আসছে নতুন আইন : গ্রেফতার হতে পারেন বিমান বন্দরের প্রি-ক্লিয়ারেন্স এলাকায়
মার্চ ১১, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ইউএস বর্ডার গার্ডদের অধিকতর ক্ষমতা দেয়ার জন্য কানাডার পার্লামেন্টে একটি বিল পেশ করা হয়েছে। এই বিলটি (বিল সি-২৩ ) পাশ হলে ইউএস বর্ডার গার্ডদের যে কোন প্রশ্নের জবাব দিতে আপনি বাধ্য হবেন। প্রশ্নের জবাব না দিলে গ্রেফতার হতে পারেন।
বর্তমান আইনে আপনি প্রি-ক্লিয়ারেন্স এলাকায় প্রবেশের পর ইউএস বর্ডার গার্ডদের আপত্তিকর প্রশ্নে বিব্রত বা অসন্তুষ্ট হলে তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন আইনে আপনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফিরে আসতে পারবেন না। আপনাকে বলতে হবে কেন আপনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ না করে ফিরে আসতে চাইছেন। প্রশ্নের উত্তর না দিলে আপনাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী মাইকেল গ্রীন বলেন, কানাডার পাবলিক সেফটি মিনিস্টার রালফ গুডেল কর্তৃক পার্লামেন্টে প্রস্তাবিত নতুন এই আইন কানাডিয়ানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকারকে হরণ করবে। সেটা হলো, তারা আগের মত প্রি-ক্লিয়ারেন্স এলাকা (যেটি কানাডার মাটিতেই অবস্থিত) থেকে নিজের ইচ্ছায় ফিরে আসতে পারবেন না যদি ইউএস বর্ডার গার্ডদের করা প্রশ্ন পছন্দ না করেন। ইউএস বর্ডার গার্ডরা শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন প্রশ্নের উত্তর আদায় করার জন্য। প্রয়োজন মনে করলে গ্রেফতারও করতে পারেন কানাডার মাটিতেই। মাইকেল গ্রীন বলেন, এটি বাস্তবিক অর্থেই আক্রমণাত্মক এবং অপমানকর একটি আইন।
প্রি-ক্লিয়ারেন্স হলো, কানাডিয়ান নাগরিক বা ইমিগ্রেন্টদের কেউ যদি ভ্রমণ বা কার্য উপলক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান তবে ইউএস কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের পক্রিয়াসমূহ কানাডার বিমানবন্দর বা রেল স্টেশনে থাকা অবস্থায়ই সেরে নিতে পারেন। বর্তমানে কানডার আটটি বিমান বন্দরে এই সুবিধা রয়েছে। আরো দুটি বিমানবন্দরে এই সুবিধা দেয়া হবে অচিরেই। কানাডার কয়েকটি রেল স্টেশনেও রয়েছে এই সুবিধা।
উল্লেখ্য যে, প্রি-ক্লিয়ারেন্স এর এই প্রক্রিয়াটি গত প্রায় ষাট বছর ধরেই চলে আসছে। সীমান্তে অত্যধিক ভিড় এড়াতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অবশ্য দাবী করেন যে, এই আইনের কারণে ‘কানাডিয়ান চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম’এ কানাডার নাগরিকগদের যে অধিকার দেয়া আছে সেই অধিকার ইউএস বর্ডার এজেন্টদের তল্লাসীর কারণে ক্ষুন্ন হবে না। তিনি বলেন, “কেউ যখন প্রি-ক্লিয়ারেন্স এর জন্য যাচ্ছেন কানাডার অভ্যন্তরে থেকে তখন তিনি কানাডার চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম এর প্রটেকশনের আন্ডারেই থাকছেন।
কিন্তু সমালোকরা বলছেন, ইউএস বর্ডার এজেন্টদেরকে অধিকতর ক্ষমতা দেয়ার অর্থ হলো যাত্রীদের নাজেহাল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়া, বিশেষ করে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত একজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তাছাড়া ট্রাম্প নিজেই বলেছেন তিনি বিশ্বাস করেন না যে ইউএস- কানাডা বর্ডার নিরাপদ।
পাবলিক সেফটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয় যে, ইউএস বর্ডার এজেন্টরা প্রশ্ন করার সময় কতটা লাগামহীন হতে পারবেন সে ব্যাপারে সীমা নির্ধারণ করা থাকবে। বর্ডার এজেন্টরা তাদের কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা তখনই আরোপ করতে পারবেন যদি দেখেন যে এতে করে অযৌক্তিকভাবে যাত্রীদের কালক্ষেপণ হচ্ছে না।
কিন্তু আইনজীবী মাইকেল গ্রীন বলেন, অযৌক্তিক কালক্ষেপন কি তা প্রস্তাবিত বিল সি – ২৩ নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউএস বর্ডার এজেন্টদের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করাটা তাদের দৃষ্টিকোন থেকে যৌক্তিক মনে হওয়াটা স্বাভাবিক।
