কানাডায় উদ্বেগ ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা শিশুদের সহায়তা করা জরুরী

সময়মত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে শিশুর শিক্ষা জীবনে অপেক্ষাকৃত ভালো ফল লাভ ও সুষ্ঠু জীবন গড়ে তোলা সম্ভব

ডিসেম্বর ৭, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডিয়ান মেন্টাল হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন(CMHA), অন্টারিওর তথ্য অনুযায়ী, “অন্টারিওর প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে একজনের মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রায় ৭০ শতাংশেরই সূচনা হয় ব্যক্তির শৈশবে অথবা তারুণ্যে।”

আগেভাগে চিহ্নিত করা এবং চিকিৎসা নেওয়া হলে শিশুর জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো একাডেমিক সাফল্য ও সুষ্ঠু জীবন গড়ে তোলা সম্ভব। নিউকানাডিয়ানমিডিয়া.সিএ -তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। সুকাইনা জাফের রচিত ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্য হলো এমন একটি সন্তুষ্টিপূর্ণ অবস্থা যার মধ্যে আমাদের আবেগগত, মনস্তাত্তি¡ক এবং সামাজিক কল্যাণের মত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। আমরা যেভাবে চিন্তা করি, অনুভব করি এবং নিজের ও অন্যদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করি তা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্য বিকারের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, বিষন্নতা, খাবারে অনীহা, ক্ষতিকর পর্যায়ে মাদকাসক্তি এবং মনোযোগের অভাবজনিত সমস্যা।

স্কুলে এবং বাড়িতে চাপ

লেইশা জামেকনিক একজন নিবন্ধিত সমাজকর্মী এবং কমন কম্পাস নামক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, “উদ্বেগজনিত লক্ষণ নিয়ে স্কুলের উপদেষ্টাদের কাছে পাঠানো হয় এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। লেইশা আরো বলেন, তার কর্মশালার পর বেশ কিছু তরুণ তার কাছে আসে এবং তাদের সবারই বিবরণ অভিন্ন। যেমন, শিক্ষার্থীরা বলেছে, “আমি নিজেকে ফাঁদে পড়া বলে অনুভব করি, আমার ওপর স্কুলের কাজ এবং স্কুলবহির্ভূত কাজের চাপ খুব বেশি। আমার ওপর আমার বাবা-মায়ের খুবই উচ্চাশা রয়েছে। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু আমি ঘুমাতে পারি না, আমি খুবই উদ্বিগ্ন, আমার বাবা-মা ও শিক্ষকরা আমাকে বুঝতে পারেন না। আমার সাহায্য দরকার।”

মারিয়াম রহমান একজন নিবন্ধিত সাইকোথেরাপিস্ট এবং নসিহা মেন্টাল হেল্থ হেলপলাইনের শিক্ষা ও জনসংযোগ বিষয়ক সুবিধা দানকারী। তিনি পরামর্শ দেন যে, “আপনার শিশুর কথা শুনুন এবং তৎক্ষণাৎ কোনও উপদেশ দিতে যাবেন না বরং জিজ্ঞাসা করুন আপনি কীভাবে তাকে সাহায্য করতে পারেন। শিশুকে বুঝতে দিন যে তার চিন্তা, তার অনুভূতি এবং যেসব কঠিন পরিস্থিতি সে মোকাবিলা করছে সেসব বিষয়ে সে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।” চাপ ও উদ্বেগের মোকাবিলা করতে হলে সামাজিক ও শিক্ষার চাপের কারণে শিশুদের স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

রহমান বলেন, এক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমের ছবি, ভিডিও বা মন্তব্য ইত্যাদির সংশ্লিষ্টতা থাকলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। তার ভাষায়, “বিশেষ করে এসব বিষয় জড়িত থাকলে তা শিশুর জন্য চরম আতঙ্কজনক এবং উদ্বেগ সৃষ্টিকারী হতে পারে।”

