কানাডার স্কুলগুলোতে বুলিং সমস্যা
বুলিং এর শিকার হয়ে টরন্টোতে ১২ বছর বয়সী এক বাঙ্গালী বালকের আত্মহত্যা : প্রতি তিনজন শিশু-কিশোরের মধ্যে একজন বুলিং এর শিকার হচ্ছে
ডিসেম্বর ৭, ২০১৯
খুরশিদ আলম : বুলিং এর শিকার হয়ে টরন্টোতে ১২ বছর বয়সী এক বাঙ্গালী বালক অর্ক চক্রবর্তী আত্মহত্যা করেছে গত ২১ জুন। ঘটনার পর পুলিশ টরন্টোর মিডটাউন এলাকার একটি এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর পাশে অবস্থিত এক ঝোপ থেকে বালকটির লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, সে ঐ বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ঝাপিয়ে পড়ে। আর এটি যে আত্মহত্যা ছিল সেই খবর পুলিশ নিশ্চিত করে প্রায় চার মাস পর। গত ২৯ অক্টোবর গ্লোবাল নিউজ তাদের এক খবরে এই তথ্য প্রকাশ করে। তবে এই আত্মহত্যার পিছনে বুলিং এর ভ‚মিকা ছিল এমন দাবীই করেন বালকটির মা দূর্বা মুখপাধ্যায়।
টরন্টো স্টার জানায়, যেদিন অর্ক ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে সেদিন সে একটি সুইসাইড নোট লিখে বাড়িতে রেখে গিয়েছিল। ঐ নোটে লেখা ছিল, “ I have been a disappointment to you. I have not been popular at school. No one will miss me if I’m gone.” নোটটি পড়েই দূর্বা মুখাপাধ্যায় সাথে সাথে ৯১১ এ কল করেন।
দূর্বা মুখপাধ্যায় তার ছেলেকে নিয়ে ভারতের কলকাতা থেকে কানাডায় এসেছিলেন মাত্র বছর খানেক আগে। কত না স্বপ্ন ছিল চোখে। ছেলে কানাডায় স্কুলে ভর্তি হবে। একদিন ইউনিভার্সিটিতেও পড়তে যাবে। তারপর পেশাজীবনে প্রবেশ করবে। মাকে আলগে রাখবে সব আপদ-বিপদ থেকে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, অর্ক নিজেই নিজের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিল। ঐ বয়সের একটি বালক, অথবা শিশু বলাই শ্রেয়, কতটা মানসিক বিপর্যস্তের শিকার হলে আত্মহত্যার মত এরকম কঠিন এক পথে পা বাড়ায়?
সিঙ্গেল মাদার দূর্বা মুখপাধ্যায় এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না ছেলে অর্ক আর নেই। সে আত্মহত্যা করেছে! কিন্তু কেন? কেন ঐটুকুন বয়সের একটি ছেলে আত্মহত্যা করতে যাবে?
দূর্বা মুখপাধ্যায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে গ্লোবাল নিউজকে বলেন, আমি আমার ছেলেকে রক্ষা করতে পারিনি। নিজেকে আমার দায়বদ্ধ মনে হচ্ছে। আমি কি অর্ক কে কানাডায় নিয়ে এসে ভুল করেছিলাম?
অর্ক মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্তু স্কুলে সে বুলিং এর শিকার হচ্ছিল। একদিন সে বুলিং এর শিকার হয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে শারীরিকভাবে আহত হয়ে। মৌখিকভাবেও সে বুলিং এর শিকার হতো। দূর্বা মুখপাধ্যায় সন্দেহ করছেন এই বুলিং এর কারণেই হয়তো তার ছেলে অর্ক আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
অর্ক তার স্কুলে প্রায় ছয় মাস ধরেই নানাভাবে বুলিং এর শিকার হয়ে আসছিল। একবার আহত হয়ে বাড়ি ফিরলে তাকে নিয়ে সানিব্রুক হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু যারা অর্ক-কে আঘাত করেছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। গ্লোবাল নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র এলিসন স্পার্কস বলেন, ইতিপূর্বে তদন্ত বন্ধ করে দেয়া হয় অফিসিয়ালি। ভবিষ্যতে আর কোন তথ্য পেলে বিষয়টি রিভিউ করা হবে এবং তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হবে।
দূর্বা মুখপাধ্যায় বলেন, “আমি স্কুল বোর্ডকে চিঠি লিখেছি, ন্যাপাল বরাবর চিঠি লিখেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার কাছে চিঠি লিখেছি, চিঠি লিখেছি পুলিশ প্রধান বরাবরও। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি- কেন আমার ছেলের এই মর্মান্তিক পরিনতি ঘটলো? কেন তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো?”
