অন্টারিও’র কলেজ ও ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির শিকার

এপ্রিল ৮, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিও প্রভিন্সের কলেজ ও ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির শিকার। সরকার পরিচালিত এক জরীপে এই তথ্য প্রকাশ পায়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় এই তথ্য “ডিস্টার্বিং”।

অন্টারিও’র ট্রেইনিং, কলেজেজ এ্যান্ড ইউনিভার্সিটিজ মিনিস্টার মেরেলী ফুলারটন বলেন, জরীপের এই ফলাফল যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদানের বিষয়টি আরো উন্নত করার প্রয়োজনীতার উপর গুরুত্ব আরোপ করছে। খবর হাফিংটন পোস্ট এর।

অন্টারিও’র বিগত লিবারেল সরকারের আমলে নেয়া এই জরীপ কার্যক্রমে অংশ নেয় ১ লক্ষ ১৬ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে  ৬৩% শিক্ষার্থী জানায় তারা বিভিন্ন ধরণের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। জরীপে অংশগ্রহনকারী কলেজ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার। তাদের মধ্যে ৪৯.৬% শিক্ষার্থী জানায় তারাও বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

মন্ত্রী মেরেলী ফুলারটন বলেন, জরীপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যৌন হয়রানির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পর কলেজ ও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিয়েছে সে ব্যাপারে ৬০% শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট।

অন্টারিও প্রভিন্সের কলেজ ও ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির শিকার। সরকার পরিচালিত এক জরীপে এই তথ্য প্রকাশ পায়। ছবি : সিবিসি

অন্টারিও’র কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে যৌন হয়রানির যে চিত্র পাওয়া গেছে তা প্রতিহত করার জন্য কর্তৃপক্ষ আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যার মধ্যে আছে ট্রেনিং, সিকিউরিটি ক্যামেরা স্থাপন এবং অনলাইন সেফটি এ্যাপ। এর জন্য প্রয়োজনীয় বাৎসরিক অনুদান ৩০ লক্ষ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৬০ লক্ষ ডলার করা হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, এখন থেকে অন্টারিও’র কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোকে প্রতি বছর সরকারকে অবহিত করতে হবে তারা যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীদের জন্য কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে।

কলেজ স্টুডেন্ট এ্যালায়েন্স এর একজন প্রতিনিধি আবদুল্লাহ মুস্তাক বলেন, জরীপে যে তথ্য উঠে এসেছে তা বিভিন্ন স্টুডেন্ট গ্র“প এবং এ্যাক্টিভিস্টরা বহুদিন ধরেই কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার চেষ্টা করে আসছে। যৌন হয়রানির বিষয়টি গোটা প্রভিন্সজুরে সব কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতেই বিদ্যমান। আব্দুল্লাহ মুস্তাক বলেন, এটি একটি সমস্যা এবং কিছু একটা করা উচিৎ এই যৌন হয়রানি বন্ধ করার জন্য।

অন্টারিও’র নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির মহিলা বিষয়ক সমালোচক সুজ মরিসন বলেন, সরকার যে অনুদান এর কথা বলছে তা এই প্রভিন্সের কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোতে বিদ্যমান যৌন হয়রানি বিষয়ক সমস্যার যে মূল কারণসমূহ রয়েছে তা দূরীকরণে কোন ভূমিকা রাখবে না।

উল্ল্লেখ্য যে, শুধু কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতেই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা তা নয়। গ্রেটার টরন্টো সহ অন্টারিও প্রভিন্সের অন্যান্য অঞ্চলের স্কুলগুলোতেও যৌন হয়রানির ঘটনা প্রায়ই ঘটে আসছে। ইতিপূর্বে টরন্টোর আইনজীবী জুলিয়ান ফেলকনার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ‘বিপজ্জনক হারে’ এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে স্কুলগুলোতে। ঐ জরিপে অংশগ্রহণকারী টরন্টোর একটি স্কুলের ১৯% ছাত্রী বলেছে তারা বিগত দুই বছরে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

অন্যদিকে সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ এর নতুন এক গবেষণায় বলা হয়, এখানকার হাই স্কুলের প্রায় অর্ধেক ছাত্রীই অশালীন যৌন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গির শিকার হয়। আর এক তৃতীয়াংশ ছাত্রী শারীরিক স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা বা চিমটি কাটার শিকার হয়।

মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডেভিড ওলফ বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি একটি কমন বা সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাড়িয়েছে স্কুলগুলোতে।

সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ কর্তৃক নবম গ্রেডের আঠার শ ছাত্রীর উপর পরিচালিত জরিপ থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যায় – স্কুলগুলোতে ৪৬% ছাত্রী যৌন মন্তব্য, কৌতুক, অঙ্গভঙ্গি বা দৃষ্টিকটু নজরের শিকার হয়েছে। যৌনতার উদ্দেশ্যে স্পর্শ বা জড়িয়ে ধরার শিকার হয়েছে ৩০% ছাত্রী।

জরিপ কার্যটি শুরু হয় ঐ ছাত্রীরা যখন গ্রেড নাইনে পড়তো। দুই বছর পর যখন তারা গ্রেড এলিভেন শেষ করে তখন জরিপের কাজটি আপডেট বা হলনাগাদ করা হয়। ঐ সময় গ্রেড এলিভেনে উঠা ছাত্রীদের এক তৃতীয়াংশ জানায়, তারা অনাকাঙ্খিত বা অযাচিত যৌন কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য চাপের মোকাবেলা করেছে। এদের মধ্যে ১৫% জানায়, তারা ঐ অনাকাঙ্খিত যৌনতা এড়ানোর জন্য শুধুমাত্র ওরাল সেক্স পর্যন্ত সাড়া দিয়ে প্রতিপক্ষকে ক্ষান্ত করেছে।

উপরে উল্ল্লেখিত তথ্যগুলো ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয় টরন্টো স্টার পত্রিকায়। সেখানে বলা হয়- বিপজ্জনক হারে এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে।

অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী যৌন হয়রানি হলো :

– কোন সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে, পক্ষপাত বা অনুকূল্য প্রদর্শন এর বিনিময়ে যৌন সম্ভোগের প্রস্তাব।

– বারংবার ডেটিং এর জন্য প্রস্তাব বা চাপ দেয়া। অসম্মতি প্রকাশের পরও সেটিকে গুরুত্ব না দেয়া।

– জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করা বা দাবী করা।

– অনাবশ্যকভাবে শরীর স্পর্শ করা বা অবাঞ্ছিত স্পর্শ।

– মেয়ে বা মহিলাদের প্রতি অভদ্র বা অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করা (বালক বা পুরুষদের প্রতিও- যা নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর)।

– মানুষের যৌন-নির্দিষ্ট বিষয়ে মর্যাদাহানিকর কথা বলা।

– কারো শারীরিক বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব বিষয়ে যৌনতাপূর্ণ কোন মন্তব্য করা।

– পর্নোগ্রাফী, যৌনতার ছবি, কার্টুন ইত্যাদি পোস্ট করা বা শেয়ার করা।

– যৌনতাপূর্ণ কৌতুক করা।

– যৌনশক্তি বিষয়ে আস্ফালন করা।

– কারো জেন্ডারের উপর ভিত্তি করে তাকে হুমকী প্রদান বা তাকে উৎপীড়ন করা।

– যৌনতা বিষয়ক গুজব ছড়ানো (অনলাইন সহ)