কভিড-১৯ এর প্রভাবে কানাডায় অর্ধেক মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি

সমীক্ষায় জানা যায়, ৪৪% মানুষ উদ্বিগ্ন, ৩৪% কৃতজ্ঞ এবং ৩০% নেহায়েতই বিরক্ত

জুন ১৬, ২০২০

চাকরি হারানোর ঘটনা বেড়ে যাওয়া এবং স্বেচ্ছা বিচ্ছিন্নতা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে কানাডার অর্ধেক মানুষই বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। আর ১০ শতাংশ বলেছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের “যথেষ্ট” অবনতি হয়েছে। নতুন এক সমীক্ষায় এসব তথ্য জানা গেছে।

গত কয়েক সপ্তাহের জীবন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বলা হলে সমীক্ষায় অংশ নেয়া কানাডীয়দের ২০ শতাংশেরও কম মানুষ আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। আর ১৬ শতাংশ নিজেদেরকে বিষন্নতায় আক্রান্ত বলে জানান। অ্যাঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউটের অনলাইনে করা সমীক্ষার রিপোর্ট সোমবার প্রকাশ করা হয়। তাতে ওইসব তথ্য দেয়া হয়েছে। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন ক্রিস আর্সেনল্ট।

১১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা কোনরকম সমস্যা অনুভব করছেন না। ১৪ শতাংশ পুরো স্বাভাবিক আছেন বলে মনে করছেন এবং নয় শতাংশ মানুষ এমন বোধ করছেন যেন তারা অসাড় হয়ে পড়েছেন। ছয় শতাংশ কানাডীয় নিজেকে সুখি অনুভব করছেন। গত ১৫ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালানো হয়।

সমীক্ষায় বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে বলে জানালেও তিন-চতুর্থাংশ কানাডীয় মনে করেন, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও জনসমাগমস্থলের ওপর বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার সময় এখনও আসেনি।

কানাডার অর্ধেক মানুষই বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। ছবি: গেটিইমেজ

আলবার্টার প্রভাব

অ্যাঙ্গুস রেইড কোভিড-১৯-এর প্রভাব নিয়ে যে সূচক তৈরি করেছে তাতে কানাডীয়দের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে: এগুলি হলো, যারা মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছেন, যারা মানসিক ভোগান্তির শিকার, যারা আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থায় আছেন এবং যারা মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে গুরুতর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিতে আছেন দেশের সব অঞ্চলের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের হার সর্বাধিক হলো আলবার্টায় ৩২ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন কুইবেকে ২০ শতাংশ।

কার্ল বলেন, তেলের দাম কমে যাবার কারণে আলবার্টার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ফলে এই প্রদেশের অনেক পরিবার “অর্থনৈতিক অস্থিতি ও অনিশ্চয়তার” মুখে পড়েছে। এ থেকেই ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, মহামারির সময় বিশেষভাবে এই প্রদেশের জনগণই কেন সবচেয়ে বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণির এক-চতুর্থাংশ লোক বলেছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর পর থেকে তাদের ঘরোয়া সম্পর্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে। একই কথা বলেছেন ভালো থাকা মানুষের গ্রুপের মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ।

এদিকে প্রতি পাঁচজন কানাডীয়র মধ্যে দুজনই যখন বলেছেন যে তারা উদ্বিগ্ন বা উৎকণ্ঠিত বোধ করছেন, তখন প্রতি তিনজনে একজন একথাও বলেছেন যে, তারা কৃতজ্ঞ বোধ করছেন।

অ্যাঙ্গুস রেইডের রিপোর্টে বলা হয়, “কানাডীয়রা যে সমস্বরে তাদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন তার কারণ এই মন্তব্যে প্রতিফলিত।

৩০ শতাংশ মানুষ নেহায়েত বিরক্ত

মহামারি কেন্দ্র করে যেসব আবেগ-অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে এমন ৩০ শতাংশ কানাডীয় আছেন, যারা বলেছেন যে, তারা নেহায়েতই বিরক্ত।

মহামারির কারণে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলেও ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের পুরুষরা বলেছেন যে, তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সামান্যই। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনার দিক থেকে ১৮ থেকে ৫৪ বছরের নারীরা সবচেয়ে এগিয়ে আছেন।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নারীদের মধ্যে অনেকে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে বলে জানিয়েছেন। অ্যাঙ্গুস রেইড ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক শাচি কার্ল সিবিসি নিউজকে একথা বলেন। তিনি বলেন, মহামারির কারণে ঘরে ঘরে গিয়ে শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের যত্ন নেয়ার অংশ হিসাবে তাদের আবেগগত বিষয় নিয়ে বাড়তি তৎপরতার মধ্যে নারীদের অবস্থা সম্পর্কিত তথ্যের ব্যাখ্যা রয়েছে।

বিচ্ছিন্নতা পরিবারগুলোর সদস্যদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলেছে, যদিও আবদ্ধতাজনিত ভীতি (কেবিন ফিভার) থেকে এক রুমের বাসিন্দাদের একজন আরেকজনের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

সমীক্ষায় অংশ নেয়া লোকেদের এক-চতুর্থাংশ বলেছেন, তাদের রুমের সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ১৪ শতাংশ বলেছেন, অবনতি ঘটেছে। তবে বেশিরভাগ বলেছেন, সম্পর্কের কোনওরকম পরিবর্তন হয়নি।