অন্টারিও’র বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী স্টিফেন লেচে অর্ক এর মৃত্যু আগে থেকেই স্কুলে বুলিং এর বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলেন। গ্লোবাল নিউজে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রী স্টিফেন বলেন, শিশুদের উপর বুলিং বা নির্যাতন চালানোর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হিসাবে। বিশেষভাবে যারা সরকারে আছেন। পাশাপাশি পরিবার, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই বুলিং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য। আমি আমার দফতরের কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দিয়েছি সম্ভাব্য সব উপায়গুলো খুঁজে বের করার জন্য যার মাধ্যমে আমরা এই বুলিং বন্ধ করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারি।
দূর্বা মুখপাধ্যায় বলেন, আমি উৎসাহ বোধ করছি এই কারণে যে, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বুলিং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তা করার জন্য একটি পুর্ণাঙ্গ প্রাদেশিক তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে আমার কাছে মনে হয় যার মাধ্যমে বুলিং এর কারণসমূহ নির্নয় করে তা দূর করা যাবে এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করা যাবে।
দূর্বা মুখপাধ্যায় ইতিমধ্যে একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। আইনী ব্যয় নির্বাহের জন্য তার বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীরা #Justice for Bullied Kids #Justice for Arka শিরোনামে GoFundMe -এ প্রচারণা শুরু করেছেন। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ফান্ডে এগার হাজার ডলার জমা হয়েছে। টার্গেট ২৫ হাজার ডলার।
দূর্বা মুখপাধ্যায়ের আইনজীবী বেরী শর্ডন বলেন, যারা বুলিং করে বা বুলিং এর নামে ভীতিপ্রদর্শন করে তারা বেশীরভাগ সময় ভায়েলেন্স এর আশ্রয় নেয়। তবে পুলিশ সাধারণ ভায়োলেন্স মোকাবেলায় অভ্যস্ত হলেও স্কুলে এই বুলিং এর নামে যে ভায়োলেন্স হয় তা মোকাবেলায় ততটা অভ্যস্ত নয়।
দূর্বা মুখপাধ্যায় বলেন, তার ছেলে স্কুলে নিরাপদ বোধ করতো না। বিষয়টি তিনি বহুবার স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। আইনজীবী বেরী শর্ডন বলেন, অর্ক প্রায় ছয়মাস ধরে স্কুলে বুলিং এর শিকার হয়ে আসছিল।
শিক্ষামন্ত্রী স্টিফেন লেচে গ্লোবাল নিউজকে বলেন, অন্টারিওতে কোন শিক্ষার্থী তার স্কুলে নিরাপদ বোধ করছে না এই বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। আমরা শিক্ষকরা, প্রিন্সিপালগণ, এ্যাডমিনিস্ট্রেশন সবাই মিলে কাজ করছি যাতে করে সব শিশু স্কুলে নিরাপদ বোধ করে।
টরন্টো স্কুল বোর্ড কর্তৃক এই মুহুর্তে অর্ক এর বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন রিভিও করার পরিকল্পনা নেই। বোর্ডের মুখপাত্র রায়ান বার্ড গ্লোবাল নিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীর মা কর্তৃক উত্থাপিত উদ্বেগ সম্পর্কে অবগত আছি। কিন্তু আমাদের কাছে যে তথ্য আছে ততে ঐ স্কুলে কোন ধরণের বুলিং এর অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি না।
তবে দূর্বা মুখপাধ্যায়ের আইনজীবী বেরী শর্ডন তা মানতে রাজী নন। তিনি বলেন এটা একদমই ঠিক না। তিনি অন্টারিও’র প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড এর প্রতি আহ্বান জানান এর একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ব্যবস্থা করার জন্য। তিনি আশা করেন এর মধ্য দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং অভিভাবকগণ একটি পথনির্দেশনা পাবেন যা অনুসরণ করা যাবে।
দূর্বা মুখপাধ্যায় বলেন, আমার জীবনের একমাত্র মিশন এখন আমার ছেলের পক্ষে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করা।
উল্লেখ্য যে, দূর্বা মুখপাধ্যায়ের সাবেক স্বামী একজন নিউক্লিয়ার সাইন্টিস্ট। দূর্বা নিজে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায় দূর্বা দেশে থাকতেই।
