কানাডার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মনে করেন বিয়ে অপ্রয়োজনীয়!

আগস্ট ৪, ২০১৮

ইসাবেলি খু : নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কানাডীয়রা বর্তমান সময়ে সাত পাঁকে বাঁধা পড়ার বিষয়ে খুব কমই আগ্রহী। মানুষের মধ্যে বিয়ের ব্যাপারে যে মানসিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে সেটি অনুধাবনের জন্য Angus Reid Institute কানাডাজুড়ে ১৫০০ লোকের মধ্যে অনলাইনে একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ বলেছে, কোনও দম্পতি সারাজীবন একসঙ্গে কাটাতে চাইলে তাদের বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা জরুরী নয়। আর প্রতি ছয়জনে একজন বলেছেন, তারা বিয়ের ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী নন।

ওই ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মিজ. শাচি কার্ল-এর মতে এই পরিবর্তিত মানসিকতার একটি কারণ হলো বিয়ে না করেও একজন সঙ্গীর সঙ্গে বসবাস করাটা (লিভ-টুগেদার) এখন সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। স্টার ভ্যাঙ্কুভার পত্রিকাকে তিনি বলেন, “এক প্রজন্ম আগেও বিয়ে না করে কারও সঙ্গে বসবাস করাটা ছিলো পাপের মধ্যে বসবাসের সামিল।”

কানাডীয়রা বর্তমান সময়ে সাত পাঁকে বাঁধা পড়ার বিষয়ে খুব কমই আগ্রহী। প্রতীকি ছবি : অনলাইন

জরিপে দেখা যায়, গত সহ¯্রাব্দের শেষদিকে অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণকারীরাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বলেছেন যে, বিয়ের প্রাসঙ্গিকতা নেই, অন্যদিকে তরুণতর (১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী) এবং বয়োজ্যেষ্ঠ (৬৫ বা তার বেশি বয়সী) অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন বিয়ে তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বা অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আর এই বিষয়টির সঙ্গে যখন শিশুদের প্রসঙ্গ যোগ করা হয় তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশগ্রহণকারী মত দেন যে, একসঙ্গে বসবাসের পরিকল্পনাকারী দম্পতির জন্য বিয়ে জরুরী নয়।

বিয়ে এখন আর প্রয়োজনীয় নির্দেশক নয় এমন বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখা গেছে সারা দেশজুড়েই। ২০১৬ সালের কানাডীয় পরিসংখ্যান বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী, দম্পতিদের এক-পঞ্চমাংশই অলিখিত আইনের আওতায় (বিয়ে বহির্ভূত) বসবাস করেন। ১৯৮১ সালের তুলনায় এই হার তিনগুণ বেশি। একইসঙ্গে বেশি সংখ্যক মানুষ একাকী বসবাস করছেন। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো একক ব্যক্তির পরিবার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বিষয় হিসাবে দেখা দেয়।

“আমরা এখন এমন এক যুগে বসবাস করছি যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম এবং পক্ককেশ প্রজন্মের লোকেরা তাদের ভাতিজা-ভাতিজীদের বলেন যে,‘এটা (বিয়ে) আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।’”

জরিপ পরিচালনাকারী ইনস্টিটিউটের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই প্রবণতার একটি কারণ হতে পারে “বিয়ের মতো একটি অধিকতর ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ থেকে শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের মতো মূল্যবোধের দিকে মনোভাব পাল্টে যাওয়া।” অর্থনৈতিক স্থিতির জন্য মেয়েদের এখন আর বিয়ে করার প্রয়োজন হয় না, আর অনেক পুরুষই এখন তাদের কর্মজীবন দেরীতে শুরু করছেন যে কারণে তারা বিয়ে থেকে বিরত থাকছেন।

রিপোর্টে বলা হয়, “আরও কিছু বিষয়, যেমন আর্থিক অবস্থা এবং বিয়ের খরচ ইত্যাদিও গত সহ¯্রাব্দের শেষদিকে জন্মানো লোকদের কাছে উদ্বেগের বিষয় এবং সম্ভবত এ কারণেও তারা বিয়ে ঠেকিয়ে রাখছেন বা একেবারেই বাদ দিচ্ছেন।”

পরিবার সম্পর্কিত ভ্যানিয়ার ইনস্টিটিউটের নোরা স্পিঙ্কস ওই রিপোর্টে উল্লেখিত ধারণার সঙ্গে একমত যে, মূল্যবোধের পরিবর্তন বিয়ের ব্যাপারে মানুষের মনোভাবের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর আগে স্পিঙ্কস টরন্টো স্টার পত্রিকাকে বলেছিলেন, অতীতে যেসব বিষয় মানুষকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করতো যেমন, ধর্মবিশ্বাস, আর্থিক প্রয়োজন এবং বিয়ে-বহির্ভূত যৌনতা নিষিদ্ধ মনে করা ইত্যাদি আজকের দিনে আর প্রাসঙ্গিক নয়।

তবে বিয়ের ব্যাপারে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি কেবল কনাডীয়রাই পাল্টে ফেলছে এমন নয়। ২০১৪ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক কম সংখ্যক মানুষ এখন বিয়ে করছেন। যদিও সেখানে এর কারণ ভিন্ন।

একই প্রতিষ্ঠানের ২০১২ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়, ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনীদের প্রতি পাঁচ জনে একজন কখনই বিয়ে করেনি, যা ১৯৬০ সালের চেয়ে বেশি। সে সময় প্রতি ১০ জনে একজন বিয়ে করেননি।

তবে রিপোর্টের লেখক কিম পার্কার উল্লেখ করেছেন যে, “মানুষ তাদের পছন্দ থেকে বিয়ের বিষয়টিকে একেবারে বাদ দিয়ে দেয়নি। আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং বিয়ের ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি কারণে তারা গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাচ্ছে।”

এই বিষয়টি কানাডার ক্ষেত্রেও সত্য বলে মনে করা হয়েছে ইনস্টিটিউটের জরিপেও। জরিপে ৬১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, “বিয়ের খরচ খুব বেশি এবং দুর্বহ না হলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বিয়ে করতো।” বিগত বছরগুলোতে নারী-পুরুষের বিয়ের বয়স বেড়ে যাওয়ার এটি অন্যতম কারণ। ১৯৫০ সালে যেখানে বিয়ের বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে ছিলো ২৮.৫ এবং নারীর ক্ষেত্রে ২৫.৯ সেখানে তা বেড়ে ২০১১ সালে যথাক্রমে দাঁড়িয়েছে ৩১ বছর এবং ২৮ বছরে।

কানাডীয়রা লিভ-টুগেদার এবং বিয়ে উভয়টিকেই একইরকম আইনগত প্রেক্ষিত থেকে দেখে। তবে তারা একথাও বলে যে, বিয়ে অনেক বড় একটি অঙ্গীকার।

– হাফিংটন পোস্ট