কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?
ক্ষমতার লড়াই তুঙ্গে
অক্টোবর ৯, ২০১৯
খুরশিদ আলম : কানাডায় নির্বাচনী লাড়াই এখন তুঙ্গে। জরীপ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে এ লড়াইয়ে কখনো লিবারেল পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে আবার কখনো কনজার্ভেটিভ পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাষই ফুটে উঠছে নির্বাচনী জরীপগুলোতে। এখন সবারই প্রশ্ন, কে হতে যাচ্ছেন কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
কঠিন প্রশ্ন। এবারের নির্বাচনে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে করে কে হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী সে ভবিষ্যতবাণী করা খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে। এই প্রতিবেদন যখন তৈরী করা হচ্ছে (অক্টোবর ৮) তখনকার সর্বশেষ জরিপ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ভোটারদের সমর্থনের শতকরা হিসাবে জনপ্রিয়তার দৌড়ে জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি এন্ড্রু শিয়ার এর নেতৃত্বাধিন প্রধান বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টির তুলনায় অতি সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে। ঐ দিন সার্বিকভাবে ভোটারদের কাছে লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা ছিল ৩৪% এবং কনর্জাভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা ছিল ৩৩.৮%। জাগমিত সিং এর নেতৃত্বাধীন এনডিপি’র জনপ্রিয়তা অনেকটা পিছিয়ে। মাত্র ১৪.৩%। এলিজাভেথ মে এর নেতৃত্বাধীন গ্রীণ পার্টি আরো পিছিয়ে। ৯.৬%। বøক কুইবেকা’র জনপ্রিয়তা ৫% এবং নবগঠিত পিপলস পার্টি অব কানাডার জনপ্রিয়তা ছিল ২%।
অবশ্য ভোটারদের সমর্থনের পার্সেন্টেজ বা শতকরা হার কত সে প্রসঙ্গে না গিয়ে কোন দল কত আসন পেতে পারে সেটি বিবেচনা এনে দেখা গেছে লিবারেল অনেটাই এগিয়ে আছে। জরিপ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে লিবারেল পার্টি কর্তৃক আসন পাওয়ার সম্ভাবনা ১৬৩টি। আর কনজার্ভেটিভ পার্টি কর্তৃক আসন পাওয়ার সম্ভাবনা ১৩৫টি। এনডিপি পেতে পারে ১৯ টি আসন। বøক কুইবেকার ১৬টি আর গ্রীন পার্টির ৪ টি আসন পাবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে জরিপ ফলাফলে।
উল্লেখ্য যে, উপরের এই ফলাফল বিভিন্ন জরিপ প্রতিষ্ঠানের সংগৃহীত তথ্যের গড় হিসাব। অর্থাৎ কোন একক প্রতিষ্ঠানের জরিপ ফলাফল নয় এটি। ফলে এর ওপর অনেকটাই বিশ্বাস স্থাপন করা যেতে পারে। জরিপের এর এই গড় হিসাবটি তৈরী করেছে সিবিসি নিউজ এর পুল ট্রাকার। কানাডার প্রতি নির্বাচনের আগেই সিবিসি এই কাজটি করে থাকে।
এদিকে গ্রেটার টরন্টোতে লিবারেল পার্টি বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। আইপলিটিক্স এর পক্ষে মেইনস্ট্রিট রিসার্স এর পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে জিটিএ অঞ্চলে লিবারেল পার্টির সমর্থক রয়েছে ৪৫.৪%। আর কনজার্ভেটিভ পার্টির সমর্থক ৩১.৩%। এনডিপি ও গ্রীন পার্টির সমর্থক যথাক্রমে ১০.৫ এবং ৮.৩%। উল্লেখ্য যে জিটিএ অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট বাস করেন। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাব মতে গ্রেটার টরন্টোর ৫১.৫% অধিবাসীই ভিজিবল মাইনরিটি গ্রæপের সদস্য। ২০১৬ সালের হিসাব এটি। আর এই ভিজিবল মাইনরিটির সদস্যদের মধ্যে লিবারেল পার্টির সমর্থক বেশী। গত ফেডারেল নির্বাচনে এই গ্রেটার টরন্টো এলাকায় একচেটিয়া ভোট পায় লিবারেল পার্টি।