এদিকে অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে হ্যামিলটনে অবস্থিত স্যার উইনস্টন চার্চিল সেকেন্ডারী স্কুলের ব্যাকইয়ার্ডে ডেভেন ব্র্যাকি-সেল্ভি নামে ১৪ বছরের এক ছাত্র তার মায়ের সামনেই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এই ঘটনাও স্কুল বুলিং-এরই পরিনতি। ডেভেন-কে পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। তার মা শত চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। বুলিং এর এই বিষয়টি চরম উত্তেজনা ও শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে হ্যামিলটন সহ সারা কানাডায়।
সিবিসি নিউজ জানায়, পুলিশ এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে। এদের মধ্যে একজন ছাত্রীও আছে। হত্যাকান্ডের সময় ধারণ করা একটি ভিডিও এসেছে পুলিশের হাতে। তারা এটি রিভিউ করে দেখছে। ডেভেন-কে যে ছেলেটি ছুরিকাঘাত করেছে তারও বয়স ১৪। আক্রমনকারীর সঙ্গে তার বড় ভাইও ছিল যার বয়স ১৮। দুজনের বিরুদ্ধেই ফার্স্ট ডিগ্রী মার্ডার এর চার্জ আনা হয়েছে।
নির্মম এই হত্যাকান্ডের পর হ্যামিলটন-ওয়েন্টওর্থ ডিস্ট্রিক স্কুল বোর্ড এর ডিরেক্টর অব এডুকেশন ম্যানি ফিগারেডো এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। আমাদের কমিউনিটি এরকম একজন মূল্যবান ও প্রিয় ছাত্রকে হারিয়ে দুঃখ ও মর্মযন্ত্রণা ভাগ করে নিচ্ছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ডেভেন ব্র্যাকি-সেল্ভি’র মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য তিনদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখে।
স্থানীয় পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, এই খুনের ঘটনায় স্কুল বুলিং কতটা ভ‚মিকা রেখেছে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে বুলিং এর সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডেভেন এর মা শেরী-এ্যান সেল্ভি সিবিসি নিউজকে জানান, বুলিং এর ঘটনা শুরু হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিন থেকেই। এবং তখন থেকে প্রতিদিনই ডেভেনকে গালাগালি ও অবমাননা করা হয়ে আসছিল। আমরা মাসাধিককাল ধরেই এই বুলিং এর বিষয়টি মোকাবেলা করে আসছি।
ডেভেন এর মা শেরী বালেন, সব স্কুলের একই পলিসি- জিরো টলারেন্স ও জিরো বুলিং। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কেউ এর জন্য কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়। এবং এরকম একটি খুনের ঘটনা ঘটে গেল।
হ্যামিলটন-ওয়েন্টওর্থ ডিস্ট্রিক স্কুল বোর্ড ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে যে, ডেভেন-কে টার্গেট করে যে বুলিং করা হচ্ছিল তার অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নথিবদ্ধ করা আছে এবং তা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পুলিশও জানিয়েছে বুলিং এর ব্যাপারে তাদেরকে আগে অবহিত করা হয়েছিল।
স্কুলে বুলিং এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার অধ্যাপক ট্রেসী ভিলানকোর্ট সিবিসি নিউজকে বলেন, ডেভেন ভাগ্যে যা ঘটেছে সেটি আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, কোন কিছু ঘটে যাওয়ার আগেই পরিস্থিতিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। আর আমি মনে করি, এটি সুষ্পষ্ট যে, এ ক্ষেত্রে সিস্টেম ফেইল করেছে।
ডেভেন এর মৃত্যুতে বুলিং এর বিষয়টি নতুন করে হ্যামিলটনে এবং একই সাথে সারা কানাডায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বুলিং আজকে কেবল মাত্র একটি সমস্যা নয়। বুলিং এর যে মাত্রা আমারা দেখতে পাচ্ছি সে হিসাবে এই পরিস্থিতিকে জাতীয় জরুরী অবস্থা হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ।
