প্যাট্রিক ব্রাউনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ : ক্ষমতার সিংহাসনে বসার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ : অন্টারিওর প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির সাবেক নেতা প্যাট্রিক ব্রাউনের রাজনৈতিক জীবনে নেমে এসেছে এক গভীর ধ্বস। এই ধ্বস যৌন হয়রানির অভিযোগের কারণে। আর এই অভিযোগ তার রাজনৈতিক জীবনকে তছনছ করে দিয়ে গেল। চুড়মার করে দিল ক্ষমতার সিংহাসনে বসার স্বপ্নকে।
যৌন কেলেংকারীর কালিমা। ইতিপূর্বে পৃথিবীর অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির জীবনে ধ্বস নামিয়ে দিয়ে গেছে এই যৌন কেলেংকারীর কালিমা। আবার নানান কৌশলে পার পেয়ে গেছেন কেউ কেউ এমনও দেখা গেছে।
প্যাট্রিক ব্রাউন অন্টারিও প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা ছিলেন। অন্টারিওর আসন্ন নির্বাচনে তার দলের জয়ী হওয়ার সম্ভানা ছিল বেশী। আগামী ৭ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই হিসাবে সময় আছে আর মাত্র ৪ মাস। নানান জরীপে তিনি ও তার দল এগিয়ে ছিল। অর্থাৎ তিনিই সম্ভবত হতে যাচ্ছিলেন অন্টারিও প্রভিন্সের পরবর্তী প্রিমিয়ার।
কিন্তু রাতারাতি সে সম্ভাবনার চিত্র পাল্টে গেল। দুই নারী তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। প্রথমে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। ঐ সময় প্রায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা হয়েছিল তার। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেই সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের জাবব না দিয়েই। কিন্তু এর ঘন্টাখানেক পরই তিনি দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তিনি তার এমপিপি (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) পদ থেকে সড়ে দাড়াচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন এই মিথ্যা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ থেকে তিনি তার নাম মুছে ফেলার জন্য লড়বেন। তিনি দাবী করেন এই অভিযোগ সুষ্পষ্টভাবে মিথ্যা।
প্যাট্রিক ব্রাউন ইতিপূর্বে ফেডারেল এমপি ছিলেন। ঐ সময়টাতেই নাকি তিনি যৌন কেলেংকারীর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। দুই নারী এই অভিযোগ তুলেন। সিটিভি নিউজের এক খবরে এই তথ্য প্রকাশিত হয়।
অভিযোগকারী দুই নারীর বয়সই ছিল কম যখন তারা যৌন হয়রানির শিকার হন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন হাই স্কুলের ছাত্রী। অন্যজন ছিলেন ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রী। উভয় নারীই বলেন ঘটনার সময় তারা মাতাল অবস্থায় ছিলেন। এবং ঘটনাগুলো ঘটেছে প্যাট্রিকের বাড়িতে। তবে প্যাট্রিক মাতাল অবস্থায় ছিলেন না যখন এই দুই নারী যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হন।
ঘটনার সময় হাই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন যিনি তিনি সিটিভি নিউজ-কে বলেন, “প্যাট্রিক আমাকে যৌন ক্রিয়ার আহ্বান জানান।” তিনি আরো বলেন, “ He pulled down his pants and I don’t know if he said ‘suck my dick’ or ‘put this in my mouth’ but something along those lines.”
এই ঘটনা ঘটে এখন থেকে প্রায় দশ বছর আগে।
দ্বিতীয় যে নারী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তিনি একসময় প্যাট্রিকের অধিনে কাজ করতেন। সময়কালটা ছিল ২০১২। প্যাট্রিক তখন টরন্টোর উত্তরে অবস্থিত বেরি থেকে নির্বাচিত ফেডারেল এমপি। এয়ার কানাডায় এক যাত্রা পথে উভয়ের প্রথম দেখা হয়। এই নারীর বয়স তখন ছিল ১৮। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে পরবর্তীতে প্যাট্রিকের অফিসে সামার জব পান এই নারী। সিটিভি নিউজ-কে তিনি জানান, সেই সময় একদিন এক নাইট ক্লাবে প্যাট্রিক ও তার বন্ধুরা মিলে তাকে ফ্রি ড্রিংকস সরবরাহ করেন। তিনি সে রাতে প্রচুর ড্রিংকস পান করেন। পরে অধিক রাতে যখন নাইট ক্লাব বন্ধ হয়ে যায় তখন প্যাট্রিক সবাইকে তার বাড়িতে যাবার আমন্ত্রণ জানান। বাড়িতে যাবার পর প্যাট্রিক তাকে এবং অন্যান্য বন্ধুদেরকে তার শয়নকক্ষে আসতে বলেন কি সব ছবি দেখানোর কথা বলে। তারা সেখানে যান। কিন্তু প্যাট্রিকের বন্ধুরা কিছুক্ষনের মধ্যেই কক্ষ ত্যাগ করেন এই নারীকে রেখে। প্যাট্রিক তখন তার বিছানায় বসা। সে রাতে কোন ড্রিংকস পান করেননি তিনি।
এই নারী সিটিভি নিউজ-কে বলেন, দৃশ্যটা ছিল এরকম – একজন মাতাল তরুনী কর্মচারী একা তার বসের শয়নকক্ষে। পরিস্থিতিটা ছিল আতঙ্কজনক। আমি কি করবো তখন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারপরই টের পেলাম প্যাট্রিক আমাকে চুমু খাচ্ছে এবং এই চুমু খাওয়া অব্যাহত ভাবে চলছে। এরপর সে আমাকে বিছানায় ঠেলে নিয়ে যায় এবং আমার উপর চড়ে বসে।
তিনি আরো বলেন, “I could feel his erection on my legs when he was on top of me, so I felt that it would have gone to sexual intercourse if I had not done anything.”
এই পরিস্থিতিতে ঐ নারী প্যাট্রিককে জানান যে তার একজন বয়ফ্রেন্ড রয়েছে।
তিনি সিটিভি নিউজকে বলেন, আমি এই ঘটনাকে যৌন হামলা হিসাবেই বিবেচনা করি।
উপরে উল্লেখিত দুই নারী কৃর্তক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠার পর প্যাট্রিক ব্রাউনের শীর্ষ তিন নির্বাচনী প্রচার কর্মকর্তা তাকে পদত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করতে চান নি। পরে ঐ তিন কর্মকর্তা তাদের পদ থেকে সরে দাড়ান। এরপর তার ককাস মেম্বারদের এক কনফারেন্স কল অনুষ্ঠিত হয় যেখানে এমপিপি গণ দাবী জানান প্যাট্রিক ব্রাউনকে পদত্যাগ করতে হবে।
প্যাট্রিক ব্রাউন পদত্যাগ করেন ২৫ জানুয়ারী।
প্যাট্রিক ব্রাউন সিমকো নর্থ থেকে এমপিপি নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের মে থেকে তিনি অন্টারিও পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসাবে ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় বেরি সিটি কাউন্সিলর হিসাবে। ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফেডারেল এমপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।