কেনিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা : কেড়ে নিল কানাডার একই পরিবারের তিন প্রজন্মের ৬ জন এবং অপর এক পরিবারের ৫ জন

এপ্রিল 8, 2019

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কেনিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নিল কানাডার ১৮ জন নাগরিককে। এদের মধ্যে আছেন ব্র্যাম্পটনের একই পরিবারের তিন প্রজন্মের ৬ জন। একই দুর্ঘটনায় অন্য একটি পরিবারের ৫ জন নিহত হন। সব মিলিয়ে ঐ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ বিমানকর্মীসহ ১৫৭ জন। গত ১০ মার্চ নাইরোবীগামী ইথিউপিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমান ইটি-৩০২ আকাশে উড়ার মাত্র ৬ মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়।

তিন প্রজন্মের ৬ জন নিহত হওয়া পরিবারটি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এরা হলেন ব্র্যাম্পটনের অধিবাসী পনেঙ্গেস বৈদ্য (৭৩), তার স্ত্রী হানসিনি বৈদ্য (৬৭), তাদের মেয়ে কোশা বৈদ্য (৩৭), কোশার স্বামী প্রীরিত দিক্ষিত (৪৫) এবং তাদের দুই কন্যা অনুশকা দিক্ষিত (১৩) ও আশকা দিক্ষিত (১৪)।

তিন প্রজন্মের ৬ জন নিহত হওয়া এই পরিবারটি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এরা হলেন ব্র্যাম্পটনের অধিবাসী পনেঙ্গেস বৈদ্য (৭৩), তার স্ত্রী হানসিনি বৈদ্য (৬৭), তাদের মেয়ে কোশা বৈদ্য (৩৭), কোশার স্বামী প্রীরিত দিক্ষিত (৪৫) এবং তাদের দুই কন্যা অনুশকা দিক্ষিত (১৩) ও আশকা দিক্ষিত (১৪)। ছবি : প্রমেশ নন্দি/ফেসবুক

অনুশকা ব্র্যাম্পটনের চিংকুজি সেকেন্ডারী স্কুলের ছাত্রী ছিল। তার তার বোন আশকা ছিল সেন্টেনিয়াল সিনিয়র পাবলিক স্কুলের ছাত্রী।

অনুশকা ও আশকা’র মামা মানান্ত বৈদ্য তাদের সবাইকে পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন কেনিয়া যাওয়ার জন্য। সিবিসি নিউজকে তিনি জানান, কেনিয়াতে জন্মেছিলেন এই দুই শিশুর মা কোশা বৈদ্য। তিনি চেয়েছিলেন দুই মেয়েকে তার জন্মস্থানটি দেখিয়ে আনতে। আর এর জন্য এবারের মার্চ ব্রেক এর সময়টাকে তারা বেছে নিয়েছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মানান্ত বলেন, এটি একটি মহা ট্রেজেডি আমার জীবনে। এই বিমান দুর্ঘটনায় আমি আমার বাবা-মা-কে হারালাম, আমার বোন ও তার স্বামীকে হারালাম। সেই সাথে আদরের দুই ভাগ্নীকেও।

মানান্তের বোন কোশা বৈদ্য কানাডায় পার্মান্টে রেসিডেন্সী পান ২০০৩ সালে। আর তার বাবা-মা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী পান ২০১২ সালে। মানান্ত বলেন, আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কেন কেনিয়া যেতে চাচ্ছ? এর প্রশ্নের উত্তরে বাবা বলেছিলেন, আমি জীবদ্দশায় আরেকবার ওখানে যেতে চাই।

পরিবারের কেনিয়া ভ্রমণের খরচ যোগানের জন্য গত কয়েক মাস ধরে কোশা বৈদ্যের স্বামী প্রীরিত দিক্ষিত সপ্তাহে ৭ দিনই কাজ করছিলেন। তাদের এই ভ্রমণটি হওয়া কথা ছিল খুবই আন্দের। কিন্তু বিধির কি বিধান, হলো ঠিক তার উল্টোটি। সবই শেষ হয়ে গেল বিমান দুর্ঘটনায়।

