বিমান যাত্রীদের সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণের নতুন বিধি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার
কিছু বিধি ১৫ জুলাই থেকে এবং কিছু আগামী ডিসেম্বরে কার্যকর হবে
জুলাই ১৭, ১০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ২৪ মে ২০১৯ : যথাযথ সেবা দিতে ব্যর্থ হলে বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীদের কি কি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে সে সম্পর্কিত নতুন বিধিবিধান ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত শুক্রবার ঘোষিত নতুন এসব বিধিবিধান দুই পর্বে কার্যকর হবে। কিছু বিধি আগামী ১৫ জুলাই কার্যকর হচ্ছে, বাকিগুলো ১৫ ডিসেম্বরের আগে কার্যকর হচ্ছে না। রিপোর্ট করেছেন সিবিসি নিউজ এর পিটার জিমনজিক।
পরিবহন মন্ত্রী মার্ক গারনিউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো আমাদের বিমান সংস্থাগুলোকে জোরদার এবং প্রতিযোগিতামূলক করার নিশ্চয়তা বিধানের পাশাপাশি বিমানযাত্রীদের অধিকারের বিষয়ে যথাযথ ও সম্ভাব্য বিশ্বের সেরা পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের পর নতুন যেসব বিধি-বিধান গ্রহণ করা হয়েছে, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, সেগুলো প্রয়োজনীয় ভারসাম্য অর্জন করেছে এবং যাত্রীদের ব্যয় করা অর্থের বিপরীতে তাদের যে সেবা ও অধিকার প্রাপ্য সেটা নিশ্চিত করবে।
নতুন বিধিগুলো কানাডায় আসা যাওয়া এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইটে এবং কানেকটিং ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। গত দুই বছরে ২০ লাখ বা তারও বেশি সংখ্যক যাত্রী বহন করেছে এমন বৃহৎ এয়ারলাইন এবং ছোট ছোট এয়ারলাইনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু পরিচালন সংক্রান্ত বিধিতে সামান্য ভিন্নতা থাকছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়া বা বাতিল হওয়ার বিষয়টি নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হয়ে যদি বিমান সংস্থার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা কোনও কারণে ঘটে তাহলে ছোট এয়ারলাইনগুলোকে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সচরাচর ফ্লাইট ব্যাহত হওয়া- যেমন টারমাকে বিলম্ব, ফ্লাইট বাতিল এবং যাত্রীকে বিমানে আরোহন করতে না দেওয়া- এসব কারণ বিমান সংস্থার নিয়ন্ত্রণেই থাকে এবং এসব ঘটলে জরিমানা দিতে হবে। যাত্রীসেবার মান সমুন্নত থাকবে এবং যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিমানসংস্থা বাধ্য থাকবে।
বিমান সংস্থার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না তবে যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিতে হবে।
সংস্থার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোনও কারণে ফ্লাইট ব্যাহত হলে সংস্থাটিকে কেবল যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর দায়িত্ব নিতে হবে। বিমানসংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকা পরিস্থিতি হলো অতিরিক্ত যাত্রী বুকিং দেওয়া এবং সময়সূচি রক্ষা করা ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
যান্ত্রিক ত্রুটি এবং পাইলটের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত কোনও ঘোষণার কারণে বিলম্ব হলে সেটিও বিমানসংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন বলে বিবেচিত হবে।
আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও নিরপত্তা হুমকির মতো ব্যাপকভিত্তিক সম্ভাব্যতার কারণে ফ্লাইট ব্যাহত হলে সেটা বিমানসংস্থার নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে।
১৫ জুলাই যেসব বিধি কার্যকর হচ্ছে
প্রথম দফার বিধিতে রয়েছে টারমাকে বিলম্ব ঘটা, যাত্রীকে উড়োজাহাজে চড়তে না দেওয়া, লাগেজ হারিয়ে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো।
টারমাকে বিলম্ব ঘটার ক্ষেত্রে যাত্রীদের সঙ্গে যে আচরণ করতে হবে সে বিষয়ক বিধিগুলো ১৫ জুলাই কার্যকর হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ওই সময় সব যাত্রী যেন ব্যবহারযোগ্য টয়লেটসুবিধা পায় তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
