বাঙ্গালী সংস্কৃতি আমাকে মুগ্ধ করে

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬

১৯৮৪ সালের ১৫ই জুন টরন্টো’র জেরাড-উডবাইন এ জন্ম নেয়া ন্যাথানিয়েল এরিস্কিন স্মিথ ২০১৫ সালে কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক এলাকা থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। দশ হাজারের বেশী ভোটে এই রাইডিং এর আগের সদস্য নিউ ডেমোক্রাট পার্টির ম্যাথিঊ ক্যালী তাঁর কাছে পরাজিত হন। কানাডার পার্লামেন্ট এর একজন নবীনতম সদস্য হিসেবে ন্যাথানিয়েল ইতিমধ্যে তাঁর বক্তৃতা ও কাজের জন্য সবার নজর কেড়েছেন। তিনি কানাডিয়ান গ্রুপ অব ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের এর সভাপতি। এছাড়া, তিনি কানাডার পাবলিক সেফটি ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি ও এক্সেস টু ইনফরমেশন, প্রাইভেসী এন্ড এথিক্স কমিটির সদস্য।

এমপি ন্যাথানিয়েল এরিস্কিন স্মিথ এর সাথে প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে তাঁর জীবন ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন মনিস রফিক, বিদ্যুৎ সরকার ও রেজিনা রহমান।

প্রশ্ন ঃ    আপনার জন্ম ও বেড়ে উঠা কোথায় ?

উত্তর ঃ                আমি যে বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে নির্বাচিত হয়েছি। সেখানেই আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। একেবারে নির্দিষ্ট করে বলতে হলে বলতে হয়, স্থানটা হচ্ছে উডবাইন ও জেরার্ড।

প্রশ্ন ঃ    আপনি বাল্যজীবনে পড়াশুনা কোথায় কোথায় করেছিলেন?

উত্তর ঃক্লাস ওয়ান থেকে সিক্স পর্যন্ত কয়েকটা স্কুলে পড়েছি, তারপর বাওমোর রোড পাবলিক স্কুলে, সেখানে আমার মা সারা এরিস্কিন ছিলেন একজন লাইব্রেরিয়ান। তারপর আমার হাই স্কুলের পড়াশুনা হয়েছিলো ম্যালভার্ণ কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট এ। ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই স্কুলটি পূর্ব টরন্টোর একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল। আমার বাবা লরেন্স স্মিথ ছিলেন সেই স্কুলের ইংরেজী বিভাগের প্রধান।

ন্যাথানিয়েল স্মিথ এর কার্যালয়ে (বাম থেকে) বিদ্যুৎ সরকার, মনিস রফিক, ন্যাথানিয়েল এরিস্কিন স্মিথ ও রেজিনা রহমানন্যাথানিয়েল স্মিথ এর কার্যালয়ে (বাম থেকে) বিদ্যুৎ সরকার, মনিস রফিক, ন্যাথানিয়েল এরিস্কিন স্মিথ ও রেজিনা রহমান

প্রশ্ন : তাহলে কানাডার ফেডারেল সরকারের পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে আপনি যে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন, সে এলাকার প্রতি আপনার এক বিশেষ অনুভূতি কাজ করে।

উত্তর ঃ  অবশ্যই। কারণ এই জায়গাই আমি জন্মেছি আর বেড়ে উঠেছি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া আর মানুষজন আমার খুব আপন আর প্রিয়। এটাতো আমার প্রবল ভালো লাগার জায়গা, সেই সাথে এই মানুষগুলো আমার খুব প্রিয়।

প্রশ্ন ঃ    একজন শিক্ষকের সন্তান হিসেবে রাজনীতিবিদ হওয়ার চিন্তাটা আপনার মাথায় আসলো কিভাবে?

