প্রতি ১০ জনে তিনজন কানাডীয় ব্যয় নির্বাহে অপারগ, তাদের মধ্যে উচ্চ আয়ের লোকেরাও আছে

তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, এলজিবিটিকিউ এবং প্রতিবন্ধী কানাডীয়রা আর্থিকভাবে সবচেয়ে নাজুক

ডিসেম্বর ৭, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : মন্ট্রিল- কানাডার পরিবারগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে নিজেদেরকে ক্রমবর্ধমানভাবে কঠিন অবস্থার মধ্যে নিপতিত দেখতে পাচ্ছে। তাদের সঞ্চয় কমে যাচ্ছে, ঋণ পরিশোধের হার বাড়ছে। অধিকতর সংখ্যক মানুষ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে যেখানে তাদের ব্যয় নির্বাহ করার মতো যথেষ্ট অর্থ হাতে থাকছে না।

হিসাব (accounting) বিষয়ক ফার্ম এমএনপির সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে, সব ব্যয় মিটিয়ে দেওয়ার পর মাস শেষে কানাডীয়দের হাতে যে পরিমাণ অর্থ থাকছে তা ধীরে ধীরে কমে এসেছে। খবর হাফিংটন পোস্ট এর। রিপোর্ট করেছেন ডেনিয়েল টেনসার।

২০১৬ সালের প্রথম দিকে শুরু হওয়া এই ত্রৈমাসিক সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, কানাডীয়দের হাতে মাস শেষে যে অর্থ থাকছে তা এযাবৎকালের সর্বনিম্নে পৌঁছেছে এবং গড়ে তার পরিমাণ ৫৫৭ ডলার।

মাস শেষে হিসাব মিলাতে বসেছেন দুই কানাডিয়ান। কানাডার পরিবারগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে নিজেদেরকে ক্রমবর্ধমানভাবে কঠিন অবস্থার মধ্যে নিপতিত দেখতে পাচ্ছে। তাদের সঞ্চয় কমে যাচ্ছে, ব্যয় নির্বাহ করার মতো যথেষ্ট অর্থ হাতে থাকছে না মাস শেষে। ছবি : গেটি ইমেজ

কিন্তু এই কাগুজে পরিসংখ্যান এক ভয়ংকর বাস্তবতা সামনে নিয়ে আসে: প্রতি ১০জন কানাডীয়র মধ্যে প্রায় তিন জন (২৯%) এখন বলছেন, মাসের খরচ চালানোর মত অর্থ তাদের হাতে আদৌ থাকছে না। এর আগের জরিপে এমন কথা বলেছিলেন ২৫ শতাংশ মানুষ।

৪১ শতাংশ কানাডীয়র হাতে মাস শেষে যে অর্থ বাঁচাতে পারেন তার পরিমাণ তাদের এক সপ্তাহের খরচ চালানোর মত।

আর প্রতি মাসেই যারা অর্থনৈতিক এই দেওয়ালে মাথা ঠুকছেন তাদের সবাই যে নিম্ন  আয়ের মানুষ এমন নয়, তাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা প্রচুর অর্থ খরচ করতে অভ্যস্ত।

টিডি ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল এজুকেশন বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিনা ডিগ্রাজিয়া বলেন, “কারও উপার্জন উচ্চহারের হলেই যে তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল এমনটা সব ক্ষেত্রে ঠিক নয়।”

চলতি সপ্তাহে এই ব্যাংকের প্রকাশিত এক পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি কি পরিমাণ আয় করছেন আর তিনি আর্থিকভাবে কতটা সচ্ছল এই দুটি বিষয়ের মধ্যে খুব সামান্যই সম্পর্ক আছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চ হারে আয় করেন- অর্থাৎ যারা বছরে দেড় লাখ ডলার বা তারও বেশি উপার্জন করেন তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশের আর্থিক সচ্ছলতা গড় সচ্ছলতার হারের চেয়ে নিচে।

টিডি ব্যাংকের সমীক্ষায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন করা হয় এবং তাদেরকে চারটি গ্রুপের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এগুলি হলো: “আর্থিকভাবে সচ্ছল” (Financially healthy), “আর্থিকভাবে টেকসই(উচ্চ)” financially coping (high), “আর্থিকভাবে টেকসই(নিম্ন)” এবং “আর্থিকভাবে নাজুক” (financially vulnerable)।

