‘ঢাকার অভিজাত পাড়ায় বিদেশী শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশন এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে’
জানুয়ারী ৭, ২০১৭
রেজাউল হাসান ॥ সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের সঙ্গীত ভুবনে যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে – তারই সুযোগে ঢাকার অভিজাত পাড়ায় ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কলকাতার শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশন এখন একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে বাইরের শিল্পীদের কারা পৃষ্টপোষকতা করছেন? তারা তো আমাদের দেশের প্রথিতযশা ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি। কিন্তু কেন করছেন, একটু ভেবে দেখুন। হ্যাঁ! বিলাসিতা, সে কথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই! তবে এটাই যে একমাত্র কারণ, তা ভাবা ঠিক নয়। এর পেছনে আরো বহুবিধ কারণ রয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ওঁদের গুনগত মানের সমতা বিচার করলে, গোটা দেশের দু/একজন শিল্পী ছাড়া আমাদের শৈল্পীক পরিপক্বতা অত্যন্ত দৈন্য, এবং এই দৈন্যতার পেছনে বহু কারণ রয়ে গেছে। এটি একটি ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তু এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ভাবে চিন্তা ও গবেষণা করা উচিত বলে মনে করি।
টরন্টো প্রবাসী গুণী শিল্পী রনি প্রেন্টিস রয়ের মুখে এ মন্তব্য শোনার পর গায়ে রীতিমতো কাঁটা দিয়ে ওঠার মতো অনুভূতির সৃষ্টি হয়। বলা হয়ে থাকে, আমাদের সঙ্গীত জগত এই এগিয়েছে সেই এগিয়েছে – সেই উন্নতি কোন মরুপথে হলো হারা!
রনি বলেন, উন্নতি কোথায় দেখলেন? সঙ্গীতের যা চর্চা তাতো ঢাকার মধ্যেই সীমিত। বাকী দেশটাতে তো ভাসা – ভাসা গান-বাজনা, দিবস ভিত্তিক সংস্কৃতি-চর্চ্চা চলছে, এবং এটাই বাস্তব চিত্র আমার দেশে। বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলাতেই শিল্পকলা একাডেমীর শাখা রয়েছে এবং শুনেছি জেলার আয়তন সাপেক্ষে বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দ হয়ে থাকে। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারের লোকেরা এর দায়িত্বে থাকে। বছরে কিছু জাতীয় দিবসে এরা অনুষ্ঠান করে থাকে সত্য – তাতে এই টাকার কিছুটা উশুল হয় -বাকী টাকাটা কোথায় যায় – তা কেউ জানেনা। মাঝে মধ্যে মন্ত্রী মিনিস্টার এলাকায় গেলে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে মজমা হয়-কিন্তু সেটা একান্তই দায়সাড়া গোছের মনোরঞ্জনের ব্যাপার – এখানে শিল্পীর বিকাশের কোন কার্যকারিতা যে নেই – তা বলাই বাহুল্য। আমার নিজের জেলা মৌলভীবাজারের কথা বলছি। সব বোর্ডেই মিউজিক সাবজেক্ট হিসেবে থাকলেও সিলেট বোর্ডে মিউজিক নেই। কেন নেই তা উচ্চ পর্যায়ে জানবার চেষ্টা করেছি – উত্তর মেলেনি। আর আমার মৌলভীবাজারে যে শিল্পকলা একাডেমীর অস্তিত্ব আছে – সেটাকে খোয়ার বলাই ভাল। ওই যে বললাম না – মন্ত্রী মিনিস্টার