কি নির্মম ও নিষ্ঠুর নিয়তির খেলা!
ফেব্রুয়ারী ১০, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ তিন বছরের সাহসী যুদ্ধে জয়ী হয়েও গাড়ি চাপায় মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হলো পাঁচ বছর বয়সী ক্যামিলাকে। গত ১৫ জানুয়ারী নর্থ ইয়র্কের সেইন্ট রাফেল ক্যাথলিক স্কুলের সামনে ঘটে এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাটি। দুর্ঘটনাটিও ছিল এক বিরল প্রকৃতির। ক্যামিলাকে চাপা দেয় যে গাড়িটি সেই গাড়িতে কোন চালক ছিল না। যেন গাড়িটি নিজে থেকেই এসে ক্যামিলাকে চাপা দেয়।
টরন্টো স্টার পত্রিকা প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, ক্যামিলা স্কুল থেকে বের হয়ে তার বাবার সঙ্গে তাদের গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিল। ঠিক ঐ মূহুর্তে কাছাকাছি পার্ক করা একটি এসইউভি হঠাৎই গড়িয়ে এসে তাদের দুইজনকেই আঘাত করে। দুই গাড়ির মধ্যখানে চাপা পড়ে তারা।
উন্মত্তপ্রায় ক্যামিলার বাবা এ্যমিলকার টরকাটো বলেন, তিনি ঠিক মনে করতে পারছেন কতক্ষণ তারা দুই গাড়ির মধ্যখানে চাপা পড়ে ছিলেন। দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তারগণ তাকে জানান, ক্যামিলার শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেদিন বিকেলেই ক্যামিলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ক্যামিলার বাবাও আহত হন ঐ অদ্ভূত রহস্যময় দুর্ঘটনায়।
ক্যামিলার বাবা বলেন, সে ছিল খুবই স্পেশাল গার্ল। তার সমস্যা ছিল। সে ছিল ক্যান্সারের রোগী। কিন্তু সে ছিল যোদ্ধা। ক্যান্সারের সঙ্গে সে যুদ্ধ করেছে। সে ছিল মিষ্টি মেয়ে, লাজুক, কিন্তু খুবই মিষ্টি; আমার মন তার স্মৃতিতে ভরপুর হয়ে আছে।
সাধারণত ক্যামিলা মা-ই তাকে স্কুল থেকে আনা নেয়া করতেন। কিন্তু সেদিন তার মা এ্যমিলকারকে অনুরোধ করেন ক্যামিলাকে স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য।
এদিকে গাড়িতে ড্রাইভার অনুপস্থিত থাকার পরও সেটি কিভাবে গড়িয়ে গিয়ে ক্যামিলা ও তার বাবাকে আঘাত করলো তা এক বিরাট রহস্য হয়ে দাড়িয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। কিন্তু এখনো কারণ খুঁজে পায়নি। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও গঠন করা হয়নি এখন পর্যন্ত।
ক্যামিলার বাবা গাড়ি চালকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, স্কুল এরিয়াতে যাতে তারা খুব সতর্ক হয়ে গাড়ি চালানা করেন। গাড়ি পার্ক করার পর ইঞ্জিন বন্ধ করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হন। ইঞ্জিন বন্ধ না করে গাড়ি ত্যাগ করবেন না। আজ আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। কাল অন্য কারোর বেলায়ও তা ঘটতে পারে।
স্কুলের স্টুডেন্ট ও স্টাফদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য গ্রিফ কাউন্সিলরগন কাজ করে যাচ্ছেন। ক্যামিলার স্মরনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও স্টাফগণ ফুল দিয়ে সমবেদনা জানাচ্ছেন। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন অনেকে। অভিভাবকদের কেউ কেউ বলেছেন এ ট্রাজেডি বর্ণনার কোন ভাষা নেই।
টরন্টো পুলিশের সুপরিনটেন্ডেন্ট স্কট ব্যাপটিস্ট বলেন, ক্যামিলার এই মৃত্যু অতিব এবং অতিব মাত্রায় দুঃখজন।
ক্যামিলা মাত্র কয়েক মাস আগে কেমোথেরাপি শেষ করে গত সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। গত তিন বছর ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে কয়েক দফায় তাকে অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু ঐটুকুন অবুঝ শিশু এত কষ্টের মধ্যে থেকেও দমার পাত্রী ছিল না। সে সামনে এগিয়ে গেছে।
কিন্তু নিয়তির কি নির্মম ও নিষ্ঠুর খেলা। মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করেও কুঁড়িতেই ঝড়ে গেল নিষ্পাপ শিশুটি। ফুল হয়ে আর ফোটা হলো না। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজিডি আর কি হতে পারে?