উৎকণ্ঠা বাড়ছে

নিউকানাডিয়াানমিডিয়া’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শিশুদের মধ্যে উৎকণ্ঠার প্রকাশ ঘটে নানাভাবে। যেসব লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে আছে : নেতিবাচক অনুভব, মাথা ধরা, পেট খারাপ, কোনও ঘটনার বাড়তি প্রতিক্রিয়া দেখানো, সহজেই কেঁদে ফেলা, বেশি বেশি উদ্বিগ্ন থাকা, সহজে রেগে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, কারো ব্যাপারে উচ্চাশা পোষণ করা এবং এধরণের বিভিন্ন বিষয়। আপনার শিশুর চিন্তা, অনুভূতি বা আচরণে বিনা কারণে বা হঠাৎ করে কোনও রকম পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে মনোযোগী থাকুন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার কার্যকর কয়েকটি উপায় হলো থেরাপি, ওষুধ ও কাউন্সেলিং।

জীবনে চাপ ও উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অসংখ্য কারণ আমরা জানি:

স্কুলের শিক্ষার বাইরে একাধিক কর্মকান্ডে জড়িত শিশু, বাবা-মায়ের দুই তিনটি চাকরিতে দীর্ঘ সময় বাইরে কাটানো, সম্প্রসারিত পরিবারের কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়া, স্মার্ট ফোন ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত যন্ত্রের আবির্ভাব। এই সবগুলো বিষয়ই বর্তমান সময়ে পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

জামেকনিক বলেন, শিশুদের বিশ্রাম নেওয়ার এবং হালকা হবার মত এবং তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর অবকাশ নেই। ইন্টারনেট থেকে মুক্তির কোনও উপায় নেই। এটি দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সুলভ এবং তা শিশুদের ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করে।”

অন্টারিওর প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে একজনের মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রায় ৭০ শতাংশেরই সূচনা হয় ব্যক্তির শৈশবে অথবা তারুণ্যে। ছবি : helpguide.org/ schooldirectory.tvdsb.ca

মানসিক অসুস্থতা নিয়ে বেঁচে থাকা

কানাডার মেন্টাল হেলথ কমিশনের (MHCC) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে ৬৭ লাখেরও বেশি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়েই জীবন যাপন করেন। সংস্থাটি জানায়, ওই ৬৭ লাখ মানুষের মধ্যে ১২ লাখই হলো শিশু ও তরুণ। এই ১২ লাখ শিশু ও তরুণের মধ্যে ২০ শতাংশ উপযুক্ত চিকিৎসা লাভ করবে এবং ২৫ বছর বয়স হওয়ার মধ্যে ২০ শতাংশের মত কানাডীয় মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

এই বিষয়গুলো এখন আর চেপে রাখার সুযোগ নেই। ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা শিশুদের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার ফলে দেখা যাচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্য কোনও বিলাসবস্তু নয় বরং এটি খুবই জরুরী। বাবা-মায়েদেরকে তাদের শিশু ও নিজেদের মানসিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। নিঃশর্ত ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা এবং আমাদের শিশুদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলি সেটা তাদের মনে ইতিবাচক আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আবেগের সঙ্গে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা করলে সেটা তাদের মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠা ও ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রাখে।

উল্লেখ্য যে, গত বছর কানাডিয়ান প্রেস এর এক খবরে বলা হয়, শিশুদের লালন-পালনের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর স্থান হিসাবে বিশ্বজুড়ে কানাডার যে খ্যাতি তা ভুল প্রতিপন্ন হয়েছে। ঐ সময় প্রকাশিত নতুন এক রিপোর্টে দেশটিতে শিশুদের আত্মহত্যা, শিশু নির্যাতন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতায় ভোগার যে বিস্ময়কর রকমের উচ্চ হারের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে তাতেই এই সত্য প্রকাশ পায়।