গেলে স্থানীয় শিল্পীদের ডাক পড়ে। মন্ত্রী সাহেব আরও একটু উৎসাহ দেখালে গারো খাসিয়া আর মনীপুরীদের ডাক পড়ে। সেটাও ওই দলনেতাদের হয়তো ফরমায়েশ দেয়া হয় শিল্পীদের নিয়ে আসবার। তারাই সব যোগাড়-যন্তর করে। শিল্পীরা এলেন, গাইলেন অথবা নাচলেন – মন্ত্রী সাহেবও আশ্বাস দিলেন – এদের বিকশের জন্যে যা করার করবেন। কিন্তু ঢাকায় ফেরার পর তাদের দেন দরবার মিটিং সমাবেশ নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকতে হয় যে সাংস্কৃতিক চর্চ্চার পরিবেশ তৈরীর ব্যাপারটা তাদের এজেন্ডায় থাকলেও, তার স্থান তালিকার সর্বনীম্নে।
রনি বলেন, এখন সঙ্গীত কিংবা শিল্পীদের বিকাশে যদি স্কুলের পাঠ্য তালিকায় সঙ্গীত অর্ন্তভুক্ত করা হয় এবং মিউজিক কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের টিচার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে রুট লেভেল থেকে চারা গজানোটা শুরু হতে পারে। দেশীয় যন্ত্র চর্চ্চার বিষয়টাতে গুরুত্ব আরোপ করা, সর্বপরি, এই প্রজন্মের উঠতি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদেরকে আর্থিক পৃষ্টপোষকতা করতে হবে, তাদেরকে দেশীয় সনাতনী সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে; তবেইনা আমরা উন্নতির আলো দেখবো। পৃষ্টপোষকতা ছাড়া মিয়া তানসেনের মতো প্রতিভা নিয়ে জন্মালেও কোন লাভ নেই। পৃষ্টপোষকতা ছাড়া কি মিয়া তানসেন – তানসেন হতে পারতেন? অথচ আজ আমাদের তরুণ শিল্পীদের কোন পৃষ্টপোষকতা নেই। যে টুকু হচ্ছে, তা ব্যাক্তিগত চেষ্টার ফল।
রনি বলেন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তিন/চার বছর যাবত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসছে। তাতে অতিথি শিল্পীদের প্রধাণ্যই যে বেশী-তা বলাই বাহুল্য। হয়তো এই ফাউন্ডেশনের যিনি কর্ণধার, ওনার হয়তো একটা মহৎ আকাঙ্খা আছে – এতে হয়তো আমাদের সঙ্গীত সমৃদ্ধ হবে – আমি জানিনা হয়তো হতেও পারে – দূর ভবিষ্যতে। কিন্তু এখনো পর্য্যন্ত উন্নতির ছিটেফোটা আভাস চোখে পরেনি। তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায়। এ সব বড় বড় আসরের দর্শক বা শ্রোতা কারা? এর সিংহভাগই তো অভিজাত পাড়ারই লোকজন! সুতরাং এটা একটা High society’র status quoবললে অত্যুক্তি হবেনা। এঁদের মধ্যে ধরে নিন এক/দুই শতাংশ লোক সঙ্গীত বোঝেন হয়তো। বাদবাকি আটানব্বই শতাংশ যে কিছুই বোঝেন-না সেটা হলপ করে বলতে পারি। সঙ্গীত সম্মেলনে আসা, রাত জেগে স্টেডিয়াম ময়দানে বসে বিরিয়ানি-কাবাব খাওয়া, গাল-গপ্প করা। এটা একটা স্টেটাস সিম্বল, একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রথা সর্বকালেই হয়ে এসেছে, আমাদের দেশে নতুন কিছু না।