উত্তর ঃ                প্রথমে বলি, আমি একজন আইনজীবী। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পলিটিক্যাল

সাইন্স ও কন্সটিটিউশনাল ল’ এর ওপর পড়াশুনা করেছি। আর রাজনীতি করার চিন্তাটা আমার মাথায় হয়তো ছোটবেলা থেকেই ছিলো। হাই স্কুলের স্টুডেন্ট কাউন্সিল এ আমি প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আর আমার বয়স যখন বাইশ বছর তখন আমি সিটি কাউন্সিলার নির্বাচনে অংশ নিই, যদিও আমি সে নির্বাচনে জিততে পারিনি। কিন্তু সত্যি বলতে কী, আমি ছোট বেলায় থেকেই রাজনীতি করতে চেয়েছি এবং আমার মনে হয়েছে, রাজনীতির মাধ্যমেই সমাজ ও রাষ্ট্রকে এক সুন্দর ও মানুষের চাওয়ার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায়।

প্রশ্ন ঃ আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন?

উত্তর ঃ আমি কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পড়েছি পলিটিক্যাল সাইন্স ও আইন নিয়ে আর এক বছর কন্সটিটিউশনাল ল নিয়ে পড়েছি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রশ্ন ঃ বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের কাছে অক্সফোর্ড আর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এক স্বপ্নময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেখানে আপনি পড়াশুনা করেছেন। বিষয়টা কিন্তু খুবই সম্মানের।

উত্তর ঃঅবশ্যই বলতে হয় আমি অনেক ভাগ্যবান, যে কারণে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড এর মত এক ঐতিহ্যবাহী ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পড়েছি। আমি সেখানে এক বছরের এক প্রোগামে গিয়েছিলাম। আমি পড়েছিলাম পলিটিক্যাল ফিলোসফি ও কন্সটিটিউশনাল ল নিয়ে। সেখানকার পড়াশুনাটা আমার রাজনৈতিক চিন্তার জগতে এক ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সেখানে পড়াশুনার ফলে লোকাল গভর্মেন্ট, ফেডারেল গভর্মেণ্ট ও সরকার এর বিভিন্ন স্তর ও কার্যকারীতা নিয়ে আমার ধারণা আরো বলিষ্ঠ হয়। বলা যায়, এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমার এক ধরনের গভীর জ্ঞান হয়। আমার সেই জ্ঞান কিন্তু সরকার ব্যবস্থা ও সংবিধান নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বিতর্ক করতে আমাকে তৈরী করেছে।

তবে আমাকে অক্সফোর্ডের সেই প্রোগামে পাঠানোর জন্য আমি আমার শিক্ষক অধ্যাপক ডেভিড জ্যাজ এর প্রতি সব সময় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি।

প্রশ্ন ঃ    আপনার খেলোয়াড় জীবন সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।  ‘বেইজ বল’ খেলাটা যে আপনার এত প্রিয়, সেই খেলা নিয়ে আপনার নিজের কোন অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি থাকলে আমাদের বলুন ?

উত্তর ঃ                আমি খুব ছোট বেলা থেকেই নিয়মিত বেইজ বল খেলে আসছি। আমি হাই স্কুল টিমে বেইজ বল খেলেছি। কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি বিশ্ববিদ্যালয় টিমে খেলেছি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও আমি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টিমে

এবং অক্সফোর্ড সিটি টিমে আমি বেইজ বল খেলেছি। কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কিন্তু এক বছর ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।

প্রশ্ন ঃ    আপনি ইতিমধ্যে কানাডায় একজন পশুপ্রেমিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কারণ পার্লামেন্টে আপনি  সি – ২৩৬  নামে যে প্রথম বিল উত্থাপন করেন সেটা পশুদের প্রতি হিংস্রতা দূর করা সংক্রান্ত।  পার্লামেন্ট এর সদস্য হিসেবে আপনার প্রথম বিল উত্থাপনের বিষয়টি কী সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ফলে হয়েছে না সেটা দল থেকে আরোপিত কোনো ব্যাপার ছিলো ?