ডেভেন এর মা জানান, গত সেপ্টেম্বরে স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিন থেকেই হয়রানি ও নিগ্রহ শুরু হয়। ঐ দিন প্রায় দশজনের একটি গ্রুপ ডেভেন এর সাইকেল ও তার এক বন্ধুর স্কেটবোর্ডটি চুরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে যাত্রায় ডেভেন ও তার বন্ধু কোনরকমে পালিয়ে বাঁচে। তবে সে রাতেই আবার ঐ গ্রুপটি ডেভেন এর মুখোমুখি হয়। তখন ডেভেন তার ৮শ ডলার দামের সাইকেলটি তাদের হতে তুলে দেয়। সাইকেলটি সে তার এক কাজিন এর কাছ থেকে উপহার হিসাবে পেয়েছিল। কিন্তুু তারপরও ডেভেন এর উপর উৎপাত ও জ্বালাতন চলতেই থাকে। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তার স্কুলে উপস্থিত হওয়াটাই কঠিন হয়ে দাড়ায়। ডেভেনের মা এবং ডেভেন এর আরেক বন্ধুর অভিভাবক প্রায় প্রতিদিনই স্কুল ছুটির আগে স্কুলে এসে হাজির হতেন তাদেরকে সাথে করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ, তারা প্রতিনিয়তই বুলিং এর শিকার হচ্ছিল।
পুলিশ অবশ্য দাবী করে আসছে যে, যারা ডেভেন-কে হত্যা করেছে তারা সাইকেল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু ডেভেন এর মা এবং ডেভেন এর বন্ধুর অভিভাবকগণ দাবী করে আসছেন ঐ সাইকেল চুরির সঙ্গে যারা জড়িত তারাই বুলিং করে আসছিল।
ঘটনার দিন ডেভেন আত্মরক্ষার কোন সুযোগই পায়নি। তাকে যখন ধাওয়া করা হচ্ছিল তখন সে দৌড়ে স্কুলের পিছন দিকে চলে যায়। ঐ সময় ধাওয়াকারী দলের এক মেয়ে সদস্য তার মুখোমুখি হয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘হিট মি- হিট মি’। তখন ডেভেন বলে, আমি তোমাকে আঘাত করতে পারবো না, কারণ আমি ওরকম শিক্ষা পাইনি, ও ভাবে আমি বড় হয়নি। ঠিক তখনই অন্য একটি ছেলে অতর্কিতে ডেভেনকে পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করে বসে। ডেভেন এর মা বলেন, ডেভেন ধারণাও করতে পারেনি পিছন থেকে কেউ তাকে এ ভাবে ছুরিকাঘাত করতে যাচ্ছে।
ডেভেন কতটা ভদ্র ও সদ্বংশীয় ছেলে ছিল, মেয়েটির প্রতি তার আচরণই তা বলে দেয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডেভেন এর মা এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা ডেভেনের প্রতি এটি একটি কাপুরুষোচিত আচরণ করেছে।
কানাডার স্কুলগুলোতে বুলিং আসলে একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতি তিনজন শিশু-কিশোরের মধ্যে একজন বুলিং এর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কানাডার বিভিন্ন স্কুলে বুলিং এর শিকার হচ্ছে অনেক বাঙ্গালী শিশু-কিশোরও। বুলিং এর শিকার হয়ে অনেক শিশু-কিশোর শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আত্মহত্যার চেষ্টাও করে কেউ কেউ। তার সাক্ষাৎ প্রমাণ পাওয়া গেল দূর্বা মুখপাধ্যায়ের ছেল অর্ক এর আত্মহত্যার ঘটনায়।
স্কুল বা খেলার মাঠে বিনা প্ররোচনায় এক বা একাধিক শিশু-কিশোর কর্তৃক অন্য শিশু বা কিশোরের উপর শারীরিক বা মানসিক আক্রমণ চালানোকে বুলিং হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একসময় শুধু শারীরিক আক্রমণকেই বুলিং হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এর মধ্যে ছিল আঘাত, পদাঘাত ও ঘুসি মারা ইত্যাদি। কিন্তু এখন মানসিক আক্রমণ বা নির্যাতনকেও বুলিং এর অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে কারণ এগুলোর পরিনতিও শারীরিক আক্রমণের চেয়ে কম নয়।
সাম্প্রতিক কালে সাইবার বুলিং নামে আরেক আপদ এসে হাজির হয়েছে। সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে এমন ঘটনার নজীরও ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। সাইবার বুলিং পরিচালিত হয় অনলাইনের মাধ্যমে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে রিটেয়া পারসনস্ নামে এক কানাডিয়ান টিনএজ ছাত্রী সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে গত ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। ঐ সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল এটি। সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়ার আগে সেই মেয়েটি তার এক বন্ধু ও সেই বন্ধুর আরো তিন সহযোগী কর্তৃক গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল।
পরে সেই ধর্ষণের চিত্র অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
অনেক শিশু আবার বুলিং এর শিকার হলেও বাবা-মায়ের কাছে তা গোপন করে যায়। এমনকি স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও তারা নালিশ করতে ভয় পায়। তাদের ভয় – নালিশ করার পর যদি বুলিং এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়? কোন কোন শিশু আছে যারা বুলিং এর শিকার হওয়াটাকে লজ্জাজনক বলে মনে করে এবং এই লজ্জা তারা প্রকাশ করতে চায় না।