সার্বিকভাবে ২৭ শতাংশ কানাডীয় আর্থিকভাবে সচ্ছলদের কোটায় পড়েছেন এবং ১৫ শতাংশ আর্থিকভাবে নাজুকদের কোটায়।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদেরকে মূল্যায়ন করা হয়েছে তাদের স্বল্প-মেয়াদী (আপদকালীন) সঞ্চয় এবং দীর্ঘ-মেয়াদী তথা অবসর পরবর্তী সঞ্চয়, তাদের ধারকর্জ করার অভ্যাস এবং তাদের আয়ের কতটা বন্ধক, গাড়ির ঋণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সেবার মত নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় তার ভিত্তিতে।

ডিগ্রাজিয়া বলেন, ওই সবগুলো বিষয় পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনি যদি এর মধ্যে একটিকে অবহেলা করেন তাহলে অন্য বিষয়গুলোর জন্য ভুগতে হবে।

তিনি বলেন, “ঋণের বোঝা আপনার সঞ্চয়ের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে, আর সঞ্চয় না থাকলে আপনি সামনের দিনগুলোতে ব্যয়ের পরিকল্পনা নিতে পারবেন না (সুতরাং এরকমটা যখন ঘটে), তার মানে হলো আরও বেশি ধারদেনা।”

এটি হলো বিশেষজ্ঞরা যেটাকে বলেন, “ঋণের ফাঁদ” তারই সংজ্ঞা।

টিডির সমীক্ষায় বিভিন্ন গ্রুপের কানাডীয়দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা

গেছে। তবে এতে যে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সেটি হলো, আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী জনগণের আর্থিক অবস্থা দেশবাসীর গড় অবস্থার চেয়ে নিচে।

এতে দেখা গেছে, পুরুষের চেয়ে নারীদের আর্থিকভাবে নাজুক হবার সম্ভাবনা সামান্য বেশি (১৩ শতাংশের বিপরীতে ১৫ শতাংশ) এবং তারা সার্বিক গড় পরিস্থিতির চেয়ে নিচে অবস্থান করছে। অনেকাংশে এর কারণ হলো শীর্ষ পর্যায়ের আয় রয়েছে এমন লোকেদের মধ্যে নারীর সংখ্যা খুবই সামান্য। তাদের বেশিরভাগই খন্ডকালীন বা স্বল্প বেতনের চাকরিতে নিয়োজিত।

এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের লোকেদের আর্থিকভাবে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি- সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যেটা ১৪ শতাংশ সেটি এলজিবিটিকিউ+ সমাজের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ।

রিপোর্টে বলা হয়, “এই সম্প্রদায়ের মধ্যেও আবার তৃতীয় লিঙ্গের নারীদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ এবং আর্থিকভাবে চলতে পারার সক্ষমতায় তারা যে অনেক পিছিয়ে সেই বোধও তাদের বেশি বলে নিজেদের পরিচয় দেয় কম।”

তবে রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে যে, বয়স্ক প্রজন্মের চেয়ে তরুণ এলজিবিটিকিউরা নিজেদের লৈঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে এগিয়ে। এর ফলে বয়স্কদের চেয়ে তরুণ এলজিবিটিকিউ সদস্যরা আর্থিক দিক থেকে বেশি নাজুক অবস্থায় আছে।

একেকটি প্রজন্ম ধরে হিসাব করলে, বেবি বুমারস প্রজন্ম রয়েছে সর্বোচ্চে, তাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ আর্থিকভাবে নাজুক।

মিলেনিয়ালসদের ১৮ শতাংশ এবং একেবারে তরুণ প্রজন্মের লোকেদের ১৪ শতাংশের অবস্থা নাজুক। কিন্তু সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৯ শতাংশ মানুষ আর্থিকভাবে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে জেনারেশন এক্স নামে পরিচিত বুমারস ও মিলেনিয়ালস-এর মাঝামাঝি জন্মানো প্রজন্মের লোকেরা। এদের অনেকেই ১৯৯০-এর দশকজুড়ে একটি চাকরির সন্ধানে বিফল মনোরথে ঘুরে বেড়িয়েছে।