রনি বলেন, এই স্ট্যাটাসের বিষয়টা আরও একটু খোলসা করে বলি। ১৯৯৩ সালে, বাংলা শতবর্ষ (১৩০০ বঙ্গাব্দঃ) পূর্তি উপলক্ষে এবং বঙ্গাব্দঃ ১৪০০ সালকে বরণ করাকে কেন্দ্র করে বিরাট একটা প্রস্তুতি চলছিল। তখন টরন্টো বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন প্রফেসর ড. সালাহ্ উদ্দিন সাহেব। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলো বিশ্ব বরেণ্য বাঙালী ব্যক্তিত্ব performing দের একদুজনকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যবস্থা করার। কারো কাছ থেকে উনি জানতে পেরেছিলেন যে, পন্ডিত রবিশঙ্কর (প্রয়াত), ওস্তাদ আলী আকবর খান (প্রয়াত) সহ আরো অনেকের সাথেই নাকি আমার যোগাযোগ আছে। এই বলে বিশেষ ব্যক্তিদের নামের একটি বিরাট তালিকা ধরিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। প্রফেসর সাহেবের ইচ্ছে, দু’দিন ব্যাপি এই আয়োজনে একটি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতেরও অনুষ্ঠান থাকবে। উদ্দেশ্য মহৎ, কিন্তু, সে সময়ের ঘটনা গুলো যখন মনে পড়ে, আমি কোন ভাবেই মেলাতে পারিনা; এত লোক থাকতে আমাকে কেন এই গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল? যাই হোক, সে কাহিনী অন্য কোন সময় বলবো, সুযোগ পেলে। তালিকা পেয়ে অনেক চেষ্টা-তদবির করে বাবা ওস্তাদ আলী আকবর খান সাহেবকে রাজি করালাম। অনেকেই তখন নাক সিটকে আজেবাজে মন্তব্য করেছিল ‘ওই বুইড়ারে আইনা কি হইবো?’ বুঝুন এবার, আমরা কতটাই না-লায়েক, কতটাই দৈন্য; মনের দিক থেকে।
পরে ওনাকে দিয়েই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করানো হয়েছিল। পূর্ব-পরিচয় থাকার কারনে আমাকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি ওনার পরিচর্যা করার। টরন্টো পৌঁছনোর আগেই ফোন করে বলে দিয়েছিলেন “বাবারে! হইটালের খাবার তো আমি খাইতে পারিনারে। তোর বউরে কইস চারটা ডাল ভাত যেন আমারে রাইন্ধা দেয়।” হাশেম ভাইয়ের স্টেশন ওয়াগন নিয়ে ছুটলাম এয়াপোর্টে। গিয়ে দেখি তুলকালাম কান্ড। সুটেড-বুটেড শাড়ি সালোয়ার কামিজের অভিজাত সম্প্রদায় সেখানে গিয়ে হাজির। তাদের ছবি তোলার হিড়িকে তো আমরা ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারছিলাম না। যেই ছবি তোলা শেষ – নিমিষেই তারা উধাও। ওস্তাদজি বললেন, “তোমার গাড়ি কই?” তারপরে হোটেলে এসে দেখি-সেখানেও তাদের ভীড়। পরে তো ওস্তাদজী এক পর্যায়ে ক্ষেপে গিয়ে বললেন, “লোক গুলারে খেদাও-আর তো সহ্য করতে পারছিনা।”
রনি প্রেন্টিস রয় মূলতঃ একজন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী। শুদ্ধ সঙ্গীত সাধানাই তার অভীষ্ট লক্ষ্য। এটাই তার আবেগ। প্রবাসে এসেছেন গত শতকেরসত্তর দশকের গোড়ার দিকে। প্রবাসে এলে যা হয় – দেশের শেকড় উপরে ফেলে বিদেশে আসা
যায় হয়তো – কিন্তু তার যে বেদনা – যে আসে এটা তারই একান্ত, কারোর সঙ্গে শেয়ার করা যায়না। আর রনি মূলতঃ একজন শিল্পী, অন্য সাধারণের চেয়ে তার বেদনাটা একটু বেশী। জীবনে তার অনেক সংগ্রামময় অধ্যায় আছে – কিন্তু নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি কিংবা সঙ্গীতও ছাড়েননি। নিজেকে একজন পেশাদার শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করেন। প্রবাসে আছেন বলে বলেন, “কুমার বিশ্বজিতের মতো পরিচিতি নেই কিংবা দেশে গেলেও যে খুব একটা সমাদর পান, তাও নয়। প্রবাসীদের যেমন লোকজনেরা টেরা চোখে দেখে-শিল্পীদেরও সেই চাহনীর সম্মুখীন হতে হয়।”
