কানাডায় পিতা মাতা, দাদা দাদী বা নানা নানীকে স্পন্সর করার নতুন নিয়ম
জানুয়ারী ৭, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন প্রগ্রামের আওতায় বাবা মা, দাদা দাদী বা নানা নানীকে স্পন্সর করে ইমিগ্রেন্ট হিসাবে নিয়ে আসার বর্তমান পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত নতুন নিয়মে আবেদনপত্র বাছাই করা হবে লটারীর মাধ্যমে। এতদিন ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে আবেদপত্র গ্রহণ করা হতো।
লাটারীর মাধ্যমে আবেদনপত্র বাছাই করার নতুন নিয়ম শুরু হবে ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে। ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এন্ড সিটিজেনশীপ কানাডার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় নতুন এই নিয়ম চালু করা হচ্ছে সবাই যাতে ফ্যামিলি রিউইনিফিকেশনের আবেদন করার সময় সমান সুযোগ পান সেই কারণে। আগের নিয়মে আবেদনকারীর সংখ্যা নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশী হয়ে গেলে বাকিরা আবেদন করার সুযোগ পেতেন না। আর আবেদনকারীর সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়ার করণে ফাইল প্রসেসিং এ দীর্ঘ সময়ও লেগে যেত। অর্থাৎ যতগুলো আবেদন পত্র জমা হতো তার সবগুলোই প্রসেসিং করতে হতো। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী শুধু লটারীতে টেকা ১০ হাজার আবেদনপত্রই প্রসেসিং করা হবে। খবর সিবিসি নিউজের।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাক্কালাম বলেন, আমরা আবেদনকারীদের কথা ইতিপূর্বে শুনেছি এবং তাদের কথা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে আবেদনের প্রক্রিয়ায় নতুন এই পরিবর্তন এনেছি যাতে সকলেই সমান সুযোগ পান।
যারা নতুন বছরে তাদের বাবা-মা অথবা দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে স্পন্সর করতে চান তাদেরকে ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারী থেকে শুরু করে ২ ফেব্রুয়ারী সময়কালের মধ্যে ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এন্ড সিটিজেনশীপ কানাডার ওয়েবসাইটে প্রদত্ত আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে। আবেদপত্র সাবমিট করার পর প্রত্যেকে একটি কনফারমেশন নম্বর পাবেন। তবে কেউ আবেদন পত্র একাধিকবার পাঠিয়ে থাকলে একটি ছাড়া বাকিগুলো বাতিল হয়ে যাবে। আর অনলাইনে এই ফরম পূরণ মানে এই নয় যে, কেউ স্পন্সর করার জন্য আবেদন করলেন। এটি একটি প্রাথমিক ফরম। অনলাইনে এই ফরম পূরণ করে তা সবমিট করার সময়সীমা পার (২ ফেব্রুয়ারী) হবার পর ইমিগ্রেশন মন্ত্রনালয় দাখিল করা মোট আবেদনপত্র থেকে লটারীর মাধ্যমে ১০ হাজার আবেদনপত্র বাছাই করবে। বাছাই করা এই ১০ হাজার আবেদনকারীকে আহ্বান জানানো হবে চুড়ান্ত আবেদনপত্র পূরণ করার জন্য। এ জন্য আবেদনকারীরা ৩ মাস সময় পাবেন।
উল্লেখ্য যে, যাদের আবেদনপত্র লটারী থেকে বাদ পড়বে তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। বাদ পড়া এই আবেদনকারীরা ২০১৮ সালের পুনরায় অনলাইনে প্রাথমিক আবেদনপত্র পূরণ করতে পারবেন।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাক্কালাম সম্প্রতি জানিয়েছিলেন যে, ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন প্রসেসিং টাইম অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। বর্তমানে যেখানে গড়ে দুই বছর সময় লাগে তা কমিয়ে এক বছরে নিয়ে আসা হবে বলে তিনি জানান।
টরন্টোর অধিবাসী ইমিগ্রেশন ল-ইয়ার সারজিও কারাস বলেন, নতুন এই নিয়ম আগের নিয়মের চেয়ে সামান্য উন্নত তা বলা যায়। নতুন নিয়ম করাতে এখন যারা বাবা-মা, দাদা-দাদী বা নানা-নানীকে স্পন্সর করতে চান তারা প্রত্যেকে অন্তত সুযোগ পাবেন আবেদন করার। তবে লটারীতে আবেদন পত্র বাছাই হবার সম্ভাবনা সম্ভবত ২০%।
ল-ইয়ার সারজিও কারাস অবশ্য এই প্রশ্নও তুলেন যে, বয়স্ক এই ব্যক্তিদেরকে, যারা হয়তো ইতিমধ্যেই অবসরে চলে গিয়েছেন তাদেরকে ইমিগ্রেন্ট করে কানাডায় নিয়ে আসা অর্থনৈতিকভাবে কতটা উপযোগী বা সুবিধাজনক তা বিবেচনায় রাখা উচিৎ। কারণ কানাডা ইতিমধ্যেই চাপের মুখে রয়েছে তার হেলথ সিস্টেম ও সোস্যাল সেফটি নেট এর বিষয়ে।
তবে কানাডিয়ান এসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ইমিগ্রেশন কানসালটেন্ট এর প্রধান নির্বাহী ডরি জেড বলেন, ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশনের জন্য কানাডায় দীর্ঘদিনের ইতিহাস রয়েছে বাবা-মা, দাদা-দাদী বা নানা-নানীকে স্পন্সর করার। এরা কানাডায় এসে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট অবদান রাখেন। অনেক সময় বৃদ্ধ এই ব্যক্তিগণ বাড়ির শিশুদের দেখাশুনাও করতে পারেন যখন তাদের বাবা-মা কাজে যান।
ডরি জেড আরো বলেন, লটারী সিস্টেম চালু হওয়াতে আবেদন প্রক্রিয়াটি আরো আধুনীকিকরণ হবে। তবে যাদের প্রাথমিক আবেদন পত্র বাদ পড়বে লটারী থেকে তারা কি পুনরায় আবেদন করার সুযোগ পাবেন কি না ঐ একই বছরে সে বিষয়টি ভেবে দেখা উচিৎ। কারণ লটারীতে নাম উঠলেও হয়তো দেখা যাবে অনেকের ফাইলই অপূর্ণতার কারণে বা অন্যকোন কারণে পরবর্তীতে বাদ পরে যেতে পারে। অথবা লটারীতে টিকলেও কোন কোন আবেদনকারী পরবর্তীতে চূড়ান্ত আবেদনপত্র দাখিল না করার পক্ষেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এসকল কারণে কোটা পূরণের ক্ষেত্রে যে শুন্যতা দেখা দিবে সে ক্ষেত্রে কি করা হবে তা ভেবে দেখা উচিৎ।