স্পাউজাল রিইউনিফিকেশন প্রসেস ত্বরান্বিত করা হচ্ছে অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনার জন্য
জানুয়ারী ৭, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ২০১৬ সালের শুরু থেকেই ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এ্যান্ড সিটিজেনশীপ কানাডা সমন্বিত পদক্ষেপ চালিয়ে আসছে স্পাউজ স্পন্সরশীপ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য। এই প্রক্রিয়ায় ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল আবেদনকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে। ২০১৫ আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। কিন্তু স্পাউজ হিসাবে কানাডায় ইমিগ্রেশন পাওয়ার সীমা নির্ধারিত ছিল ৪৮ হাজার।
২০১৬ সালে ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয় সমন্বিত চেষ্টা চালিয়ে দ্রুত ফাইল প্রসেসিং এর মাধ্যমে রিইউনিফিকেশনের সময়সীমা কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়। ডিসেম্বর (২০১৬) থেকে ফাইল প্রসেসিং এর সময় আরো কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয়। আগে যেখানে ১৮ থেকে ২৬ মাস সময় লেগে যেত ফাইল প্রসেসিং এর মাধ্যমে স্পাউজাল রিইউনিফিকেশনের, এখন তা কমিয়ে এক বছরের মধ্যে সমাধান করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে জটিল কেস হলে সময় আরো বেশী লাগতে পারে।
তবে যারা ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন তাদেরকে অতিরিক্ত আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে না আবেদন পত্র ফাইনালাইজড হওয়ার জন্য। ইমিগ্রেশন মন্ত্রনালয় যে সকল আবেদন পত্র আগে পেয়েছে সেগুলোর প্রসেসিং অব্যাহত রাখবে ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ এর ভিত্তিতে এবং এই আবেদনকারীরা সিদ্ধান্ত পেয়ে যাবেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই। ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয় নতুন এই উদ্যোগ গ্রহণ করাতে ২০১৭ সালের মধ্যে উপকৃত হবেন প্রায় ৬৪ হাজার আবেদনকারী। অন্যদিকে স্পাউজ স্পন্সরশীপের আবেদনপত্রও আগের তুলনায় সরল এবং সহজ করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাক্কালাম বলেন, কোন কানাডিয়ান নাগরিক বা ইমিগ্রেন্ট দেশের বাইরে বিয়ে করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করবেন তাদের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য এটি হতে পারে না।
উল্লেখ্য যে, কানাডা প্রতিবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে কত সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট বা পার্মান্টে রেসিডেন্ট গ্রহণ করবে তা আগের বছরই নির্ধারণ করে থাকে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সেই হিসাবে ২০১৫ সালে স্পাউজাল ক্যাটাগরীতে ইমিগ্রেশন পাওয়ার সীমা নির্ধারিত ছিল ৪৮ হাজার। কিন্তু আবেদন তার চেয়ে অনেক বেশী হওয়াতে (৭০ হাজার) ফাইল প্রসেসিং এ দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয় এই দীর্ঘসূত্রিতা কাটিয়ে উঠার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে আছে : –
ক) অধিক সংখ্যক স্পাউজ, পার্টনার এবং ডিপেন্ডেন্ট চিলড্রেনকে কানাডায় স্বাগত জানানো
২০১৬ সালে কানাডা সরকার আরো অধিক সংখ্যক স্পাউজ/পার্টনার গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফলে আরো ১২ হাজার স্পাউজ/পার্টনার এবং ডিপেন্ডেন্ট চিলড্রেন কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী পাবেন। অর্থাৎ মোট সংখ্যা এখন দাড়াবে ৪৮ হাজারের পরিবর্তে ৬০ হাজার। আর ২০১৭ সালের এই টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ৬৪ হাজারে।
খ) ফাইল প্রসেসিং এ দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনার জন্য তহবিল বৃদ্ধি
ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এ্যান্ড সিটিজেনশীপ কানাডা অবিচলভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্পাউজাল স্পন্সরশীপ এর ফাইল দ্রুত প্রসেস করার জন্য যাতে আবেদনকারীদেরকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে না হয়। ২০১৬ অর্থবছরে সরকার এই খাতে অতিরিক্ত ২৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ করেছে ব্যাকলগ কাটিয়ে উঠার জন্য।
গ) আবেদন প্রক্রিয়ার উন্নতীসাধন
স্পাউজ স্পন্সরশীপের আবেদনপত্রও আগের তুলনায় সরল এবং সহজ করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে নতুন এই ফরম আপলোড করা হয়েছে।
ঘ) অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে ফাইল প্রসেসিং এর প্রতিশ্রুতি
ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এ্যান্ড সিটিজেনশীপ কানাডা বর্তমানে জমাকৃত স্পাউজাল স্পন্সরশীপের আবেদনপত্রগুলোর অন্তত ৮০% ডিসেম্বর (২০১৭) এর মধ্যে প্রসেস করার জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আর নুতনভাবে জমাকৃত আবেদপত্রগুলোর ৮০% প্রসেস করা হবে একবছরের মধ্যে যেদিন থেকে তা জমা পড়েছে। এই প্রক্রিয়া সব আবেদনপত্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ দেশের বাইরে থেকে যারা আবেদন করেছেন এবং দেশের ভিতর থেকে যারা আবেদন করেছেন সবার ক্ষেত্রেই একই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হবে। সিকিউরিটি চেক, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মেডিক্যাল স্ক্রিনিং অথবা আবেদন পত্রে জটিলতা ইত্যাদির কারণে ২০% আবেদন পত্রের প্রসেসিং এর জন্য এক বছরের কিছুটা বেশী সময় লাগতে পারে।
ঙ) বিয়ে জালিয়াতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ
বিয়ে জালিয়াতি প্রতিরোধেও নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এ্যান্ড সিটিজেনশীপ কানাডা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং জালিয়াতি শনাক্ত করার মত ব্যবস্থাও আছে তাদের হাতে। আবেদনপত্র প্রসেসিং এর সময় যদি বিয়ে জালিয়াতির কোন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় তবে আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী পাওয়ার পরও যদি কোনভাবে প্রমাণ হয় যে বিয়ের ঘটনাটি ছিল সাজানো বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী পাওয়ার জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে তা হলেও আবেদনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যাকে স্পন্সর করা হয়েছে তার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী বাতিল হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি স্পন্সর করেছেন তার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সীও বাতিল হয়ে যেতে পারে যদি সে ব্যক্তি কানাডার নাগরিক না হন এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। – তথ্য সূত্র : ইন্দো কানাডিয়ান ভয়েস