চিকিৎসকের সতর্কবাণী সত্বেও সাত মাসের অন্তসত্ত্বা ফারহানা সুলতানাকে কানাডা থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে
‘এটি খুব বড় ধরণের অবিচার। আমার সন্তানেরা ঘরে এসে দেখে আমি খুব বিমর্ষ থাকি। তারা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। আমি কোন উত্তর দিতে পারি না ’
ডিসেম্বর ৭, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : সাত মাসের অন্তসত্ত্বা এবং হৃদসমস্যায় ভোগা এক বাংলাদেশী নারী ফারহানা সুলতানা ও তার পরিবারকে কানাডা থেকে নির্বাসিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কানাডা বর্ডার এ্যান্ড সার্ভিসেস এজেন্সি। যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, এই অবস্থায় দীর্ঘ বিমানযাত্রা মহিলার জন্য নিরাপদ নয়। কিন্তু চিকিৎসকের সাধানবাণী সত্বেও কানাডা বর্ডার এ্যান্ড সার্ভিসেস এজেন্সি কোন কথা শুনছে না। তারা দিন তারিখও ঠিক করে দিয়েছে নির্বাসনের। আগামী ১০ জানুয়ারী তাদেরকে কানাডা ছেড়ে চলে যেতে হবে। অন্যথায় জেলে যেতে হবে।
এই আদেশ আসে যখন গত মাসে তাদের ‘পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী এ্যাপ্লিকেশন’ ‘হিউম্যানিটারিয়ান এ্যান্ড কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ড’ এ বাতিল হয়ে যায়। খবর সিটিভি নিউজের।
স্কারবরোতে বসবাসকারী সুলতানা সিটিভি নিউজকে বলেন, “আমি এখন ফেডারেল এজেন্সির কাছে শুধু এইটুকুই আবেদন করছি, দেশে ফিরে যাওয়ার আগে আমার অনাগত শিশুটিকে কানাডায় ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ দেয়া হোক যাতে করে তার এবং আমার শরীরের কোন ক্ষতি না হয়।”
আগামী পহেলা মার্চ সুলতানার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার কথা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি তাদের বলেছি আমরা চলে যাব। কিন্তু তার আগে আমার সন্তানের জন্ম নেয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এখানে থাকতে দেয়া হোক। এই অবস্থায় আমার বিমান যাত্রাটা অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ ”
সুলতানা ও তার স্বামী অবশ্য ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন সরকার যাতে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার আদেশটি তাদের সন্তান জন্ম নেয়ার আগ পর্যন্ত স্থগিত রাখে। বর্তমানে তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে যার মধ্যে দুজনের জন্ম কানাডায়। তারা গত ৫ ধরে কানাডায় আছেন।
কানাডা বার্ডার এ্যান্ড সার্ভিসেস এজেন্সির এক কর্মকর্তা ইমেইলের মাধ্যমে সিটিভি-কে জানান, ইমিগ্রেশন এ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন এ্যাক্ট অনুযায়ী নির্বাসনের আদেশ অবশ্যই কার্যকর করতে হবে যত তারাতাড়ি সম্ভব। কানাডা বর্ডার এ্যান্ড সার্ভিসেস এজেন্সি তা করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সুলতানার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার স্টেসি কস্টা কানাডা বর্ডার এ্যান্ড সার্ভিসেস এজেন্সির নিকট পাঠানো এক পত্রে বলেছেন, সুলতানার যা অবস্থা তাতে করে আমি তাকে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করার পরামর্শ দিতে পারি না।
সুলতানা জানান, তিনি ও তার স্বামী মিলে কানাডা বর্ডার এ্যান্ড সার্ভিসেস এজেন্সি বরাবর তিনটি পত্র পাঠিয়েছেন যার একটি একজন মিডওইফের কাছ থেকে এবং বাকি দুটো ডাক্তারের কাছ থেকে নেয়া। কিন্তু এগুলোতে কোন কর্নপাত না করে এজেন্সি তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে নির্ধারিত তারিখে তারা দেশ ত্যাগ না করলে জেলে যেতে হবে।
সুলতানা বলেন, এটি খুব বড় ধরণের অবিচার। আমার সন্তানেরা ঘরে এসে দেখে আমি খুব বিমর্ষ থাকি। তারা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। আমি কোন উত্তর দিতে পারি না।