টরন্টোর গৃহায়ন খাতের বুদ্বুদ চুপসে যাওয়ার চারটি লক্ষণ
জুন ১০, ২০১৭
বেশ কয়েক বছর আগে এক বসন্তের বিক্রয় মৌসুমের পর থেকেই বৃহত্তর টরন্টোর রিয়েল এস্টেট খাতের পেশাজীবীরা হতাশা বোধ করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলে একটির পর একটি নতুন রেকর্ড স্থাপনের কারণে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রায় বিস্ময়বোধের কাছাকাছি।
তবে চলতি বসন্ত ভিন্ন আকার নিচ্ছে। এতে রয়েছে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের মৌসুম; অথবা প্রাদেশিক লিবারেল সরকারের নতুন গৃহায়ন নীতি নিয়ে উদ্বেগ; অথবা কেন্দ্রীয় লিবারেল সরকারের গত শরতের নতুন মর্টগেজ বিধিমালা; অথবা নিছক পুরনো সমস্যা, ক্রেতার অভাব Ñ কিন্তু টরন্টোর একসময়কার প্রচ- তেজীয়ান গৃহায়ন বাজারে পরিবর্তন আসছে। খবর হাফিংটন পোস্ট এর।
আর এই অঞ্চলের গৃহায়ন খাত হঠাৎ করেই রাতারাতি লাভজনক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা যেহেতু খুবই সামান্য তাই এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, আগামী মাসগুলোতে হয়তো বৃহত্তর টরন্টো এলাকায় কোন বাড়ি কেনা কিছুটা সহজতর এবং বাড়ি বিক্রি করা অপেক্ষাকৃত কঠিন হবে।
টরন্টোর হাউজিং খাতের বুদ্বুদ চুপসে যাওয়ার চারটি লক্ষণ এখানে তুলে ধরা হলো।
১. বিক্রি কমে গেছে
কানাডার রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বৃহত্তর টরন্টো অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিলে বাড়ি বিক্রির পরিমাণ ৬.৭ শতাংশ হারে কমেছে। আর ২০১৩ সালের পর এই প্রথম এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় এবার এই হার কমলো।
২. বিক্রির জন্য বাড়ির নিবন্ধন বিপুল বৃদ্ধি
বৃহত্তর টরন্টোতে বিক্রির জন্য বাড়ির সংখ্যা হঠাৎ করেই বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে যে, বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির মালিকরা টরন্টোর হাউজিং মার্কেট থেকে নগদ অর্থ তুলে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না।
গত এপ্রিল মাসে নতুন করে বিক্রির তালিকায় আসে ২১ হাজার ৬৩০টি বাড়ি, যা গত বছরের এপ্রিলে ছিলো ১৬ হাজার ২৫২টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিক্রির তালিকায় আসা বাড়ির সংখ্যা ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
নির্দিষ্ট করে বললে, বিক্রির তালিকায় বেশি এসেছে একক পরিবারের বাসবাসের উপযোগী বাড়িগুলো। বিক্রির তালিকায় একক পরিবারের বসবাসের উপযোগী বাড়ির সংখ্যা গত এপ্রিলে ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে বেটার ডুয়েলিং নামের একটি সংস্থা।
টিডি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ডিয়ানা পেট্রামালা বলেন, বিক্রির তালিকায় বিপুল সংখ্যক বাড়ির নিবন্ধনের ফলে টরন্টোর হাউজিং মার্কেট “যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ” হয়ে উঠেছেÑ মাত্র কয়েক মাস আগের চেয়ে এখন একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। কারণ কয়েক মাস আগেও বাজার পর্যবেক্ষকরা একমত ছিলেন যে, টরন্টো হলো “বিক্রেতাদের বাজার”।
৩. ক্রেতারা দ্বিধায় ভুগছেন
টরন্টোর হাউজিং মার্কেটে বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসা ক্রমবর্ধমান উন্মাদনার পর এখন বৃহত্তর টরন্টোর রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, ক্রেতারা বাজার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
রয়েল লিপেজ-এর ব্যবসায়ী এলি ডেভিস ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল’কে বলেন, “অনেক সময় সম্পত্তি তাৎক্ষণিকভাবে বিক্রি করা যায় না। কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে এখনও সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছে কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে ১৪ দিন বা ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে।”
তিনি বলেন, “আমি বলছি না যে, বাজারে ধস নেমেছে বা এমন কিছু। আমি মনে করি এটি হলো স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসা বা সমতলে নিয়ে আসা।”
এটি হলো গত বসন্তের বিক্রয় মৌসুম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর। গত বসন্তে আতংকিত হয়ে বাড়ি কেনার হিড়িক চলার সময় রিয়েলটররা সম্পত্তির ঘাটতির কথা ঘোষণা করেন।
৪. “গৃহায়ন খাতের বুদ্বুদ” নিয়ে অনুসন্ধানে জোয়ার এসেছিলো
গুগল ট্রেন্ডস-এর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কানাডায় “হাউজিং বাব্ল” শিরোনামে সার্চ দেয়ার বিষয়টি এযাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিলো।
এটি হতে পারে একটি লক্ষণ যে, মানুষ বাড়ির দামের ক্রমবৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্বাস হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রেও গৃহায়ন খাতের বুদ্বুদ ব্যাপকতর হয়ে ওঠার আগে সেখানে একই ধরণের সার্চ দেয়ার ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটেছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রে হাউজিং বাব্ল বলে সার্চ দেয়ার ঘটনা সর্বোচ্চে পৌঁছে ২০০৫ সালে যখন বাড়ির দাম জ্বরের প্রকোপের মতো বাড়ছিলো। পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে মার্কিন বাজারে বাড়ির দাম কমে আসে এবং “হাউজিং বাব্ল” শিরোনামে সার্চ দেয়ার পরিমাণ কমে যায়।