করোনার কারণে আপনার কর্মস্থলটি অনিরাপদ মনে করছেন?

এই পরিস্থিতিতে কাজে যোগদান না করার অধিকার কতটুকু আপনার?

মে ১৮, ২০২০

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওতে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। কারণ করোনার কারণে সৃষ্ট প্রতিকুল পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটা স্থিতির মধ্যে চলে এসেছে পরিস্থিতি। ডাক্তারগণ আশা করছেন বর্তমান স্যোসাল ডিস্টেন্স প্র্যাকটিস অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ক্রমশ ভালর দিকে যাবে।

কিন্তু  বাস্তবতা হলো, এখনো প্রতিদিন নতুন নতুন লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। মারাও যাচ্ছেন আক্রান্তদের কেউ কেউ প্রতিদিনই।

এই পরিস্থিতিতে যদি আপনি আপনার কর্মস্থলে যাওয়াটা নিরাপদ না মনে করেন তাহলে কাজে যোগদান না করার অধিকার আপনার কতটুকু? অন্যদিকে মালিক পক্ষের আইনগত দায়িত্ব কতটুকু কর্মস্থলে তার কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মস্থলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা?

আলবার্টার কারগিল মিট প্লান্টে কভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়ার পর প্রতিষ্ঠানটি দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে তা আবার খুলে দেয়া হয়। কিন্তু এর ৮৫% কর্মী কাজে ফিরে আসতে চান নি নিরাপদ বোধ করছিলেন না বলে। । ছবি : টরন্টো স্টার

অন্টারিওর আইন কি বলে? একজন কর্মী কি কাজে যাওয়ার আহ্বন প্রত্যাখ্যান করতে পারেন? এ বিষয়ে সংবাদ সংস্থা ‘কানাডিয়ান প্রেস’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সম্প্রতি। নিচে তা তুলে ধরা হলো।

অন্টারিতে একজন কর্মী ‘অকুপেশনাল হেলথ এ্যান্ড সেফটি এ্যক্ট’ অনুযায়ী কাজে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন যদি তিনি মনে করেন :-

১.    তিনি যে মেশিন বা যন্ত্রটি কর্মস্থলে ব্যবহার করছেন বা তাকে যে মেশিন বা যন্ত্রটি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে সেটি যদি তাকে বা অন্য কোন কর্মীকে বিপদে ফেলতে পারে

২.    কর্মস্থল বা কর্মস্থলের নির্দিষ্ট টেবিল বা অঞ্চলের ভৌত অথবা পারিপাশির্^ক অবস্থা যদি তাকে বিপদগ্রস্ত করে তুলতে পারে

৩.    কর্মস্থলের সহিংসতা যদি তাকে বিপন্ন করতে পারে

৪.    কর্মস্থলের কোন মেশিন, যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম অথবা কর্মস্থলের পরিবেশ যদি প্রচলিত আইন বা বিধিবিধান লঙ্ঘন করে থাকে এবং তার বা অন্য কোন কর্মীকে বিপদে ফেলতে পারে

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এই আইন বা বিধানের মধ্যে করোনার স্থান কোথায়? করোনার কারণে আজ যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে ‘অকুপেশনাল হেলথ এ্যান্ড সেফটি এ্যক্ট’ কি বলে?

জটিল প্রশ্ন। এর কোন সহজ উত্তর নেই। কেউ সিজনাল ফ্লু-তে আক্রান্ত হলে তাকে উৎসাহিত করা হতো কর্মস্থলে না আসার জন্য কয়েকদিন। কিন্তু এটি এখন ফ্লু সিজন নয়। সিজন এখন ভয়াবহ রকমের সংক্রামক ব্যাধি করোনার তথা কভিড-১৯ এর। একজন সংক্রামিত হলে গোটা অফিস, প্লান্ট বা ফ্যাক্টরীর কর্মীবাহিনী আক্রান্ত হতে পারেন কয়েকদিনের মধ্যেই। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি আলবার্টার কারগিল মিট প্যাকেজিং প্লান্ট এ ৯৩৫ জন কর্মী কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। গত ৩ মে তারিখের হিসাব এটি। বিশাল এই মিট প্লান্টে ২০০০ শ্রমিক কাজ করেন। কভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়ার পর প্লান্ট-টি দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে তা আবার খুলে দেয়া হয়। কিন্তু এর ৮৫% কর্মী কাজে ফিরে আসতে চান নি নিরাপদ বোধ করছিলেন না বলে। কর্মীদের ইউনিয়নও চেষ্টা করেছে কাজ বন্ধ রাখার জন্য। কিন্তু মালিক পক্ষ কোন অজুহাত শুনেননি। তারা প্লান্ট খুলে দিয়েছেন এবং কর্মীদের কাজে আসার জন্য বলেছেন। মালিক পক্ষের দাবী-তারা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই প্লান্ট খুলে দিয়েছেন। এর মধ্য আছে কর্মস্থলে প্রবেশ করার সময় সকলের টেম্পারেচার পরীক্ষা করা, প্লান্টের অভ্যন্তরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি। তারা ডাক্তার দিয়ে প্লান্ট পরীক্ষা করিয়েছেন। ডাক্তারগণ বলেছেন প্লান্ট খুলে দেয়া যায় যদি কভিড-১৯ প্রতিহত করার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য বিধি মেনে চলা হয়।

করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্টারিওতে এখন কর্মস্থলের নিরাপত্তার বিষয়টি নির্ভর করছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গাইডলাইনটি মালিক পক্ষ, সেফটি ইন্সপেক্টর এবং লেবার রিলেশন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কিভাবে ব্যাখ্যা করেন। কর্মস্থলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলেও কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে কি না সেটি এখন তাদের দেখার বিষয়।

কভিড-১৯ অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। তাই এখন দেখার বিষয় হলো কর্মস্থলে কর্মীরা ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে পারবেন কি না।

কোন কর্মী যদি মনে করেন তার কর্মস্থলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গাইডলাইন সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না বা করা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করতে পারেন এবং বিষয়টি নিয়ে সুপারভাইজার, এমপ্লয়ার বা ওয়ার্কপ্লেস হেলথ সেফটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে সুপারভাইজার, মালিক বা সেফটি রিপ্রেজেন্টেটিভ পরিস্থিতি তদন্ত করে সেটি সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন যাতে কোন কর্মী কর্মস্থলে নিরাপদ বোধ করেন। এরপরও যদি কোন কর্মী নিরাপদ বোধ না করেন তবে এর পরের স্টেজে যাওয়া যেতে পারে। পরের স্টেজ হলো, মালিক বা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা কর্মী মিনিস্ট্রি অব লেবার এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখান থেকে একজন ইন্সপেক্টর এসে পরিস্থিতি সরেজমিনে যাচাই করে একটি আদেশ দিবেন। সম্ভবত তিনি কর্মস্থলের সেফটির বিষয়টি পরিবর্তনের কথা বলবেন। – কানাডিয়ান প্রেস