গ্রেটার টরন্টোর হাউজিং মার্কেট : অবশেষে আগুন নিভেছে : কমতে শুরু করেছে তাপও

জুলাই ৮, ২০১৭

প্রবাসী কণ্ঠ : গ্রেটার টরন্টোর বাড়ির মূল্যে যে আগুন লেগেছিল অবশেষে তা নিভেছে। মূল্যের তাপও কমতে শুরু করেছে। হাউজিং মার্কেট এখন আর বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে নয়, ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে প্রায়।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, গত প্রায় দুই মাসে টরন্টোতে বাড়ির মূল্য কমেছে গড়ে শতকরা ১২ ভাগ। আর জুনের প্রথম দুই সপ্তাহে বাড়ি বিক্রির হার কমেছে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও বেশী।

জুনের শুরুতে গ্রেটার টরন্টোতে বাড়ির গড় মূল্য ছিল ৮০৮,৮৪৭ ডলার। আর এপ্রিলে এই গড় মূল্য ৯২০,৭৯১ ডলার। শতকরা হিসাবে মূল্য হ্রাস পেয়েছে ১২%। এই তথ্য টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ডের। বোর্ডের তথ্যে আরো জানা যায়, জুন মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে বাড়ি বিক্রি হয়েছে ২৯৯৯টি। অন্যদিকে বিক্রির জন্য লিস্টিং বৃদ্ধি পেয়েছে ২২%। খবর হাফিংটন পোস্ট এর।

অবশ্য গ্রেটার টরন্টোতে বাড়ির গড় মূল্য এখনো গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৬.৭% বেশী। যে ১২% কমেছে সেটা গত এপ্রিল মাসের তুলনায়। অন্টারিও সরকার বাড়ির অগ্নিমূল্য নিয়ন্ত্রণকল্পে  গত এপ্রিল মাসে ফেয়ার হাউজিং প্লান নামের নতুন আইন করার পর থেকেই বাজার পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। অবশ্য ঐ নতুন আইন করার পর অনেকেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এই বলে য, এতে কোন কাজ হবে না। বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।

উল্ল্লেখ্য যে, গত কয়েক বছরে গ্রেটার টরন্টো এলাকায় বাড়ির মূল্য যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে শুধু অবাক হওয়া নয়, আতংকিত হওয়ার পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছিল। সবারই প্রশ্ন ছিল, মূল্য বৃদ্ধির এই পাগলা ঘোড়া কোথায় গিয়ে থামবে? বা আদৌও থামবে কি? নাকি অচিরেই একটা বড় রকমের ধ্বস নামবে? যদি ধ্বস নামেই তবে তা সামাল দেয়ার মত শক্তি কি আছে সকলের?

ঐ আতংকজনক পরিস্থিতির কারণে নতুন ক্রেতা যারা টরন্টোতে বাড়ি কেনার চিন্তা ত্যাগ করেছিলেন, তারা ছুটেছিলেন শহরতলীর দিকে বা আশপাশের অনতি দূরের শহরগুলোতে। ফলে সেখানেও চাপ বৃদ্ধি পায় এবং পরিনতিতে বাড়ির মূল্যও বৃদ্ধি পায়  অস্বাভাবিক হারে। এ কারণে সেখানেও নতুন ক্রেতাদের পক্ষে আর বাড়ি কেনা সম্ভব হচ্ছিল না।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তখন নতুন ক্রেতাদের অনেকে কন্ডো এপার্টমেন্ট ক্রয়ের দিকে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল অচিরেই কন্ডো এপার্টমেন্টও নতুন ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বা যাচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এ বছর জানুয়ারীতে গ্রেটার টরন্টো এরিয়াতে ডিটাচড্ বাড়ির গড় মূল্য ছিল ১.৩ মিলিয়ন ডলার। দশ বছর আগে গ্রেটার টরন্টো এরিয়াতে ডিটাচড্ বাড়ির গড় মূল্য যা ছিল তার চেয়ে বর্তমান এই মূল্য প্রায় তিন গুণ বেশী! বাড়ির মূল্য আসলে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে গত দুই তিন বছরে। কিন্তু তারপরও ক্রেতার অভাব ছিল না। কোন বাড়ি লিস্টিং এ দিলে এক দুই দিনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল এবং শুধু বিক্রি নয়, আস্ককিং প্রাইজ ৬ লাখ ডলার হলে সেই বাড়ি বিক্রি হচ্ছিল ৮ বা ৯ লাখ ডলারে! গত ফেব্রুয়ারী মাসের একটি ঘটনা। টরন্টোর 69 Muriel Avenue এ অবস্থিত একটি বাড়ি বিক্রির জন্য লিস্টিং এ দেয়া হয়েছিল। এর আস্ককিং প্রাইজ ছিল ৭ লাখ ডলার। বাড়িটি খুবই ছোট। লট সাইজ ২০ ফিট ওয়াইড বাই ৭৮ ফিট ডিপ। কিন্তু সেই ছোট বাড়িটিই শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয় ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলারে! ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার বেশী মূল্যে!

অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, কোন কোন এলাকায় বাড়ি বা কন্ডো এপার্টমেন্ট দেখতে গেলে সাথে করে চেক নিয়ে যেতে হতো। কারণ, পরের দিন গেলে সেটি পাওয়া যাবে তার কোন গ্যারান্টি ছিল না।

গ্রেটার টরন্টোতে বাড়ির এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পরও যারা ঝাপিয়ে পড়ে বাড়ি কিনছিলেন তারা কারা এই প্রশ্নও উঠেছিল অনেকের মনে।

কারো কারো মতে এই ক্রেতাদের অধিকাংশই বাইরে থেকে আসা এবং এদের হাতে রয়েছে প্রচুর কাল টাকা। এদের প্রয়োজন বাড়ি। এরা বাড়ির মূল্য কত তা নিয়ে মাথা ঘামান না। মূল্য যদি আরো বৃদ্ধি পায় তবু তারা বাড়ি কিনতেই থাকবেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, না। তাদের হিসাব অনুযায়ী বাইরে থেকে আসা এই ক্রেতাদের সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগেও কম। এদের কারণে বাড়ির মূল্য এরকম আকাশচুম্বী হয়নি।

আরেক দল বলছেন, কানাডার অর্থনীতি এখন অনেক ভাল। এ কারণে মানুষের আয়ও এখন অনেক ভাল। বেকারত্বের হার অনেক কমে গেছে। ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যারা বাড়ি কেনার কথা ভাবেননি তারাও এখন বাড়ি কিনছেন। এ সমস্ত কারণে বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের আয় কি গত দুই/তিন বছরে দুই/তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে? একজন মধ্য আয়ের লোক যার বাৎসরিক বেতন ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার, তার বেতন কি দুই বা তিন বছরেই ৮০ হাজার থেকে ১৫০ হাজার হয়ে গেছে? যদি তা না হয় তবে সেই ব্যক্তি কি করে দুই থেকে তিন গুণ বেশী মূল্য দিয়ে একটি বাড়ি কিনবে?

আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, কেউই সঠিক কোন তথ্য দিচ্ছিলেন না। বরং কোন কোন মহল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তকর তথ্য দিচ্ছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।

ইতিপূর্বে  টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ড এর পক্ষে ‘Ipsos’ নামের একটি জরীপ প্রতিষ্ঠান জরীপ চালিয়েও নাকি দেখেছে যে টরন্টোতে শতকরা ৫ ভাগেরও কম বিদেশী ক্রেতা বাড়ি কিনছেন।

কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে। পোস্ট মিডিয়ার ঐ প্রতিবেদনেই এক রিয়েলটরের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, সেই ব্যক্তি সম্প্রতি ১৫ টি বাড়ি বিক্রি করেছেন যার মধ্যে ১১ টি বাড়ির ক্রেতাই ছিল বিদেশী।

টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ড টরন্টোতে বিদেশী ক্রেতাদের সংখ্যা (শতকরা ৫ ভাগেরও কম) বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছে সেটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন টরন্টোর ‘রিয়েলসোফি রিয়েলটি ইনক’এর প্রেসিডেন্ট জন পাসালিস। তিনি বলেন, টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ড এর হয়ে ‘ ওঢ়ংড়ং’ মাত্র ৩,৫০০ রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এর কাছ থেকে বিদেশী ক্রেতাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছিল। কিন্তু টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ড এর সদস্য সংখ্যা ৪৭ হাজার। আর এদের মধ্যে শতকরা ৮০ জনই বছরে ৬টিরও কম বাড়ি বিক্রি করে থাকেন। সুতরাং বিদেশী ক্রেতাদের সম্পর্কে আসলে সঠিক তথ্যটি ঐ জরীপে উঠে আসেনি।

টরস্টার নিউজ সার্ভিসের সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এন্ড্রু হ্যারিল্ড বলেছিলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি টরন্টোতে বিপুুল সংখ্যক বিদেশী ক্রেতা আসছেন যাদের হাতে বিপুল অংকের অর্থ রয়েছে। তার মতে, এশিয়ান ইনভেস্টরগণ টরন্টোর বাড়ির মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন। তাছাড়া ভেঙ্কুভারে সম্প্রতি বিদেশী ক্রেতাদের উপর আলাদা ১৫% টেক্স বসানোর কারণেও সেখান থেকে অনেক ক্রেতা টরন্টোর দিকে ঝুঁকেছেন।

