ভাঙচুর করা মসজিদ পরিস্কারে সাহায্য করলেন স্থানীয় অধিবাসীরা
নভেম্বর ৮, ২০১৪
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কোল্ড লেক, আলবার্টা Ñ আলবার্টার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই ছোট্ট শহরের মসজিদে ইট ছুড়ে মেরে জানালা ভেঙ্গে দেয়া এবং এর সামনের দেয়ালে ‘‘বাড়ি ফিরে যাও’’বলে বার্তা লিখে রাখার পর শুক্রবার স্থানীয় অধিবাসীরা একসঙ্গে মসজিদ পরিস্কারে সাহায্য করেন।
মসজিদ বোর্ডের সদস্য মাহমুদ আল-কাদরি বলেন, জুম্মার নামাজের জন্য শুক্রবার সকালে মসজিদের দরোজা খোলার পর তিনি ভাঙচুরের বিষয়টি দেখতে পান। তিনি বলেন, তার পরিবার ১৯৯৬ সাল থেকে কোল্ড লেকে বসবাস করে আসছেন এবং সবসময়ই এখানে তাদেরকে স্বাগত জানানো হচ্ছে বলেই অনুভব করে এসেছেন।
আল-কাদরি বলেন, ‘‘আপনি ‘বাড়ি ফিরে যাও’শীর্ষক বার্তাটি দেখেছেনÑ আমি সবাইকে বলতে চাই যে, এটিই আমাদের বাড়ি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমার বাচচারা এই বার্তাটি দেখে কাঁদতে শুরু করে। আমি তাদের বলেছি, তোমরা কাঁদছো কেন? তারা বলেছে, আমরা এখানে জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি আর এটিই আমাদের বাড়ি।’’
কোল্ড লেকে রয়েছে একটি বৃহৎ সামরিক ঘাঁটি। এই ঘাঁটি থেকে গত মঙ্গলবার ছয়টি কানাডীয় সিএফ-১৮ জেট জঙ্গী বিমান ইরাকে ইসলামী চরমপন্থ’ীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আন্তর্জাতিক মিশনে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে রওনা হয়ে গেছে।
শুক্রবার বিকালের মধ্যে ১৪হাজার জনসংখ্যার এই শহরের অধিবাসীরা উল্লেখিত মসজিদের সামনে রঙচঙে পোস্টার সেঁটে দেন যাতে লেখা ছিলো, ‘‘তোমরা নিজের ঘরে রয়েছো!’’ এবং ‘‘আমরা কানাডীয় হিসাবে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।’’
এরপর লোকেরা মই এবং বালতি নিয়ে মসজিদের দেয়াল থেকে ‘‘বাড়ি ফিরে যাও’’লেখা মুছে ফেলে।
কিছু লোক স্থানীয় রক রেডিও স্টেশনে গিয়ে মসজিদের গায়ে এধরণের দেয়াল লিখনের বিরুদ্ধে তাদের বিতৃষ্ণার কথা সম্প্রচার করেন।
শহরের গর্বিত মেয়র ক্রেইগ কোপল্যান্ড দি কানাডিয়ান প্রেসকে বলেন, ‘‘কোল্ড লেক আজ তার সত্যিকারের চেতনা তুলে ধরেছে।’’তিনি বলেন, ‘‘কোল্ড লেকবাসী এগিয়ে এসেছে এবং মুসলিম কমিউনিটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যে ভাঙা জানালা পাল্টে ফেলা এবং দেয়াল লিখন মুছে দেয়া হয়েছে। এসবই কোল্ড লেককে বসবাসের সবচেয়ে ভাল জায়গায় পরিণত করেছে।’’
আল-কাদরি মনে করেন যে, মসজিদে ভাঙচুরকারীরা এই শহরের বাইরের লোক এবং অটাওয়া ও কুইবেকে হামলার ঘটনায় দুই সৈনিকের মৃত্যুর পর এই মসজিদ ভাঙচুরে কোনরকম মুসলিম-বিরোধী চেতনা কাজ করেছে বলেও তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত নিশ্চিত যে এই কাজ যে-ই করে থাকুক সে হয়তো কোন মাতাল বা রাতের বেলা বেসামাল হয়ে পড়া কোনও লোক অথবা এটি হতে পারে এমন কারও কাজ যে কোল্ড লেকের বাসিন্দা নয়।’’তিনি আরও বলেন, ‘‘কোল্ড লেকের কমিউনিটিতে আমরা খুব ভালভাবে পরিচিত।’’
আল-কাদরি জানান, বর্তমান অবস্থানে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে চার বছর আগে এবং এর আগেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কিন্ত সেটি ছিলো এই এলাকায় কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের অংশ।
আরসিএমপির সার্জেন্ট জোসি ভ্যালিকুয়েত্তি বলেন, ঘৃণা প্রকাশমূলক অপরাধ হিসাবে পুলিশ বর্তমানে ওই ঘটনার তদন্ত করছে না। ওই মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ঘটনা আমাদেরকে যেখানে নিয়ে যাবে আমরা সেখানেই যাবো। এটি একটি ভাঙচুরের ঘটনা। কোন উদ্দেশ্য থেকে বা কোনরকম উদ্দেশ্য ছাড়াই যে কেউ এটা করে থাকতে পারে।’’ – দি কানাডিয়ান প্রেস