মুসলিম ভোটারদের মধ্যেও লিবারেল পার্টির সমর্থক বেশী। কানাডার গত ফেডারেল নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক মুসলিম ভোটার ভোট দেন লিবারেল পার্টিকে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মুসলিম ভোটারদের ৬৫% ভোট দেন জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেলক পার্টিকে। এনডিপেকে ভোট দেন ১০%, কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দেন ২%, গ্রীন পার্টিকে ভোট দেন ১%, অন্যান্যদেরকে ১%। ১৯% মুসলিম ভোটার কোন পার্টিকে ভোট দিয়েছেন তা বলেননি। এনভায়রনিকস ইনস্টিটিউটের এক জরীপের বরাত দিয়ে সিবিসি নিউজ এ তথ্য জানায়।
মুসলিম ভোটারগণ লিবারেল পার্টিকে ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছিলেন এই আশা নিয়ে যে, দলটি ক্ষমতায় এলে কানাডায় মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এই ধারণা ৯০% মুসলিম ভোটারের।
জরীপে আরো দেখা গেছে, সিটিজেনশীপ সেরিমনিতে নিকাব পরার অধিকার বাস্তবায়িত করার জন্য এবং বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী বিল সি-৫১ এর বিরোধীতা করার জন্যও অনেক মুসলিম ভোটার লিবারেল পার্টিকে ভোট দিয়েছিলেন তখন। নিকাব এবং বিল সি-৫১ বিষয়ে কনজারভেটিভ পার্টির বাড়াবাড়ি মুসলিম ভোটাদের মনকে বিক্ষুব্ধ করার পিছনে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল। সেই সাথে ভূমিকা রেখেছিল দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের বিল সি-২৪।
সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকার কর্তৃক “barbaric cultural practices” tip line প্রবর্তনের প্রচেষ্টাও অনেক মুসলিম ভোটারকে ক্ষুব্দ করেছিল বলে মনে করা হয়। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়েদেরকে জোর করে বিয়ে দেয়া, অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া ইত্যাদিকে বার্বারিক কালচার বলে আখ্যা দিয়েছিল সাবেক কনজারভেটিভ সরকার।
উল্লেখ্য যে, এবার আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনে প্রত্যেক মুসলিমকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান কানাডার ৬৯টি মসজিদের ইমাম। গত এপ্রিল মাসে আলবার্টা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অন্টারিও, নোভা স্কশিয়া এবং কুইবেক এই পাঁচটি প্রদেশের ৬৯টি মসজিদের ইমামরা জুম্মার নামাজে চারটি ভিন্নভিন্ন ভাষায় একটি সমন্বিত খুতবা পাঠ করেন। খুতবায় ভোট দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। খবর সিবিসি নিউজের।
২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী কানাডায় ১০ লাখ মুসলমান রয়েছে। চলতি বছর সিএমভি (কানাডিয়ান মুসলিম ভোট) বলেছে যে, দেশটিতে বৈধ মুসলিম ভোটোরের সংখ্যা হবে ১৬ লাখের মতো।
ইলেকশনস কানাডার গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য যে কোন ধর্মীয় গ্রুপের চেয়ে মুসলিমরা ঐতিহাসিকভাবেই ভোট দিতে যান সবচেয়ে কম। নির্বাচনী সংস্থার এক কর্মপত্রে বলা হয়, ২০০০ সালের নির্বাচনে মুসলিমদের ভোটদানের সংখ্যা ছিলো ৬৭ শতাংশ। সেই তুলনায় ইহুদিদের ভোটদানের পরিমাণ ছিলো ৮৫ শতাংশ, ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্টদের ৮২ শতাংশ আর হিন্দুদের ৭৮ শতাংশ। জাতীয় পর্যায়ে সকল ভোটারদের ভোটদানের পরিমান ছিলো ৬১.২ শতাংশ।
