কানাডার এক-পঞ্চমাংশ পরিবারকে তাদের আয়ের অর্ধেক অর্থই বাড়ি ভাড়ার পিছনে খরচ করতে হয়

জুন ৩, ২০১৮

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় বাড়ির উচ্চমূল্যের কারণে এখন মোটের উপর দেশটির এক-তৃতীয়াংশ পরিবারকেই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতে হচ্ছে।
আর ২০১৬ সালের আদমশুমারির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে পরিচালিত নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, বাড়ির মালিকদের চেয়ে ভাড়াটেরা ভাড়া দেওয়ার সামর্থের দিক থেকে অনেক বেশি ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে।
যারা বাড়ির মালিক হতে চান তাদের জন্য সামর্থের সমস্যা রয়েছে প্রধানত টরন্টো, ভ্যাংকুভার এবং এর আশেপাশের এলাকায়। এছাড়া দেশের অন্যসব শহর বা পল্লী অঞ্চলে বাড়িঘর এখনও ক্রেতাদের সামর্থের মধ্যে রয়েছে। খবর হাফিংট পোস্টের।
কিন্তু ক্রেতাদের জন্য এই পরিস্থিতি নেই। ভাড়া বাড়ি সম্পর্কিত সূচকে দখা যাচ্ছে গোটা কানাডাজুড়ে মাঝারি বা ছোট শহর এমনকি পল্ল্লী এলাকাতেও আবাসন ব্যয় মানুষের সামর্থের বাইরে চলে গেছে। তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতি ১০ জন ভাড়াটের মধ্যে চার জনই তাদের উপার্জনের ৩০ শতাংশের বেশি ব্যয় করছেন বাড়ি ভাড়া ও ইউটিলিটির পেছনে। কানাডার মর্টগেজ ও হাউজিং করপোরেশনের বিবেচনায় এটাই হচ্ছে সামর্থের শেষ সীমা।
ভ্যাঙ্কসিটি ক্রেডিট ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথভাবে উল্ল্লেখিত বাড়ি ভাড়া সূচকটি প্রণয়ন করেছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অলাভজনক হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন (BCNPHA)। তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় প্রতি পাঁচ জনে একজন অর্থাৎ ১৮ শতাংশ মানুষ তাদের উপার্জনের অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশি অর্থ বাড়ি ভাড়া ও ইউটিলিটির পেছনে ব্যয় করেন। অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এটা হলো ব্যয়ের এমন এক ‘সঙ্কটের পর্যায়’ যখন মানুষ ‘গৃহহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি’র মধ্যে পড়ে।

বাড়ির মালিকানাও ক্রমহ্রাসমান
২০১৬ সালের আদমশুমারির তথ্যে দেখা যায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কানাডায় বাড়ির মালিকানা অর্জনের হার কমেছে। বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রথমবার বাড়ি কিনতে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের অনেকে বাড়ি কেনা বিলম্বিত করায় এমনটা ঘটেছে।
অনেক বেশি মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাড়িতে অবস্থান করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাড়ির ভাড়া দ্রুত বেড়ে গেছে।
অর্থনীতিবিদদের অনেকে বহু বছর ধরে যুক্তি দেখিয়ে আসছেন যে, বাড়িওলা এবং ভাড়াটে উভয়ের ক্ষেত্রেই ক্রয়ক্ষমতার সমস্যার মূল কারণ হলো সরকার এফর্ডএ্যাবল হাউজিং ব্যবস্থা গড়ে তুলছে না।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অলাভজনক হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন (BCNPHA) বলছে, “কুইবেকের দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। সেখানে সামর্থের মধ্যে ভাড়াভিত্তিক আবাসন সুবিধার প্রাপ্যতা দেশের অন্য যে কোনও প্রদেশ বা টেরিটোরির তুলনায় ভালো। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশের সরকারগুলো ১৯৯০-এর দশক থেকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আবাসন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু কুইবেক তার কর্মসূচি অব্যাহত রাখে।
বর্তমানে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আবাসনের বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হবার প্রেক্ষিতে অনেক সরকারই এ বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় লিবারেল সরকার সম্প্রতি কুইবেক ছাড়া অন্য সব প্রদেশ ও টেরিটোরির সরকারগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছে। চুক্তির আওতায় ৫০ হাজার নতুন ক্রয়সাধ্য আবাসন সুবিধা নির্মাণ এবং এধরণের আরও ৬০ হাজার আবাসন সুবিধা সংস্কারের জন্য আগামী এক দশক ধরে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে।
২০২০ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া এই প্রকল্পের আওতায় আরও ৪০০ কোটি ডলার গৃহঋণ হিসাবে দেওয়া হবে যার ফলে প্রায় তিন লাখ পরিবার আবাস খাতে আর্থিক সুবিধা লাভ করবে।
তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, অন্য যে কোনও প্রদেশ বা টেরিটোরির চেয়ে অন্টারিওতে সমস্যাটা সবচেয়ে তীব্র এবং ক্রয়সাধ্য আবাসন খাতে তাদেরকেই উল্ল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে।