ফিরে দেখা ২০১৭
বিদায়ী বছরের আলোচিত কিছু ঘটনা ছিল ইতিবাচক আবার কিছু ঘটনা ছিল রোমহর্ষক এবং আতংক সৃষ্টিকারী
জানুয়ারী ৬, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ : ৩১ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে বিদায় নিল আরেকটি ঘটনাবহুল বছর ২০১৭। অনেক নতুন আশা আর স্বপ্ন নিয়ে ঠিক এক বছর আগে শুরু হয়েছিল এই বছরটি। সেই সব আশা আর স্বপ্নের কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, কিছু হয়নি। আর এই আশা ও স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে গিয়ে মানুষ জন্ম দিয়েছে অনেক ঘটনার যার কোনটি ছিল ইতিবাচক আবার কোনটি ছিল রোমহর্ষক এবং আতংক সৃষ্টিকারী।
এরই মাঝে সামনে এসে হাজির আরেকটি নতুন বছর ২০১৮। প্রতিবারের মত এবারও অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে মানুষ যাত্রা শুরু করে দিয়েছে আরেকটি নতুন বছরে।
গেল বছরের আলোচিত ঘটনা ছিল অনেক। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে ছোট-বড় ঘটনা ঘটেছে অগুনিত। তবে সবচেয়ে বেশী নজরে এসেছে যে ঘটনাগুলো বা সবচেয়ে বেশী আলোচিত হয়েছে যে ঘটনাগুলো সেগুলো নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।
২০১৭ সালে কানাডায় জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল দেশটির ১৫০তম জন্মদিন। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ১ জুলাই পালিত হয় কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। এই উৎসব আর আনন্দের জোয়ার এসে লেগেছিল প্রবাসের বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও। টরন্টো, অটোয়া ও মন্ট্রিয়লসহ আরো কিছু শহরে বাংলাদেশীরা মেতে উঠেছিলেন কানাডার জন্মদিনের উৎসবে। প্যারেডে অংশ নেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন তারা।
কানাডার ১৫০তম জন্মউৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানী অটোয়াতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের সামনে। ২৫ সহস্রাধিক লোকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন বৃটেনের প্রিন্স চার্লস, কানাডার গর্ভনর জেনারেল (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ডেভিড জনস্টোন, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্যগণ এবং সরকারী ও বিরোধী দলীয় এমপিগণ।
পার্লামেন্ট চত্বরে জড় হওয়া জনতার উদ্দেশ্যে প্রিন্স চার্লস, গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টোন ও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বক্তব্য রাখেন। তারা সকলেই কানাডার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, এই দেশটি ডাইভারসিটিকে সম্মান করে এবং বিশ্বে এই দেশটি সকলের কাছে একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে তার ভাষণে বলেন, “আমরা কেয়ার করি না এখানে কে কোন দেশ থেকে আসলো, কার কি ধর্মবিশ্বাস এবং কাকে কে ভালবাসে। কানাডায় সবাইকে সাদরে গ্রহণ করে। সবাই এখানে সমাদৃত।”
২০১৭ সালে কানাডায় সবচেয়ে বেশী আতংকিত যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা হলো কুইবেকে মুসলিম হত্যাযজ্ঞ। সিটিভি নিউজের জরীপেও এই ঘটনাকে একনম্বর আলোচিত সন্ত্রাসী ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারী সন্ধ্যায় ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিব নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্ল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন।
মসজিদে মাগরিব নামাজ আদায়রত মুসল্ল্লিদের উপর হামলা চালানোর পর গাড়িতে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আলেকজান্ডার। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূর গিয়ে ২৭ বছর বয়সী ঐ যুবক নিজেই ৯১১ এ কল করে পুলিশ ডেকে ধরা দেন। পুলিশ কর্মকর্তারা তার গাড়িতে তল্ল্লাসী চালিয়ে দুটি রাইফেল এবং একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্বার করেন।
অভিযুক্ত বিসোনেট কুইবেকের অভিজাত শহরতলী ক্যাপ-রুজের বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি স্থানীয় লাভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স ও নৃবিজ্ঞানের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্ররা বিসোনেটকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক নিঃসঙ্গ তরুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ঘটনার পরপরই কানাডার শোকার্ত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, কানাডা এই ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসবে খোলা হৃদয়ে এবং ঐক্যের ডাক নিয়ে। কানাডার পার্লামেন্টে দাড়িয়ে তিনি বলেন, কুইবেক সিটির ইসলামিক সেন্টারে পরিচালিত হামলায় যে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে তা সন্ত্রাসী ঘটনা। এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানো হয়েছে কানাডার বিরুদ্ধে, কানাডিয়ানদের বিরুদ্ধে। তিনি কানাডায় বসবাসরত ১০ লাখ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। কানাডার ৩৬ মিলিয়ন হৃদয় আপনাদের সঙ্গে সহমর্মী।
হ্যালিফেক্সের সেন্টার ফর ইসলামিক ডেভলাপমেন্ট এর ইমাম জিয়া খান ঐ সময় বলেন, এটি এমন একটি ঘটনা যা রীতিমত আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। তারা এখন ভাবছেন এর পরের টার্গেট কোন মসজিদ?
