উত্তর আমেরিকায় ইসলামী ব্যাংক এর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হওয়া উচিৎ কানাডায়
জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা
জানুয়ারী ১২, ২০১৬
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংক এর প্রসার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে কানাডায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও। অর্থনীতির গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা দাবী করছেন কানাডায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে দেশটির জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। তারা আরো মনে করেন, উত্তর আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইসলামী ব্যাংক এর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হওয়া উচিৎ কানাডায়। নতুন এক গবেষণা তথ্যে এই তথ্যই উঠে এসেছে। খবর হাফিংটন পোষ্টের।
ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য সংস্থা থমসন রয়টার্স ও টরন্টো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এলায়েন্স এর মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কানাডায় মুসলিম জনসংখ্যা আনুপাতিকহারে বেশী। আর সে কারণে ইসলামী ব্যাংক এর কার্যক্রম যদি শুরু করতে হয় তবে তার কেন্দ্রস্থল হওয়া উচিৎ কানাডা। সংস্থা দুটি আরো মনে করে কানাডায় মুসলিম জনসংখ্যার ভৌগলিক ঘনত্ব বেশী হওয়ায় এবং কম মাত্রার জটিল নিয়ন্ত্রক পরিবেশ বিরাজ করায় এ খাতের সম্ভাবনাটি এখানে বেশ উজ্জ্বল।
থমসন রয়টার্স ও টরন্টো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এলায়েন্স এর গবেষণায় একটি জরীপ তথ্যের উল্লেখ করে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে কানাডায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ লাখে দাড়াবে। এটি হবে কানাডার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬.৬ ভাগ। বর্তমানে কানাডায় মুসলিম সংখ্যা ১০ লাখের সামান্য উপরে।
উপরের তথ্য বিশ্লেষন করে অর্থনীতিবিদগণ অনুমান করছেন ২০২০ সালের মধ্যে ‘শরীয়া মর্টগেজ’ এর জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলারের এর বাজার তৈরী হতে পারে কানাডায়। তাছাড়া মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে কানাডার ব্যবসায়ী কমিউনিটির যোগাযোগ থাকায় দেশের বাইরেও ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়া যাবে। অন্যদিকে কানাডায় এ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন যারা তাদের যথেষ্ট পরিমানের অভিজ্ঞতা রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে যেটি ইসলামী বিনিয়োগ বাজারের প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়তা করবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। থমসন রয়টার্স ও টরন্টো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এলায়েন্স এর নতুন রিপোর্টে বলা হয় বর্তমানে এই ব্যাংকিং ব্যবস্থার অধীনে ১.৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের সম্পদ রয়েছে। অন্যদিকে কানাডার বৃহৎ ৫ টি ব্যাংকের সম্মিলিত সম্পদের পরিমান ৩.৩ ট্রিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার।
পাশ্চাত্য দেশসমূহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা বৃটেনে বিশেষভাবে সুবিদিত হয়ে উঠছে। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন নিজেই লন্ডনে অনুষ্ঠিত নবম বার্ষিক বিশ্ব ইসলামিক ইকনমিক ফোরামের সম্মেলনে বলেছেন, “লন্ডনকে আমি বিশ্বের সেরা ইসলামিক ফিনান্স সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই”। ঐ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন যাদের মধ্যে ছিলেন জর্ডানের কিং আব্দুল্লাহ ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলখিয়া।
কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হারপারও চেয়েছিলন ইসলামিক ফিনান্স সেন্টার হিসেবে কানাডাকে কেন্দ্রবিন্দু করতে। এই উদ্দেশ্যে তার সরকার ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ব্যাংকিং কনফারেন্সকে স্পন্সার করতে সাহায্যও করেছে যেটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কানাডায় এবং সেখানেই থমসন রয়টার্স ও টরন্টো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এলায়েন্স এর নতুন রিপোর্টটি উপস্থাপন
করা হয় যাতে বলা হয়, উত্তর আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইসলামী ব্যাংক এর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হওয়া উচিৎ কানাডায়।
তবে সাবেক কনজারভেটিভ সরকার এই ব্যাপারে উৎসাহী হলেও বর্তমান লিবারেল সরকার এখনো এ বিষয়ে নিশ্চুপ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডায় ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে নতুন কোন বিষয় নয়। উদাহরণ হিসেবে সিআইবিসি ব্যাংক এর কথা বলা যায়। এই ব্যাংকটির একটি প্রগ্রাম রয়েছে ‘হালাল ইনভেস্টিং’ নামে। তবে কানাডায় ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ যে একেবার মসৃন তাও নয়। ২০১১ সালে সেই সময়কার সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘ইউএম ফিনান্সিয়াল’ অবস্থা বেগতিক দেখে নিজেদেরকে দেওলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য যে, সুদ দেয়া বা গ্রহণ করা দুটোই ইসলামী আইনে নিষিদ্ধ। ফলে সত্তরের দশক থেকেই মুসলিম দেশগুলোর অর্থনীতিবিদরা পাশ্চাত্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উদ্যোক্তা এবং পুঁজিমালিকের মধ্যে শিল্প অথবা বাণিজ্যিক ঝুঁকি সমানভাবে বণ্টন এবং বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা অর্থ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনুপাতিক মূলধনের ভিত্তিতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা মদ, টোবাকো, শুকর ইত্যাদির উৎপাদন বা বিপনন এর কোনটির সঙ্গেই যুক্ত হতে পারবে না। জুয়া, পর্নোগ্রাফী বা সমরাস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত হতে পারবে না এই ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
তবে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। আর এই বিতর্ক খোদ মুসলমানদের মধ্যেও বিদ্যমান। ২০০৮ সালে কানাডা মর্টগেজ এন্ড হাউজিং কর্পোরেশন যখন ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি পরখ করে দেখতে চায় তখন মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেসের প্রধান তারেক ফাত্তা ইসলামী ব্যাংকিং এর এই ব্যবস্থাটিকে ‘ছলচাতুরী’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
একইকথাবলেন২০০৬সালেনিউয়র্কথেকেপ্রকাশিতএইবিষয়েরউপরএকটিবইয়েরলেখকওব্যাংকারমোহাম্মদসেলিম।তিনিবলেন, “ইসলামীব্যাংকিংব্যবস্থা৩০০বিলিয়ন (সেইসময়েরহিসাবঅনুযায়ী) ডলারেরএকটি ধূর্ততাবাপ্রতারণা।” তিনিআরোবলেন, “তথাকথিতএইইসলামীব্যাংকিংব্যবস্থাঅন্যান্যপ্রচলিতব্যাংকেরমতোইগ্রাহকদেরকাছেথেকেসুদগ্রহণকরে।ব্যতিক্রমশুধু – তারাএটিকেগোপনরাখেএকটিধর্মীয় ‘মহিমা’ আরোপকরে।”