২০১৫ সালের নির্বাচনে ওই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। নির্বাচনের পর মেইনস্ট্রিট রিসার্চের এক জরিপ অনুযায়ী, সেবার ৭৯ শতাংশ মুসলিম ভোটার ভোট দেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পর্যায়ে সকল ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের সংখ্যা ছিলো ৬৮.৫ শতাংশ।
নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত জাতীয় নেতৃবৃন্দ শিশুদের আদর করতে ভুলেননি। ছবি : ফেসবুক
এবারের নির্বাচেনে কানাডার তরুণ ও যুবক বয়সী ভোটারদের ভোট নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। গত নির্বাচনেও তাদের গুরুপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে লিবারেল পার্টির নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পিছনে। ফলে এবারও লিবারেল পার্টি তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছে। আর এর অংশ হিসাবে লিবারেল পার্টি আশ্বাস দিয়েছে এই বলে যে, নির্বাচনে জয়ী হলে তারা ‘কানাডা স্টুডেন্ট গ্রান্ট’ ৪০% বৃদ্ধি করবে এবং স্টুডেন্ট লোন রিপেমেন্ট এর গ্রেস পিরিয়ড দুই বছর করা হবে। এছাড়াও তরুণ ও যুবকদের আকৃষ্ট করার জন্য লিবারেল পার্টি জলবায়ু পরিবতর্ন, হেলথ সার্ভিসেস ও অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ে কাজ করার প্রতিশ্রæতিও দিয়েছে।
অন্যান্য পার্টিও তরুণ ও যুবক বয়সী ভোটারদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
উল্লেখ্য যে, তরুণ বা যুবক বয়সী ভোটাদের মধ্যে ভোট দেবার প্রবণতা কানাডায় কম। কিন্তু গত নির্বাচনে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে এবারও তারা ব্যাপক সংখ্যায় ভোট দিতে আসবেন ভোট কেন্দ্রে। Ipsos এর জরিপে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোটারদের উদ্বেগের শীর্ষ কারণ জীবনযাত্রার ব্যয়
নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে কানাডীয়রা নিজেদের এবং তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত। ৭২ শতাংশ কানাডীয় বলেছেন, তারা উদ্বিগ্ন বা কিছু পরিমাণে উদ্বিগ্ন। মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন আর ২২ শতাংশ বলেছেন, তারা কিছু পরিমাণে আশাবাদী। ভোটারদের এই চিন্তুা ও উদ্বিগ্নতা আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিবিসি নিউজের পক্ষে Public Square Research and Maru/Blue নামের প্রতিষ্ঠান এই জরিপ চালায়।
ঐ জরিপে অবশ্য দেখা গেছে নতুন কানাডীয়দের মধ্যে আশাবাদ একটু প্রবল। তাদের অর্ধেকের সামান্য কম সংখ্যক বলেছেন যে তারা আশাবাদী বা কিছু পরিমাণে আশাবাদী। কোন বিষয়টি তাদেরকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে জানতে চাওয়া হলে ৩২ শতাংশ বলেছেন, জীবনযাত্রার ব্যয়। জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার জনগণ এবং ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষেরা।
জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ৮৩ শতাংশ বলেছেন, তারা নিত্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো পণ্যের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক বলেন, তারা আবাসন বা অবসরের পর তেমন কোনও সঞ্চয় থাকবে কিনা সে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ১৯ শতাংশ মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ অপেক্ষাকৃত বেশি আটলান্টিক কানাডা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও কুইবেকে। এছাড়া কিছুটা বেশি শিক্ষিত ও তরুণতর কানাডীয়দের মধ্যে এ বিষয়ে উদ্বেগ বেশি।
দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই মানুষের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তন উদ্বেগের দুটি প্রধান কারণ হিসাবে দেখা গেছে। যদিও আলবার্টা, সাসকাচুয়ান ও ম্যানিটোবায় জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে দুই ঃ এক অনুপাতে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
অবশ্য নতুন কানাডীয়দের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয়ের পরেই এসেছে কর্মসংস্থান খুঁজে পাওয়া নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি। যদিও প্রথমবারের মত ভোট দিতে পারার মত পুরনো যারা তাদের মধ্যে উদ্বেগের কারণের তালিকায় জীবনযাত্রার ব্যয়ের চেয়েও এগিয়ে আছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি।
রাজনীতি নিয়ে ভোটারদের মোহমুক্তি
সিবিসি নিউজের পক্ষে পরিচালিত Public Square Research and Maru/Blue জরিপে আরো দেখা গেছে আসন্ন নির্বাচনে ভোট পাওয়া নিয়ে লড়াইরত রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের প্রতি আন্তরিক কোনও আগ্রহ আছে এমন বিশ্বাস কানাডীয়দের আছে বলে মনে হয় না। আর যারা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা রাজনীতির ব্যাপারে আরও বেশি মোহমুক্ত।
জরিপে অংশ নেওয়া কানাডীয়দের পুরো ৮৮ শতাংশ বলেছেন, তারা মনে করেন, রাজনীতিকরা যথাকর্তব্য সম্পাদনের চেয়ে বরং ক্ষমতায় টিকে থাকার ব্যাপারে বেশি যত্নবান । অন্যদিকে ৪৭ শতাংশ বলেছেন, কোনও দলই তাদের (জনগণের) আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে না।
অবশ্য প্রথম ভোটার হওয়া কানাডীয়দের মধ্যে এই মনোভাব খুব জেরোলো নয়। বরং ২৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে যাদের বয়স তাদেরই বেশিরভাগ মনে করেন কোনও রাজনৈতিক দলই তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মনোযোগী নয়।
যারা দেশ পরিচালনা করে তাদের সঙ্গে অন্য সবার দূরত্বের যে অনুভূতি সেটাই জনগণের রাজনীতি নিয়ে মোহমুক্তির অন্যতম কারণ বলে মনে হয়; ৭৮ শতাংশ মানুষ বলেন, তাদের বিশ্বাস, দেশ “সাধারণ মানুষ” এবং “অভিজাত শ্রেণী”র মধ্যে বিভক্ত।
এর পরও কানাডীয়রা মনে করেন, গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জরিপে অংশ নেওয়াদের এক বিরাট অংশ (৯৫ শতাংশ) বলেন, ভোট দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য এই বক্তব্যের ব্যাপারে তারা জোরালোভাবে কিংবা অনেকটাই একমত।
তবে কার্যত সবাই ভোট দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য মনে করলেও এক-তৃতীয়াংশের সামান্য কিছু বেশি সংখ্যক মানুষ বলেন, তাদের ভোট দেওয়া না দেওয়ায় তেমন কিছুই যায় আসে না। আবার এক-চতুর্থাংশ কানাডীয় বলেন, জেনেশুনে ভোট দেওয়ার মত যথেষ্ট তথ্য তাদের কাছে নেই। এধরণের কথা বলেছেন নব্য ভোটারদের ৫৬ শতাংশ।
অভিবাসন এবং অশ্বেতাঙ্গ নবাগতদের প্রতি মনোভাব নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠতে পারে
