অপরাধীরা টরন্টোর রিয়েল এস্টেটে শত শত কোটি ডলার লুকিয়ে রাখছে, দাবি নজরদারি প্রতিষ্ঠানের

মে ৫, ২০১৯

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কানাডা এক নতুন প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, অপরাধীরা বৃহত্তর টরন্টো এলাকায় বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি কেনার মাধ্যমে শত শত কোটি ডলারের স্নো-ওয়াশিং করছে। খবর সিবিসি নিউজের।

এর মানে কি?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জেমস কোহেন ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “আপনার অবৈধ অর্থ কানাডায় নিয়ে আসুন, সেটা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ ধবল বরফের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

দুর্নীতিবিরোধী গ্রুপটি কানাডিয়ানস ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস অ্যান্ড পাবলিশ হোয়াট ইউ পে কানাডা নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে গত বৃহস্পতিবার কুইন্স পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাপকতর মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি সম্পর্কিত তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে।

রিপোর্ট প্রণেতারা সেই ২০০৮ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ আবাসিক সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া পরীক্ষা করেছেন। গ্রুপটির প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলির মধ্যে ছিলো ব্যক্তিমালিকানাধীন করপোরেশনগুলো উল্লেখিত সময়ের মধ্যে বিলাসবহুল আবাসিক বাড়ির পেছনে ২,৮৪০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে (যেগুলোর প্রকৃত মূল্য হয়তো ৭০ লাখ থেকে এক কোটি ডলার মাত্র) এবং তাদের মুনাফা লাভকারী মালিকদের সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি।

ওইসব কোম্পানি বাড়িগুলোর জন্য আপাতদৃষ্টে নগদ ৯৮০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে যা তাদেরকে কোনও আর্থিক সংস্থার ঝাড়াই-বাছাই প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেবে। ট্রান্সপারেন্সির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোম্পানিগুলো যখন বন্ধকি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে তখন তারা মোট অর্থের অর্ধেকটা অনিবন্ধিত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধার নিয়েছে বলে দেখিয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠান মানি-লন্ডারিংবিরোধী আইনের আওতায় পড়বে না।

রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জিটিএ-তে ২,৫৪০ কোটি ডলারের আবাসিক মর্টগেজ এই ধরণের লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।

রিপোর্ট প্রণেতা অ্যাডাম রস উল্লেখ করেন যে, টরন্টোর হাউজিং মার্কেট হলো সারা বিশ্বে সবচেয়ে কম সাশ্রয়ী। এখানে ভাড়ার আবাসনের যেমন স্বল্পতা রয়েছে তেমনই বাড়ি কেনাও অনেকের সাধ্যের বাইরে।

রস বলেন, কালো টাকা এই ব্যয়বহুলতার সঙ্কট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ কালো টাকার মালিকরা সেইসব ক্রেতাদের মাধ্যমে বাজারে বাড়তি চাহিদার সৃষ্টি করেছে যাদের বাড়তি অর্থ হস্তান্তরের মাধ্যমে আরও বেশি কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক লক্ষ্য আছে।

তিনি বলেন, “আমরা কেউই একজন অপরাধীর পাশে বসবাস করতে কিংবা এমন কোনও বাড়ির পাশে থাকতে চাই না যেটা খালি পড়ে থাকে বা কোনওরকম রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না।”

অন্টারিওর প্রাক্তন লেবার দলীয় সরকার বিদেশি ক্রেতাদের জন্য একটি ট্যাক্স নির্ধারণ করেছিলো এবং জল্পনা-কল্পনা নিরুৎসাহিত করতে অডিটের ব্যবস্থা চালু করেছিলো যদিও তাতে করে বিদেশিদের বাড়ি কেনা কমে এসেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। রস বলেন, সন্দেহজনক মানি লন্ডারিংয়ের ওপর ট্যাক্স বসানো অপরাধীদেরকে কানাডায় আসতে উৎসাহিত করেছে কারণ এতে করে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি বিরল ঘটনায় পরিণত হয় এবং তারা চাইলে প্রায়শ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।

তবে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার উপস্থাপিত বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার কানাডার ফাইনান্সিয়াল ট্রানজেকশনস অ্যান্ড রিপোর্ট অ্যানালাইসিস সেন্টারের (FINTRAC) জন্য এক কোটি ৬৯ লাখ ডলারের বরাদ্দ রাখায় তিনি খুশি। এই সংস্থাটিই কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা যেটি মানি লন্ডারিং চিহ্ণিতকরণ, প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার লক্ষ্যে কাজ করে।

রিয়েল এস্টেট বোর্ড বলছে, বেশিরভাগ লেনদেনই স্বচ্ছ

টরন্টোর রিয়েল এস্টেট বোর্ড বলেছে, রিয়েল এস্টেট মার্কেটে মানি লন্ডারিং চিহ্ণিতকরণ ও ঠেকানোর বিধি-ব্যবস্থা আগে থেকেই আছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। ফিনট্র্যাক নিয়মিতই এসব লেনদেন পরীক্ষা করে থাকে।

সিবিসি টরন্টোকে দেওয়া এক বিবৃতিতে টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ডের সিইও জন ডিমিশেল বলেন, “এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত এক দশকে আধা ট্রিলিয়নের বেশি অর্থের যে লেনদেন হয়েছে তার বৃহদংশই স্বচ্ছ প্রকৃতির।”

ডিমিশেল বলেন, সম্পত্তির মালিকরা যদি অজ্ঞাতনামা থাকতে চান তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। অন্টারিওর ভূমি রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা কোম্পানি বা ট্রাস্টগুলোকে এধরণের সুবিধা দেয়।