উল্লেখ্য যে, আমেরিকান সাইকোলোজিকাল এসোশিয়েশন এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় সে দেশে এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্টরা অন্যান্য এথনিক গ্রুপের চেয়ে অনেক বেশী মাত্রায় বুলিং এর শিকার হয়। শতকরা ৫৪ জন এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্ট বলেছে তারা ক্লাশরূমে বুলিং এর শিকার হয়েছে। সাইবার বুলিং এর ক্ষেত্রেও এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্টরা বেশী মাত্রায় ভুক্তভুগি। শতকরা ৬২ ভাগ এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্ট বলেছে তারা সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছে।
উপরের চিত্রটি কানাডার ক্ষেত্রে খুব একটা ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। উল্লেখ্য যে, নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহটি অন্টারিওতে “এন্টি বুলিং এওয়ারনেস উইক”। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় কানাডায় বুলিং রেট অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় অনেক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ৩৫ দেশের মধ্যে কানাডার অবস্থান ২৬ তম!
ইতিপূর্বে হাফিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়, “দুঃখজন হলেও সত্যি যে গত কয়েক বছর ধরেই বিরাজ করছে বুলিং এর এই অবস্থা যদিও বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত দাবী উঠেছে এ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। ”
বুলিং সম্পর্কে এখানে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো :-
– বুলিং সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। যে সকল শিশু-কিশোর বুলিং এর শিকার হয় তারা মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, ডিপ্রেশন, এংজাইটি ইত্যাদিতে ভুগতে পারে। বুলিং এর কারণে সৃষ্ট মানসিক সমস্যা ছাত্রজীবনের পরেও অব্যাহত থাকতে পারে।
– যারা বুলিং করে এবং যারা বুলিং এর শিকার হয় তারা উভয়ই অধিকতর মাত্রায় আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে।
– যারা বুলিং করে এবং যারা বুলিং এর শিকার হয় তাদের উভয়ের ক্ষেত্রেই স্কুলে উপস্থিতির হার কমে যেতে পারে, লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যেতে পারে এবং বছর শেষে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হতে পারে।
– যারা বুলিং করে তাদের ক্ষেত্রে ড্রাগ ও এ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে উঠার ঝুঁকি বেশী। নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও এদের ক্ষেত্রে বেশী। এক জরীপ তথ্যে দেখা যায় যারা স্কুল জীবনে বুলিং করে বেড়ায় তারা ২৪ বছর বয়সের মধ্যেই কোন না কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জাড়িয়ে পড়ে।
– বাধাপ্রাপ্ত না হলে এই শিশু বা কিশোর যখন যৌবনপ্রাপ্ত হবে বা তারও পরে কর্মজীবন ও সংসার জীবনে প্রবেশ করবে তখনো তার এই বুলিং করার অভ্যাস থেকে যায়। নতুন নতুন কৌশলে তখন তারা তাদের বুলিং চালিয়েই যেতে থাকে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, প্রতিবেশীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ডেটিং ভায়োলেন্স, সেক্সচুয়াল হ্যারেজমেন্ট, ম্যারিটাল এবিউজ, চাইল্ড এবিউজ, এল্ডার এবিউজ এই সকল অপকর্মই তারা করে যেতে থাকে জীবনভর।
বুলিং একটি মানবাধিকার ইস্যু। যারা বুলিং এর শিকার হয় তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। জাতি সংঘের শিশু অধিকার সনদে কানাডা স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর একটি। সুতরাং বুলিং এর কারণে কোন শিশুর মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেটি দেখার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের।
সূত্র : www.prevnet.ca/bullying..
