কানাডা ২০১৬ সালে ৮,০০০ কোটিপতি অভিবাসীকে গ্রহণ করেছে

সেপ্টেম্বর ২, ২০১৭

উন্নততর জীবনের সন্ধানী সারা বিশে^র অভিবাসীদের কাছে কানাডা বাতিঘর হিসাবে বিবেচিত হলেও দেশটি ক্রমশ সম্পদশালীদেরও গন্তব্য হয়ে উঠছে।

নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েল্থ নামের একটি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর প্রায় আট হাজার কোটিপতি ব্যক্তি অভিবাসী হিসাবে কানাডায় এসেছেন। সারা বিশে^ কোটিপতি অভিবাসী গ্রহণের দিক থেকে এটি হচ্ছে তৃতীয় সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি ১১,০০০  কোটিপতি অভিবাসী গেছেন অস্ট্রেলিয়ায় এবং ১০,০০০ কোটিপতি অভিবাসী নিয়ে তার পরের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের। খবর ইয়াহু ফাইনান্স কানাডার।

২০১৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে পরের বছরের একই তারিখ পর্যন্ত কানাডায় আসা মোট অভিবাসীর সংখ্যা তিন লাখ ২০,০০০। আর কানাডা যেহেতু কমপক্ষে তিন লাখ অভিবাসীকে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে সেজন্য অভিবাসী আগমনের সংখ্যা আরও বাড়বে।

রিপোর্টে দেখা যায়, বিশ^জুড়েই কোটিপতি মানুষেরা ক্রমবর্ধমান হারে  শেকড়ের টান উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়ছেন। গত বছর ৮২ হাজার কোটিপতি মানুষ অভিবাসী হয়ে দ্বিতীয় কোনও দেশে চলে গেছেন। ২০১৫ সালে এধরণের অভিবাসন গ্রহণের সংখ্যা ছিলো ৬৪ হাজার জনের।

নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েল্থ-এর গবেষণা প্রধান এন্ড্রু এমোইলস সিএনবিসি গণমাধ্যমকে বলেন, সন্তানের ভালো লেখাপড়া এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়টি কোটিপতিদেরকে প্রাথমিকভাবে অভিবাসী হতে উদ্বুদ্ধ করে।

তিনি বলেন, “তারা সন্তানদের জন্য সেরা স্কুল চান এবং নিরাপদ বোধ করতে চান।”

ওই দুটি বিষয় বিবেচনার পর তারা গুরুত্ব দেন জলবায়ু, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়গুলির ওপর।

রিপোর্টে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি কোটিপতি অভিবাসীর অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পেছনে কারণ হলো এটির অবস্থান এশিয়ার কাছে এবং সেখান থেকে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামের ক্রমবিকাশমান বাজারগুলোতে ব্যবসা করার চমৎকার সুযোগ।

গবেষকরা এটাও উল্লেখ করেছেন যে, অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে জোরালো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং দেশটি ‘মধ্যপ্রাচ্যের গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ইউরোপে যে অভিবাসী সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা থেকে অক্ষাকৃত মুক্ত’।

রিপোর্টে বলা হয়, কোটিপতিরা সম্ভবত একারণেও অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন যে, সেখানে তারা তাদের ভাগ্য আরও উন্নত করার সুযোগ পাবেন বলে মনে করছেন। এতে আভাস দেয়া হয় যে, গত ১০ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৫ শতাংশ বেড়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে বেড়েছে ২৮ শতাংশ।

গবেষকরা বলেন, “এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা গড়ে যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের তুলনায় বেশি সম্পদশালী।

২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া সেদেশের অর্থনীতিতে কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক ধনাঢ্য বিদেশীদের জন্য নতুন ধরণের ভিসা ব্যবস্থা চালু করে।

কানাডা ২০১৪ সালে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও গত বছর পর্যন্ত এই প্রকল্পে মাত্র সাতজন আবেদন করেন। তবে তারা স্থায়ী আবাসন ভিসা গ্রহণ করেননি।

এদিকে ফ্রান্স, চীন ও ব্রাজিল থেকে যথাক্রমে ১২ হাজার, নয় হাজার এবং আট হাজার কোটিপতি অভিবাসী দেশান্তরী হয়েছেন।

এন্ড্রু এমোইলস সিএনবিসিকে বলেন, ফ্রান্সে ধনীদের ওপর বর্ধিত কর চাপানো এবং ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়ার কারণে কোটিপতিরা দেশটি ছেড়ে যাচ্ছে।  তিনি বলেন, “বিশেষ করে চীনের ক্ষেত্রে অনেক নতুন নতুন কোটিপতি সৃষ্টি হওয়ায় পুরনো কোটিপতিরা দেশ ছাড়ছেন। তবে আপনি যুক্তি দেখাতে পারেন যে, ফ্রান্সে অনেক কোটিপতির সৃষ্টি হচ্ছে না। সেজন্য কোটিপতিদের দেশত্যাগ ওই দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।”

রিপোর্টে কোটিপতিদের অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্যও ধর্মীয় উত্তেজনাকে চিহ্ণিত করা হয়।

রিপোর্টে কেবল সেইসব কোটিপতিদের কথা বলা হয়েছে যারা কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য কোনও দেশে যান। যারা কোনও নতুন দেশে সম্পদ অর্জন করেন বা খুব কমই সেদেশে বসবাস করেন এমন কোটিপতিদের নিয়ে এই গবেষণা করা হয়নি।