কানাডার ‘অভিবাসী বিনিয়োগকারী পুঁজি উদ্যোগ’ কর্মসূচি চালু

মার্চ

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ১৯, ২০১৫গত ২৮ জানুয়ারি কানাডা বিনিয়োগকারী পাইলট কর্মসূচি চালু করেছে। এটির নাম দেয়া হয়েছে ইমিগ্রান্ট ইনভেস্টর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। বিশ্বের কোটিপতিদেরকে তাদের অর্থ নিয়ে এদেশে আসতে এবং কানাডীয়দের জন্য ব্যবসায় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উৎসাহিত করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।

এই কর্মসূচির আওতায় তারাই অভিবাসী বিনিয়োগকারী হিসাবে যোগ্য হবেন যাদের সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে এক কোটি ডলার এবং যারা এদেশে পরবর্তী ১৫ বছর ধরে নিশ্চয়তা ছাড়াই ২০ লাখ ডলার করে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত থাকবেন। এই বিনিয়োগ হবে একটি তহবিলের মাধ্যমে যেটির ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে রয়েছে কানাডার ব্যবসায় উন্নয়ন ব্যাংকের বিনিয়োগ শাখা বিডিসি ক্যাপিটাল। এই কর্মসূচির অধীনে সরকার ৫০০-র বেশি আবেদন গ্রহণ করবে না এবং যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবে তাদের মধ্যে ৬০জনকে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে ভিসা দেয়া হবে।

অভিবাসী বিষয়ক অনেক পরামর্শক বলছেন, এটি অনেকটা লটারির মতো।

এর আগের বিনিয়োগ কর্মসূচিটি ছিলো মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ এবং তাতে যেসব ‘বিনিয়োগকারী’কে আসার অনুমোদন দেয়া হয় তারা প্রকৃতপক্ষে খুবই সামান্য অথবা একেবারেই বিনিয়োগ করেননি এবং শেষ পর্যন্ত তারা যে পরিমাণ সম্পদ নিয়ে এসেছিলেন তার চেয়ে বরং বেশি পরিমাণের সম্পদ নিয়ে গেছেন। ২০১২ সালের ওই কর্মসূচির নাম ছিলো ইনভেস্টর প্রোগ্রাম এবং তাতে অভিবাসী বিনিয়োগকারীকে কানাডার অর্থনীতিতে পরিশোধযোগ্য ঋণের আকারে আট লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হতো। এক্ষেত্রে দক্ষতা ও সামর্থের চাহিদা পূরণের কোন বালাই ছিলো না যেমনটা কানাডার বেশিরভাগ অর্থনৈতিক অভিবাসন কর্মসূচিতে প্রয়োজন হয়।

সেসময় প্রায় ৫০ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে এবং তাদের আবেদনপত্র ফিরিয়ে দেয়ার কারণে তারা ঝুলন্ত অবস্থায় পড়ে যান। আগের কর্মসূচিতে একজন বিনিয়োগকারীর অর্থ পাঁচ বছরের মধ্যে ফিরিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা ছিলো। এবারের কর্মসূচি অনুযায়ী কেউ ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলেও কোনও নিশ্চয়তা দেয়া হবে না যে তিনি তার মূলধন ফিরে পাবেন কিনা। এটি নির্ভর করবে তার অর্থ কীভাবে ভূমিকা পালন করেছে। বিনিয়োগকারীর অর্থ দ্বিগুণও হতে পারে আবার তিনি পুরোটাই হারাতে পারেন। এবারের কর্মসূচিতে বিনিয়োগকারীকে এই ঝুঁকি নিতে হবে।

আগের কর্মসূচিতে বিভিন্ন ধরণের দুর্বলতা থাকলেও এবারের কর্মসূচিতে তার অনেকগুলোই দূর করা হয়েছে। অভিবাসন বিষয়ক একজন পরামর্শক, আগের কর্মসূচির আওতায় অনেক গ্রাহক নিয়ে এসেছিলেন। একজন কোটিপতি বা বহুকোটিপতি বিনিয়োগকারীর গড় বয়স হলো ৫৫ থেকে ৬০ বছর। তিনি বলেন, “২০ লাখ ডলার

বিনিয়োগ করে ১৫ বছর ধরে অপেক্ষা করাটা তাদের জন্য অনেক দীর্ঘ সময়। এবারের কর্মসূচিতে মানুষ খুব কমই আগ্রহী হবে।” এদিকে অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস আলেকজান্ডার মনে করেন, এই কর্মসূচি কানাডার জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে। এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো এমন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যারা কানাডার অর্থনীতিতে অবদান রাখবেন এবং আমাদের সমাজের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যাবেন, এর ফলে তিনি আমাদের সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দীর্ঘমিয়াদি অবদান রাখবেন।”

পাইলট প্রোগ্রাম কেমন চলে তার ওপর নির্ভর করছে এর সম্প্রসারণ।

আশা করা হচ্ছে যে, এই পুঁজির আগমনের ফলে এখানে কাঙ্খিত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। সরকার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সময়ে সময়ে লাভ বণ্টন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যেখানে সেই তহবিল কানাডীয়দের উদ্ভাবনীমূলক সূচনার উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হবে। অনেক অভিবাসন বিষয়ক পরামর্শকের মতে, বিশ্বে জনগণের সম্পদ চুরি করা অনেক রাজনৈতিক নেতা এবং প্রকৃত ব্যবসায়ী রযেছেন যারা তাদের অর্জিত সম্পদ ও পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ স্থান খুঁজে নিতে চান কারণ তাদের নিজের দেশে পরিস্থিতি প্রায়শ পরিবর্তনশীল। তারা সবাই তাদের পরিবারের জন্য বাড়ি ও ব্যবসায় কিনতে চান কিন্তু তারা তাদের নিজ দেশেই কর্মরত থাকেন। এই কর্মসূচির আওতায় পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে আসার জন্য যে হাজারও মানুষ আবেদন করবেন তারা উন্নত জীবনের জন্য নয় বরং তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্যই আসবেন। – ক্যানইন্ডিয়া.কম