ও’ব্রেইন ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ এবং চিলড্রেন ফার্স্ট কানাডা এর সংকলিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, শিশু মৃত্যু থেকে শুরু করে স্থূলতা এবং দারিদ্র্যের হার পর্যন্ত সব স্বাস্থ্যগত সূচকেই কানাডায় শিশুর কল্যাণের এক উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। নতুন সমীক্ষায় স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা এবং কানাডিয়ান ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইনফরমেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে যে, দেশের সার্বিক সম্পদ ও সমৃদ্ধির সুফল শিশুরা পাচ্ছে এটা নিশ্চিত করতে সরকারের সব প্রতিষ্ঠানকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।

“আমরা শিশু মৃত্যুর হার, বা দুর্ঘটনা বা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে বিষয় নিয়েই কথা বলি না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যানগুলো গভীরভাবে উদ্বেগজনক।” এ কথা বলেন চিলড্রেন ফার্স্ট-এর প্রধান পরিচালক সারা অস্টিন। তিনি আরো বলেন, “কানাডা বিশ্বের পঞ্চম সমৃদ্ধিশালী দেশ কিন্তু যখন শিশুদের কল্যাণের প্রসঙ্গ আসে তখন আমরা অনেক পেছনে পড়ে যাই। একটা যোগাযোগহীনতা রয়ে গেছে আমাদের শিশুদের কল্যাণ এবং জাতির কল্যাণের মধ্যে।”

এই যোগাযোগহীনতার বিষয়টি কিছু আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও স্বীকৃত। শিশু কল্যাণের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ইউনিসেফের তালিকায় কানাডার ৪১ তম এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ২৫ তম অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করেন অস্টিন ।

অস্টিন বলেন, সর্বশেষ রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক উদ্বেগজনক সূচক তুলে ধরেছে যার মধ্যে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি। এটি ক্রমবর্ধমান জরুরী পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে কানাডায়।

মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ থেকে ২৪ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা গত এক দশকে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে, যখন একই কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সব বয়সের মানুষের সংখ্যা ওই একই সময়ে বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। রিপোর্টে এ কথা বলা হয়।

ঐ রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সর্বোচ্চ সংখ্যক রুগীকে জরুরীভাবে পর্যবেক্ষণ ও হাসপাতালে ভর্তি করার মধ্য দিয়ে রেকর্ড গড়েছে অন্টারিও। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, শুধু ২০১৬ সালেই অন্টারিওতে মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে ১৬ হাজার ২৯১ টি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় যা এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কুইবেকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। মাদকাসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সিক কিডস হসপিটাল এবং টরন্টো হাসপাতালের মধ্যে শিশু ও মানসিক স্বাস্থ্য সহযোগিতার কর্মসূচির প্রধান ডা. পিটার সাতমারির মতে, ওই সংখ্যাটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রবণতার প্রতিনিধিত্ব করছে। তিনি বলেন, কানাডা সমস্যার মূলে যাওয়ার জন্য তুলনামূলকভাবে সামান্যই পদক্ষেপ নিয়েছে যদিও অনেক আগে সেই ১৯৮৭ সাল থেকে শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিদ্যমানতা সম্পর্কে নথিপত্র সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

ডা. সাতমারি বলেন, “শিশুরা যখন ছোট থাকে তখনই তাদেরকে এধরণের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায়টা আমরা বাতলে দিচ্ছি না। আমরা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনুসরণ করছি না। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সমস্যা-ভারাক্রান্ত।”

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। পরিসংখ্যান থেকে এরকম তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। অস্টিনের বক্তব্য অনুযায়ী, শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হলো আত্মহত্যা। তিনি আরও জানান, শিশুদের আত্মহত্যার হারের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম শীর্ষস্থানে রয়েছে কানাডা।

জি-৭ গ্রুপ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কানাডাই একমাত্র দেশ যেখানে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্পর্কিত কোনও জাতীয় কৌশল নেই। এ কথা জানান সাতমারি। তবে যেখানে এধরণের কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে, যেমন কুইবেক।

এদিকে অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কানাডায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ২৫ হাজার ১৬৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমেরিকান কলেজ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালিত বড় ধরণের ঐ জরিপে দেখা গেছে যে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে উদ্বিগ্নতায় ভোগার সংখ্যা ৫০ শতাংশ, বিষন্নতায় ভোগার সংখ্যা ৪৭ শতাংশ এবং মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ বেড়েছে।