তবে পরিস্থিতি বদলেছে। দ্রুতই বদলেছে। গত এপ্রিলের মধ্যভাগেও কোন বাড়ি লিস্টিং এ দিলে যেখানে ৫০/৬০ জন বা তারো বেশী ক্রেতা বিড করতেন এখন তা নেমে এসেছে ৪/৫ জনে বা তারো কম। নির্ভর করছে কোন এলাকায় বাড়িটির অবস্থান। ওপেন হাউসের চিত্রও একই রকম। আগে যেখানে ৪০/৫০ জন ক্রেতা ভিজিট করতেন এখন সেখানে ৪/৫ জন আসেন। তাও যদি কপাল ভাল থাকে। অনেক বাড়ি লিস্টিং এ দেওয়ার পর দুই তিন সপ্তাহ লাগছে ক্রেতা পেতে। কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্য কমিয়ে পুনরায় লিস্টিং এ দিতে হচেছ।

তবে বাজার পরিস্থিতি যারা পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের মধ্যে কিছু লোক মনে করছেন অগ্নিমূল্য আবার ফিরে আসবে কারণ, বাড়ির চাহিদা অনেক বেশী কিন্তু সরবরাহ কম। কিন্তু বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞ এই মতের পক্ষে নন। রয়েল ব্যাংক এর সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রবার্ট হুয়গ বলেন, মনে হচ্ছে কেউ যেন টরন্টোর হাউজিং মার্কেটের অগ্নিমূল্যের সুইচ অফ করে দিয়েছে। গত মে মাসের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রাবার্ট বলেন, পরিস্থিতি এখন ক্রেতাদের পক্ষে। এই সময়ে যে কয়টি বাড়ি বিক্রি হয়েছে এবং বিক্রির জন্য যে লিস্টিং লক্ষ্য করা গেছে তার অনুপাত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে বাড়ি বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৪০%। মাত্র দুই/তিন মাসের মধ্যেই বিরাট পরিবর্তন এসেছে বাজারে।

রবার্ট হুয়গ মনে করেন গত এপ্রিল মাসে অন্টারিও সরকারের প্রবর্তিত নতুন আইন (যার মধ্যে আছে বিদেশী ক্রেতাদের জন্য ১৫% অতিরিক্ত কর, রেন্ট কন্ট্রোল আইন ইত্যাদি) বাজার পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এনেছে।

অবশ্য কিছু কিছু পর্যবেক্ষক বলেন, গ্রেটার টরন্টোর বাড়ির মূল্য আসলে কমতে শুরু করেছিল প্রিমিয়ার ক্যাথেলীন উইন কর্তৃক নতুন আইন জারির আগে থেকেই। আবার কেউ কেউ বলেন, গত ফল সিজনে ফেডারেল সরকার কর্তৃক মর্টগেজ কোয়ালিফিকেশন রুল আরো কঠিন করায় বাড়ির মূল্য পরিস্থিতির উপর প্রভাব বিস্তার করে।

রবার্ট হুয়গ অবশ্য বলেন যে, বাড়ির মূল্য যে ভাবে কমে আসছে তাতে করে এ কথা বলার সময় এখনো হয়নি যে গ্রেটার টরন্টোতে বাড়ির মূল্যে ধ্বস নেমেছে। বাজার পরিস্থিতি ক্রেতাদের পক্ষে গিয়ে থাকলেও সহসা মূল্য পরিস্থিতে ধ্বস নামবে তেমনটা ভাবার কারণ নেই। ১২% মূল্য কমার পর এখন যে হারে মূল্য কমবে তার গতি হবে ধীর।

উল্ল্লেখ্য যে, জুনের শেষ দিকে গ্রেটার টরন্টোতে বাড়ি বিক্রির হার এমনিতেই কম থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত এপ্রিলের আগে যারা আতংকিত হয়ে বাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকেছিলেন তারা আপাতত শান্ত হয়েছেন নতুন আইন জারির পর। আতংকিত এই সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে ধারণা জন্মেছিল (বা ধারণা জন্মানো হয়েছিল) যে গ্রেটার টরন্টোতে বাড়ির মূল্য যে রকম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে তারা যদি এখনি বাড়ি ক্রয় না করেন তবে ভবিষ্যতে আর কোনদিন বাড়ি ক্রয় তো দুরের কথা, ক্রয়ের স্বপ্নও দেখার সুযোগ পাবেন না। আতংকিত এই সম্ভাব্য ক্রেতাগণ এখন বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ করছেন নিবির ভাবে। তারা আবার বাজারে ফিরবেন যখন মূল্য পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

