অন্টারিও পার্লামেন্টে সর্বসন্মতিক্রমে পাশ হলো এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব
১১ মার্চ, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টে যখন এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব (মোশন) পাশ করানো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে এবং বিদ্বেষ এমনকি প্রস্তাব উত্থাপনকারীকে হত্যা করারও হুমকী দেয়া হচ্ছে ঠিক তখনই অন্টারিও পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলো এই একই এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী এই প্রস্তাবটি পাশ হয় ৮১-০ ভোটে। অর্থাৎ বিপক্ষে একটিও ভোট পড়েনি। খবর কানাডিয়ান প্রেসের।
অন্টারিও লিবারেল পার্টির ব্যাকবেঞ্চার এমপিপি নেটালী ডেস রোজিয়ার্স এই এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব উত্থাপিত করেন গত ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখে। তিনি পার্লামেন্টের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান সব ধরণের ঘৃণা, শত্রুতা, কুসংস্কার, বর্ণবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার জন্য। তিনি ক্রমবর্ধমান এন্টি মুসলিম বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি ও মনমানসিকতার বিরুদ্ধেও তীব্র নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান এবং ধিক্কার জানানোর আহ্বান জানান সবধরণের ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে এমপিপি নেটালী ডেস রোজিয়ার্স এর রাইডিং এলাকায় এন্টি-মুসলিম গ্র্যাফিটি (দেয়াল চিত্র) অংকনের ঘটনা ঘটে এবং জনৈক হিজাবধারী মুসলিম মহিলার মুখের উপর থুথু ফেলার ঘটনাও ঘটে। নিজ এলাকয় ঐ সব ধর্মীয় বিদ্বেষী ঘটনা দেখে রোজিয়ার্স এই এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন।
প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অন্টারিওর এটর্নী জেনারেল ইয়াসীর নাকভী বলেন, কুইবেক সিটিতে মুসলিম হত্যাযজ্ঞের কারণে কানাডায় মুসলিম সম্প্রদায়সহ সকল কানাডিয়ান ক্ষিপ্ত। তিনি বলেন, ঐ ঘটনার পরের দিন একজন অভিভাবক আমার কমিউনিটি অফিসে ফোন করে জানতে চান স্কুলে তার ছেলেকে পাঠানো নিরাপদ কি না। নাকভী বলেন, আমরা এরকম সামাজে বাস করি না। আমরা এরকম সামাজ নির্মান করি না যেখানে অভিভাবকগণ তাদের ধর্ম বিশ্বাস এর কারণে ভীত হয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন কি না এরকম চিন্তা ঘূণাক্ষরেও চিন্তা করবেন। তিনি বলেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কালের যে সকল বিদ্বেষ এর ঘটনা ঘটছে তা কানাডাকে প্রতিনিধিত্ব করে না এবং এরকম বিদ্বেষের দেশ কানাডিয়ানরা চান না।
প্রিমিয়ার ক্যাথেলিন উইন বলেন, আমাকে অনেকেই নিরুৎসাহিত করেছিলেন মুসলিম মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার জন্য। কারণ আমি লেসবিয়ান। কিন্তু আমি তাতে কর্ণপাত করিনি। আমি কথা বলেছি স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে। তারা তাদের ভিন্নমতের কথা বলেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিষয়ে, শিক্ষা বিষয়ে এবং পরিবার বিষয়ে তাদের যে মূল্যবোধ তাতে তো কোন অমিল নেই। এই মতের মিলগুলোই আমাদেরকে সুযোগ করে দিয়েছে একটি দেশ গড়ার, একটি প্রভিন্স গড়ার। কিন্তু তারপরও যখন দেখি আমাদেরকে কথা বলতে হয় সমাজের এই সকল বিদ্বেষ নিয়ে তখন আমি বেশ মর্মাহত হই।
অন্টারিওর প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান প্যাট্রিক ব্রাউন বলেন, ইসলামোফোবিয়া কোন কাল্পনিক বিষয় নয়। এটি এখানে সত্যি সত্যি ঘটছে। আমাদেরকে অবশ্যই এর নিন্দা জানাতে হবে অপকটভাবে। তিনি আরো বলেন, একজনের গায়ের রং কি, কোন দেশ থেকে তিনি এসেছেন, কোন ভাষায় তিনি কথা বলেন, তিনি শুক্রবারে মসজিদে যান কিনা, তিনি শনিবারে ইহুদীদের ধর্মশালায় যান কিনা, তিনি রবিবারে খ্রীষ্টানদের চার্চে যান কিনা সেটি কখনোই ধর্তব্যের বিষয় হতে পারে না। আমরা সবাই মিলে একত্রিত হয়েছি একটি বৈচিত্রময় সুন্দর দেশ গড়ার এবং এটিই আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।