টরন্টোর বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতি ২০ জনের একজন ইংরেজি বা ফরাসী ভাষা জানে না
আগস্ট ৪, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, টরন্টোর বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতি ২০ জনে একজন ইংরেজি বা ফরাসী ভাষায় কথা বলতে পারে না। ভাষাগত এই বাধার কারণে চাকরি খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা, সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হওয়া এবং সুন্দর জীবন উপভোগ করার বিষয়গুলি বহুলাংশে ব্যাহত হচ্ছে।
টরন্টোর বাসিন্দাদের মধ্যে এক লাখ ৩২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোক কানাডার দুটি রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি ও ফরাসির কোনওটিতেই কথা বলতে পারে না। ওই দুটি ভাষায় কথা বলতে না পারা কানাডার মোট ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭০ জন মানুষের মধ্যে টরন্টোর বাসিন্দাদের সংখ্যা ২০.৫ শতাংশ। এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে টরন্টোর social planning বিভাগের সাম্প্রতিক রিপোার্টে। রাষ্ট্রভাষায় কথা বলতে না পারা লোকদের নিয়ে এটিই প্রথম রিপোর্ট। খবর টরন্টো স্টার এর।
১৯৯৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়কালে সংগৃহীত আদম শুমারির তথ্যে দেখা গেছে, ওই দুই দশকে কানাডায় কোনও রাষ্ট্রভাষাতেই কথা বলতে না পারা লোকের সংখ্যা বেড়েছে পৌনে দুই লাখেরও বেশি। যদিও এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার তুলানায় সামান্য শতাংশের হিসাবে ওঠানামা করেছে। একই সময়ের মধ্যে টরন্টোতে ইংরেজি বা ফরাসি না জানা লোকের সংখ্যা কমেছে ১০ হাজার।
রিপোর্টে বলা হয়, টরন্টোর যেসব বাসিন্দা রাষ্ট্রীয় ভাষায় কথা বলতে পারেন না তাদের মধ্যে ৪৩.৫ শতাংশের মাতৃভাষা হলো চীনা। সংখ্যার দিক থেকে এর পরেই যথাক্রমে রয়েছে পর্তুগিজ, ইতালীয়, স্প্যানিশ, তামিল, ভিয়েতনামী, কোরীয়, ফার্সি, রুশ ও আরবিভাষীরা। এসব বাসিন্দা নগরীর এমন সব জায়গায় বসবাস করেন যেখানে তার মাতৃভাষায় কথা বলার মত লোকজন রয়েছে।
ফাহমিদা কুরেশি ১৯৭২ সালে ১৮ বছর বয়সে স্বামীর স্পন্সরে পাকিস্তান থেকে কানাডায় আসেন কিন্তু তিনি কখনই ইংরেজি শিক্ষার কোর্স করেননি। কারণ তিনি তার তিন সন্তান, বাবা-মা এবং অন্য স্বজনদের দেখাশোনার কাজে ব্যস্ত। বর্তমানে ৬৬ বছর বয়সী ফাহমিদা বলেন, “আমাকে এতই ব্যস্ত থাকতে হতো যে, ইংরেজি শিখতে পারিনি, সবার দেখাশোনার দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হয়।” এদেশে যখন আসেন তখন তিনি সামান্য ইংরেজি বলতে পারতেন। পরে স্বামী ও সন্তানদের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভাষাটা রপ্ত করেছেন। তার ভাষায়, “আপনি যাতে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং ইচ্ছামত সবকিছু করতে পারে সেজন্যে এবং স্বাধীন হবার জন্য আপনার ইংরেজি শেখাটা খুব জরুরী।”
১৯৯২ সালে কানাডায় আসা রবার্ট কোলি রেক্সডেলে কিছু প্রবীণ তামিল বাসিন্দাকে খুঁজে পান। তিনি বলেন, ইংরেজি ভালো করে বলতে না পারা বয়স্ক ব্যক্তিরা দৈনন্দিন কাজের জন্য তাদের সন্তানদের ওপর নির্ভর করেন এবং পরিবারের বাইরের জগৎ থেকে তারা প্রায়শই বিচ্ছিন্ন। ৮৮ বছর বয়স্ক কোলির গ্র“পের সদস্যরা রেক্সডেলের নারী কেন্দ্রে ইংরেজি বলতে না পারা বয়স্ক তামিলদের জন্য প্রতি মাসে স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস ও কুশলাদি সম্পর্কিত বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করে। তিনি বলেন, “তারা নিজেদের বাইরে আর কাউকে চেনেন না এবং বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসা বা স্বাস্থ্যগত বিষয়ে অন্যদের সাহায্য নেন।” কোলি বলেন, “তারা নিজের ঘরে মাতৃভাষায় কথা বলেন এবং সন্তানদের সঙ্গে থাকেন। তারা ইংরেজি বলতে ভয় পান কারণ তারা নিজের ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে বিব্রত।” কোলি নিজে অবশ্য অন্যদের মতো নন, তিনি যখন কানাডায় এসেছেন তখন থেকেই চমৎকার ইংরেজি বলতে পারেন।
জেনি হুয়াং ২০০৯ সালে চীন থেকে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে কানাডায় এসেছেন। জেনি তার ক্যান্টনিজ চীনা ভাষায় বলেন, “আমি (চীনে) জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ার সময় কেবল ইংরেজি শেখা শুরু করি। আমি যখন এখানে আসি তখন খুব সামান্য কিছু ইংরেজি শব্দ জানতাম। আমি ইংরেজি শেখার ক্লাশে যোগ দিই, কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক কারো পক্ষে নতুন একটি ভাষা শেখা খুব কঠিন। আমি যতটা ইংরেজি বলতে পারি তার চেয়ে ভাল বুঝতে পারি।”
হুয়াং বলেন, সীমিত ইংরেজি জানার কারণে তার কাজ পাওয়ার সুযোগও সীমিত এবং শুধু রেস্টুরেন্ট ও গার্মেন্ট কারখানাতেই তিনি কাজ করতে পারেন।
রিপোর্টে দেখা গেছে, যেখানে টরন্টোর মোট জনসংখ্যার ২০.২ শতাংশের আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে সেখানে ইংরেজি বা ফরাসি না জানা টরন্টোবাসীর ৩৫.৭ শতাংশেরই পারিবারিক আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর টরন্টোর মোট বেকারত্বের হারের চেয়ে কোনও রাষ্ট্রভাষা না জানা লোকেদের মধ্যে বেকারত্বের হার তিন শতাংশ বেশি।