উত্তর ঃ মনে রাখতে হবে, পার্লামেন্ট এ যেহেতু আমি একটি বিশেষ দলের প্রতিনিধিত্ব করি সেজন্য পার্লামেন্ট এ আমার উপস্থাপিত সব কিছুই আমার দলের কথা। তবে এটাতো সত্যি, আমার দলের কথা কী হবে সেটা আমরাই ঠিক করি। সি – ২৩৬ বিলটি পার্লামেন্টে উপস্থাপিত করার চিন্তাটা আমার। আমরা যেমন মানুষের সার্বিক ভালো চাই, ঠিক তেমনি জীব-জন্তু, পশু-পাখিদেরও ভালো চাওয়াও আমাদের উচিৎ। কোনো ক্রমেই যেন, জীব-জন্তু, পশু-পাখির প্রতি মানুষ নির্মম না হয় এবং নির্বিচারে তাদের হত্যা বা কোনো রকম ক্ষতি না করা হয়। আমরা একটা সুন্দর দেশ চাই, যেখানে মানুষ পরিবেশ ও পশু বান্ধব হবে।

প্রশ্ন ঃ আপনার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানাই কারণ, ২০১৬’র ১৭ই ফেব্রুয়ারি আপনি পার্লামেন্ট এ ২১ শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার কথা বলতে গিয়ে বাংলা ভাষা এবং এই ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষদের আত্মত্যাগের কথা উল্লে­খ করেছেন। আপনি কী বাংলাদেশীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন?

উত্তর ঃ প্রথম ব্যাপার, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে মায়ের ভাষার জন্য বাঙ্গালিরা যা করেছে তা পৃথিবীর মানুষের কাছে এক বিশেষ উদাহরণ হয়ে আছে। বাঙ্গালিদের সেই আত্মত্যাগের গুরুত্ব ইউনেস্কো’র মত একটি সংগঠন অনুধাবণ করেছে বলেইতো সেই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দিন হিসেবে সম্মানিত করেছে। আমার ভালো লাগে, আমার রাইডিং এ সেই বাংলাদেশী মানুষদের ব্যাপক বসবাস আছে। ভাষার জন্য বাঙ্গালিদের সেই আত্মত্যাগের ঘটনাটা সবাইকে ভালোভাবে জানিয়ে দেবার জন্যেই আমি পার্লামেন্ট এ বিষয় উপস্থাপন করি।

আমি যদিও বাঙ্গালি জনবসতি এলাকায় বসবাস করি, কিন্তু নির্বাচনে দাড়ানোর পূর্বে আমার কখনো বাঙ্গালিদের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা উৎসবে অংশগ্রহণ করা হয় নি। তবে, এখন আমি নিয়মিত অংশ নিই। এমন কি বাঙ্গালি পোষাকে সবার সাথে উৎফুল্ল­ হয়ে নাচ গানও করি। তোমাদের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি সত্যিই খুব মজা পাই। সত্যিই, তোমাদের খুব সুন্দর এক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আছে। সত্যি বলতে কী, বাঙ্গালী সংস্কৃতি আমাকে মুগ্ধ করে।

আর আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে খুবই ভালো লাগে যে, বাঙ্গালি কমিউনিটির মানুষ আমাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।

প্রশ্ন ঃ    পার্লামেন্ট এর একজন সদস্য হিসেবে আপনি কী স্বপ্ন দেখেন বা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন বা নিতে চান, যাতে আপনি মনে করেন জনগণের একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে ভালোভাবে জনগণের সেবা করতে পারবেন ?