অভিবাসন এবং কানাডায় উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখা অশ্বেতাঙ্গ নবাগতদের প্রতি মনোভাব একটি নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। এর সঙ্গে বিশ্বজুড়ে একানায়কতন্ত্রী লোকরঞ্জনবাদের উত্থানের সম্পর্ক আছে। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকেওএস-এর জরিপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ কানাডীয় মনে করে, অনেক বেশি সংখ্যক অভিবাসী এদেশে আসছে।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফ্রাঙ্ক গ্রেভস হাফিংটন পোস্টকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তারা যেটা দেখে আসছেন অভিবাসীবিরোধীর সংখ্যা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ’৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে যখন ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ অভিবাসনের বিরোধী ছিলো তখনকার চেয়ে অভিবাসীবিরোধীর সংখ্যা এখন আসলে কমেছে।
তবে জরিপে এটাও প্রতিফলিত হয়েছে যে, নবাগতদের বিশেষ করে যারা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু তাদের স্বাগত জানাতে অনীহা এখন একই স্তরে রয়ে গেছে। আর এই বিষয়টিই কিছুটা অভিনব।
গ্রেভস বলেন,“এটি বর্ণবাদী বৈষম্যের যথেষ্ট স্পষ্ট পরিমাপ। কানাডীয়দের একটি বেশ বড় অংশ এদেশে খুব বেশি সংখ্যক নাকি অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক অভিবাসী আসছে সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেবে এমন কোনও ধারণার ক্ষেত্রে গায়ের রঙের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিচ্ছে।”
গ্রেভস বলেন, পরিসংখ্যান থেকে এই ইস্যুতে লিবারেল ও কনজারভেটিভ দলের সমর্থকদের মধ্যে “নাটকীয়” ব্যবধান দেখা গেছে।
এদেশে খুব বেশি, খুব কম, নাকি যথাযথ সংখ্যক দৃশ্যমান সংখ্যালঘু অভিবাসী আসছে এমন প্রশ্ন করা হলে কনজারভেটিভ দলের
সমর্থকদের ৬৯ শতাংশই বেছে নিয়েছেন “খুব বেশি”। অন্যদিকে লিবারের দলের সমর্থকদের মধ্যে “খুব বেশি” বেছে নেন ১৫ শতাংশ মাত্র।
নির্বাচনকালে অভিবাসন নিয়ে ভীতি ছড়ানোর বিষয়ে কানাডীয়দের সতর্ক থাকার কথা বলেন জাস্টিন ট্রুডো
চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের সময় অভিবাসন নিয়ে ভীতি ছড়ানোর বিষয়ে ভোটারদের সতর্ক থাকতে বলেছেন জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এটি একটি জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।
ইতিপূর্বে নিউ ব্রান্সউইকে এক সভায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এই পূর্বাভাস দেন। ট্রুডো শ্রোতাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, এমন মানুষ আছে যারা অভিবাসন নিয়ে সারা কানাডায় ভীতি, অসহিষ্ণুতা ও একধরণের ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি অবশ্য কোনও ব্যক্তি বা গ্রæপের নাম উল্লেখ করেননি।
তিনি বলেন, “কানাডা এবং বিশ্বজুড়ে অভিবাসনের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরণের ভীতি, অসহিষ্ণুতা ও ভুল তথ্য ছড়ানোর ব্যাপারটি এমন যে এ বিষয়ে আমাদের সবারই দায়িত্ব হলো ইতিবাচক ও চিন্তাশীলতার সঙ্গে এগিয়ে আসা।”
ট্রুডোর লাভালিন ও মুখোশ বিতর্ক
