ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের দিন : বাড়ছে লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা, পিছিয়ে পড়ছে কনজার্ভেটিভ পার্টি
জুলাই ১৭, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। আগামী অক্টোবর মাসের ২১ তারিখে ফেডারেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর এর মধ্যেই ক্রমশ বাড়ছে পিছিয়ে থাকা জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা। অন্যদিকে হ্রাস পাচ্ছে এন্ড্রু শিয়ারের নিতৃত্বাধীন এগিয়ে থাকা প্রধান বিরোধী দল কানর্জাভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা।
গত ২৭ জুন থেকে শুরু করে ২ জুলাইয়ের মধ্যে ‘মেইনস্ট্রিট রিসার্স’ পরিচালিত সর্বশেষ জরীপে দেখা যাচ্ছে লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা বর্তমানে ৩৫%। আর কনজার্ভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা ৩৩.২%। অথচ এর মাত্র সপ্তাহ দুই আগে গ্লোবাল নিউজে প্রকাশিত ‘ইপসোস’ এর এক জরীপে বলা হয়েছিল মাত্র ৩২ ভাগ কানাডিয়ান মনে করেন জাস্টিন ট্রুডো পুননির্বাচেরন যোগ্য। ঐ জরীপে আরো বলা হয় – কেন্দ্রীয় নির্বাচনের চার মাস বাকি থাকতে ভোটারদের সিদ্ধান্তমূলক সমর্থনের দিক থেকে লিবারেল দল কনজারভেটিভদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। আর এই ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য তারা খুব বেশি সময়ও পাচ্ছে না। ‘ইপসোস’ এর নতুন জরিপে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি জনসমর্থন ২০১৫ সালে তার নির্বাচনের সময়ের তুলনায় এখন সর্বনিন্ম রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া লোকেদের মধ্যে মাত্র ৩২ শতাংশ বলেছেন যে, তারা বিশ্বাস করেন, ট্রুডো বেশ ভালো কাজ করেছেন এবং তার পুননির্বাচিত হওয়া উচিৎ। এর বিপরীতে ৬৮ শতাংশ মানুষই মনে করেন , এখন সময় এসেছে অন্য কোনও দলের ক্ষমতায় আসার।
‘ইপসোস’ এর জরীপে আরো বলা হয়, একই সঙ্গে কনজারভেটিভ দল একমাত্র কুইবেক ছাড়া অন্য সব প্রদেশে জনসমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে আছে। অন্টারিও ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় লিবারেল দল এগিয়ে থাকলেও সেই অবস্থান তারা হারিয়েছে। জরিপে বলা হয় এই মূহুর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কনজারভেটিভ দলের নেতা শিয়ার ৩৭ শতাংশ জনসমর্থন পাবেন। ট্রুডো পাবেন ৩১ শতাংশ। আর এনডিপি পাবে ১৮ শতাংশ জনসমর্থন।
মোটামুটিভাবে ১০ শতাংশের মত কানাডীয় বলেন যে, তারা “অন্য কোনও দলকে” ভোট দেওয়ার ব্যাপারে মুক্ত। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোটার বলেন, তারা ব্লক কুইবেকিস-এর পক্ষে ভোট দেবেন। আর কুইবেকের ২২ শতাংশ ভোটার ওই ব্লককে ভোট দেওয়ার কথা বলতে পারেন।
অন্টারিওতে কনজারভেটিভ দলের ৩৮ শতাংশ, লিবারেল দলের ৩২ শতাংশ এবং এনডিপির ২২ শতাংশ জনসমর্থন রয়েছে।
‘ইপসোস’ এর জরীবে আরো বলা হয়, অন্টারিওর মুখ্যমন্ত্রী (প্রিমিয়ার) ডাউ ফোর্ডের অনুসৃত নীতি এই প্রদেশে কেন্দ্রীয় কনজারভেটিভ দলের সমর্থনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখছে বলে প্রাদেশিক জরিপে দেখা যাবার পরও গ্লোবালের জরিপে জনসমর্থনের এই ফলাফল পাওয়া গেছে। এছাড়াও ২০১৫ সালের নির্বাচনে আটলান্টিক কানাডাতেও এগিয়ে থাকা লিবারেল দল এখন পিছিয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে কনজারভেটিভ দলের জনসমর্থন এখন ৪৪ শতাংশ যেখানে লিবারেল দলের মাত্র ২৮ শতাংশ।
লিবারেল দলকে অন্য প্রদেশগুলোতে হারানো জনসমর্থন পূরণ করতে কুইবেকে এনডিপির জনপ্রিয়তায় যে ধস চলছে তাকে পূঁজি করতে হবে। এখানে লিবারেলরা ৩৭ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছে। কনজারভেটিভ দলের সমর্থন ২৪ শতাংশ এবং ব্লক কুইবেকিস-এর ২২ শতাংশ।
‘ইপসোস’ জরীপে আরো বলা হয়, ২০১১ সালের নির্বাচনে যে দলটি ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলো জগমিৎ সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সেই এনডিপির জনসমর্থন এখন ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কনজারভেটিভ দল ৩৩ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছে। এখানে লিবারেল দলের সমর্থন ২৮ শতাংশ। কিন্তু এই প্রদেশে এনডিপি বা ব্লক কুইবেকির বাইরে অন্য কোনও দলকে ভোট দেওয়ার পক্ষে জনসমর্থন অন্য সব প্রদেশের চেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ২২ শতাংশ।
