জনবল নিয়োগে বর্ণবাদ, শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম কানাডা
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কানাডার অশ্বেতাঙ্গ জনগণ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি বৈষম্যের শিকার হন। নয়টি দেশে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনবল নিয়োগে বিদ্বেষের দিক থেকে কানাডা প্রায় শীর্ষে।
তবে সমীক্ষার গবেষকদের একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার একটি প্রক্রিয়া হতে পারে খুবই সহজ। আর সেটি হলো, নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরুতে নিয়োগকর্তারা আবেদনকারীদের কাছ থেকে আরও বেশি বিস্তারিত তথ্য চাইবেন।
চলতি সপ্তাহে সোসিওলজিক্যাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত সমীক্ষায় নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী লিঙ্কন কুইলিয়ান ও তার সহকর্মীরা কর্মী নিয়োগের ৯৭টি মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষার বিশ্লেষণ করেছেন। সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় চাকরী প্রার্থীদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করা হয় তা চিহ্ণিত করার জন্য এতে কাল্পনিক চাকরিপ্রার্থী দাঁড় করানো হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় হাফিংটন পোস্টে। রিপোর্ট করেছেন ড্যানিয়েল টেন্সার।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, সবগুলোর মধ্য থেকে গবেষকরা দুই লাখের বেশি চাকরি প্রার্থীর বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আলাদা করেন। একই রকম যোগ্যতাসম্পন্ন অশ্বেতাঙ্গ প্রার্থীরা সাক্ষাৎকারের জন্য শ্বেতাঙ্গ প্রার্থীদের সমপরিমাণ ডাক পান কিনা সেটিই ছিলো তাদের দেখার বিষয়।
ফলাফলে কেউই বিস্মিত হননি। চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য অশ্বেতাঙ্গ প্রার্থীরা শ্বেতাঙ্গ প্রার্থীদের সমান ডাক পান না। [সম্প্রতি প্রকাশিত এ নিবন্ধে গবেষকরা উপসংহার টেনেছেন এভাবে, উপাত্তে “বর্ণভিত্তিক ও জাতিগত সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোর লোকেদের প্রতি প্রায় সর্বব্যাপ্ত বৈষম্য দেখা যায়।” – তবে যে নয়টি দেশ নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার ফলাফলে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। [ফ্রান্স ও সুইডেনে বৈষম্য থাকার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। ফ্রান্সে একজন অশ্বেতাঙ্গ চাকরি প্রার্থীর বৈষম্যের শিকার হবার সম্ভাবনা আমেরিকার অনুরূপ কোনও প্রার্থীর চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি। সুইডেনে এই হার ৩০ শতাংশ।
বৈষম্যের শিকার হবার সম্ভাবনা
চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অশ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যের শিকার হবার সম্ভাবনার দিক থেকে কানাডা ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে এবং এই দুই দেশে এর হার হলো ১১ শতাংশ।
এতে দেখা যায়, আফ্রিকান, এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত লোকেরা সমভাবে বৈষম্যের শিকার হন।
সমীক্ষায় বলা হয়, “বিপরীতভাবে শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য খুবই কম এমনকি অনেক সময় তা পরিসংখ্যানে উল্লেখ করার মতও নয়।” এতে আরও বলা হয়, “স্থানীয় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি বিপরীতমুখি বৈষম্যের কোনও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি।”
কোনও কোনও দেশে এতটা ব্যাপক বৈষম্যের বিষয়টি ব্যাখ্যা করায় সহায়তার জন্য কুইলিয়ান, “নির্দিষ্ট কিছু আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-কানুনের” প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী আইন দেশটির অপেক্ষাকৃত ইতিবাচক অবস্থানে থাকার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় জনবল নিয়োগকারীদেরকে তাদের জনবলের বিভিন্ন স্তরে বর্ণ ও জাতিগত পরিচয়ের লোকেদের শতকরা হার কত সে সম্পর্কে কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ সম্পর্কিত কমিশনের (Equal Employment Opportunity Commission) কাছে রিপোর্ট দিতে হয়। কিন্তু অন্য কোনও দেশে এধরণের রিপোর্ট দেওয়ার দরকার হয় না।”
অন্যদিকে ফ্রান্সে বৈষম্য খুবই সাধারণ ঘটনা। সেখানে চাকরির অবেদনকারীদের জাতিগত পরিচয় জানার অধিকার নিয়োগদাতাদের নেই। কুইলিয়ান বলেন, “ফরাসীরা কোনও ধরণের আনুষ্ঠানিক বা একেবারেই অনানুষ্ঠানিক ক্ষমতায়ও বর্ণ বা জাতিগত পরিচয় পরিমাপ করে না। যার ফলে ফ্রান্সে বর্ণ বা জাতিগত অসমতা সম্পর্কে জ্ঞান খুবই সীমিত, আর এতে করে চাকরি দেওয়া বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য করা কঠিন।”
আরও বিস্তারিত তথ্য সংবলিত আবেদনপত্র?
আর কুইলিয়ান মনে করেন, এই সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে জার্মানরা যেভাবে চাকরিতে নিয়োগ দেয় সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা। জার্মানিতে বৈষম্য সবচেয়ে কম। সেদেশে চাকরির আবেদনে খুবই বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়, এমনকি অনেক সময় স্কুলে পড়ার তথ্যও চাওয়া হয়।
এক্ষেত্রে যে ধারণা কাজ করে সেটি হলো, প্রার্থীর বিস্তারিত তথ্য থাকলে ব্যবস্থাপকদের পক্ষে কোনও প্রার্থীর ব্যাপারে নিজের পূর্ব-ধারণার ভিত্তিতে, যার ভেতরে বর্ণবাদী বিদ্বেষও থাকতে পারে, “শূন্যস্থান পূরণের” জন্য নিয়োগ দেওয়ার মত সুযোগই থাকে না।
কুইলিয়ান বলেন, “আমাদের সন্দেহ, এই কারণেই আমরা জার্মানিতে সবচেয়ে কম বৈষম্য দেখতে পেয়েছি। এখানে প্রচুর তথ্য থাকার কারণে সংখ্যালঘু প্রার্থী কম ভালো অথবা অযোগ্য এমন মনে করার কোনও কারণ থাকে না।”