পার্কিং টিকিট নিয়ে বিরোধ আদালতের বাইরে নিস্পত্তির জন্য টরন্টো নগর কর্তৃপক্ষের নতুন ব্যবস্থা চালু

অক্টোবর ৭, ২০১৭

টরন্টো নগর কর্তৃপক্ষ পার্কিং টিকিট নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সোমবার নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে। এই নতুন ব্যবস্থায় প্রাদেশিক আদালতে যাবার দরকার হবে না।

নগরীর আইন বিষয়ক পরিচালক কলি চ্যাপম্যান বলেছেন, নগর কর্তৃপক্ষ আশা করে যে, পার্কিং সম্পর্কিত আইন লংঘনের বিষয়ে নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থা গাড়ির মালিকদের জন্য আগের চেয়ে দ্রুত, সহজতর এবং আরও বেশি সুবিধাজনক হবে।

চ্যাপম্যান বলেন, প্রশাসনিক জরিমানার ব্যবস্থা নামের এই নতুন ব্যবস্থা হলো গ্রাহক সেবা উন্নয়নের একটি পদক্ষেপ।

নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী গাড়ির মালিকদের আর কোনও টিকিট ধরিয়ে দেয়া হবে না। তার পরিবর্তে তাদেরকে ‘পার্কিং আইন লংঘনের জন্য একটি নোটিস’ দেয়া হবে। কর্তৃপক্ষের ভাষায় একটি ‘প্রশাসনিক পর্যালোচনা প্রক্রিয়া’র মাধ্যমে ওই নোটিসের বিষয়টি নিস্পত্তি করা হবে।

মিজ. চ্যাপম্যান বলেন, কেউ যদি পার্কিং আইন লংঘনের নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তাহলে তিনি সশরীরে মেট্রো হল বা নর্থ ইয়র্ক সিভিক সেন্টারে যেতে পারেন অথবা অনলাইনে সে কাজটি করতে পারেন।

তিনি বলেন, “নতুন ব্যবস্থাটি আগের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততর হবে। আমরা ধারণা করছি যে, আমরা অকে বেশি দক্ষতার সঙ্গে সেবা দিতে পারবো, যা হবে অনেক বেশি দ্রুততর ও সহজ।”

অবৈধভাবে পার্ক করা একটি গাড়িতে টিকিট প্রদান করছেন পার্কিং পুলিশ। ছবি টরন্টো স্টার

কিন্তু এই নতুন ব্যবস্থা নিয়ে সবাই খুশি নয়।

সাবেক সিটি কাউন্সিলর এবং আইনজীবী জন পাপাডাকিস বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি চাওয়ার অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, টরন্টোর মেয়র জন টোরি ও সিটি কাউন্সিলকে ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন তারা নাগরিকদের আইনী অধিকার বাতিল করছেন। তার মতে এটি অসাংবিধানিক এবং সেজন্য আইনজীবীরা এই নতুন ব্যবস্থ াকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। তিনি বলেন, “যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া থাকবে না, অপরাধ প্রমাণের আগে নির্দোষ বলা যাবে না, আপনার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর সঙ্গে মোকাবিলা হবে নাÑ এটা পুরোপুরি আপনার অধিকার হরণ করবে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আপনাকে হেয় করবে। আর এটা চাতুর্যপূর্ণ।”

কিন্তু মিজ. চ্যাপম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী,  আদালতে শুনানীর তারিখ পেতে যে অপেক্ষা করতে হয় এবং সেখানে পার্কিং টিকিটের বিপরীতে যে অর্থ নেয়া হয় তার চেয়ে আদালতে ব্যয় হওয়া অর্থের পরিমাণ বেশি হওয়ায় নতুন একটি ব্যবস্থায় যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো। তিনি বলেন, নতুন ব্যবস্থার কারণে আদালতে শুনানীর তারিখ পেতে যে নয় থেকে ১২ মাস সময়ের প্রয়োজন হয় সেটা আর লাগবে না এবং এতে করে আদালত ব্যবস্থার ওপর চাপ দূর হবে। তিনি বলেন, আদালত যাতে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করতে পারে সেজন্য আদালতের কাজের চাপ কমানোর লক্ষ্যেই এই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

মিজ. চ্যাপম্যান বলেন, “জনগণ যাতে এই পার্কিং আইন লংঘনের নোটিসের বিরুদ্ধে সম্ভব সব উপায়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে তার সব পথ অবশ্যই খোলা রাখতে চান নগর কর্তৃপক্ষ।  আমরা চ্যালেঞ্জের সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমাদের মূল চিন্তা হলো উন্নততর সেবা নিশ্চিত করা নিয়ে।”

নতুন ব্যবস্থার অধীনে গাড়ির মালিকরা অনলাইনে অথবা নিজে উপস্থিত হয়ে নোটিস পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাবেন এবং নগরীর একজন যাচাই-বাছাইকারী কর্মকর্তা সেই নোটিসে প্রদত্ত দ- নিশ্চিত করতে, পরিবর্তন করতে কিংবা বাতিল এবং কোন ফি পরিবর্তন করতে বা বাতিল করতে পারবেন। প্রয়োজন হলে কর্মকর্তারা গাড়ির মালিককে তার জরিমানার অর্থ পরিশোধের জন্য বাড়তি সময়ও দিতে পারবেন।

যাচাই-বাছাইকারী কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে কোনও গাড়ির মালিক সন্তুষ্ট না হলে তিনি প্রশাসনিক পেনাল্টি ট্রাইব্যুনালের শুনানী বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে নতুন করে শুনানীর জন্য অনুরোধ জানাতে পারবেন। ওই কর্মকর্তা হবেন নগর কর্তৃপক্ষের নিয়োগপ্রাপ্ত।

চ্যাপম্যান বলেন, শুনানী বিষয়ক কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত হবে চূড়ান্ত।

উল্লেখ্য, নগর কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে গাড়ির মালিকদের গড়ে এক লাখ ৯০ হাজার পার্কিং টিকিট ধরিয়ে দেয়। আর গত ১০ বছরে নগর কর্তৃপক্ষ প্রাদেশিক আদালতের মাধ্যমে ১৮ লাখ পার্কিং টিকিটের বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। -সিবিসি