কানাডার ইসলামিক স্কুল ও মসজিদগুলোতে জঙ্গীবাদ সমর্থিত বই-পত্রের ছড়াছড়ি?

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার অনেক মসজিদ ও ইসলামিক স্কুল তরুনদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে জঙ্গীবাদের পক্ষাবলম্বন করে। অথবা জঙ্গীবাদের পক্ষাবলম্বন না করুক, এ বিষয়ের উপর শিক্ষাদানের বিরুদ্ধে কোন নিন্দাও জানাচ্ছেন না তাদের অনেকেই। নতুন এক গবেষণায় এরকম তথ্যই বের হয়ে এসেছে বলে দাবী করা হচ্ছে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর।

গবেষণা পরিচলনাকারী দুই ব্যক্তির একজন হলেন থমাস কুইগিন। তিনি প্রিভি কাউন্সিল অফিস এবং আরসিএমপি’র সাবেক গোয়েন্দা বিশ্লেষক। অপরজন হলেন মিশর থেকে এ দেশে আসা সাংবাদিক সাঈদ সোয়েব। তারা তাদের গবেষণা পরিচালনা করেন কানাডার কয়েকটি মসজিদের লাইব্রেরীতে এবং ইসলামিক স্কুলে গোপন সফরে গিয়ে। তারা বলেন, এর ব্যাপকতা ও গভীরতার ব্যাপ্তি কতটুকু তা নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

গবেষকদ্বয় বলেন, প্রকাশ্যে সহজলভ্য জঙ্গীবাদ সমর্থক বইপত্র এবং সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টিং বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হন যে অনেক কানাডিয়ান এমনকি নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকগণও এর বিপদের দিকটি সম্পর্কে সজাগ নন এবং তারা এর প্রতি চোখ বন্দ করে আছেন।

কানাডায় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তরুন কর্তৃক জঙ্গীবাদে দীক্ষিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি অবজ্ঞা করার কোন উপায় নেই।

গবেষণা পত্রে আরো বলা হয়, জঙ্গীবাদীদের চরম দর্শন ও মতামতের কাছে কানাডীয় মুসলিম যারা মনবতাবাদে ও আধুনিকতায় বিশ্বাসী তাদের আদর্শ ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।

গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়, এক বছর আগে সিনেটের ডিফেন্স এন্ড সিকিউরিটি কমিটি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল যাতে বলা হয়, বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিছু ইমাম কানাডায় চরমপন্থী ধর্মীয় মতাদর্শের বিস্তার ঘটাচ্ছে যা কানাডার মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না এবং এর ফলে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটছে।

কানাডার মসজিদ ও ইসলামী লাইব্রেরীতে জঙ্গীবাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে এমন কিছু বই রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি : অনলাইন

গবেষকদ্বয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রভিন্স ও মুসলিম কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনা করে একটি উপায় খুঁজে বের করতে যাতে করে কানাডায় অবস্থানকারী ইমামদেরকে ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা যায়।

নতুন এই গবেষণা পত্রটি লিবারেল সিনেটরদের কমিটি কর্তৃক সমর্থিত হয়নি। অন্যদিকে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এই গবেষণা পত্রের তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন এটি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর সমাধানের প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হয়। তারা বলেন, এই গবেষণা পত্র আরেকটি অবান্তর ও অসঙ্গত উদ্যোগ এবং এর উদ্দেশ্য হলো কানাডায় মুসলিম কমিউনিটির মানহানি করা।

ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আল নাদভী বলেন, আমি এই গবেষণা পত্রে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করি। আর এ কথা মোটেও সত্য নয় যে মুসলিম নেতৃবৃন্দ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে না। বরং তারা ইতিপূর্বে সংগঠিত বিভিন্ন জঙ্গীবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, থমাস কুইগিন এবং সাঈদ সোয়েব তাদের “The Lovers of Death? — Islamist Extremism in Our Mosques, Schools and Libraries” শিরোনামের গবেষণা পত্রটি রচনা করার জন্য তারা ব্যক্তিগতভাবে অটোয়ার চারটি মসজিদ ও তিনটি ইসলামিক স্কুল পরিদর্শনে যান। তবে তারা একই সাথে টরন্টো এবং মন্ট্রিয়লের কয়েকটি মসজিদে সমকামীদের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করা এবং ‘পবিত্র যুদ্ধ শুরুর আহ্বান’ জানানো- ইত্যাদি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গবেষকদ্বয় তাদের অনুসন্ধানে কানাডার মসজিদ ও ইসলামী লাইব্রেরীতে জঙ্গীবাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে এমন কিছু বইপত্র দেখতে পান যার মধ্যে আছে সাঈদ কুতুব রচিত “In the Shade of the Qur’an” and “Milestones”  বইটি। সাঈদ কুতুবকে অনেকে আল-কায়দা সহ আরো কয়েকটি জঙ্গীগ্রুপের অনুপ্রেরণা দানকারী হিসাবে দেখেন। এছাড়াও গবেষকদ্বয় আরো কিছু বই দেখতে পান যার মধ্যে আছে মোহাম্মদ ইবনে অবেদ আল ওয়াহাব এর গ্রন্থসমগ্র। ইবনে অবেদ আল ওয়াহাবকে ওয়াহাবী আন্দোলনের (মৌলবাদী) প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে গণ্য করা হয়। ওয়াহাবী আন্দোলন হচ্ছে ধর্মীয় আন্দোলন বা ইসলামের একটি শাখাগোষ্ঠী যা অতিচরমপন্থী।

ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গবেষকদ্বয় যদি কোন বেআইনী কার্যকলাপ যেমন সন্ত্রাসবাদের প্রচার বা সহিংস জঙ্গীবাদী তৎপরতা দেখতে পান তবে তাদের উচিৎ হবে তা যথযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা তাৎক্ষণিকভাবে। তারা যদি তা না করে তবে ধরে নিতে হবে যে, কানাডিয়ান মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোন প্রমাণ ছাড়া এটি একটি অপপ্রচার। তাদের বিরুদ্ধে ভয় ও অবিশ্বাস ছাড়ানো ছড়া এটি আর কিছুই নয়। এই জাতীয় গবেষণা আগুনের মধ্যে নল দিয়ে বাতাস দেওয়া মতই একটি উদ্যোগ। এবং এটি এমন একটি সময় করা হচ্ছে যখন কানাডায় মুসলিম বিদ্বেষ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কয়েকটি মসজিদে আগুন দেওয়া ও ভাঙ্গচূড়ের ঘটনা ঘটেছে।

ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আল নাদভী বলেন, কানাডার ইমামগন এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ যে কোন জঙ্গীবাদী ঘটনার নিন্দা জানিয়ে থাকে তাৎক্ষণিকভাবে। কিন্তু স্থানীয় মিডিয়া সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ছাপে না।

এদিকে গবেষকদ্বয়ের একজন  থমাস কুইগিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আমাদের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে আছি। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে কিছু মানুষ আছে যারা সত্য শুনতে চায় না বা সত্যকে সত্য বলতে নারাজ।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই গবেষণা মুসলিমদেরকে হেয় করার জন্য নয়। কানাডায় বাস্তবে কি ঘটছে সে বিষয়ে সরকার ও মিডিয়াকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। আমাদের প্রশ্ন হলো, কানাডার মসজিদ ও ইসলামী লাইব্রেরীতে আমরা যা পেয়েছি তা কি কানাডায় গ্রহণযোগ্য?

মসজিদের ছবি ছাপিয়ে বিপাকে টরন্টো স্টার : পরে ক্ষমা চাইল

এদিকে “The Lovers of Death? — Islamist Extremism in Our Mosques, Schools and Libraries” শিরোনামের গবেষণা পত্রটির নিউজ ছাপতে গিয়ে টরন্টোর পার্শবর্তী শহর ভনে অবস্থিত আহমেদীয়া মুসলিমদের মসজিদ বাইতুল ইসলাম এর ছবি ছাপে টরন্টো স্টার পত্রিকাটি। এই মসজিদটি কানাডায় আহমেদীয়া মুসলিমদের কেন্দ্রীয় মসজিদ। টরন্টোর অন্যান্য মসজিদের মত এই মসজিদের পক্ষ থেকেও বরাবরই জঙ্গীবাদের বিপক্ষে কথা বলা হয়ে আসছে। পরে আহমেদীয়া মুসলিমদের পক্ষ থেকে তাদের মসজিদের ছবি ছাপানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হলে কয়েকঘন্টা পরই অনলাইন সংস্করণ থেকে মসজিদের ছবিটি মুছে ফেলা হয় এবং এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়।