উত্তর ঃআমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জনগণের আশা-আকাংখা পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে হলে তিনটি বিষয় বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। প্রথমত, আমাদের দরকার স্মার্টার গভর্মেন্ট এবং তারপর দরকার স্মার্টার সিটিজেন। আমাদের দরকার ভালো বাসস্থান আর ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই সাথে প্রয়োজন বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনগণের ক্ষমতায়ন। জনগণ যাতে তাদের যোগ্যতা ও ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে এবং প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে আরো ভালো কাজ করার জন্য যোগ্যতর করে তুলতে পারে। আর এসব ব্যাপারে যেন রাষ্ট্র সব সময় সহায়কের ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে জনগণ যেন রাষ্ট্র ও এর প্রতিনিধিদের ওপর পরিপূর্ণভাবে আস্থা রাখতে পারে। আমরা যারা জনগণের প্রতিনিধি তারা যেন সত্যিই নিজেরা সৎ হয়ে জনগণের আশা পূরণের জন্য নিরন্তর কাজ করে যেতে পারি। আমার বিশ্বাস লিবারেল পার্টি কানাডার মত এক বহুজাতি ও বহু সংস্কৃতির দেশে জনগণের এই আশা ও মূল্যবোধকে সব সময় শ্রদ্ধা জানায় এবং এখানে যেনো কোনো জাতি ও সংস্কৃতির মানুষ নিজেদেরকে কোনো রকম অসহায় না ভাবে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আগামীতেও যাবে। আর তিন নম্বর হচ্ছে, খুবই শক্তিশালী লোকাল গভর্মেন্ট তৈরী করা। স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেন সঠিকভাবে জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে পারে সে দিকে এ সরকার সব সময় খেয়াল রাখছে।

আমার বিশ্বাস, আগামীতে এই সরকার সব জাতি ও সব সংস্কৃতির মানুষদের জন্য  আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য কানাডা তৈরী করতে সক্ষম হবে।

প্রশ্ন ঃ    আমরা টরন্টো’তেই লক্ষ্য করি ইংরেজী ও ফরাসী ভাষার পাশাপাশি আরো প্রায় আট-দশটি ভাষায় সরকারী বিভিন্ন কাজকর্ম হয় এবং বিভিন্ন সরকারী সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু টরন্টোতে যথেষ্ঠ পরিমাণ বাংলা ভাষাভাষি মানুষ বাস করার পরও বাংলা ভাষায় এমন কোনো সুবিধা দেয়া হয় না। আপনি এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পার্লামেন্ট এ বাংলা ভাষার প্রশংসা করে বক্তৃতা দিয়েছেন এবং এই বাংলা ভাষার এক আত্মত্যাগ ও সংগ্রামকে স্মরণ করে ইউনেস্কো সেই দিনটিকে সম্মান জানিয়ে সেই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। অতএব, এই বাংলা ভাষাকে কানাডা সরকারের সরকারি কাজ কর্ম ও অন্যান্য কাজের এক মাধ্যম হিসেবে সরকারীভাবে স্বীকৃতির কথা ভেবেছেন কী ?

উত্তর ঃ                অবশ্যই বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। তবে কানাডার ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে, এই দেশে অনেক জাতির মানুষ বাস করে এবং প্রচুর ভাষায় মানুষজন কথা বলে। আর কানাডার সব জায়গাই তেমন বাঙ্গালি বাসও করে না। সে কারণে, ওভাবে বাংলা ভাষাকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেয়া সম্ভবও নয়। তবে যে সব এলাকায় বাঙ্গালি জনগণ বেশী সেই সব এলাকার অফিস আদালতে এই ভাষার স্বীকৃতি অবশ্যই দেয়া হবে। এটা একটু সময়ের ব্যাপার। যেমন, টরন্টোর আমার রাইডিং এ বাংলাভাষী মানুষ অনেক বেশী, ফলে অবশ্যই এই এলাকার অফিস আদালতে অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এই ভাষায় কাজকর্ম হবে। এটা অবশ্যই আমার পদক্ষেপগুলোর একটি।

প্রশ্ন ঃ    আপনিতো কানাডিয়ান গ্রুপ অব ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন এর সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। এই ইউনিয়ন এর মূল কাজ কী?