রনির স্থায়ী নিবাস টরন্টোতে। টরন্টোতে ‘রাগ রঙ সঙ্গীত আকাদেমি’ নামে তাঁর একটি সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান আছে। শুরু করেছিলেন সেই ১৯৯৬ সালে, টরন্টোতেই। ২০১০ সালে দেশে গিয়ে রাগরঙ এরই একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পরিকল্পনা – দু’তিন একর জায়গায় নয়ণাভিরাম পরিবেশে ওই স্কুলের ব্যাপ্তি ও দ্যুতি ছড়াবেন। শুরুটা তার ভালই ছিল। কিন্তু একটি মহল যখন টের পেল, নির্ভেজাল সঙ্গীতের পরিবেশ তৈরী হতে যাচ্ছে তখন তারা শুরুতে রনিকে বেশ ভালভাবেই বলে বিদেয় করবার চেষ্টা করলেন। তারা তার পরম হিতৈষীর ভঙ্গিতে বললেন, যেখান থেকে এসেছেন, সেখানেই ফিরে যান – নইলে এমন ঝামেলায় পড়বেন যে…। তাদের ইঙ্গিতটা রনি শুরুতে ধরতে পারেননি। ধরলেন তখনি যখন দেখলেন, তাকে নিয়ে ফেসবুকে সব স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে – ‘দাদা এসেছেন শিলিগুঁড়ি থেকে। ওনার প্রতিষ্ঠানে হিন্দি-পাঞ্জাবি-গুজরাতি ইত্যাদি ভাষায় সঙ্গীত চর্চ্চা করা হয়। সঙ্গীত বিদ্যালয় একটা ওছিলা মাত্র, আসলে তো উনি বিদেশী চর।এ ভাবে, নানান রকমের কূৎসা রটানো হচ্ছিল। শিল্পীর বুঝতে বাকী রইলোনা, কিন্তু তিনিও পিছু হটবার পাত্র নন। সব কিছু জেনে বুঝেও প্রত্যেক বছরই উনি দেশে ফিরে যান, শীতকালীন সময়টা কাটান সঙ্গীত শেখানোর জন্য।
রনি রয় মূলতঃ রাগাশ্রয়ী গান করেন। এরও সমঝদার আছে। কানাডা, আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একক অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন তিনি। মার্গীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি রাগাশ্রীত বাংলা গান গজল গাইতে বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন তিনি।
নজরুলের গান সম্পর্কে জিগ্যেস করলে রনি বলেন, নজরুল হলেন -বাংলা রাগ প্রধান গানের আদি। তার সব গানই প্রায় রাগ প্রধান এবং মাইথলজি নির্ভর। গলায় কারুকাজ না থাকলে তার গান গাওয়া খুবই দুরূহ। তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান লিখেছেন। তাঁর অনেক গানেরই স্বরলিপি পাওয়া যায়নি। তাঁর গানে লেখা থাকতো কোন রাগের প্রভাব আছে। তাঁর গানের সুর শুধু কমল দাসগুপ্ত নয় আরও অনেকেই করেছেন। তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছিল ফিরোজা বেগমের। তাঁর গানে নজরুলের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তবে নজরুলের গান যখন হারিয়ে যেতে বসেছিল তখন সেই ৫৯ সালে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের একটা রেকর্ড বেরুবার পর ধীরে ধীরে নজরুল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন। প্রয়াত মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের আদি পুরুষেরা ছিলেন বরিশালের মানুষ। তাঁর পরিবারের সাথে নজরুলের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মানব বাবুর কাকা স্বর্গীয় রতেœশ্বর এবং সিদ্ধেশ্বর মূখোপাধ্যায়রা ছিলেন সার্ব্বক্ষণিক সঙ্গী।
