কানাডায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত হামলা ৬০ভাগ বেড়েছে

জুলাই ৮, ২০১৭

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন হামলার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় লাফিয়ে ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলার ১৫৯টি ঘটনা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে যা আগের বছর ছিলো ৯৯টি। খবর সিবিসি নিউজের।

কানাডীয় মুসলিমদের জাতীয় কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান খালিদ এলগাজার ২০১৫ সালকে একটি কানাডার মুসলমানদের জন্য একটি ‘কঠিন বর্ষ’ হিসাবে উল্লেখ করেন। এবছর ফ্রান্সে দুটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা মুসলিম-বিরোধী মনোভাব উস্কে দেয়। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার ওই বছরই মুসলিম নারীদের জন্য সিটিজেনশিপ অনুষ্ঠানে নেকাব পরার অধিকার দিয়ে আইন পাশ করেন। এই দুটি বিষয় ছিলো নির্বাচনী প্রচারণার “কেন্দ্রীয় বিষয়”।

পার্লামেন্ট হিল-এ এক সংবাদ সম্মেলনে খালিদ এলগাজার বলেন, কানাডার মুসলিম কমিউনিটিকে কেন্দ্রীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র ক্ষতিকর রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজির কারণে চাপে পড়তে হয়েছে। ওইসব রাজনৈতিক বক্তৃতায় মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী অথবা সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে চিত্রিত করা হয়েছে।

তিনি বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে কনজারভেটিভদের প্রচারণাকে দায়ী করা থেকে বিরত থাকেন, তবে ওই প্রচারণা হামলা বৃদ্ধির “অন্যতম উপাদান” ছিলো বলে উল্লেখ করেন।

এলগাজার বলেন, বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার অনেক মুসলিমই হামলার ঘটনা পুলিশকে জানান না, কারণ ভীত-শঙ্কিত থাকেন যে পুলিশে জানালে তাদেরকে আরও হেনস্তা হতে হবে অথবা তারা ভাবেন যে, পুলিশ কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে না।

তিনি সমস্যার স্বরূপ সম্যক উপলব্ধি করার লক্ষ্যে পুলিশের তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহের কাজে তহবিল বাড়ানোর জন্য সরকারের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান।

তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে শিক্ষা, জনসচেতনতা এবং সংঘাত ও সহিংসতা প্রতিরোধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা এবং স্কুল কর্মসূচির জন্য জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অর্থ দ্রুত বরাদ্দ দিতে সক্রিয় হওয়া এবং অধিকতর সম্পদ সন্নিবেশ করা সর্বস্তরের সরকারেরই এগিয়ে আসা দরকার।

নতুন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকেদের ওপর হামলার ঘটনা ২০১৫ সালে কমে ১৭৮টিতে দাঁড়িয়েছে যা আগের বছর ছিলো ২১৩টি। উল্লেখ্য, কানাডায় ইহুদিরাই ছিলো সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সেন্টার ফর ইসরায়েল অ্যান্ড জিউস অ্যাফেয়ার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শিমন কফলার ফোগেল যাকে খুবই “অশান্তিকর এবং স্পষ্ট” প্রবণতা বলে উল্লেখ করেন।

এক বিবৃতিতে ফোগেল বলেন, “ইহুদিদের ওপর হামলার বিষয়টি সব কানাডীয়র জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিৎ, কারণ ঐতিহাসিকভাবে সেমিটিক-বিরোধিতার বিষয়টি কোনও সমাজের মূল্যবোধের স্বাস্থ্যগত অবস্থা চিহ্নিত করে। যারা ইহুদিদের ওপর হামলা করে তারা বস্তুতপক্ষে স্বাধীনতা, সাম্য ও সবার নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।”

জুইস ফ্যামিলি সার্ভিসের মার্ক জারেকি বলেন, এমনকি অহিংস ঘটনাবলী যেমন সেমিটিকদের বিরুদ্ধে স্প্রে দিয়ে দেয়ালচিত্র আঁকাও আঘাতের মতো। এটা ঠিক আঘাতের রপবর্তী মানসিক চাপজনিত ব্যাধির মতো।”

সহিংসতা যখন যৌনতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ

যৌনতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের সংখ্যা ২০১৫ সালে কমেছে। আগের বছর এ ধরণের ১৫৫টি অপরাধ ঘটলেও ২০১৫ সালে ঘটেছে ১৪১টি। কিন্তু যেকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো চরিত্রের দিক থেকে অনেক বেশি সহিংস ছিলো বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ৪২ শতাংশ হামলার শিকার ব্যক্তি জখম হয়েছেন।

এদিকে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর হামলার ঘটনাও কমেছে। তবে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর হামলার  ঘটনা এখনও এধরণের সব অপরাধের মধ্যে শতকরা হিসাবে সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ২২৪টি। এর ফলে সব ধরণের বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের ১৭ শতাংশই ছিলো কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর হামলার ঘটনা। এর আগের বছর এধরণের হামলা হয়েছিলো ২৩৮টি।

জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী র‌্যালফ গুডেল বলেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের হুমকির মুখে থাকা অবকাঠামো রক্ষায় সরকার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিনিয়োগ করছে। তবে তিনি তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার কাজে তহবিল বরাদ্দের অনুরোধ বিবেচনা করবেন বলেও জানান। হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়াকে “গভীরভাবে পীড়াদায়ক” বলে উল্লেখ করে গুডেল বলেন, এটি সম্মিলিতভাবে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনের বিষয়টিই তুলে ধরে।