ড্যাগ ফোর্ডকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে বিপজ্জনক বাগাড়ম্বর অবশ্যই বন্ধ করতে হবে
আগস্ট ৪, ২০১৮
৯ জুলাই ২০১৮ : টরন্টো নগরীতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের যে ঢল নেমেছে সেটির ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা দিতে অটোয়া ও টরন্টোর সঙ্গে অসহযোগিতা করার মাধ্যমে কুইনস পার্কের ফোর্ড সরকার রীতিমত আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে। টরন্টো স্টার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে এই অভিমত প্রকাশ করা হয় গত ৯ জুলাই।
ঐ সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়- আপনি যদি একটি কঠিন পরিস্থিতিকে আরও চরম মাত্রায় নিয়ে যেতে চান তাহলে ফোর্ড ও তার সহযোগীরা যা করছে তার চেয়ে ভাল আর কিছু খুঁজে পাবেন না। তারা “অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসা” লোকদের সম্পর্কে খুবই উস্কানিমূলক ও জ্বালাময়ী বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন এবং এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তারা এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও কাজ করবেন না।
টরন্টোর সেটার প্রয়োজনও নেই। মন্ট্রিয়েলের কাছে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের কারণে টরন্টোর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যে ক্রমবর্ধমান চাপ পড়ছে নগরীর মেয়র জন টোরি সে বিষয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন।
অনেক আশ্রয়প্রার্থীকেই টরন্টোর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং তারা এখন নগরীর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ৪৬ শতাংশ জায়গা দখল করে রয়েছে। প্রায় ৮০০ জনকে শহরের দুটি কমিউনিটি কলেজে থাকার জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৯ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করলে এদেরকে সরিয়ে নিতে হবে। সমস্যাটা হলো নগরীতে তাদের রাখার মতো আর কোনও জায়গা নেই। টরন্টোর এখন সরকারী সহায়তার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
আশ্রয়প্রার্থীদের আগমনের কারণে বছর শেষে নগর কর্তৃপক্ষের যে সাড়ে ছয় কোটি ডলারের বিল পরিশোধ করতে হবে সেক্ষেত্রে অটোয়া সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার দরকার।
সেইসঙ্গে কুইনস পার্ক সরকারের কাছ থেকে এমন সক্রিয় সহযোগিতার নিশ্চয়তাও পাওয়া দরকার যাতে সব আশ্রয়প্রার্থীকেই টরন্টোর দিকে ঠেলে না দিয়ে বরং পুরো অঞ্চলজুড়েই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এই খাতে বাড়তি ব্যয় মেটাতে অন্তত আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার এরই মধ্যে পুরো অন্টারিওর জন্য এক কোটি ১০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে, কিন্তু এই অর্থ প্রাদেশিক সরকারের হাত ঘুরে নগর কর্তৃপক্ষের কাছে আসতে হবে। অথচ বরাদ্দকৃত অর্থ এখনও ছাড় করা হয়নি।
এখন অন্টারিওর নতুন সরকারই হলো আসল সমস্যা, কারণ তারা সঙ্কটের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে বরং এটিকে রাজনৈতিক খেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই বিষয় নিয়ে ‘তালগোল’ পাকানোর জন্য ট্রুডোর টুইটকে দোষারোপ করছেন স্বয়ং ফোর্ড। আর ফোর্ডের মুখপাত্র “অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসা’ লোকদের ঢল নামার জন্য দোষারোপ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে। কারণ তিনি গত বছর এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, “মামলা, সন্ত্রাস এবং যুদ্ধের কারণে পালিয়ে আসা লোকদের স্বাগত জানাবে কানাডা।”
আর দক্ষিণপন্থীরা গত দেড় বছরে কানাডায় আসা প্রতিটি আশ্রয়প্রার্থীর জন্যই ট্রুডোর টুইটকে দায়ী করে আসছেন। এগুলো হচ্ছে কানাডার দক্ষিণ সীমান্তের ওপারে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যে বৈরি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সেই মৌলিক প্রসঙ্গ উপেক্ষা করার এক হাস্যকর বক্তৃতবাজি।
এখন ফোর্ড ও তার সহযোগিরা সেই কোরাসে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন এবং তার সতর্কতামূলক বাগাড়ম্বরে আশ্রয়প্রার্থীদের কারণেই টরন্টোতে সহিংস অপরাধ বেড়ে যাওয়া বিষয়টিকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টরন্টো সান পত্রিকা এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলেছে যে, “কানাডা হচ্ছে অপরাধীদের সহজ শিকার” কারণ অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে সম্ভাব্য আশ্রয় গ্রহণকারীরা অবাধে কানাডায় ঢুকে পড়ছে। টরন্টোতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে আশ্রয় প্রার্থীদের কোনওরকম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ ছাড়াই ওই সব বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
আশ্রয়প্রার্থী এবং সাধারণভাবে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আগে ফোর্ডের উচিৎ তার বক্তব্য পুনর্বিবেচনা করা। তার উচিৎ ট্রুডোর বক্তব্য খতিয়ে দেখা, যেখানে ট্রুডো বলেছেন, “আপনি যখন বিভেদ ও ভীতি নিয়ে খেলছেন তখন আপনি অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি স্বল্প-মেয়াদি খেলা খেলছেন।”
উভয় সরকারের জন্যই এখন দরকার নিজেদের দায়িত্ব মেনে নেওয়া এবং এই বিষয়ে দ্রুত সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া।
যে সমস্যায় টরন্টোর কোনও ভূমিকা নেই এবং এককভাবে সমাধানের সামর্থ নেই সেই সমস্যার প্রতিক্রিয়া এককভাবে টরন্টোকে যেন বইতে না হয় সেটি নিশ্চিত করাও উভয় সরকারের দায়িত্ব।
বিশেষ করে ফোর্ড সরকারের জন্য বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা এবং এর সমাধানে শরিক হওয়া দরকার। তাদের উচিৎ অটোয়ার কাছ থেকে টরন্টোর সহায়তার আবেদনে সমর্থন দেওয়া এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে সতর্কতামূলক বাগাড়ম্বর বন্ধ করা।
তিনি যদি এই বিপজ্জনক পথে হাঁটা অব্যাহত রাখেন তাহলে ফোর্ড হয়তো একটি স্থানীয় সমস্যাকে প্রাদেশিক পর্যায়ের এমনকি জাতীয় সঙ্কটে পরিণত করার ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। আমরা কানওভাবেই সেটা চাই না।