গত নির্বাচনে জয়ী হবার পর জাস্টিন ট্রুডো প্রথম দুই বছর প্রচন্ড জনপ্রিয়তায় ভাসছিলেন। তিনি দেশে বিদেশে যেখানে যেতেন সেখানেই রকস্টার রিসেপশন পেতেন। এমনকি তৃতীয় বর্ষেও তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া।
কিন্তু কানাডার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন এর দুর্নীতি নিয়ে এক লঙ্কাকান্ড ঘটে গেল সম্প্রতি কানাডার রাজনীতিতে। সাম্প্রতিক সময়ে কানাডার রাজনীতিতে এমন তুমুল বিতর্ক আর কোন ইস্যু নিয়ে হয়নি। ক্ষমতার চতুর্থ বছরে এসে এই লাভালিন কান্ডে জড়িয়ে পড়েন জাস্টিন ট্রুডো। আর এই বিতর্কটি শুরু হয় লিবারেল পার্টির সাবেক ভেটেরান এ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী জোডি উইলসন-রাইবোল্ড এর পদত্যাগের পর। এর আগে তিনি এটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
জোডি উইলসনের অভিযোগ ছিল, তিনি এটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার উপর অনৈতিকভাবে তীব্র চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল তিনি যাতে নির্মান প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন এর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলায় সাজা না হওয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন। আর এই চাপ এসেছিল প্রধানন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অফিসে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ মেম্বারদের কাছ থেকে। কয়েকজন মন্ত্রীও এই চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
কিন্তু জোডি উইলসনের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, এসএনসি-লাভালিন এর বিষয়ে পক্ষপাতমূলক কিছু বলা হয়নি এবং কোন সুবিধাও চাওয়া হয়নি। আর নিয়ম ভঙ্গ করে কোন চাপও প্রয়োগ করা হয়নি ডোডি উইলসনের উপর।
উল্ল্খ্যে যে, ইতিপূর্বে Globe and Mail পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এসএনসি-লাভালিন চলমান মামলার রায়ে কোনো সাজা না দিতে জাস্টিন ট্রুডো সরকারের কাছে জোর তদবির করেছে। মন্ট্রিয়লভিত্তিক কোম্পানিটির মতে, বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে হুমকিতে পড়বে হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ এবং চাকরি হারাতে পারে প্রায় ৯ হাজার কর্মী।
তবে এসএনসি-লাভালিন এর প্রধান নির্বাহী নীল ব্রুস এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। কানাডিয়ান প্রেস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা কখনোই প্রধানমন্ত্রীর নিকট চলমান মামলার রায়ে কোনো সাজা না দিতে তদবির করিনি।
লিবারেল সমর্থকদের অভিমত – সামনে ফেডারেল
নির্বাচন। এরকম একটা মূহুর্তে নিজ দলের সরকারের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করার অর্থ নিশ্চিতভাবেই বিরোধী দলের নিকট বল ছেড়ে দেয়া এবং আসন্ন নির্বাচনে নিজ দলের ভড়াডুবির পথ পরিষ্কার করা। এটুকু বোঝার ক্ষমতা নিশ্চই জোডি আর ফিলপটের আছে। তা হলে তারা কেন এমন একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আর তারা যদি মনেপ্রাণে বিশ্বাসই করে থাকেন যে লিবারেল পার্টির প্রধান নেতা জাস্টিন ট্রুডো দুর্নীতিগ্রস্ত তবে তারা লিবারেল পার্টির সঙ্গে সকল সম্পর্ক ত্যাগ করেননি কেন নিজ থেকে? কেনই বা বলে আসছিলেন আগামী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির হয়েই আবার প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন? এই স্ববিরোধীতা কেন?
