মুসলিম তরুণীদের বলা হচ্ছে, হিজাবে তাদেরকে ‘কানাডীয়’ মনে হয় না

জুন ৬, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ : অন্টারিওর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মহিলা কয়েকজন মুসলিম তরুণীকে ভর্ৎসনা করেন এই বলে যে, হিজাব এবং কালো বোরকায় তোমাদেরকে দেখতে ‘কানাডীয়’ বলে মনে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার নিন্দা করেছে। খবর সিটিভি নিউজ এর। রিপোর্ট করেছেন জোনাথন ফোরানি।

ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পাফার জ্যাকেট পরা একজন শ্বেতাঙ্গ নারী খাঁটি কানাডীয় নারীর পোশাকের বর্ণনা দিচ্ছেন এভাবে, “তারা ছেঁড়াফাড়া জিন্সের প্যান্ট, ছোট আকারের জিন্সের জ্যাকেট এবং রানিং শ্যু পরে। কিন্তু তারা মাথায় স্কার্ফ পরে না বা কালো কাপড় পরে না।”

ঘটনাটি অন্টারিওর ওয়াটারলুতে উইলফ্রিড লরিয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের। শামা সালেহ নামে একজন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ছয়টি মুসলিম মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পাশে দাঁড়িয়েছিলো। এ সময় ভিডিও ফুটেজে ধারণ করা শ্বেতাঙ্গ মহিলাটি পাশ দিয়ে যাবার সময় দাঁড়িয়ে পড়েন এবং ওই তরুণীদের দিকে এমনভাবে তাকান যেন “চিড়িয়াখানার জীবজন্তু” দেখছেন।

শামা সালেহ লিখেছেন, “আমাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে কারণ যারা আমাদের মতো দেখতে তাদের জন্য কানাডায় জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠাই যথেষ্ট নয়।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুধবার এক বিবৃতিতে শ্বেতাঙ্গ মহিলার বক্তব্যের নিন্দা এবং এধরণের ঘটনায় মর্মাহত প্রত্যেকের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। বিবৃতিতে বলা হয়, “লরিয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যে সাম্য, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির মূল্যবোধ সমুন্নত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি এই ঘটনা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘটনায় জড়িতদের কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ নন তবে একজন তরুণী প্রাক্তন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একজন কনস্টেবলকে দায়িত্ব দিয়েছে বলে মুসলিম তরুণীদের জানিয়েছে।

অন্টারিওতে একজন মহিলা কয়েকজন মুসলিম তরুণীকে ভর্ৎসনা করেন এই বলে যে, হিজাব এবং কালো বোরকায় তোমাদেরকে দেখতে ‘কানাডীয়’ বলে মনে হয় না। ছবি : হ্যালিফেক্স এক্সামিনার

ভিডিও ফুটেজের এক খ-ে শ্বেতাঙ্গ মহিলাটিকে বলতে শোনা যায়, মেয়েদের গায়ের রঙ নিয়ে তার ভাবনা নয়, কিংবা তিনি কোনও পোশাক তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চান না। তিনি বলেন, “আমার অনেক বন্ধু আছে যারা বিভিন্ন দেশের কিন্তু এখানে জন্মেছে, আমি তাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তারা আমার পরিবারের অংশ। আমি এতে কোনও রঙ চড়াতে চাই না। আমরা শুধু এটুকু চাই যে, এখানে আসা প্রত্যেকেই আমাদের দেশকে ভালোবাসবে যেভাবে আমরা ভালোবাসি এবং এদেশের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে।”

সিটিভি নিউজ কানাডার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ওই মুসলিম তরুণীদের একজন বলেছেন, তারা মহিলার মন্তব্যে অসাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন কিন্তু তারা অবিচলিত থেকেছেন। তারা সেই সময়ে কেবলই মুসা অ্যাভিনিউ (Muse Avenue) নামে একটি মুসলিম ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল বিষয়ক ম্যাগাজিনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।

নাসটিক্সো মুসা নামের ওই তরুণী বলেন, যখন কেউ আমাদেরকে একীভূত হবার কথা বলে তখন মনে হয় যেন তারা আমাদের পরিচয় মুছে ফেলতে বলছে।” উল্লেখ্য, নাসটিক্সো মুসার বোন সাগাল মুসা তাদের নিজেদের নামে ওই অনলাইন প্রকাশনা চালু করেছে। পরে তারা ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন এটা মানুষকে জানানোর জন্য যে, এধরণের ঘটনা এদেশে ঘটছে।

নাসটিক্সো মুসা বলেন, “তিনি এটা নিশ্চিত হতে চাইছিলেন যে আমরা কানাডীয় বলে অনুভব করি না। বহুকাল ধরে এই নোংরামি কাপড়ের নিচে ঢেকে রাখা হয়েছে। আমাদেরকে বলা হয়, আমরা অতিরঞ্জিত করছি। ভিডিওসহ প্রমাণ থাকায় আমাদের জন্য এটা শেয়ার করা জরুরী ছিলো।”

তিনি বলেন, তিনি ও তার বন্ধুরা যখনই ওই সিঁড়িগুলো টপকে যান তখনই এধরণের বাক্যালাপ শুনতে হয় এমন নয়। তারপরও তারা ক’জন বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছেন।

শুক্রবার লরিয়ের-এর মুসলিম কমিউনিটি সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণবাদ

ও ইসলামভীতিজনিত ঘটনার বিষয়ে আলোচনার জন্য এক সভার আয়োজন করে।

লরিয়ের-এর মুসলিম নেত্রী সেলডা সেজেন সিটিভি নিউজ কানাডাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে তিনি “কখনই এধরণের ঘটনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেননি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এধরণের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বা দৈনন্দিন জীবনে ঘটে না।”

তিনি শিক্ষার্থীদেরকে এধরণের ঘটনা মোকাবিলার উপায় বাতলে দিতে ওই সভার আয়োজন করেন এবং এর ফলাফল ইতিবাচক বলে জানান। তিনি বলেন, “লরিয়ের একটি বৈচিত্র্যময় এবং বিভিন্ন বিশ্বাসের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কমিউনিটি…আমরা সেখানে নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক একীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছি, আমরা চাই, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাদের নিজ নিজ পরিচয় অটুট রেখেই নিরাপত্তার সঙ্গে অবস্থান করবে।”

সেজেন বলেন, অন্যান্য আলোচকরাও সভায় এসেছেন এবং মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা মুসলিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে হাঁটারও প্রস্তাব করেন।

সেজেন বলেন, “এই সময়টা হলো পুরোপুরিই আমাদের সবার জন্য শিক্ষণীয়। আমরা আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করি। এই শিক্ষা আমাদেরকে জীবনের প্রকৃত অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত হবার এবং বাস্তব জীবনে এধরণের মন্তব্যের মুখোমুখি হলে সেটিকে ব্যক্তিগত বিষয় হিসাবে না নিয়ে শালীনভাবে তার জবাব দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।” সেজেন বলেন, স্পেশাল কনস্টেবল যে তদন্ত করেছেন তাতে সংশ্লিষ্ট মহিলার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি তবে তিনি “লরিয়ের-এর কেউ বলেও ধারণা করা হচ্ছে না।”