মানান্ত বৈদ্য আরো বলেন, রবিবার সকালে তিনি ঘুম থেকে উঠেন প্রায় শতাধিক মিস কল এর পর। ঘুম থেকে জেগে উঠে তিনি খবর পান তার বাবা-মা, বোন, বোনের স্বামী ও দুই ভাগ্নির কেউই বেচে নেই।

মানান্ত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এই খবর। তিনি দ্রুত হাজির হন পিয়ারসন বিমান বন্দরে। সেখানে কর্মকর্তারা তাকে নিশ্চিত  করেন মৃত্যুর এই ভয়াবহ সংবাদটি। বাকরুদ্ধ হয়ে যান তখন মানন্ত।

মানান্ত বাস করতেন মার্কহাম সিটিতে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আরো নিকটবর্তী হওয়ার জন্য গত জুনে তারা স্থানান্তরিত হন ব্র্যাম্পটনে।

একই দুর্ঘটনায় পরিবারের ৫ সদস্যকে হারান পল এন্জরগে। নিহতদের মধ্যে আছেন তার স্ত্রী ক্যারোলিন, শাশুড়ী এ্যান ওয়ানগী কারঞ্জা এবং তিন শিশু সন্তান। শিশুদের নাম রায়ান (৭), কেরী (৪) ও রুবী (৯ মাস)। কথা ছিল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পল এন্জরগে যোগ দিবেন অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই।

একই দুর্ঘটনায় পরিবারের ৫ সদস্যকে হারান পল এন্জরগে। নিহতদের মধ্যে আছেন তার স্ত্রী ক্যারোলিন, শাশুড়ী এ্যান ওয়ানগী কারঞ্জা এবং তিন শিশু সন্তান। শিশুদের নাম রায়ান (৭), কেরী (৪) ও রুবী (৯ মাস)। ছবি:কানাডিয়ান প্রেস

সিবিসি-কে তিনি জানান, তিনি নিজেই তাদের জন্য টিকিট কেটেছিলেন। তারা রওয়ানা হওয়ার পর তিনি বিমানের যাত্রা পথের উপর নজর রাখছিলেন অনলাইনে। রাত একটার দিকে যখন তিনি দেখেন বিমানটি ইথিউপিয়ার আদ্দিস আবাবায় ল্যান্ড করেছে নিরাপদে তখন তিনি ঘুমুতে যান।

আদ্দিস আবাবা থেকে অন্য এক বিমানে উঠে তার পরিবারের সদস্যদের নাইরোবী যাওয়ার কথা ছিল। বিমানে তারা উঠেও ছিল। কিন্তু বিমানটি আকাশে উঠার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনায় ১৫৭ জন যাত্রী ও ক্রু সবাই নিহত হন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই  পল এন্জরগে দেখেন এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। সামাল দিতে পারছিলেন না নিজেকে। সবাইকে হারিয়ে তিনি শোকে পাথর হয়ে যান।

পল এন্জরগে’র পরিবারের সদস্যরা মার্চ ব্রেকের ছুটিতে কেনিয়া যাচ্ছিল। উদ্দেশ্য ছিল ছেলে মেয়েরা তাদের দাদা-দাদীর সঙ্গে কয়েকটা আনন্দঘন দিন কাটাবে। কিন্তু সবই উলটপালট হয়ে গেল। দুর্ঘটনার পর এখন আশপাশে কেউ থাকলে পল কিছুটা ভরসা পান। কিন্তু যখন একা থাকেন তখন তিনি এক চরম নৈশ্যব্দের মধ্যে বাস করেন। তিনি বলেন, আমি আমার সন্তানদের কণ্ঠ শুনতে চাই। আমি তাদের কান্নার শব্দ শুনতে চাই, তাদের হাসির কলরোল শুনতে চাই। আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে গান শুনতে চাই। সে প্রতিদিনই আমাকে জড়িয়ে ধরে একটি গান গেয়ে শুনাতো। সে গাইতো, “Hold me close and never let me go.”