২০১৭ সালে কানাডায় সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী গর্ড ডাউনি। ২০১৬ সালেও তিনিই ছিলেন সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। গত অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখে মহান এই কিংবদন্তী শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল গোটা কানাডায়। এমনকি কানাডার বাইরেও। তাঁর অকাল মৃত্যুতে কেঁদেছেন তার প্রতিটি ভক্ত। খোদ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি ডাউনির মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করতে গিয়ে। গর্ড ডাউনি ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, লেখক এবং এক্টিভিস্ট। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তার এই চলে যাওয়াটাকে কেউই সহজভাবে নিতে পারেন নি।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে গত বছর সবচেয়ে বেশী নিন্দিত ও অপছন্দের ব্যক্তিটি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২৩ ডিসেম্বর নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রিসমাস মৌসুমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে এপ্র“ভাল রেটিং ছিল তা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় নেতা হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ক্রমাগত নির্লজ্জের মত মিথ্যা কথা বলে আসছেন। উস্কে দিচ্ছেন বর্ণবাদকে, তোয়াক্কা করছেন না জনমতকে। বছর শেষে তিনি বিশ্বব্যাপী হুলস্থূল বাধিয়েছেন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে। তবে তার ঐ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে প্রস্তাব নিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। পরিষদে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটা বড় ধরনের পরাজয়। জাতিসংঘের এই প্রস্তাবের কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য তার সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। কিন্তু এই প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি নৈতিক পরাজয়কে নিশ্চিত করল। এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক গবেষকগণ।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঠিক বিপরীত মেরুতে আছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কানাডাসহ বিশ্বসভায় তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবেই বিবেচিত হচ্ছেন। ২০১৭ সালে তিনি কানাডাসহ আন্তর্জাতিক যে সম্মেলনেই যোগ দিতে গেছেন, সেখানেই রকস্টারের সম্মান পেয়েছেন। গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পাঁচটি জাতীয় জরীপ চালানো হয় কানাডার জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি যাচাই করার জন্য। ঐ পাঁচটি জরীপেই দেখা গেছে জাস্টিন ট্রুডো ও তার দল এগিয়ে আছে জনপ্রিয়তার দিক থেকে।
কানাডায় গত বছর আলোচিত আরেকটি বিষয় ছিল গাঁজা। গাজাঁ নিয়ে কানাডায় গত বছর আলোচনা সমালোচনা বেশ জমে উঠেছিল। গত জাতীয় নির্বাচনে গাজাঁ অন্যতম একটি ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অঙ্গীকার করেছিলন, তিনি ক্ষমতায় এলে কানাডায় গাজাঁ সেবনকে বৈধতা দানের ব্যবস্থা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী তার অঙ্গীকার রক্ষা করার জন্য কদিন আগে অনুষ্ঠানিক পদক্ষেপও নিয়েছেন। অর্থাৎ তার সরকারের পক্ষ থেকে গত ১৩ এপ্রিল পার্লামেন্টে প্রস্তাব উঠানো হয়েছে আগামী ২০১৮ সালের জুলাই মাসের মধ্যে এই গাজাঁ সেবনকে বৈধতা দানের জন্য।
কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ভিড় ছিল গত বছরের আরেকটি আলোচিত ঘটনা। স্টার.কম এর তথ্যে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে কানাডার সীমান্ত অতিক্রম করে যারা কানাডায় আসছেন তাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭০ জনই রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করছেন, যদিও অনেকেই মনে করেন সীমান্ত অতিক্রম করে যারা আসছেন তারা সত্যিকারের শরণার্থী নন এবং তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। সম্প্রতি ইমিগ্রেশন এন্ড রিফিউজি বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ডাটা থেকে এই তথ্য জানা যায়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইস্যুটি ছিল বেশ আলোচিত। মিয়ানমারে যে পৈশাচিক ও নৃশংস গণহত্যা ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে তার পিছনে ভূমিকা রয়েছে কানাডার দুই নাগরিকের! একজনের ভূমিকা সরাসরি এবং অন্যজনের ভূমিকা পরোক্ষ। সরাসরি যার ভূমিকা রয়েছে তিনি হলেন মায়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। এবং যার বিরুদ্ধে পরোক্ষ ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে তিনি হলেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা রেনাটা লক ডেসালিয়েন।
সুচি কানাডার অনারারী সিটিজেন। অন্যজন জন্মগতভাবে কানাডিয়ান সিটিজেন। অং সান সুচি আবার শান্তিতেও নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। ভাবতে অবাক লাগে, সেই অং সান সুচি আজ নিজেই মেতে উঠেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং বর্বর এক গণহত্যায়। নিজের দেশের সেই নিপীড়িত মানুষের বিরুদ্ধেই তিনি আরো ভয়াবহ ও নৃশংস নির্যাতন চালাচ্ছেন স্তম্ভিত বিশ্ববাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে!
কানাডার নাগরিক রেনাটা লক ডেসালিয়েনর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
-রোহিঙ্গাদের এলাকায় মানবাধিকার কর্মীদের যেতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা।
– এ নিয়ে জনমত গড়ে তোলার কর্মসূচী বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করা।
– রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টার ব্যাপারে সতর্কবাণী দিয়েছেন যেসব কর্মকর্তা, তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টা করা।’
কিন্তু রেনটা লক কেন এই কাজগুলো করেছেন তা এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রু–ডো মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচিকে ফোন করে মিয়ানমারে মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সিবিসির খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের জরুরী ভিত্তিতে শক্ত অবস্থান গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে অং সান সুচিকে চাপ দেন জাস্টিন ট্রুডো। রোহিঙ্গা সংকটে সুচির বিশেষ ভূমিকা রাখার ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করেন ট্রুডো।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারও কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য। গত বছর প্রায় নয় লাখ রোহিঙ্গা মায়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
২০১৭ সালে বিশ্ব মঞ্চে আরেক বিতর্কিত রাষ্ট্র নায়ক হিসাবে আলোচিত হয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তিনি পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একের পর এক পারমানবিক অস্ত্রের মহড়া দিয়ে চলেছেন। দেশটি গত ৩ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে বড় পরমাণু পরীক্ষা চালায়। এ ছাড়া ১৫ সেপ্টেম্বর জাপানের ওপর দিয়ে তারা দ্বিতীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ২০১৭ সালে তাদের বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা এটাই প্রমাণ করে যে তারা ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে সফল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডসহ দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো সক্ষমতা তাদের তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসলামোফোবিয়া কানাডায়
