আগুন কেড়ে নিল এক পরিবারের সাত সন্তানকে

সিরিয়ার মৃত্যুকূপ থেকে পালিয়ে এসেও রক্ষা পেল না পরিবারটি : প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

মার্চ 3, 2019

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: কানাডার আটলান্টিক প্রভিন্স নোভা স্কোশিয়ার হ্যলিফেক্সে আগুনে পুড়ে ৭ সিরীয় শরনার্থী শিশু নিহত হয়। গত ১৮ ফেব্র“য়ারী সোমবার মাঝ রাতের পর ঘরে আগুন লেগে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় শিশুদের বাবা ইব্রাহিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শিশুদের উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। শিশুদের মা শারীরিকভাবে আহত না হলেও মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। খবর সিবিসি নিউজের।

সিরিয়ার ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ আর আইএস এর নৃশংসতা থেকে পালিয়ে বাচাঁর জন্য দেশ ছেড়ে কানাডা চলে এসেছিলেন ইব্রাহীম ও কাউথার দম্পতি। সঙ্গে ছিল তাদের ৬ শিশু সন্তান। কানাডায় আসার পর তাদের ঘরে জন্ম নেয় আরো একটি শিশু।

কানাডা শান্তির দেশ। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা এখানে সুনিশ্চিত। তাই শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা কানাডায় পারি জমিয়েছিলেন সিরিয়ার নরকের আগুন থেকে বাচার জন্য। কিন্তু কে জানতো, কানাডায় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এরকম এক মর্মান্তিক পরিনতি! আগুনের লেলিহান শিখা নিরাপরাধ এই শিশুদেরকে এভাবে বাবা মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিবে তা কি কেউ কল্পনা করেছিল? অতি বড় শত্র“ও তো এরকম অভিসম্পাত দেয় না।

দুই বছর আগে নিরাপদ জীবনের আশায় সিরিয়ার রাক্কা থেকে কানাডা পাড়ি জমিয়েছিল পরিবারটি। পুড়ে মারা যাওয়া শিশুগুলোর বয়স তিন মাস থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন ওই শিশুদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।

এ ছবি এখন শুধুই স্মৃতি। গত ১৮ ফেব্র“য়ারী মাঝ রাতের পর ঘরে আগুন লেগে ৭ ভাই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ছবি : Enfield Weekly Press

আগামী সপ্তাহেই পরিবারটির বাড়িটি ছেড়ে অনত্র চলে যাওয়ার কথা ছিল। এটি নাশকতা না দুর্ঘটনা তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

নিহত শিশুরা হলো তিন মাস বয়সী আব্দ্ল্লুাহ, দুই বছর বয়সী রানা, তিন বছর বয়সী হালা, আট বছর বয়সী অলা, নয় বছর বয়সী মোহাম্মদ, ১২ বছর বয়সী রোলা এবং ১৪ বছর বয়সী আহমেদ।

২০১৭ সালে আইএসের নির্যাতন থেকে বাঁচতে কানাডায় এসে আশ্রয় নেয় ৯ সদস্যের ওই পরিবারটি। কানাডায় আসার আগে এই পরিবারটি কিছুদিন সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ছিল। তাদের মূল আবাসস্থল ছিল সিরিয়ার রাক্কা শহরে। পরে দামাস্কাস থেকে তারা চলে যান লেবানন এর রাজধানী বইরুতে। সেখান থেকেই তারা কানাডায় আসেন।

হালিফ্যাক্সের মেয়র মাইক স্যাভেজ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে শিশুদের নিহত হওয়ার ঘটনায় আমাদের গোটা শহর শোকাহত। আমি যখন ঘটনাস্থলে গেছি, তখন আগুনটি বিরাট আকার ধারণ করেছে। কিন্তু খুব দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। এ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় আল-বারাকা মসজিদের ইমাম ইব্রাহীম আল-সানতি বলেন, শিশুদের নিয়ে তারা খুবই সুন্দর একটি পরিবার ছিল। এই শিশুদের হারিয়ে আমরা যারপর নাই শোকাভিভূত। শিশুদের বাবা তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। আর তাদের মা শারীরিকভাবে আহত না হলেও মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। আমরা দোয়া করছি নিহত শিশুদের বাবা মা এই অবস্থা থেকে সেরে উঠবেন।

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক টুইটার বার্তায় বলেন, “শিশুরা যখন খুব অল্প বয়সে চলে যায় তখন সেই বেদনা প্রকাশের কোন ভাষা থাকে না।

বিশেষ করে এরকম মর্মান্তিক ঘটনায়। যারা বেঁচে আছেন তাদের জন্য আমার অন্তরের সমবেদনা প্রকাশ করছি।”

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিহত শিশুদের স্বরণে হেলিফেক্সে আয়োজিত এক সমাবেশে যোগ দেন গত ২০ ফেব্র“য়ারী।

ইমিগ্রেশন মন্ত্রী আহমেদ হোসনেও পরিবারটির প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। এদিকে নিহত ৭ শিশুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। যানাজা অনুষ্ঠানের দিন দুই সহস্রাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল।

স্থানীয় লিবারেল এমপি এন্ডি ফিলমোর বলেন, নিহত ৭ শিশুর মা ও বাবাকে সহায্য করার জন্য স্থানীয় কমিউনিটির লোকজন স্বতস্ফ‚র্তভাবে এগিয়ে আসছেন। হ্যালিফেক্স স্ট্যানফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষও নিহতদের কয়েকজন আত্মীয়কে সিরিয়া থেকে আনার ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা বলেছে।

অগ্নিকান্ডের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এড়ঋঁহফগব পধসঢ়ধরমহ এর মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজার সাহায্যদাতার কাছ থেকে সাড়ে ছয় লক্ষ ডলারেরও বেশী আর্থিক সাহায্য পাওয়া গেছে।

এদিকে ইমিগ্রেশন এ্যন্ড সিটিজেনশীপ কানাডার সহায়তায় নিহত ৭ শিশুর কয়েকজন নিকটআত্মীয়কে জরুরী ভিত্তিতে ভিজিটর ভিসা প্রদান করে কানাডায় নিয়ে আসা হয়েছে যাতে করে তারা ইব্রাহীম ও কাউথার দম্পতিকে তাদের এই চরম মানসিক দুর্যোগকালে সান্ত্বনা দিতে পারেন।