লিবারেল সরকার বিদেশি ন্যানিদের অভিবাসনের জন্য দুটি নতুন পাইলট প্রকল্প চালু করেছে

এপ্রিল 8, 2019

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : লিবারেল সরকার বয়স্ক ব্যক্তিদের সুশ্র“ষাকারী (ন্যানি) হিসাবে কানাডায় আসতে চায় এমন বিদেশিদের  জন্য দুটি নতুন পাইলট প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। এই দুটি প্রকল্প বর্তমানে বিদ্যমান প্রকল্পের পরিবর্তে চালু করা হচ্ছে। বর্তমান প্রকল্পটি  ন্যানিদেরকে তাদের পরিবার থেকে দূরে এবং অবমাননাকর কাজের জায়গায় আটকে রাখার অভিযোগে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। খবর সিবিসি নিউজের।

অভিবাসন মন্ত্রী আহমেদ হুসেন সম্প্রতি পাঁচ বছর মেয়াদী দুটি নতুন পাইলট প্রকল্প চালুর ঘোষণা দেন। এই প্রকল্পে ন্যানিদেরকে তাদের পরিবারকে কানাডায় নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া এবং তাদের পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়ার প্রক্রিয়া সহজতর করা হচ্ছে।

হুসেন এক বিবৃতিতে বলেন, “ন্যানিরা কানাডার পরিবারগুলোতে সেবা দান করেন এবং এখন সময় এসেছে তাদের প্রতিদান দেওয়ার। আমরা আমাদের অঙ্গীকার প্রদর্শনের জন্য তাদের পরিবারকে এখানে নিয়ে আসার সুযোগ এবং তাদের পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি।”

হুসেন আজ সন্ধ্যায় টরন্টোর নেইবারহুড সংগঠনে এক অনুষ্ঠানে ওই ঘোষণা দেন।

নতুন পাইলট প্রকল্পে :

–  আবেদনকারীরা কানাডায় কাজ শুরু করার আগেই তাদের পারমানেন্ট রেসিডেন্সির আবেদন মূল্যায়ন করা হবে। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তারা সরাসরি পারমানেন্ট রেসিডেন্সির প্রক্রিয়ায় আসতে পারবে।

–  ন্যানিদেরকে তাদের পেশাভিত্তিক ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হবে যার ফলে তারা প্রয়োজনের সময় দ্রুত চাকরি পাল্টে ফেলতে পারবে।

–  স্বামী বা স্ত্রী এবং সাধারণভাবে আইনগতভাবে জীবনসঙ্গীদেরকে ওপেন ওয়ার্ক পারমিট এবং তাদের সন্তানদেরকে লেখাপড়া করার অনুমতি দেওয়া হবে যার ফলে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের কানাডায় নিয়ে আসতে পারবে।

এই প্রকল্পের আওতায় বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার আবেদনকারীকে এদেশে আসার অনুমোদন দেওয়া হবে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে মজুরিসীমার ভেতরে গণ্য করা হবে না।

অভিবাসন মন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া এক নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগের রক্ষণশীল দলের সরকার ২০১৪ সালে ন্যানিদের জন্য যে পাইলট প্রকল্প চালু করেছিলো তার মেয়াদ আগামী নভেম্বরে শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং সেই প্রকল্প মোটেই কার্যকর কোন প্রকল্প ছিলো না।

গত শরৎকালে ন্যানিদের স্বার্থ দেখাশোনার গ্র“পগুলোর একটি জাতীয় জোট রক্ষণশীল দলের ওই প্রকল্পকে “মৌলিক গলদপূর্ণ” বলে মন্তব্য করে এবং এর সংস্কার করে এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানায় যাতে তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত হবে এবং তারা পরিবারের সঙ্গে থেকেই কাজ করতে পারবে। তারা বলেছে যে, ২০১৪ সালের শাসকরা ন্যানিদের শোষণ করার প্রক্রিয়াটিকে আইনগত ভিত্তি দিয়েছিলো।

অবমাননাকর কাজের পরিবেশ

ওই সময় এই জোটের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিদেশি ন্যানিরা তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, যে কঠিন এবং অনেক সময় অবমাননাকর পরিবেশে তাদের কাজ করতে হচ্ছে সে সম্পর্কিত বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করে। এতে কানাডার জটিল আমলাতন্ত্রের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।

রিপোর্টে বলা হয়, “আমাদের গৃহস্থালী কাজ, শিশুর লালন-পালন এবং বয়স্কদের সেবা এগুলোর সবই শ্রমবাজারের মৌলিক চাহিদা এবং বাড়ন্ত শিশু বা বয়োবৃদ্ধ মানুষদের কল্যাণে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও আমাদেরকে এক ধরণের অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে হয় আর এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে কানাডার অভিবাসন ও শ্রম আইন।”

কেয়ারগিভার বা ন্যানিদের দেওয়া হয় অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট যে কারণে তাদেরকে একজন নিয়োগদাতার কাছেই বাঁধা থাকতে হয়। এর ফলে তারা ওয়ার্ক পারমিটে যে নিয়োগদাতার নাম লেখা আছে তার অধীনে কাজ করতে বাধ্য থাকেন।

রিপোর্টে অনেক শ্রমিকের জীবনে অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে সে সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, “এই ওয়ার্ক পারমিট অস্থায়ী হওয়ায় তা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং আমাদের পরিবারের ওপর স্থায়ী বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং প্রভূত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বছরের পর বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ন্যানি ও তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রজন্মগত দ্বন্দ্ব এবং পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটতে পারে।”