একটি অন্যতম ইস্যু ছিল ২০১৭ সালে। অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলেও এই একই প্রস্তাব ফেডারেল পার্লামেন্টে পেশ করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত লিবারেল এমপি ইকরা খালিদ। এই প্রস্তাব পেশ করায় তাকে হত্যার হুমকী দিয়ে ইমেইল পাঠানো হয়েছিল। সিবিসি নিউজ জানায়, এমপি ইকরা খালিদ এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব পেশ করার পর বিদ্বেষী মেইলের জোয়ার দেখা দিয়েছে তার ই-মেইলে। এর মধ্যে হত্যার হুমকীও আছে। খালিদ পার্লামেন্টে জানান, পঞ্চাশ হাজারেরও বেশী ইমেইল পেয়েছেন তিনি। তবে সবই বিদ্বেষী ইমেইল নয়। অধিকাংশ ইমেইলই তার সমর্থনে।
ইকরা খালিদ আরো জানান, ইউটিউবেও তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বলা হয়েছে সে একজন জঙ্গী সমর্থক এবং নিদারুণ বিরক্তিকর ব্যক্তি। ঐ ভিডিওতে আরো বলা হয়েছে, “আমি তোমাকে গুলি করার জন্য তাদেরকে সহায়তা করবো না। তবে আমি সেখানে উপস্থিত থাকবো মাটিতে পড়ে তুমি যখন কান্না করবে তার ভিডিও করার জন্য। হ্যা, আমি সেখানে উপস্থিত থাকবো আমার স্টোরী লেখার জন্য মুখভরা হাসি নিয়ে। হা হা হা। একজন এমপি গুলি খেয়েছেন কানাডিয়ান একজন দেশপ্রেমীর হাতে।”
উল্লেখ্য যে, কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টে যখন এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব (মোশন) পাশ করানো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল এবং বিদ্বেষ এমনকি প্রস্তাব উত্থাপনকারীকে হত্যা করারও হুমকী দেয়া হচ্ছিল ঠিক তখনই অন্টারিও পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয় এই একই এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী এই প্রস্তাবটি পাশ হয় ৮১-০ ভোটে। অর্থাৎ বিপক্ষে একটিও ভোট পড়েনি। পরে ফেডারেল পার্লামেন্টেও এন্টি-ইসলামোফোবিয়া মোশনটি পাস হয়।
কিন্তু কানাডায় ইসলামোফোবিয়া হ্রাস পেয়েছে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন প্রচারপত্র ও ব্যানার হাতে নিয়ে একদল লোক টরন্টোর ডাউনটাউনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি মসজিদের বাইরে সমবেত হয়ে ইসলাম নিষিদ্ধ করার দাবী জানান। এই সময় মসজিদের ভিতরে মুসল্ল্লিগণ জুমার নামাজ আদায় করছিলেন।
মসজিদ টরন্টো’তে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন এমন একজন মুসল্লী মোহাম্মদ আবদি বলেন, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে টরন্টোতে এরকম প্রচন্ড বিক্ষোভ আগে দেখিনি। আমার ধারণা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি ও ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আজকের ঘটনা দেখে আমি খুবই আহত হয়েছি।
ঘটনার সাক্ষী ব্রায়েন্ট গ্রীনবাম নামের এক টরন্টোবাসী বলেন একটি ধর্মসম্প্রদায়ের বিশেষ একটি দিনে এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা উচিৎ হয়নি।
২০১৭ সালে কানাডায় রক্ষণশীলদের কয়েকটি গ্রুপ অধিকমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী একটি অনুভূতি বা চেতনা জাগ্রত করতে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের চলে আসা, গোটা ইউরোপে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী প্রবণতা এবং এর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভাবনীয় সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছেন এই রক্ষণশীল গোষ্ঠিগুলোর সদস্যরা। এই রক্ষণশীলদের মধ্যে নব্য জাতিয়তাবাদের একটি চেতনা নতুনভাবে জাগ্রত হয়ে উঠেছে এখন। কানাডার মাল্টিকালচারালইম নীতিতে তারা বিশ্বাসী নন।
২০১৭ সালে কুইবেকে মুসলিম মহিলাদের নেকাব নিষিদ্ধের আইন নিয়ে কানাডার রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। জমে উঠেছিল বিতর্ক। বৃদ্ধি পেয়েছিল অভিযোগ ও অসন্তোষ প্রকাশের মাত্রা। নেকাব ইস্যুতে পক্ষে বিপক্ষে নানা মত ও তথ্য দিয়ে বিষয়টিকে ক্রমেই জটিল করে তোলা হয়। ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন কানাডার সাধারণ মানুষ।
পাশ্চ্যত্যের সমাজ ব্যবস্থায় মুসলিম জনগোষ্ঠি এমনিতেই বিব্রতকর অবস্থায় আছেন নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের যন্ত্রণায়। কানাডায় অবস্থানকারী মুসলিম জনগোষ্ঠিও এর বাইরে নয়। এর মাঝে আবার এই নেকাব ইস্যু নিয়ে হৈচৈ শুরু হওয়াতে বিব্রত হওয়ার মাত্রাটি যেন আরেকটু বৃদ্ধি পেল।
ঘটনার শুরু গত ১৮ অক্টোবর যখন কুইবেক প্রভিন্সের পার্লামেন্টে রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি বিল (বিল ৬২) পাশ হয়। বিলের কোথাও অবশ্য নেকাব বা বোরখার কাথা বলা হয়নি স্পষ্ট করে। বলা হয়নি যে মুসলিম মহিলাগণ রাস্তায় বোরখা পরে এবং নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে বেড় হতে পারবেন না। যে কথা বলা হয় সেটি হলো, বাসে বা ট্রেনে উঠতে হলে কিংবা কোন সরকারী অফিসে গিয়ে সেবা পেতে হলে কিংবা সরকারী অফিসে কাজ করতে হলে মুখ ঢেকে রাখা যাবে না। অর্থাৎ নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। পর্দার আড়ালে থেকে সেবা নেওয়া যাবে না এবং সেবা দেওয়া যাবে না।
জঙ্গী সন্দেহে ভুলভাবে অভিযুক্ত ও নির্যাতিত তিন কানাডিয়ান মুসলিমকে ৩১.৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় কানাডা সরকার ২০১৭ সালে। একই সাথে ক্ষমা প্রার্থনাও করা হয়। ক্ষতিপূরণ পাওয়া এই তিন ব্যক্তি হলেন, আব্দুল্লাহ আলমালিক, আহমদ এল মাতি এবং মুয়ায়েদ নূরেদীন। তারা তিনজন মিলে এই ৩১.২ মিলিয়ন ডরার ভাগ করে নিবেন। এই ক্ষতিপূরণ বিষয়টি নিয়ে কানাডার রাজনীতি কিছুদিন উত্তপ্ত ছিল।
উল্লেখ্য যে, ৯/১১ এর ঘটনার পর সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এই তিন কানাডিয়ান মুসলিমকে সিরিয়ায় আটক করে ইন্টারোগেশনের নামে দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করা হয়। আর ঐ নির্যাতনের বিষয়টি কানাডিয়ান গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ ও আরসিএমপি কর্মকর্তাগণ জানতেন। শুধু তাই নয়, ইন্টারোগেশনের ব্যাপারে তারা সিরিয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তাও করেন। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন সিরিয়ায় নিযুক্ত তৎকালীন কানাডিয় রাষ্ট্রদূতও। ২০০৮ সালে ফেডারেল সরকার কর্তৃক পরিচালিত এক তদন্তে দেখা
গেছে কানাডিয়ান কর্মকর্তাগণ পরক্ষোভাবে অবদান রাখেন ঐ নির্যাতনের বিষয়ে।
এর আগে কানাডার ফেডারেল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিল কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে’র সাবেক বন্দী ওমর খাদারের কাছে। ওমর ১০.৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে সরকারের কাছ থেকে। সে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে ২০ মিলিয়ন ডলার ক্ষপিপূরণ চেয়েছিল। ওমরের অভিযোগ ছিল সরকার তার নাগরিক অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে। এটি ২০১৭ সালের একটি আলোচিত ঘটনা ছিল। তখন প্রধান বিরোধী দল এর তীব্র সমালোচনা করে। রাজনীতির মাঠ তখন বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
কানাডায় ইমিগ্রেন্ট ইস্যুও ছিল ২০১৭ সালে আলোচিত বিষয়। কানাডা আগামী তিন বছর পর্যায়ক্রমে প্রায় ১০ লাখ ইমিগ্রেন্টকে স্বাগত জানাবে। গত ১ নভেম্বর সংসদে এই পরিকল্পনা পেশ করেন ইমিগ্রেশন মন্ত্রী আহমদ হোসেন। নতুন এই ইমিগ্রেন্টদের স্বাগত জানানো হবে ইকনমিক মাইগ্রেন্ট, ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন ও রিফিউজি ক্যাটাগরীতে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালে স্বাগত জানানো হবে ৩ লাখ ১০ হাজার ইমিগ্রেন্টকে। ২০১৯ সালে স্বাগত জানানো হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার ইমিগ্রেন্টকে এবং ২০২০ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাড়াবে ৩ লাখ ৪০ হাজারে।