গ্লোব এন্ড মেইলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জেকব এসপেরিয়ান নামের এক রিয়ল এস্টেট ব্রোকার বলেন আমি আমার সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদেরকে দোষ দেই না হঠাৎ থমকে দাড়ানোর জন্য। কারণ এরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল অন্টারিওতে নতুন আইন করার আগ পর্যন্ত বাড়ির মূল্য যে হারে পাগলা ঘোড়ার মত লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তা দেখে। তবে এরা আবার বাজারে ফিরবেন বাড়ি ক্রয়ের জন্য।

এদিকে বিএনএন.সিএ নামের একটি অনলাইন রিয়েল এস্টেট মিডিয়ার গ্রেগ বনেল তার এক প্রতিবেদনে উল্­ল্লেখ করেন, গত এপ্রিলের তুলনায় চলতি জুনে গ্রেটার টরন্টোর বাড়ির মূল্য গড়ে এক লাখ ডলারেরও বেশী কমবে। ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয় গত এপ্রিলে অন্টারিও সরকার কর্তৃক প্রনীত নতুন আইনের কারনেই বাড়ির মূল্য এভাবে শার্প টার্ন নিচ্ছে। লিস্টিং এর সংখ্যা এখন আকাশচুম্বী। সেই সাথে বাড়ি বিক্রির হার অনেক কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্কেটের যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে গত এপ্রিল মাসের পর, তাতে অনুমান করা যায় যে বাজার পরিস্থিতি অধিকতর টেকসই অবস্থায় ফিরে আসছে। আমরা এখন একটা ব্যালেন্সড মার্কেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

কানাডার ‘ক্যাপিটেল ইকনমিক্স’ এর সিনিয়র ইকনমিস্ট ডেভিড মাদানী সম্প্রতি এক ভবিষ্যতবাণী করেন বাড়ির মূল্য নিয়ে। তার মতে গ্রেটার টরন্টোতে বাড়ির মূল্য হ্রাস পাবে প্রায় ৪০%। তিনি আরো বলেন, সামগ্রিকভাবে মূল্য পরিস্থিতির বিভিন্ন উপাত্ত এটাই বলছে যে, ‘হাউজিং বুম’ শেষ।

তবে ডেভিড মাদানীর সঙ্গে একমত নন টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশী রিয়েলটর রাসেল সিদ্দিকী। প্রবাসী কণ্ঠের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গত আট দশ বছরে মাদানীর দেওয়া কোন ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিকভাবে ফলেনি। রাসেল সিদ্দিকী বলেন, নতুন করে অন্য কোন পরিস্থিতির উদ্ভব না ঘটলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই রিয়েল এস্টেট মার্কেট পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে বর্তমানের অনিশ্চিত অবস্থা কেটে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তখন পুনরায় বাড়ি ঘরের মূল্য অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি না পেয়ে  স্বাভাবিক গতিতেই বৃদ্ধি পেতে থাকবে, যা ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েরই একান্ত কাম্য এবং সুস্থ অর্থনীতির সহায়ক। ”

টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশী রিয়েলটর মানিক চন্দও মাদানীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। প্রবাসী কণ্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ডেভিড মাদানীর সাথে আমি একমত হতে পারছিনা। বাড়ির দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া টরন্টো শহরে লোকসংখ্যা তথা বাসস্থানের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরবরাহ বৃদ্ধি না করলে বাড়ির মূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় রাখাই কঠিন হবে।”

মানিক চন্দ আরো বলেন, “এখন বাজার ক্রেতার পক্ষে আসছে। এটাকেই আমি স্বাভাবিক পরিস্থিতির লক্ষণ হিসেবে দেখছি। যারা এখন বাড়ি কিনতে চান তাঁদের উদ্দেশ্যে বলবো –বাড়ি কেনা যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেহেতু যেকোন তথ্য বা যে কারো পরামর্শে বিভ্রান্ত না হয়ে একজন অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত রিয়েল্টর যিনি ক্রেতার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তাঁর সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়াই শ্রেয়।”

এ প্রসঙ্গে রিয়ল্টের রাসেল সিদ্দীকি বলেন, “ফ্রি হোল্ড টাউন হাউজ , সেমি ডিটাসড, ডিটাসড হাউজের ক্রেতাগণ যারা ছয় থেকে নয় শ’ হাজার ডলার মূল্যের বাড়ি ক্রয় করতে ইচ্ছুক তাঁদেরকে গভীরভাবে হাউজিং মার্কেট পর্যবেক্ষণ করতে হবে যা খুবই প্রয়োজন। এবং  তাঁদের স্ব স্ব রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে, তাহলে তাঁরা বুঝতে পারবেন বাড়ি কেনার উপযুক্ত সময় কখন ।”