টরন্টো স্টার এবং রায়ারসন স্কুল অব জার্নালিজম-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা নজীরবিহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

হ্যামিলটনে অবস্থিত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্যাথরিন মান বলেন, “আমাদের দরোজার বাইরে এবং ঘরের ভেতরে দীর্ঘ লাইন পড়ছে। আমরা বেশি সংখ্যক পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পরও কুলিয়ে উঠতে পারছি না।”

অপেক্ষাকৃত তরুণ কানাডীয়দের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অভাব অনেক বছর ধরে গুরুতর একটি সমস্যাকে অচিহ্নিত রেখে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সিলিং এবং মনস্তাত্বিক সেবা গ্রহণ করছে যা আগে হাইস্কুলগুলোতে ছিলো না।

মান বলেন, “আমরা ৪০ বছর ধরে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে সার্বিক এবং ক্রমাগতভাবে স্বল্প অর্থ বিনিয়োগ করে এসেছি।”

ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ সম্পর্কিত পরিচালক জান ইয়াং বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্কার কমে আসা এবং শিক্ষাঙ্গনে প্রাপ্য সেবা সম্পর্কে সচেতনা বাড়ার কারণে ”যেসব মানুষ আর লজ্জিত বোধ করে না তারা এখন চৌকাঠ পেরিয়ে এগিয়ে আসছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের পদ্ধতির সামাজিক পরিবর্তনও নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে যেটা আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষ মোকাবিলা করেনি।

টরন্টো ক্যাথলিক ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক নেতা প্যাট্রিসিয়া মারা-স্ট্যাপ্লেটন বলেন, বর্তমান প্রজন্মের শিশু ও তরুণরা দুটি ভিন্ন বিশ্বে বসবাস করে। একটি হলো বাস্তব জগৎ। অন্যটা হলো ডিজিটাল সামাজিক জগতে। আমরা যেটা উঠে আসতে দেখছি সেটা হলো, এমনকি আট বছরের বাচ্চাও সামাজিক মাধ্যম ও ডিজিটাল সংযোগের ওপর নির্ভশীল হয়ে পড়ছে অতিমাত্রায় ।”

সামাজিক যোগাযোগ এবং সংলাপের সূচনার দিক থেকে সামাজিক মাধ্যমের একটি ইতিবাচক ভূমিকা থাকলেও মনস্তাত্বিক দিক থেকে এর ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। এ কথা বলেন সেন্টার ফর এডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ-এর ক্লিনিক্যাল সইকোলজিস্ট ডা. ক্যাটি ক্যামকার। তিনি বলেন, অনলাইনে গালিগালাজ, কম্পিউটারে অনেক বেশি সময় ব্যয় করা এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম যে সত্যিকারের সামাজিক সহায়তা পাওয়া যেতে পারে সেই সম্ভাবনা সীমিত করে ফেলার মত বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ থেকে যায়।

মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির জন্য সমাজকর্মী লেইশা জামেকনেক – এর পরামর্শ হলো – আপনার পরিবার কীভাবে সময় কাটাচ্ছে সে বিষয়ে মনোযোগী হওয়া। তিনি যেসব সুপারিশ করেন তার মধ্যে রয়েছে: মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগ সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলার ব্যাপারে শিশুদের অনুপ্রাণিত করা, নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে রোল মডেল উপস্থাপন করা, ঘুমের সুষ্ঠু অভ্যাস মেনে চলা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়া-দাওয়া করা এবং যন্ত্র নয় পরিবারের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলা। বিশেষজ্ঞরাও কৃতজ্ঞতার অনুশীলন, সৃজনশীল কাজ করা এবং মানসিক প্রশান্তি বা শান্তিদায়ক কর্মকান্ড যেমন কবিতা পাঠ ইত্যাদি যা মনসংযোগ বা ধ্যানমগ্নতার সৃষ্টি করে সেগুলোর চর্চার সুপারিশ করেন।