কানাডায় প্রতিদিন পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন ২৩০ জন
প্রতি চারদিনে খুন হন একজন মহিলা
ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় প্রতিদিন গড়ে ২৩০ জন ব্যক্তি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন। এটি পুলিশের খাতায় নথিবদ্ধ করা হিসাব। এর বাইরেও আরো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কানাডার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডক্টর গ্রেগরী টেইলর সম্প্রতি এ তথ্য জানান। কানাডার পাবলিক হেলথ এর উপর পরিচালিত জরীপ থেকে এই তথ্য জানা যায়। প্রধানত শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য এই জরীপ চালানো হয়। খবর সিবিসি নিউজের।
গ্রেগরী টেইলর রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে বিস্ময়কর বলে মনে করেন। তথ্যগুলো নিচে তুলে ধারা হলো :
– প্রতিদিন ২৩০ জন পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
– ২০১৪ সালে ৫৭,৮৩৫ জন বালিকা ও পুর্ণ বয়স্ক মহিলা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
– প্রতি চার দিনে একজন করে মহিলা খুন হচ্ছেন পরিবারেরই কোন সদস্যের হাতে।
কানাডায় ৯ মিলিয়ন লোক অভিযোগ করেছেন তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বয়স ১৫ পার হওয়ার আগে।
– গত ৫ বছর সময়ের মধ্যে ৭৬০,০০০ জন কানাডিয়ান অভিযোগ করেছেন তারা অস্বাস্থ্যকর দাম্পত্য বিরোধ, নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
– ২০১৪ সালে কানাডার আদীবাসীদের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে খুন হবার যে মাত্রা লক্ষ্য করা গেছে তা অ-আদীবাসীদের তুলনায় ৬ গুণ বেশী। আরো লক্ষ্য করা গেছে যে, আদিবাসী মহিলাদের মধ্যে দাম্পত্য নির্যাতনের যে মাত্রা তা অ-আদীবাসীদের তুলনায় ৩ গুণ বেশী।
– কানাডায় প্রতিদিন ৮ জন করে প্রবীন ব্যক্তি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
গ্রেগরী টেইলর বলেন, উপরের এই তথ্যগুলো দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। তিনি আরো বলেন, আমি খুবই আহত হয়েছি সহিংসতার এই ব্যাপ্তি দেখে।
গ্রেগরী টেইলর বলেন, সহিংসতার শিকার হলে প্রাথমিকভাবে যে প্রভাব পড়ে তার চেয়ে বেশী প্রভাব পড়ে পরবর্তীকালে। পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস যেটাকে বলে। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেসের
কারণে মানুষের মধ্যে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে বলে জানান গ্রেগরী। বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়।
পরিবারিক সহিংসতা কেন ঘটছে তার পুরোপুরি রহস্য আজো খুঁজে বের করতে পারেননি গবেষক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সমাজকর্মীগণ। বা এই সহিংসতাকে কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়েও পরিপূর্ণ কোন পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কানাডার স্বাস্থ্য মন্ত্রী জেন ফিলপট বলেন, পারিবারিক সহিংসতার যে চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করছি, এই রিপোর্টটি সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। অথবা বলা যায়, এই রিপোর্টটি সচেতনতা বৃদ্ধির তুলনায় প্রশ্ন উত্থাপন করেছে বেশী। তবে আমাদেরকে এই সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আমি মনে করি, কানাডিয়ানরা নিরাপদ বোধ করার দাবী রাখেন।
বিশ্বাস, মনোভাব ও আচরণ পরিবর্তন করতে হবে
গ্রেগরী টেইলর বলেন, বিশ্বাস ও মনোভাব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সমাজের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে সহিংসতা বন্ধ করার ব্যাপারে। দায়িত্ব রয়েছে নিরাপদ ও সহমর্মী সমাজব্যস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন যে এটি আমাদের সমাজের কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হানছে, আঘাত হানছে আমাদের পরিবারগুলোতে। এই সহিংসতা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য যে, কানাডায় পারিবারিক সহিংসতা যা ঘটে তার প্রায় শতকরা ৭০ ভাগই গোপন থেকে যায়। পরিবারের সম্ভ্রমহানির ভয়ে, লজ্জার কারণে বা আরো নির্যাতনের ভয়ে সহিংসতার যারা শিকার তারা চুপচাপ থেকে যান। গ্রেগরী টেইলর বলেন, পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা আমাদের সমাজে যে পরিমান ঘটছে তা এখনো ভীতিকর পর্যায়ে রয়েছে সংখ্যা বিচারে। তবে একটি ইতিবাচক বিষয় হলো, সহিংসতার এই প্রবণতা বা ঝোঁকের মাত্রা কমে আসছে দিনে দিনে।
নভাস্কাশিয়ায় বসবাসরত ফ্যামিলি কাউন্সিলর টড অগাস্টা বলেন, প্রয়োজনীয় ও যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এই পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটবে এবং সম্ভবত আরো কিছু পরিবার বেচে যাবে।