কানাডা যখন শ্রমশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে নবাগতদের প্রতি নজর দিচ্ছে তখন অভিবাসীদের কর্মহীনতা ৬.৪%-এ কমে এসেছে
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অভিবাসী ও কানাডায় জন্মগ্রহণকারী শ্রমিকদের মধ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবধান কমে আসছে। নিয়োগদাতারা নবাগতদের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে আস্থা রাখার কারণে এমনটা ঘটছে। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার নতুন এক গবেষণা থেকে এই তথ্য জানা যায়। খবর সিবিসি নিউজের।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই গবেষণা সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বর্তমানে কানাডার ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী শ্রমশক্তিতে নবাগতের সংখ্যা ৭৮.৯ শতাংশ আর কানাডায় জন্মগ্রহণকারীর সংখ্যা ৮৪ শতাংশ।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা তার শ্রমশক্তি বিষয়ক সমীক্ষার মাধ্যমে নবাগতদের কর্মসংস্থানের ওপর লক্ষ্য রাখতে শুরু করে ২০০৬ সালে। এরপর কর্মে নিয়োজিত হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত বয়সের অভিবাসীদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম ছিলো ২০১৭ সালে ৬.৪ শতাংশ।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা কর্মে নিয়োগের সবচেয়ে উপযুক্ত বয়স নির্ধারণ করেছে ২৫ থেকে ৫৪ বছর। অর্থাৎ এটা এমন একটা সময় যখন কোনও ব্যক্তি তার লেখাপড়া শেষ করেছেন এবং এখনও শ্রমশক্তি থেকে অবসর গ্রহণ করেননি।
কানাডার শ্রমশক্তি বেশ বয়স্ক হয়ে পড়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ অবসর গ্রহণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের স্থলাভিষিক্ত হবার মতো তরুণের সংখ্যা বেশ কম।
অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা
২০১৭ সালে কানাডার কর্মে সক্রিয় থাকার সবচেয়ে উপযুক্ত বয়সী মোট শ্রমশক্তির মধ্যে ২৬ শতাংশ ছিলো অভিবাসী। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা জানাচ্ছে, আগামী এক দশক ধরে দেশের শ্রমশক্তির ক্রমবর্ধমান হারে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে থাকবে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা।
সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০৩৬ সালের মধ্যে কানাডার জনসংখ্যার ২৪.৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ হবে অভিবাসী। আর এই সময়ে কানাডাকে তরুণ ও দক্ষ কর্মী পাবার জন্য অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকতে হবে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে কানাডার শ্রমশক্তিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা হয়েছে মূলত কর্মে নিয়োজিত হবার সবচেয়ে উপযুক্ত বয়সের অভিবাসী এবং ৫৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সের কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের দিয়ে। ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে নতুন চাকরিতে যোগ দেন ৮৭,৭০০ অভিবাসী। ওই সময়টাই ছিলো দেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে ভালো সময়। সেই তুলনায় ওই সময়ে নতুন কর্মসংস্থান হয় ৫৯,০০০ কানাডায় জন্মগ্রহণকারীর।
উপর্যুপরি তিন বছর ধরে অভিবাসী ও কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের কর্মসংস্থানের হারের মধ্যকার ব্যবধান কমে এসেছে এবং ম্যানিটোবা ও আলবার্টায় ওই ব্যবধান ছিলো জাতীয় হারের চেয়েও কম।
১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কানাডায় আছেন এমন অভিবাসীদের বেশিরভাগই ফুলটাইম জব পেয়েছেন। আর গত পাঁচ বছরের মধ্যে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে ৬৫.২ শতাংশ কর্মরত আছেন।
অনেকেই কানাডায় আসার প্রথম কয়েক বছরে তীব্র জীবন-সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরেন, কিন্তু তথ্য-উপাত্ত থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, তারা শেষ পর্যন্ত কোনও না কোনও কাজ খুঁজে পান যদিও সেটা তাদের কাক্সিক্ষত কর্মক্ষেত্রে হয়তো নয়।
নবাগতরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গৃহায়ন ও খাদ্য শিল্পে কম বেতনের কাজ পান তবে শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ কিন্তু ঠিকই বেশি বেতন পাওয়া যায় এমন শিল্পে চাকরি পান যেমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, রিয়েল এস্টেট, রেন্টাল ও লিজিং কোম্পানি এবং সেইসঙ্গে বিভিন্ন পেশাদারী প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক খাত ইত্যাদি।
ফিলিপিনোদের কর্মসংস্থানের হার ভালো
কর্মসংস্থানের হার সবচেয়ে ভালো ফিলিপাইন থেকে আসা অভিবাসীদের। তাদের ৮৮.৫ শতাংশই চাকরি পায়। এই হার কানাডীয়দের কর্মসংস্থানের হারের চেয়েও ভালো।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা বলছে এর কারণ হলো ফিলিপিনোদের শিক্ষার হার বেশি। সেইসঙ্গে তারা ইংরেজিতেও ভালো। ফিলিপাইনে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই উত্তর আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থার অনুরূপ।
আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের হার সবচেয়ে কম। তাদের ৭২.৫ শতাংশ চাকরির বাজারে ঢুকতে পেরেছে। উল্লেখ্য, ২৫ থেতে ৫৪ বছর বয়সের কানাডীয় শ্রমশক্তির প্রায় ১০ শতাংশই আফ্রিকান।
সংস্থাটি জানায়, আফ্রিকানদের জন্য বিষয়টা বেশি কঠিন কারণ তাদের বেশিরভাগই কানাডায় আসে শরণার্থী হিসাবে। তাছাড়া তাদের পেছনে জোরালো সহায়তারও ঘাটতি রয়েছে, বিশেষ করে কানাডায় আসার পরবর্তী কয়েক বছরে তাদের পেছনে জোরালো পারিবারিক সমর্থন তেমন একটা থাকে না।
কর্মসংস্থানের দিক থেকে পিছিয়ে আছে অভিবাসী নারীরাও। শ্রমশক্তিতে তাদের হার ৭২ শতাংশ যেখানে কানাডায় জন্মগ্রহণকারী নারীদের হার হলো ৮২ শতাংশ।