জোডি উইলসনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে তখন লিবারেল পার্টির এমপি ও সাবেক মন্ত্রী জেন ফিলপট-ও মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বলেন সরকারের দুর্নীতি তদন্ত পরিচালনার বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। উল্ল্খ্যে যে, ফিলপট জোডি উইলসনের খুব ঘনিষ্ট বন্ধু হিসাবে পরিচিত।
পরে অবশ্য এই দুইজনজকেই লিবারেল পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়। কৌতুহলের বিষয় হলো, জোডি উইলসনের বিষয়ে বিরোধী দলের অভিযোগ কম ছিল না। তিনি মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করেছেন এমন অভিযোগ তারা ইতিপূর্বে করেছে। তার বিরুদ্ধে পরশ্রীকাতরতা, বিদ্ধেষ, হিংসা ইত্যাদির অভিযোগও তুলেছে বিরোধী দল ইতিপূর্বে। তিনি বিতর্কত এক ব্যক্তিকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে দেখতে চয়েছিলেন এমন তথ্যও এখন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। অন্যদিকে জেন ফিলপট ইতিপূর্বে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন টেক্সপেয়ারদের অর্থে লিমোজিনে চড়ে বিলাস ভ্রমণের জন্য। তার বিরুদ্ধে যখন এই অভিযোগ উঠে তখন তিনি সত্য গোপন করে পার্লামেন্টকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানা যায়।
এখন এই এসএনসি-লাভালিন ইস্যু আসন্ন নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডোর জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরী করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এদিকে জাস্টিন ট্রুডোকে নিয়ে সর্বশেষ বিতর্ক শুরু হয় তার ব্রাউন ও বø্যাক মাস্ক পড়া নিয়ে।
দেড় যুগ আগের কথা। তখন স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে ‘কালো মেকআপ’ করা একটি ছবি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়। ছবিটি ছিল কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর। এর পর ওই ঘটনার জন্য অকপটে ক্ষমা চেয়েছেন ট্রুডো।
নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ওই ছবিটি টাইম ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর থেকে কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
ছবিটি নিয়ে ‘গভীরভাবে অনুতপ্ত’ ট্রুডো বলেন, ওই মেকআপ নেওয়ার আগে তার বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও ‘ভালো করে জানা উচিত ছিল’।
বিষয়টি নিয়ে ট্রুডো ক্ষমা চাইলেও কেউ কেউ মনে করছেন নির্বাচনের ফলাফলে এটি প্রভাব ফেলতে পারে। আবার এমনো অনেকে আছেন যারা বিষয়টিকে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
অন্যদিকে নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে প্রবল এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রধান এন্ড্রু শিয়ার্স-ও। তিনি একজন দ্বৈত নাগরিক। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আছে তার। কিন্তু বিষয়টি তিনি এতদিন গোপন রেখেছিলেন জনগনের কাছে। এন্ড্রু শিয়ার্স বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হলেও দাবী করেন- এটি কোন বিষয় নয়। কানাডায় বহুলোকের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে।
চরম বর্ণবাদী ও মুসলিম বিরোধী নতুন দল এবারের নির্বাচনে
গত বছর সেপ্টেম্বরে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল পিপল’স পার্টি অব কানাডা’র প্রধান ও সাম্প্রতিক সময়ের অতি বিতর্কিত এক ব্যক্তি ম্যাক্সিম বার্নিয়ার। তিনি এর আগে কানাডার কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পদেও ছিলেন। কিন্তু গত ফেডারেল নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ পার্টির পরাজয়ের পর তিনি দলের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়াইও করেছেন। তবে সুবিধা করতে পারেননি। পরে ঐ দল থেকে বের হয়ে এসে নিজেই একটি দল গঠন করেন যার নাম পিপল’স পার্টি অব কানাডা। চরম রক্ষণশীলতা, ইমিগ্রেন্ট ও মুসলিম বিরোধীতার জন্য ইতিমধ্যেই তিনি বিতর্কের শীর্ষবিন্দুতে উঠে এসেছেন। তিনি এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্ধ›িদ্বতা করছেন তার নবগঠিত দলসহ। আর তার বিশ্বাস, ‘ইসলামী জঙ্গীরা’ কানাডার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে।