ইপসোস এর জরীপে আরো বলা হয় আলবার্টা, সাসকাচুন এবং ম্যানিটোবায় কনজারভেটিভ দল অনেকটাই এগিয়ে আছে। আলবার্টায় দলটি সিদ্ধান্তমূলক ভোটার সমর্থন পাচ্ছে ৫৫ শতাংশের এবং সাসকাটচাওন ও ম্যানিটোবায় ৪০ শতাংশের। এখানে লিবারেল দলের জনসমর্থন যথাক্রমে ২৪ এবং ৩১ শতাংশ।
কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এখন দেখা যাচ্ছে ভোট পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। উপরে ‘ইপসোস’ এর জরীপ রিপোর্টে যা দেখা গেল তার সাথে সর্বশেষ ‘মেইনস্ট্রিট রিসার্স’ এর মিল নেই। অনলাইন ম্যাগাজিন ‘আইপলিটিক্স’ এর জন্য করা মেইনস্ট্রিট রিসার্সের জরীপে বলা হচ্ছে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি নির্বাচনের ঘোড়দৌড়ে কনজার্ভেটিভ পার্টিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য দুই দলের মধ্যে ব্যবধান খুব বেশী না হলেও ধারণা করা হচ্ছে লিবারেল এর জনসমর্থন ক্রমশ আরো বাড়বে।
মেইনস্ট্রিট রিসার্স এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ছঁরঃড় গধমমর বলেন এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে অন্টারিও, কুইবেক এবং আটলান্টিক কানাডায় এগিয়ে থাকা লিবারেল পার্টি জাতীয় নির্বাচনে জিতে যাবে।
ছঁরঃড় গধমমর আরো বলেন, কানাডার সর্বাধিক জনাকীর্ণ তথা ভোটার সমৃদ্ধ প্রভিন্সগুলোতে লিবারেল এগিয়ে আছে শতকরা ৪১.৬ ভাগ সমর্থন নিয়ে। অন্যদিকে কনজার্ভেটিভ পার্টির সমর্থক রয়েছে শতকরা ৩২ ভাগ। এনডিপি’র সমর্থক শতকরা ১১.৫ ভাগ এবং শতকরা ৯.১ ভাগ সমর্থক রয়েছে গ্রীন পার্টির।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে নৈতিকতা সম্পর্কিত বিতর্ক সত্ত্বেও ট্রুডো এবং লিবারেল দল কানাডীয়দের কাছে জনপ্রিয় ছিল। ইয়াহু কানাডা নিউজ এর এক খবরে বলা হয়েছিল, ঐ সময় নৈতিকতা সম্পর্কিত এক বিতর্কের খবর প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত বড় ধাক্কা সামলে নিতে পেরেছিলেন। গত বছর ৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ন্যানো রিসার্চ-এর এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, জাস্টিন ট্রুডো তখনও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কানাডীয়দের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিলেন (৪৬.৯ শতাংশ), তার পর যথাক্রমে ছিলেন রক্ষণশীল দলের নেতা এন্ড্রু শিয়ার (২১.৫ শতাংশ), এনডিপি নেতা জগমিৎ সিং (৯.১ শতাংশ) এবং গ্রিন পার্টির এলিজাবেথ মে (৩.৯ শতাংশ)। ।
ঐ সময়ে নৈতিকতা সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের রায়ের পর লিবারেল দলের নেতা ট্রুডোর পক্ষে এই জনসমর্থন ছিল বিস্ময়কর। কমিশনার ম্যারি ডাউসন ওই রায়ে বলেছেন ২০১৬ সালে পরিবারের সঙ্গে বাহামায় ছুটি কাটানোর সময় আগা খানের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করায় ট্রুডো স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত আইন লংঘন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন যে, আগা খান তার পারিবারিক বন্ধু। কিন্তু নৈতিকতা বিষয়ক কমিশনার সে দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। ডাউসন বলে দিয়েছেন যে, কানাডার আগা খান ফাউন্ডেশন নিবন্ধিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করার প্রতিষ্ঠান হিসাবে। ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিবৃতিতে মিজ. ডাউসন লিখেছেন, “সুতরাং, মি. ট্রুডো বা তার পরিবার যে উপহার গ্রহণ করেছেন সেটি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাকে প্রভাবিত করার জন্যই দেওয়া হয়েছে।”
নৈতিকতা বিষয়ক কমিশনারের রায়ের পর ট্রুডো ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং এ বিষয়ে পুরো দায়িত্ব গ্রহণ করে বলেছেন, ভবিষ্যতে যে কোনও পারিবারিক ছুটি কাটানোর সময় তিনি সবধরণের সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
নৈতিকতা বিষয়ক কমিশনের রায় প্রকাশের পর নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে টরন্টো স্টার পত্রিকার ন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক লেখক টিম হারপার মন্তব্য করেন, “যদ্দূর মনে হয়, এই সরকারকে কোনওকিছুই ঘায়েল করতে পারবে না।”