কোনও উড়োজাহাজ তিন ঘণ্টা ধরে টারমাকে থাকলে সেটিকে গেটের কাছে নিয়ে আসতে হবে যাতে যাত্রীরা নেমে যেতে পারে। তবে তিন ঘণ্টা পেরুবার পরও পরবর্তী ৪৫ মিনিটের মধ্যে যদি উড়াল দেবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেটিকে গেটের কাছে আনার দরকার হবে না। সেক্ষেত্রে উড়োজাহাজটি যেখানে আছে সেখানেই থাকতে পারবে।
অতিরিক্ত বুকিং দেওয়া
১৫ জুলাই কার্যকর হতে যাওয়া বিধি অনুযায়ী অতিরিক্ত বুকিং দেওয়ার কারণে কোনও যাত্রীকে বিমানে উঠাতে না পারলে এজন্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট যাত্রীর গন্তব্যে পৌঁছতে চূড়ান্তভাবে কত সময় বিলম্বিত হলো তার ওপর নির্ভর করবে ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ।
ওভারবুকিংয়ের কারণে যাত্রীর গন্তব্যে পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টার কম বিলম্ব হলে তাকে ৯০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ছয় থেকে নয় ঘণ্টা বিলম্ব হলে ১৮০০ ডলার এবং তার চেয়ে বেশি হলে ২ হাজার ৪০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কোনও ব্যাগেজ হারালে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমান সংস্থাকে ক্ষতিপুরণ হিসাবে গুনতে হবে দুই হাজার ১০০ ডলার। সেইসঙ্গে ব্যাগেজ পরিবহন বাবদ নেওয়া অর্থও ফেরত দিতে হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়
১৫ ডিসেম্বরের পর এয়ারলাইনগুলোকে ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিলের জন্য যাত্রীদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ নির্ধারিত হবে এয়ারলাইনের আকৃতির ওপর ভিত্তি করে।
চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছতে উড়োজাহাজের তিন থেকে ছয় ঘণ্টা দেরি হলে বড় এয়ারলাইনকে ৪০০ ডলার এবং ছোট এয়ারলাইনকে ১২৫ ডলার ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হবে। বিলম্বের সময় ছয় থেকে নয় ঘণ্টা হলে বড় এয়ারলাইনকে ৭০০ এবং ছোট এয়ারলাইনকে ২৫০ ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর যদি নয় ঘণ্টার চেয়েও বেশি দেরি হয় তাহলে বড় এয়ারলাইনকে ১০০০ ডলার ও ছোট এয়ারলাইনকে তার অর্ধেক পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, বিমানসংস্থাগুলো কেবল যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছার নিশ্চয়তা বিধান করবে এটুকুই চাওয়া হয়নি বরং যাত্রীদেরকে একইরকম সেবাদান নিশ্চিত করতে হবে।
কোনও এয়ারলাইন যদি কোনও যাত্রীকে তাদের নিজেদের বিমানে রি-বুক করতে না পারে এবং বিলম্বের পরিমাণ যদি নয় ঘণ্টার বেশি হয় তাহলে ওই যাত্রীকে একই মানের কোন বিমান সংস্থার বিমানে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিলম্বের কারণে যাত্রী যদি গন্তব্যে যেতে নিরুৎসাহিত হন তাহলে তাকে টিকিটের টাকা ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে।
মধ্য ডিসেম্বর থেকে এয়ারলাইনগুলোকে এটিও নিশ্চিত করতে হবে যে পাঁচ বছর বয়সী শিশু যেন তার বাবা-মা অথবা অভিভাবকের পাশের সিটে বসতে পারে। পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুকে বাবা-মা বা অভিভাবকের সিটের একই সারিতে এক সিটের বেশি দূরত্বে বসানো যাবে না। আর ১২ বা ১৩ বছর বয়সী শিশুকে এক সারির বেশি দূরে বসানো যাবে না।
নতুন এসব বিধিবিধান লংঘন করলে কানাডার ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাকে প্রতিটি ঘটনার জন্য ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে।
কানাডিয়ান ট্রান্সপোর্টেশন এজেন্সির চেয়ারম্যান ও সিইও স্কট স্ট্রেইনার এক বিবৃতিতে জানান, নতুন বিধিমালা প্রণয়নে যে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে তাতে হাজারও কানাডীয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, “তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন সেজন্যে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আস্থাশীল যে যাত্রীদের বিমানযাত্রা যদি সুষ্ঠু না হয় তাহলে নতুন যুগান্তকারী বিধিগুলো যাত্রীদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।”