ইহুদী বিরোধী বক্তব্য রাখায় পাল্টা অভিযোগ মসজিদ টরন্টো’র বিরুদ্ধেও
মার্চ ১১, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন প্রচারপত্র ও ব্যানার হাতে নিয়ে একদল লোক টরন্টোর ডাউনটাউনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি মসজিদের বাইরে সমবেত হয়ে ইসলাম নিষিদ্ধ করার দাবী জানান। এই সময় মসজিদের ভিতরে মুসল্লিগণ জুমার নামাজ আদায় করছিলেন।
ডানডাস ওয়েস্ট এবং ইউনিভার্সিটি এ্যাভিনিউর নিকটস্থ ‘মসজিদ টরন্টো’ এর সামনে বিক্ষোভকারীরা মাইক নিয়ে যখন উচ্চস্বরে ইসলাম নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়ে আসছিলেন তখন তা অনেক দূর থেকেও শুনা যাচ্ছিল। বিক্ষোভকারীরা মসজিদের প্রবেশ পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছিলেন যাতে কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। খবর সিবিসি নিউজ।
মসজিদ টরন্টো’তে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন এমন একজন মুসল্লী মোহাম্মদ আবদি বলেন, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে টরন্টোতে এরকম প্রচন্ড বিক্ষোভ আগে দেখিনি। আমার ধারণা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি ও ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আজকের ঘটনা দেখে আমি খুবই আহত হয়েছি।
ঘটনার সাক্ষী ব্রায়েন্ট গ্রীনবাম নামের এক টরন্টোবাসী বলেন একটি ধর্মসম্প্রদায়ের বিশেষ একটি দিনে এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা উচিৎ হয়নি।
এদিকে ঘটনার পর টরন্টোর মেয়র জন টরি এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ক্রিস্টিন ওং টাম টুইটার বার্তায় এ ঘটনার নিন্দা জানান।
কিন্তু ঘটনার পর পর মসজিদ টরন্টো এর পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে। ফলে প্রথম দিকে পুলিশ বিক্ষোভকরীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল।
পরে অবশ্য টরন্টো পুুলিশ ঘটনাটির তদন্তে নামে যখন মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পায়। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কিছু আভিযোগ পায় যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তাদের কাছ থেকেও এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এমন কিছু ব্যক্তির কাছ থেকেও।
সিবিসি নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে টরন্টো পুলিশ কনস্টেবল এ্যালিসন ডগলাস কুক বলেন, এটি হেট ক্রাইম এর পর্যায়ে পড়ে কি না তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্তকারীগণ হেট ক্রাইমের সম্ভাবনার দিকটিও খুঁজে দেখছেন। মসজিদের প্রবেশ পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাটা কি অপরাধের মধ্যে পড়ে কি না সে প্রশ্নের জবাবেও এ্যালিসন বলেন, তা এখনি বলা যাচ্ছে না।
এদিকে পাল্টা অভিযোগ উঠে মসজিদ টরন্টো’র বিরুদ্ধেও। গত বছর এই মসজিদের অভ্যন্তরে মসজিদের একজন কর্মী ইহুদী বিরোধী বক্তব্য রেখেছিলেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগও তদন্ত করে দেখছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ অবশ্য কিছুদিন আগে এ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ইহুদী সম্প্রদায়ে বিরুদ্ধে এ ধরণের বক্তব্য অপরাধমূলক। মসজিদের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, আমরা যে কোন ধরণের বিদ্বেষ ও বর্ণবাদের নিন্দা জানাই। আমাদের নজরে এসেছে এই মসজিদের অভ্যন্তরে অনুপযুক্ত বক্তব্য রাখা হয়েছে যা ইহুদী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবমাননাকর। এই ধরণের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য এবং তা মুসলিম এসোসিয়েশন অব কানাডা এবং একই সাথে গোটা মুসলিম সামাজের নীতি ও আদর্শেরও বিরোধী।
মসজিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা জানি কে এই ইহুদী বিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। আমরা তাকে সাসপেন্ড করেছি এবং এ বিষয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে। তাছাড়া স্থানীয় ইহুদী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং টরন্টো বোর্ড অব রেবাইস এর নিকটও এ ব্যাপারে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে মসজিদ টরন্টো এর সামনে যে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে সে সম্পর্কে মসজিদের একজন প্রতিনিধি আবদুল বাসিত খান বলেন, এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠার পর পনের বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এরকম ঘটনা এই প্রথম ঘটলো। তিনি বলেন, মুসলিম বিদ্বেষ আমরা সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ শেষে যে কমেন্ট সেকশন থাকে সেখানে অহরহ দেখতে পাই। কিন্তু বিদ্বেষের এরকম শারীরিক উপস্থিতি দেখে আমরা সত্যি বিস্মিত।
আব্দুল বাসিত খান আরো বলেন, আমরা সমাজে এই ধরনের বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে। আমরা জানি বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় মাত্র কয়েকজন ছিলেন। কিন্তু আমরা এও দেখেছি যে, এই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যারা নিন্দা জানিয়েছেন তাদের সংখ্যা আরো বেশী এবং এদের অনেকেই নন-মুসলিম।
এদিকে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব মুসলিমস এর পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি সুষ্পষ্ট যে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে ভীতি সৃষ্টির জন্যই এই ধরণের সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ঘটনার পর হোয়াইট হকসচাইল্ড নামের এক ইহুদী মহিলা বলেন, এটি নিশ্চিতভাবেই বিব্রতকর একটি বিষয়। এই ঘটনা কানাডায় বেমানান। মানুষ হিসাবে আমাদের উচিৎ একে অপরকে সহযোগিতা করা। হকসচাইল্ডের শিশু কন্যাও এই ঘটনায় মনক্ষুন্ন। তার অভিমত, আমরা সবাই মানুষ। আমাদের একেকজনের গায়ের রং একেক রকম বলে আমরা বিভক্ত হয়ে থাকবো তা হতে পারে না।