কানাডায় বুলিং সম্পর্কে কিছু পরিসংখ্যান : –
– প্রতি ৭ জন শিশুর মধ্যে ১জন শিশু (যাদের বয়স ১১ থেকে ১৬) বুলিং এর শিকার হয়।
– ৪ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগই বুলিং এর শিকার হয়।
– খেলার মাঠে প্রতি ৭ মিনিটে একটি বুলিং এর ঘটনা ঘটছে এবং ক্লাশ রূমে প্রতি ২৫ মিনিটে একটি বুলিং এর ঘটনা ঘটছে।
– বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ১০ সেকেন্ডের মাথায় বুলিং থেমে যায় যখন অন্য শিশুরা হস্তক্ষেপ করে বা বুলিংকে তারা সমর্থন না করে।
– শিশুকালে যারা বুলিং এর শিকার হয় তারা বয়সকালে ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে।
– হাইস্কুলের ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট স্টুডেন্ট বুলিং এর শিকার হয়।
– ১১ পার্সেন্ট সেকেন্ডারী স্কুলের স্টুডেন্ট বছরে অন্তত একবার অন্য স্টুডেন্টদেরকে বুলিং এর শিকার বানায়।
সূত্র : Craig &. Pepler.
সাইবার বুলিং বিষয়ে পরিসংখ্যান:-
– ৯০% বাবা-মা সাইবার বুলিং এর বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। ৭৩% বাবা-মা বিষয়টি নিয়ে খুব অথবা খানিকটা হলেও চিন্তিত।
– প্রতি ৫ জন বাবা-মা’র মধ্যে ২ জন জানান তাদের সন্তানেরা সাইবার বুলিং এর ঘটনার সঙ্গে জড়িত। প্রতি ৪ জন স্টুডেন্টের মধ্যে ১জন সাইবার বুলিং এর শিকার।
– ৭৩% স্টুডেন্ট সাইবার বুলিং এর ব্যাপারে অবহিত এবং ৭৬% স্টুডেন্ট মনে করে সাইবার বুলিং তাদের স্কুলে খুব অথবা কিছুটা হলেও গুরুতর সমস্যা।
– সাইবার বুলিং এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী মাত্রায় যেটি ঘটে সেটি হলো, কারো ব্যক্তিগত ইমেইল বা টেক্সট্ ম্যাসেস অন্যকে ফরোয়ার্ড করে দেয়া বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া।
– ৩০% মেয়ে জানায় তারা সাইবার বুলিং এর শিকার। অন্যদিকে ২৬% ছেলে জানায় তারা সাইবার বুলিং এর শিকার।
– প্রতি ১০ জন স্যোশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪ জন সাইবার বুলিং এর শিকার (৩৯%)।
সূত্র : www.stopabully.ca/bullying.
শিশুরা বুলিং এর শিকার হচ্ছে কি না সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখার দায়িত্ব রয়েছে বাবা-মা’র। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিশুরা অনেক সময় লজ্জায় বা আরো বুলিং এর শিকার হতে পারে এই ভয়ে বিষয়টি বাবা-মা অথবা শিক্ষকের কাছে প্রকাশ করে না। তাই নিচের বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে : –
১. তারা কি স্কুলে যেতে অনিহা প্রকাশ করছে?
২. পেটে ব্যথা করে এরকম অভিযোগ করছে?
৩. শরীরের কোন স্থানে আঘাতের চিহ্ন বা চোখের নিচে কাল দাগ অথবা কাপড়ের কোন অংশ ছিন্ন থাকলে সে সম্পর্কে অদ্ভুত বা আজব ব্যাখ্যা দিচ্ছে?
৪. তাদের ব্যক্তিগত কোন জিনিষ খোয়া গেছে কিনা?
৫. নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা বা বিরাগ প্রকাশ করে কি না?
