মহাসড়ক ৪০১ এ প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই গতিসীমা লংঘন করেন

মহাসড়কের গতিসীমা বৃদ্ধি প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত বিশেষজ্ঞরা

নভেম্বর ১০, ২০১৫

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : কানাডার সবচেয়ে ব্যস্ত মহাসড়ক (এক্সপ্রেসওয়ে) ৪০১ এ প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই গতিসীমা লংঘন করেন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। মহাসড়কের পাশে গতিসীমার সাইন দেয়া আছে একটু পরে পরেই। কিন্তু সিংহভাগ ড্রাইভার তা মানছেন না। গতিসীমা প্রতি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার নির্ধারিত থাকলেও ১১০ থেকে ১৩০ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে সিংহভাগ ড্রাইভারের স্পীডোমিটারের রিডিং। ফলে কোন কোন ট্রাফিক বিশেষজ্ঞ সুপারিশ করছেন গতিসীমা বৃদ্ধি করার জন্য। খবর সিবিসি নিউজের।

গত বছর জুলাই মাসে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মহাসড়কগুলোতে গাড়ির গতিসীমা ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি করে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার করা হয়েছে। এটি এখন কানাডার রাস্তায় সর্বোচ্চ গতিসীমা। কোন কোন ট্রাফিক বিশেষজ্ঞ বলছেন অন্যান্য প্রভিন্সেরও উচিৎ এই গতিসীমা অনুসরণ করা। কিন্তু কোন কোন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলছেন গতিসীমা বৃদ্ধি করার এই প্রবণতা রোধ করতে হবে।

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ট্রান্সপোর্ট মনন্ত্রী টড স্টোন সম্প্রতি সিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “গাড়ির গতিসীমা সমন্বয়সাধন করাতে আমি মনে করি আমাদের প্রভিন্সের মহাসড়ক এখন নিরাপদ রয়েছে এবং আগামীতেও নিরাপদই থাকবে। ”

তিনি আরো বলেন, “মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কলম্বিয়া হয়তো অগ্রপথিক। কিন্তু এই প্রভিন্সটি গাড়ির গতিসীমার ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী যে প্রবণতা সেটিই অনুসরণ করছে। য্ক্তুরাষ্ট্রের মহাসড়কে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি সীমা ঘন্টায় ৬০ থেকে ৮৫ মাইল (ঘন্টায় ৯৭ থেকে ১৩৭ কিলোমিটার)। ইউরোপে  গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটার একটি সাধারণ বিষয়।”

গত ২৫ বছরে কানাডার আলবার্টা, সাচকাচুয়ান, মেনিটোবা, নোভা স্কোশিয়া এবং নিউ ব্রান্সউইকের মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধি করে ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে কানাডার বাকি অংশের মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আর কানাডার সবচেয়ে কম গতিসম্পন্ন মহাসড়ক হলো প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে যেখানে সর্বোচ্চ গতিসীমা হলো ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার।

উল্লেখ্য যে, সিবিসি নিউজ এর পক্ষ থেকে মহাসড়ক ৪০১ এ তিনদিনের একটি নীরিক্ষা চালানো হয়েছিল অশোয়া এবং বওমনভিলে ড্রাইভারদের গতিসীমার গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য। নিরীক্ষায় দেখা গেছে রাস্তার স্বাভাবিক অবস্থায় শতকরা ৭৫ জন ড্রাইভার নির্ধারিত গতিসীমাকে (ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার) লংঘন করেছেন এবং কেউ কেউ ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালিয়েছেন।

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ট্রান্সপোর্ট মন্ত্রী টড স্টোন বলেন, যখন অধিকাংশ ড্রাইভারই গতিসীমা লংঘন করছেন তখন ধরে নিতে হবে গতিসীমার আইন কার্যকর নয়। সুতরাং এটি পরিবর্তন করতে হবে।

‘স্টপ ১০০’ নামের একটি সংগঠনের (অন্টারিওর হাইওয়েতে গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধির সমর্থক) প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস ক্লিমেক বলেন “অন্টারিওর উচিৎ এখানকার মহাসড়কে ড্রাইভারগণ যে গতিসীমায় গাড়ি চালাচ্ছেন তাকে স্বীকৃতি দেয়া।” তিনি আরো বলেন, “মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা ঘন্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার করা উচিৎ। আমরা চাই না মানুষের গতিসীমা বৃদ্ধি করা হোক, আমরা চাই ড্রাইভারগণ যে গতিসীমায় গাড়ি চালাচ্ছেন এবং তাদের যে ড্রাইভিং স্বভাব সেটিকে স্বীকৃতি দেয়া হোক।”

তবে মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধি করা পক্ষে নন অনেকেই। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সরকারী ভাষ্য হলো, “মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধি করা হলেও অধিকাংশ ড্রাইভারই সীমা লংঘন করছেন না।” কিন্তু মজার বিষয় হলো, ঐ প্রভিন্সের ট্রান্সপোর্ট মন্ত্রী টড স্টোন নিজেই গতিসীমা লংঘন করার দায়ে একবার ড্রাইভারর্স লাইসেন্স খুইয়েছিলেন।

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভেঙ্গুভারে একটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক জেফ ব্রুবাকার (যিনি সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে একজন গবেষক) বলেন, “এটি পদার্থ বিজ্ঞানের বেসিক তত্ব। আপনি যদি অধিক গতিতে যান এবং দুর্ঘটনায় পতিত হন তবে স্বাভাবিকভাবেই আপনি অধিক জখমের শিকার হবেন। এটিই গতিবিজ্ঞানের নিয়ম।”

জেফ ব্রুবাকার বলেন, “ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধি করার আইনটি ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ির গতিসীমা বিষয়ে বেশ কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। ঐ সব গবেষণায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধি করা হলে দুর্ঘটনার ফলাফল কতটা মারাত্মক হতে পারে। দেখা গেছে গতিসীমা বৃদ্ধি করা হলে অধিক সংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটে এবং সেই অনুপাতে আহত নিহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সালে নরওয়ের সেন্টার ফর ট্রান্সপোর্টেশন রিসার্স বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে এ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ঐ গবেষণায় দেখা গেছে যখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গাড়ির গতিসীমা বৃদ্ধি করেন তখন নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে গাড়ির গতি আরো বৃদ্ধি পায়। গতিসীমা এক পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেলে দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পায় ৪ পার্সেন্ট।”