বর্তমান সরকারের এই ইমিগ্রেশন পরিকল্পনা নিয়ে বিরোধী দল সন্তুষ্ট নয়। প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপি এবং অভিবাসন সংক্রান্ত দলীয় সমালোচক মিশেল রেমপেল সংসদে এই পরিকল্পনা পেশ করার আগেই বলেছিলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল অভিবাসন বিষয়ে একটি সুষম পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কম জনবহুল এলাকায় লোকসংখ্যার ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শ্রমঘাটতিও পূরণ করা যাচ্ছে না। এনডিপি’র এমপি এবং অভিবাসন সংক্রান্ত দলীয় সমালোচক জেনি কাওন বলেন, ২০১৮ সালের অভিবাসন পরিকল্পনা আরো উচ্চাভিলাষী হতে হবে।
২০১৭ সালে কানাডার ইমিগ্রেশন আইন বিল সি-২৪ নিয়েও বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা হয়। ঐ আইনে দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব হরণের একটি ধারা ছিল যেটা নিয়ে ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটিতে ব্যাপক হতাশা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের করে যাওয়া ইমিগ্রেশন আইন ‘বিল সি-২৪’ এ আরো বেশ কিছু বিতর্কিত ধারা ছিল যা গত বছর সংশোধন করে পার্লামেন্টে আইন পাশ হয় (বিল সি-৬) এবং পরবর্তীতে সিনেটেও পাশ হয়। ফলে এখন দ্বৈত নাগরিকদের কেউ কোন অপরাধ করে থাকলে কানাডার প্রচলিত আইনেই তার বিচার করা হবে। কিন্তু তার নাগরিকত্ব হরণ করা যাবে ন। অবশ্য সিটিজেনশীপের আবেদন পত্রে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন ভুল তথ্য দিলে এবং পরবর্তীতে তা প্রমানিত হলে তার কানাডিয় নাগরিকত্ব হরণ করা যাবে।
২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী মি-টু আন্দোলন সকলের নজর কাড়ে। হলিউডের যে সকল নারী যৌন নির্যাতন ও হয়রানির তথ্য ফাঁস করেছেন তাদেরকে ২০১৭ সালের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের সম্মাননায় ভূষিত করেছে বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন। আর ‘মি টু’ আন্দোলন নুতন করে উজ্জীবিত হয়েছে হলিউডের প্রখ্যাত প্রযোজক হার্ভের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ উত্থাপনের পর থেকেই। এই আন্দোলন এখন আর হলিউডে সীমাবদ্ধ নেই, আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়ে কানাডাসহ সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পরেছে। বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন খন্দকার বলেন, মি টু ক্যাম্পেইন আমাদের সামনে স্পষ্ট করতে পারে যে, যৌন হয়রানি কতোটা ব্যাপক। তিনি আরও বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিতে পারি যে, আমার পরিচিত প্রত্যেকটি নারী জীবনের কোনও না কোনও সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। সাড়ে সাত বিলিয়ন মানুষের এই বিশ্বে যদি তিন বিলিয়ন মানুষ যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে একে মানবতার বিরুদ্ধে সর্বকালের সবচেয়ে বড় রোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
২০১৭ সালে কানাডায় সর্বশেষ আলোচিত ঘটনা ছিল জায়েন্ট ঔষধ কোম্পানী এপোটেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ধনকুবের ব্যবসায়ী ব্যারি শেরম্যান ও তার স্ত্রী হানির ‘রহস্যজনক মৃত্যু’।
কানাডার এই অতি ধনী ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রীকে তাদের নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাদের মৃত্যুকে ‘রহস্যজনক’ বলে বর্ণনা করেছে পুলিশ। জনসেবক বা দাতা হিসেবেও ব্যারি শেরম্যান এর খ্যাতি ছিল।
কানাডিয়ান বিজনেস ম্যাগাজিন এর তথ্য অনুযায়ী ব্যারির ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। এ্যাপোটেক্স এখন বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।