বর্তমান আইন অনুযায়ী প্রি-ক্লিয়ারেন্স এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রগামী কোন যাত্রীকে স্ট্রিপ সার্চ (গায়ের কাপর খুলে) করতে পারেন শুধুমাত্র একজন কানাডীয় বর্ডার কর্মকর্তা। ঐ সময় কোন ইউএস বর্ডার এজেন্ট ইচ্ছে করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে পারেন। বিল সি-২৩ পাস হলে একজন ইউএস বর্ডার এজেন্ট নিজেই এই স্ট্রিপ সার্চ এর কাজটি করতে পারবেন যদি কোনা কানাডীয় কর্মকর্তা তা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ না করেন বা তা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। আর ইউএস বর্ডার এজেন্ট এর প্রশ্নের (যত আপত্তিকর বা অবমাননাকরই হোক) উত্তর দিতে না চাইলে একজন ভ্রমণকারী কানাডার আইনও ভঙ্গ করবেন এবং কানাডার ফেডারেল আইনে তিনি অভিযুক্ত হবেন।
অন্যদিকে নতুন এই আইন পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে অবস্থনরত কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সী কর্মকর্তাগণ কোন কানাডীয় ইমিগ্রেন্টকে বিমান পথে কানাডায় প্রবেশের অনুমতি দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন যদি তিনি মনে করেন সফরকারী ঐ ব্যক্তি ইমিগ্রেশনের কোন আইন ভঙ্গ করেছেন।
বর্তমান আইন অনুযায়ী বর্ডার সার্ভিসেস এর কর্মকর্তাগণ অনিয়ম খুঁজে পেলেও কোন কানাডীয় নাগরিক বা ইমিগ্রেন্টকে কানাডায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন না। তার দায়িত্ব হলো অনিয়মের বিষয়টি কানাডা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।
তবে কোন কানাডীয় ইমিগ্রেন্ট বিমান পথে কানাডায় আসতে না পারলেও সড়ক পথে আসতে পারবেন। আইনজীবী মাইকেল গ্রীন বলেন, আমাদের আশংকা বিল সি-২৩ ইউরোপীয় দেশসমূহ এবং অন্যান্য কয়েকটি প্রধান প্রধান দেশের ক্ষেত্রেও বাস্তবায়িত করা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে
ইমিগ্রেন্টদের জন্য বাস্তবিকই এক বড় সমস্যা হয়ে দাড়াবে। কারণ ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কানাডার সড়ক পথে কোন যোগাযোগ নেই।
আইনজীবী মাইকেল গ্রীন বলেন বিল সি-২৩ নিয়ে এখন নতুন করে ভাবার সময় এসেছে কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন আর আগের মত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সরকারীভাবেই নির্দেশ জারী করেছিলেন এই বলে যে ৭ টি মসুলিম দেশের নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
এদিকে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি একটি সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করেছে বিল সি-২৩ এর বিষয়ে। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, এতে করে বিলটি পাস নাও হতে পারে। পাবলিক সেফটি মিনিস্টার র্যালফ গুডেল বলেন তিনি যে কোন সংশোধনীর প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবেন। উল্লেখ্য যে, বিলটি নিয়ে খুব শীঘ্রই হাউজ অব কমন্সে একটি পর্যালোচনা হবে।
তবে কনজারভেটিভ পার্টি এই বিল পাসের পক্ষে। কারণ, তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই ২০১৫ সালে এই আইন প্রণয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র সময় নষ্ট না করেই তা কংগ্রেসে পাস করিয়ে নেয় ঐ বছরেরই ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু কানাডা একটু ধীর গতিতে অগ্রসর হয়। কানাডা এই সংক্রান্ত বিলটি পার্লামেন্টে তুলে ২০১৬ সালের জুন মাসে।
বিল সি-২৩ এর শর্ত অনুযায়ী ইউএস বর্ডার গার্ডগণ যখন কানাডার মাটিতে অবস্থিত প্রি-ক্লিয়ারেন্স এলাকায় কাজ করবেন তখন তারা কানাডার আইন মেনে কাজ করবেন। এই আইনে কানাডার চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম এর কথাও উল্লেখ আছে। কিন্তু ২০১৫ সালের পর ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে যা ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমিগ্রেশন, মুসলিম সম্প্রদায় ও উদ্বাস্তুদের নিয়ে যে সকল বক্তব্য দিয়ে আসছেন তাতে এই বর্ডার চুক্তি বর্ডার গার্ডগণ কতটা মেনে চলবেন তা নিয়ে সন্দেহ আগের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ আরেক খবরে জানা যায় যে, প্রস্তাবিত বিল সি-২৩ এর ব্যাপারে কানাডার ফেডারেল সরকার আইনী চ্যালেঞ্জের মুখমুখী হতে পারে।
তথ্য সূত্র : সিবিসি নিউজ ও গ্লোব এন্ড মেইল