শিশুরা বুলিং এর শিকার হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজর রাখা যেমন বাবা-মা’র কর্তব্য, তেমনি কর্তব্য শিশুরা অন্য শিশুর উপর বুলিং করছে কি না সে বিষয়েও নজর রাখা। আর এর জন্য নিচের বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে : –
১. কোন শিশু কি কাউকে নির্দেশ দিচ্ছে কি না বা বসী আচরণ করছে কি না।
২. অল্পতেই কোন বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে কি না বা রাগান্বিত হয়ে পড়ছে কি না।
৩. হিংসাত্মক বা উগ্র কোন খেলা অথবা টিভি শো দেখে চমৎকৃত হচ্ছে কি না।
৪. অন্যের প্রতি সহানুভূতির কমতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি না।
৫. বাবা-মা, ভাই-বোন বা অন্য কোন ব্যক্তি কিংবা গৃহপালিত কুকুর বিড়াল ইত্যাদির প্রতি নির্দয় আচরণ করছে কি না।
যদি এরকম হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী।
– তথ্য সূত্র হাফিংটন পোস্ট।
উপরে বর্ণিত কোন লক্ষণের সঙ্গে যদি দেখা যায় শিশুর আচরনের মিল রয়েছে তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বুলিং এর শিকার কোন শিশুর বেলায় কোন রকম অবহেলা করা চলবে না। অথবা এরকম ভাবার কোন অবকাশ নেই যে, স্কুলে বা খেলার মাঠে শিশুরা একটু আধটু মারামারি করেই থাকে। প্রথমেই আলোচনা করুন শিশুটির সঙ্গে। জানতে চেষ্টা করুন বুলিং কে করছে, প্রতিদিন অথবা প্রায়শই শিশুটি বুলিং এর শিকার হচ্ছে কি না। আর ভুলেও শিশুকে পাল্টা বুলিং এর পরামর্শ দেয়া যাবে না। কারণ এতে করে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। শিশুর মুখে ঘটনা বিস্তারিত জেনে তার ক্লাস টিচারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ক্লাশ টিচার যদি বিষয়টি হ্যান্ডেল করতে না পারেন বা কোন কারণে অপারগতা প্রকাশ করেন তবে স্কুলের প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে। শিশুর গায়ে যদি কোন আঘাতের চিহ্ন থাকে তবে তার ডাক্তারী পরীক্ষা করিয়ে তার ডকুমেন্ট প্রিন্সিপালের কাছে জমা দিতে হবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রমাণ করার জন্য।
স্কুলের প্রিন্সিপাল বা কাউন্সিলর এরকম পরিস্থিতিতে উভয় শিশু অর্থাৎ বুলিং এর শিকার ও বুলিংকারী শিশুকে এক সঙ্গে নিয়ে বসবেন এবং বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বুলিং সম্পর্কে স্কুলের কি পলিসি তা জানাবেন উভয় শিশু বিশেষ করে বুলিংকারী শিশুটিকে। এর পরও যদি বুলিং চলতেই থাকে তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বুলিংকারী শিশুটির বাবা-মা’র সঙ্গে বসবেন এবং এটি যে ক্রিমিনাল অফেন্স বা দন্ডযোগ্য অপরাধ সেটি তাদেরকে জানাবেন। পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে শিশুটিসহ বাবা-মা’ও দায়ী থাকবেন এ তথ্য ও হুশিয়ারীটুকু তাদেরকে জানানো হবে।
আর একটি বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। বুলিং বন্ধ হলেও কিন্তু এর প্রভাব থেকে যেতে পারে শিশুর মনে। এ বিষয়ে রেজিস্টার্ড কাউন্সিলর ড. ফাইজাল শাহুখানের পরামর্শ হলো, “বুলিং বন্ধ হওয়ার পরও বুলিং এর শিকার শিশুটির উপর নজর রাখতে হবে। কারণ শারীরিক বা মানসিক আঘাতের বিষয়গুলো খুব ধীরে ধীরে হলেও শিশুর মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শিশুকে সবসময় আশ্বাস দিতে হবে এবং সাহস দিতে হবে এই বলে যে ভবিষ্যতে এমন হলে আপনি সর্বদাই তার পাশে থাকবেন এবং যে কোন ধরণের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিবেন। প্রয়োজনে আপনি আপনার শিশুকে এসার্টিভ ট্রেনিং ক্লাসে ভর্তি করাতে পারেন যেখানে চাইল্ড বুলিং এর শিকার যারা তাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করা হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য যোগার করার জন্য স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।”
(প্রচ্ছদে ব্যবহৃত এই প্রতিবেদনের ছবি দুটি সিবিসি ও sciencenewsforstudents থেকে গৃহীত)