উত্তর ঃ এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টারীয়ানদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা প্লাটফর্ম, যেখান থেকে আমরা এক হয়ে পৃথিবী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং বিষয় মোকাবেলায় এক সাথে কাজ করবো। এই বিষয়গুলোর মধ্যে অবশ্যই আছে পরিবেশ, দারিদ্র্য, জলবায়ু। সেই সাথে বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় কিভাবে পৃথিবীর সব দেশের মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন করা যায়। এ বছর প্রায় বিভিন্ন দেশের সাত শ পার্লামেন্ট সদস্যের উপস্থিতিতে জাম্বিয়ায় এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাকে ওয়ার্ল্ড কমিটিরও সভাপতি করা হয়েছে। আগামী বছর এটা হবে আপনাদের ঢাকায়। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন সাবের হোসেন চৌধুরী। আমি ঢাকা যাবো আর আপনাদের দেশটাকে ভালোভাবে দেখে আসবো।

প্রশ্ন ঃ    আপনি জানেন, বাংলাদেশ থেকে যারা স্কিলড ইমিগ্র্যান্ট ক্যাটাগরী’তে কানাডায় আসে তারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতম ব্যক্তি, কিন্তু কানাডায় এসে তারা তাদের অভিজ্ঞতার জায়গায় কোনো কাজ পায় না, কিন্তু তারা এদেশে আসার পূর্বে ভেবে থাকে তারা তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে কাজ পাবে। কিন্তু এমনটি না হবার ফলে, এদেশে এসে তারা এক ধরনের হতাশায় ভুগে এবং তাদের  সারা জীবনের যে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তা প্রয়োগ করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এটাকে মানব সম্পদের এক চরম অপচয় বলা যায়। এ অপচয় রোধে আপনার সরকার কী কোনো উদ্যেগ নিবে ?

উত্তর ঃ                বিষয়টা আমাদের সরকার অবশ্যই ভেবেছে। আমরা অবশ্যই চাই না পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যে সব অভিজ্ঞ মানুষ কানাডাকে তাদের নতুন ভূমি মনে করে এদেশে আসছেন, তাদের সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অব্যবহৃত থাক। আমরা অবশ্যই এই অপচয় রোধ করবো। আমরা এমন ব্যবস্থা করতে চাই যাতে যারা আসবে, তাদের পূর্বের কর্ম ক্ষেত্রেই  তারা এখানে কাজ করার জন্য একটি ব্রিজিং প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে তারা কানাডার চাকুরীর পরিবেশের জ্ঞান নিয়ে এখানে কর্মজীবন শুরু করবে। এ ব্যাপারে, অতি দ্রুত সরকার থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রশ্ন ঃ    কয়েক বছর আগেও কানাডায় নতুন ইমিগ্র্যান্টরা এখানে তিন বছর থাকার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারতো,  হারপার সরকার সেটাকে চার বছর করেছে, আমরা জানি লিবারেল পার্টি অভিবাসী বান্ধব সরকার, সে কারণে এ সরকার এটাকে কী পূর্বের মত আবার তিনি বছর করার কোনো পদক্ষেপ নেবে ?

উত্তর ঃ বিষয়টা কিন্তু ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা অবশ্যই চাই সময়টা চার বছরের জায়গায় তিন বছর হোক। আমি আশা করি, পার্লামেন্ট এর আগামী অধিবেশনে এই বিলটি পাশ হবে।

প্রশ্ন ঃ    মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে আপনি কানাডার মত বিশাল বড় দেশের পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছেন। জনগণের যে সেবার মানসিকতা নিয়ে আপনি রাজনীতি শুরু করেছেন, সেই ক্ষেত্রে বিচরণ করার জন্য আপনি সামনে অনেক দিন পাবেন। আমরা আশা করি, দিন দিন আপনি জনগণ ও পশু বান্ধব হিসেবে আরো অনেক বেশী কাজ করে যাবেন।

উত্তর ঃ একজন পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে মূলত আমার যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি একজন সত্যিকারের রাজনীতিবিধ হিসেবে মানুষের মংগলের জন্য আজীবন কাজ করে যাবো।

প্রশ্ন ঃ    প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি শুভেচ্ছা রইল।

উত্তর ঃ আপনাদের তিন জনের প্রতি রইল আমার অশেষ শুভেচ্ছা। সেই সাথে  প্রবাসী কণ্ঠের সম্পাদক ও পাঠকদের প্রতি রইল আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।               -প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ন্যাথানিয়েল স্মিথের ছবিটি তুলেছেন মনির বাবু