প্রতি পাঁচজনে একজন পেশাজীবী অনিশ্চিত চাকরিতে নিয়োজিত: সমীক্ষা
নভেম্বর ৪, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : প্রযুক্তির কারণে চাকরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে এটা এখন আর কেবল প্রস্তুতকারক ও অন্যান্য নাজুক খাতের চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রেই সত্য নয় বরং এমনকি উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীরাও এখন পেশাগত বিপর্যয়ের বাইরে নন।
কানাডিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অরটারনেটিভ-এর (সিসিপিএ) এক নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে, কানাডার পেশাজীবীদের ২২ শতাংশই কোন না কোনও ধরণের অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে খন্ডকালীন চাকরি ও চুক্তিভিত্তিক কাজ। আর এক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অসমানুপাতিক হারে। খবর -সিআইনিউজ।
এনভায়রোনিকস রিসার্চ পরিচালিত ওই সমীক্ষায় টরন্টো ও উইনিপেগ-এর পেশাজীবীদের চারটি প্রধান গ্র“পসহ সারা দেশের অন্তত এক হাজার পেশাজীবীর ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্য সমন্বয় করা হয়েছে।
সমীক্ষায় সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি উঠে এসেছে সেটি হলো পেশাজীবীদের নিরাপত্তা বোধের অভাব।
অনিশ্চিত চাকরিতে কর্মরতদের মধ্যে ২৬ শতাংশের সার্বক্ষণিক কাজ রয়েছে, কিন্তু এসব চাকরিতে নিরাপত্তার রয়েছে অভাব (তারা নিশ্চিত নন যে, এখন থেকে এক বছর পর তাদের চাকরি থাকবে কি না) এবং অসুস্থতাজনিত ছুটি বা পেনশনের মতো সুবিধাও নেই।
শুধু শিক্ষা থাকলেই আপনি এধরণের সমস্যা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবেন না। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা অনিশ্চিত চাকরিতে নিয়োজিত তাদের মধ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর সংখ্যা (৩০ শতাংশ) নিশ্চয়তা আছে এমন চাকরিতে নিয়োজিত পেশাজীবীদের তুলনায় (২৬ শতাংশ) বেশি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারী পেশাজীবীদের অনিশ্চিত চাকরিতে নিয়োজিত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অনিশ্চিত চাকরিতে নিয়োজিতদের ৬০ শতাংশই নারী।
এটাও দেখা গেছে যে, অনিশ্চিত চাকরির বাজারে নারীরাই বেশি সংখ্যায় ভিড় করেন এবং এসব কাজে তাদের পেশাগত উন্নতির কোনও সুযোগ থাকে না।
সমস্যাটা কেবল ব্যক্তি খাতের চাকরিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে অনিশ্চিত চাকরির হার যে তিনটি খাতে সবচেয়ে বেশি তার দুই-তৃতীয়াংশই সরকারি খাতের। এই খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা যেখানে প্রতি পাঁচটি কাজের মধ্যে একটিতে এবং শিক্ষা খাত যেখানে প্রতি ১০ টি কাজের প্রায় তিনটিতে কোনও রকম নিশ্চয়তা নেই।
সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরাই অনিশ্চিত চাকরির ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন। এসব মানুষ ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে এধরণের চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বয়স্ক লোকেদের অনেকে সার্বক্ষণিক চাকরি এড়িয়ে যাওয়া অথবা অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করার জন্যই অনিশ্চিত চাকরি বেছে নেন। তারপরও আসলে অন্য কোনও উপায় না পেয়েই তারা অনিশ্চিত কাজ বেছে নিতে বাধ্য হন।
অনিশ্চিত কাজের অর্থনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক আয়ের সম্পর্ক রয়েছে।
কাদেরকে অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত শ্রমিক বলা যাবে তা নির্ধারণের জন্য সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, তারা কী একজন মালিকের অধীনে এমন কোনও কাজ করছেন যেখানে সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করার সুযোগ রয়েছে এবং তারা কী আশা করেন যে এখন থেকে এক বছর পর্যন্ত তাদের চাকরি বহাল থাকবে? তাদের চাকরি সার্বক্ষণিক, খন্ডকালীণ, চুক্তিভিত্তিক বা ফ্রিল্যান্স ধরণের কিনা সেটাও জানতে চাওয়া হয়।
প্রথম প্রশ্নের জবাবে যারা হ্যাঁ বলেন এবং সার্বক্ষণিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানান তাদেরকে “নিশ্চিত পেশাজীবী” হিসাবে ধরা হয় (৭৮ শতাংশ), আর অবশিষ্টদেরকে “অনিশ্চিত পেশাজীবী” হিসাবে চিহ্ণিত করা হয় (২২ শতাংশ)।
অনিশ্চিত কর্মসংস্থানের এই ধারা চলতেই থাকবে, কারণ ভাগ্যহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে যাদের সামনে আছে মাত্র দুটি পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ, হয় অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত হও নাহলে বেকারত্ব বরণ করো।