‘মুসলিম মর্টগেজ’ এর নাম করে গ্রাহকদের কাছে থেকে সংগৃহীত কয়েক মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ
ছয় বছরেও উদ্ধার হয়নি আত্মসাৎকৃত সেই অর্থ
ডিসেম্বর ১, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ওমর কালাইর নামের এক মুসলিম ব্যবসায়ী ‘মুুসলিম মর্টগেজ’ এর নাম করে ২০১১ সালে গ্রাহকদের কাছে থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে আরসিএমপি তদন্তে নামে। কিন্তু ইতিমধ্যে ৬ বছর পার হয়ে গেলেও সেই অর্থের কোন হদিস করতে পারেনি আরসিএমপি। গত ৭ নভেম্বর অন্টারিও সুপরিয়র কোর্টে ক্রাউন এটর্নি ডামিন ফ্রস্ট তার বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে এ তথ্য জানান। এই সময় কোর্টে উপস্থিত ওমর কালাইর মনোযোগ সহকারে বক্তব্য শুনছিলেন। তবে তার দৃষ্টি ছিল নির্বিকার। শুধু একবার ক্ষণিকের জন্য তিনি একটু হতবুদ্ধি হয়ে উঠেন যখন দেখেন কোর্টে উপস্থিত তার আরেক সহযোগী আসামী ইউসুফ পানচায়া ঘুমিয়ে পড়েন। খবর সিবিসি নিউজের।
ওমর কালাইর একসময় ভর্তি হয়েছিল ইকনমিক্স এর উপর পিএইচডি করার জন্য এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ইসলামিক ফিনান্সের উপর বক্তৃতাও দিয়েছেন। এমনকি হারভার্ড ইউনিভার্সিটির মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন এই বিষয়ের উপর!
ওমর ও ইউসুফ উভয়েই অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ অস্বীকার করেন যখন ২০১৪ সালে তাদের বিরুদ্ধে আরসিএমপি চার্জ গঠন করে।
তাদের বিরুদ্ধে ততন্ত শুরু হয় ২০১১ সালে যখন ১৮০ জন বাড়ির মালিক প্রতারণার শিকার হয়ে বিপদগ্রস্ত হন। ঐ সময় সুপরিয়র কোর্ট এর বিচারক ওমরের ফিনান্সিয়াল কোম্পানী ‘ইউএম ফিনান্সিয়াল’ কে ‘রিসিভারশীপ’ এর দায়িত্বে দেন।
ঐ সময় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগৃহীত মর্টগেজ জমা হওয়ার কথা সেন্ট্রাল ওয়ান ক্রেডিট ইউনিয়ন এর একাউন্টে। কিন্তু সেই অর্থ জমা হয়নি। সেন্ট্রাল ওয়ান ক্রেডিট ইউনিয়ন কয়েক মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল ‘ইউএম ফিনান্সিয়াল’ কে ২০০৪ সাল থেকে। শরীয়া ব্যাংকিং এর সুদ হারাম হলেও ইউএম ফিনান্সিয়াল গ্রাহদের কাছে থেকে প্রতিষ্ঠানের নাম করে ফি আদায় করতো যা ছিল রেগুলার মর্টগেজ রেট এর চেয়েও বেশী।
২০১৪ সালে আরসিএমপি ওমর এবং ইউসুফ এর বিরুদ্ধে ৪.৩ মিলিয়ন ডলার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করে। এবং একই সাথে অভিযোগ দায়ের করে কোম্পানীর নামে ক্রয়কৃত ৩২ কেজি স্বর্ণের বার লাপাত্তা হওয়ার কারণে। অভিযোগ দায়ের করার পর ওমর আত্মগোপন করেন। পরে কানাডাব্যাপী খোজাখুজি শুরু হলে তিনি মার্চ মাসে আত্মসমর্পন করেন।
উললেখ্য যে, শরীয়া আইন মেনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঐ ইউএম ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানটি। এদের মাধ্যমে যারা মর্টগেজ এর জন্য আবেদন করবেন তাদেরকে কোন প্রকার সুদ দিতে হবে না যেটি ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরকম আরো কিছু ধর্মীয় আইন-কানুন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চালু করা ইউএম ফিনান্সিয়াল এর কর্ণধার ওমর কালাইয়ার নিজেই এখন বিচারের মুখমুখি কয়েক মিলিয়ন ডলার নানান কলা-কৌশলের মাধ্যমে চুরি করে নিজের পকেটে ঢুকানোর জন্য।
ইসলামী কায়দায় ঋণ প্রদানের নাম করে এই ওমর যে সকল অপকর্ম করেছেন তার একটি নমুনা এরকম – ইউসুফ পানচায়া নামের এক ধর্মীয় গুরু এবং তার আরো চার সহযোগী মিলে ইউএম ফিনান্সিয়াল এর কাছে ২.৭ মিলিয়ন ডলার দাবী করেন এই যুক্তি দেখিয়ে যে তারা কয়েক বছর ধরে ইউএম ফিনান্সিয়ালকে শরীয়া বিষয়ক পরামর্শ দিয়েছেন। এই ইউসুফ একসময় ইউএম ফিনান্সিয়াল এর চেয়ারম্যানও ছিলেন। তারা বলেন, “গত কয়েক বছর তারা প্রতিষ্ঠানটিকে শরীয়া বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন ফ্রি।” পরে তারা বললেন ঐ ‘ফ্রি’ সার্ভিসের জন্য তারা অর্থ প্রাপ্য! এবং সেই অর্থের পরিমান ২.৭ মিলিয়ন! অথচ এ বিষয়ে ইউসুফ পানচায়া ও ওমর কালাইয়ার মধ্যে কোন লিখিত চুক্তি ছিল না।
আদালতে অভিযুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড হতে পারে।