ইআই সুবিধা লাভের জন্য আবেদনকারীদের বেশিরভাগই আপিলে হেরে যান
নভেম্বর ৮, ২০১৪
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন সামাজিক-নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বয়স এক বছর হয়ে গেলেও এর মাধ্যমে চাকরিহীন যেসব কানাডীয় এমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স (ইআই) বেনিফিট থেকে বঞ্চিত হন তাদের ভাগ্যের কোনও উন্নতি হয়নি। এ সম্পর্কিত দলিলপত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৩ সালের ১ এপ্রিল কার্যক্রম শুরুর দিন থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালটি এমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স বেনিফিট সংক্রান্ত ১,০৭৫টি আপিলের ওপর রায় দিয়েছে।
তথ্য লাভের স্বাধীনতা সম্পর্কিত আইনের আওতায় দি কানাডিয়ান প্রেসকে সরবরাহ করা বিভিন্ন দলিলে দেখা গেছে, ট্রাইব্যুনালের রায়ে এমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স বেনিফিট দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দায়ের করা ৮৬৬টি আপিল গ্রহণ করা হয়েছে। আর বিলম্বে আপিল করার কারণে ৭১টি আবেদন নাকচ হয়ে গেছে।
কেবলমাত্র ২০৯টি সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনাল পাল্টে দিয়েছে। এর ফলে আপিল খারিজ করার হার দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশের সামান্য বেশি। এই হার আগের ব্যবস্থাপনার অধীনে বিগত বছরগুলোতে নেয়া ব্যবস্থার চেয়ে সামান্য বেশি।
উইনিপেগের সামাজিক বেকার সহায়তা কেন্দ্রের নিল কোহেন বলেন, তিনি আশা করেন নতুন ট্রাইব্যুনালের আওতায় আপিল নিষ্পত্তির হার আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘‘এটি কার্যকর ভূমিকা রাখার মত করে পরিকল্পিত নয় Ñ এটি সরকারের পক্ষে খুব ভাল কাজ দেবে কিন্তু সাধারণ কানাডীয়দের জন্য নয়। এই ট্রাইব্যুনালের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা এর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে, এমন উপাদান রয়েছে যাতে বাদীরা এতে অংশগ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত হয়।’’
উদাহরণ স্বরূপ, কোহেন বলেন, নতুুন ব্যবস্থায় রক্ষণশীল সরকারের একজন মনোনীত ব্যক্তিকে দিয়ে তিনজনকে Ñ কর্মচারীর প্রতিনিধি, নিয়োগদাতার প্রতিনিধি এবং ট্রাইব্যুনালের চেয়ার পারসনকে সরানো হয়েছে।
এছাড়া নতুন ব্যবস্থায় ইআই আপিলের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শুনানী সংশ্লিষ্ট পক্ষের লোকদের উপস্থিতিতে না করে টেলিকনফারেন্স বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করা হচ্ছে।
কোহেন বলেন, লোকেরা যখন আপনার সামনে বসে থাকেন তখন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অনুধাবন করা অনেক বেশি সহজ হয়। কিন্তু এখন যা হচ্ছে সেটা অনেকটা চাকরির ইন্টারভিউয়ের মতোÑ বেশিরভাগ লোকই তাদের সাক্ষাৎকার সামনাসামনি দিতে পছন্দ করে, কমপিউটার স্ক্রিনে দেখে বা টেলিফোনে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা হবে এমনটা পছন্দ করেন না।’’
ইআই, কানাডা পেনশন প্ল্যান এবং বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত আপিল প্রক্রিয়া আরও দক্ষতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্য নিয়ে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। রক্ষণশীল সরকার বলছে, শত শত খ-কালীন চাকুরের সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি বোর্ড নিয়ে গঠিত পুরনো ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন ট্রাইব্যুনাল কার্যকর হলে বছরে জনগণের আড়াই কোটি ডলার বেঁচে যাবে।
কিন্তু ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করার পর দেখা যাচ্ছে জনগণকে তাদের ইআই বেনিফিট রক্ষার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে আরও কঠোর ও অধিকতর জটিল প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বেকার কর্মীদের দ্রুত কর্মস্থলে পুনর্বহালের লক্ষ্যে বেনিফিট পাওয়ার আবেদন করার প্রক্রিয়া জটলতর করা হয়েছে।
নতুন বিধিবিধানে বেকার লোকদের তাদের বাসস্থানের যথাসম্ভব কাছাকাছি স্থানে নতুন চাকরির ব্যবস্থা এমনকি তাদের আগের চাকরির চেয়ে কম বেতনের চাকরি নিতে উৎসাহিত করা হয়।
সবসময় যেমনটা ছিলো, ইআই বেনিফিট দাবিকারী ব্যক্তিদেরকে সুবিধাজনক কর্মসংস্থানের জন্য যুক্তিসঙ্গত চাকরি অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে হতো। কিন্তু নতুন বিধান অনুযায়ী তাদেরকে চাকরি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ সম্পর্কিত গবেষণা, চাকরির ব্যাংকের (লড়ন নধহশং) জন্য রিজিউমি তৈরি করা, চাকরির মেলায় অংশগ্রহণ, চাকরির জন্য আবেদন করা এবং যোগ্যতার মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
শ্রমিক ইউনিয়ন ও বিরোধী দলীয় এমপিরা বেকার লোকদের অযথা শাস্তি দেয়ার দায়ে ক্ষমতাসীন দলকে অভিযুক্ত করেছেন।
ট্রাইব্যুনালে এখন ১০ হাজার আপিল অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। কারণ প্রথম বছরে এর স্টাফ ছিলো খুবই সীমিত। গত মাস পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের বেশ কিছু সার্বক্ষণিক চাকরির পদও খালি পড়ে ছিলো।
উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনালে সার্বক্ষণিক চাকরির পদে কর্মরত রয়েছেন ৭০জনেরও কম মানুষÑ যাদের মধ্যে কয়েকজন আবার রক্ষণশীল দলকে অর্থ অনুদান দিয়েছেন বলে সরকারি নথিপত্রে দেখা গেছে। – দি কানাডিয়ান প্রেস