তাহলে বাইরে যাবেন না বা অসুস্থ কারও সঙ্গে এক ঘরে বসবাস করবেন না।

বাইরে থেকে সংগ্রহ করা খাবার গরম করা বা ফ্রিজে রাখা কি নিরাপদ?

বেঁচে যাওয়া খাবার পরে গরম করে নেয়া বা ফ্রিজে রেখে দেয়ায় কোনও অসুবিধা নেই।

টরন্টো ইউনিভার্সিটির নিউক্লিয়ার জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উইলিয়াম নেভেরি বলেন, “করোনাভাইরাস হলো একটি ভাইরাস, এটি ব্যাকটিরিয়া নয়। সেজন্যে এটি মানুষের দেহের বাইরে বেড়ে উঠতে পারে না।” তিনি বলেন, “আমি যদি এক টুকরো খাবারের ওপর এক হাজারটি ভাইরাস রেখে চলে যাই আর একদিন পরে ফিরে আসি তাহলেও ওই এক হাজার ভাইরাসই থাকবে। কিন্তু যদি খাবারের ওপর এক হাজার  ব্যাকটিরিয়া, (যেমন, সালমোনেলা বা লিস্টেরিয়া ইত্যাদি)  রেখে দিয়ে পরের দিন আসতাম তাহলে দেখা যেতো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাই খাবার ফ্রিজে রাখা ভালো কাজ হলেও কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে এটি প্রাসঙ্গিক নয়। বরং, ফ্রিজে রাখা হলে ভাইরাসগুলো ঘরের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি সময় ধরে সতেজ ও সক্রিয় থাকবে।”

খাবারটা সংক্রমিত বলে সন্দেহ থাকলে ওটা বাইরে ফেলে দিন।

সরবরাহকারীদের ব্যাপারে সতর্কতা

২৩ মে টরন্টোর বেলউডস পার্কে হাজারও মানুষ পরস্পরের খুব কাছাকাছি সমবেত হলে ব্লুরডেল-এর সিউল শেকার্স রেস্তোরাঁ ঘোষণা করে যে, ঝুঁকির কারণে তারা আর পার্কে খাবার সরবরাহ করবে না। কেবল সরবরাহকারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই নয় বরং যারা পার্কে সমবেত হয়েছিলেন তাদের কথা ভেবেও এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো।

চীনের উহানে যেখানে কোবিড-১৯ সংক্রমণ কয়েক মাস ধরে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়, সেখানে অনেক ডেলিভারি ভ্যানের চালক নিরাপদ পোশাক পরিধান করে। তারা আপাদমস্তক ঢেকে রাখার মত স্যুট, গ্লোভ, গগল্স এবং মাস্ক পরা ছাড়াও কোম্পানির পক্ষ থেকে দেয়া স্যানিটাইজার ব্যবহার করে। প্রতিদিন দুবার করে তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়।

কানাডাতেও রেস্তোরাঁ ও ডেলিভারি সার্ভিসগুলো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে তা চীনের তুলনায় একটু কম মাত্রার। দূরদেশ তাদের অনলাইনের গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ নিয়ে যাওয়া ডেলিভারি ভ্যানের চালকদেরকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গ্লোভস সরবরাহ করছে। অন্যদিকে উবার ইট্স (Uber Eats) “ডেলিভারি নিয়ে যাওয়া লোকদেরকে স্যানিটাইজার দেয়ার জন্য কাজ করছে।”

সরবরাহ দেয়া লোকেদের ঝুঁকি কেবল রেস্তোরাঁর ওপর নয় বরং গ্রাহকের ওপরও নির্ভর করে। অর্ডার দিয়ে খাবার আনানোর মাধ্যমে আপনি সরবরাহকারীর ওপর কতটা ঝুঁকির সৃষ্টি করছেন তার মূল্যায়ন করা উচিৎ। আপনি কোথায় অবস্থান করছেন? আপনি কি নিজে অসুস্থ, অথবা এমন কারও সঙ্গে বাস করছেন যিনি অসুস্থ? আপনি কি শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছেন? উভয় পক্ষের ঝুঁকি বিবেচনার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। (বিষয়গুলি অন্যদের জানাতে ভুলবেন না।)

-সৌজন্যে : নাউটরন্টো.কম