উল্লেখ্য যে, নির্বাচন প্রাক্কালে চরম রক্ষণশীল দল পিপল’স পার্টি অব কানাডার প্রধান ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের ছবি সম্বলিত এক বিলবোর্ড এর বক্তব্য নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সুদৃশ্য ঐ বিলবোর্ডে লেখা ছিল ‘say NO to mass immigration.’ ভেঙ্কুভার, ক্যালগারী, হ্যলিফেক্স, টরন্টো এবং রিজাইনাতে এই বিলবোর্ড সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হাফিংটন পোস্ট জানায়, নভাস্কোশিয়ার রাজধানী হ্যালিফেক্স এর হাইওয়ের পাশে স্থাপিত এরকম একটি বিলবোর্ড দেখে প্রভিন্সটির প্রিমিয়ার স্টিফেন ম্যাকনিল বলেন, আমি নভাস্কোশিয়াতে সবাইকে স্বাগত জানাই। তবে আমি এই ধরনের নেতিবাচক ও বিভেদ সৃষ্টিকারী সুর পছন্দ করি না। তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী, আমাদের বেকারত্বের হার এখন রেকর্ড পরিমাণে কম এবং আমাদের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটছে। আর এর জন্য প্রধানত আমরা ইমিগ্রেন্টদের ধন্যবাদ জানাই।
পিপল’স পার্টি অবশ্য দাবী করেছে এই বিলবোর্ড লাগানোর সঙ্গে তারা জড়িত নয়। অন্য কেউ এটি লাগিয়েছে। তবে লক্ষ্যনীয় যে, বিলবোর্ডের নিচে পিপল’স পার্টির নাম সুষ্পষ্টভাবেই লেখা রয়েছে। পরে অবশ্য বিলবোর্ডগুলো নামিয়ে ফেলা হয়েছে প্রচন্ড বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার কারণে।
আশংকার বিষয় হলো, এই চরম বর্ণবাদী দলটি এবং এই দলের প্রধান ক্রমশ কানাডার মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে প্রচার পাচ্ছে।
বিভিন্ন দল কর্তৃক এবারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি
বরাবরের মত এবারও নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের মন জয় করার জন্য একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে টেক্স কাট, চাইল্ড বেনিফিট, ওল্ড এজ সিকিউরিটি পেমেন্ট, হেলথ কেয়ার, মিনিমাম ওয়েজ, ইন্টারেস্ট ফ্রি লোন সহ আরো অনেক কিছু। সিবিসি নিউজে এর একটি তালিকা তুলে ধরা হয় যা সংক্ষেপে নিন্মরূপ-
লিবারেল পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি:
লিবারেল পার্টির এবারের বহুল উচ্চারিত স্লোগান হলো মধ্যবিত্তের জীবনমান উন্নয়ন। যারা নতুন বাবা-মা, তাদের ‘এমপ্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্স বেনিফিট’ টেক্স ফ্রি করা হবে। চাইল্ড টেক্স বেনিফিট-কে অধিকতর উদার করা হবে শিশুর জন্মের প্রথম বছর। স্টুডেন্টদের জন্য পোস্ট সেকেন্ডারী গ্র্যান্ট বৃদ্ধি করা হবে। সিনিয়র সিটিজেনদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বা তারো বেশী, তাদের ওল্ড এজ সিকিউরিটি পেমেন্ট বৃদ্ধি করা হবে। হেলথ কেয়ার খাতে ৬ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করা হবে। ফেডারেল সরকারের অধিনে যারা কাজ করছেন তাদের মিনিমাম ওয়েজ ১৫ ডলার করা হবে। পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ২ বিলিয়ন গাছ লাগনোর কথাও বলা হয়েছে লিবারেল পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে।
কনজার্ভেটিভ পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি:
কনজার্ভেটিভ পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে বিভিন্ন খাতে টেক্স কমিয়ে জনজীবনকে আরো সাশ্রয়ী করে তোলা। কনজার্ভেটিভ পার্টির এবারের স্লোগান হলো ‘আপনার সামনে এগিয়ে যাবার সময় এসেছে’। আর এটি বাস্তবায়ন করার জন্য দলটি ইউনিভার্সাল টেক্স কাট এর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এর জন্য ফেডারেল অর্থভান্ডার থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বছরে।
এনডিপি’র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি:
এনডিপি’র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে ন্যাশনাল ফার্মাকেয়ার। এই মাল্টি বিলিয়ন প্লান বাস্তবায়িত হলে গড়ে একটি পরিবার বছরে ৫ শত ডলারের বেশী সেভ করতে পারবে। ডেন্টাল কেয়ারের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে এনডিপি। আগামী ১০ বছরে ৫ লক্ষ ইউনিট এফরডেবল হাউজ তৈরী করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে এই দলটি।