রনি রয়, বার কয়েক কানাডা কাউন্সিলের, অন্টারিও আর্টস্ কাউন্সিল স্কলারশিপ নিয়ে সঙ্গীতে তালিম নিতে ভারতে গিয়েছেন। তখন কলকাতার বেহালাতে প্রয়াত দীপালি নাগের একটি সঙ্গীতের সংগঠন ছিল এবং এখনো আছে। সেখানে গানের আসর হয়। একবার দীপালি নাগ তাকে গাইতে বললেন, তার গান শুনে দীপালি নাগ তো অভিভূত। বললেন, তুমি প্রবাসে বসেও এতো সুন্দর গাও! তারপর নিজের হাতেই রনির কন্ঠের ভূয়সী প্রশংসা করে দু’ছত্র লিখেও দিয়েছিলেন। বিয়ের আগে দীপালি নাগের পরিবার থাকতো ভারতের কানপুরে। তারা একবার কলকাতায় বেড়াতে এলে দীপালি নাগের বাবা মেয়েকে নিয়ে যান অলইন্ডিয়া রেডিওতে। সেখানকার কর্ণধার ছিলেন দীপালি নাগের বাবার বন্ধু। তিনি দীপালি নাগকে নিয়ে গিয়েছিলেন নজরুলের কাছে। নজরুল তার গান শুনে বিভিন্ন রাগে ১৬টি গান লিখে দিয়েছিলেন। সে সব অসাধারণ গান। ইউ টিউবে পাওয়া যায়। রনি আক্ষেপ করে বলেন, নজরুলের গানের সুর নিয়ে নানা রকমের মতানৈক্য বা মতভেদ আছে আমাদের দেশে। এর জন্য অজ্ঞতাই মূখ্যত দায়ী। সবাই নজরুলকে ভাঙ্গিয়ে নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। এদের অজ্ঞানতার সীমা পরিসীমা নেই। সঙ্গীতের এই তথাকথিত ব্যক্তিবর্গরা নজরুলকে এভাবে ভাগ করে নিজেদের বুজরুকি জাহির করে থাকেন। তবে সঙ্গীতটাই থাকে।
রনি রয় তার গানের স্কুলটির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। বললেন, কিছু কিছু ছাত্র আছে আমার, ভাল গাইছে। এখানে অবশ্য এখন অনেক গানের স্কুল হয়েছে। ছাত্র/ছাত্রীদের হাতে স্বরলিপির বাঁধানো খাতাও থাকে। কতজন তৈরী হচ্ছে সেটা দেখতে হবে।
সাক্ষাৎকারের শেষ পর্বটি ছিল তার ব্যক্তিগত জীবনের। প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনে রনি প্রেন্টিসের স্ত্রী ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্তের এক সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল একবার। চয়নিকা বীর উত্তম মেজর-জেনারেল (অব:) সি আর দত্তের কন্যা। ঐ সাক্ষাৎকারে চয়নিকা বলেছিলেন, তিনি মন্ট্রিয়লের ম্যাক্গিল ইউনিভার্সিটিতে আইনের উপর উচ্চতর ডিগ্রী নিতে এসে গায়ক রনির প্রেমে পড়ে যান। এ প্রসঙ্গের অবতারণা করতেই রনির মুখে হাসির ছটা প্রকাশ পেল। বললেন, “আমাদের সিলেটের শিল্পী ও আমার বন্ধু সুবীর নন্দী একবার মন্ট্রিয়লে গাইতে এলো। আমিও গাইলাম তার সাথে। ছিপছিপে গড়ণের সুশ্রী মুখের একটি মেয়ে সুবীরের সাথে আমাদের সিলেটি ভাষায় কথা বলছিল। সুবীরই মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো – ও আমার মামাতো বোন। তুই যখন এখানেই থাকিস তো ওর খোঁজ খবর রাখিস।” তার পরের কাহিনী তো আর কারও অজানা নয়। সুখেরই সংসার – সঙ্গে আছেন এক শ্রীমান।
রনি বলেন, পৃষ্টপোষকতা না পেলে যেমন তানসেন জন্মাতো না-তেমনি চয়নিকার পৃষ্টপোষকতা না পেলে শিল্পী রনিরও কোন অস্তিত্ব থাকতোনা। তার অনুপ্রেরণাই আমার চলার পথের পাথেয়।
– প্রচ্ছদে ব্যবহৃত রনি রয়ের ছবিটি তুলেছেন খুরশিদ শাম্মী