ট্রুডোকে সম্মাননা জানাতে কানাডা আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পিতা পিয়েরে ট্রুডোকে মরণোত্তর সম্মাননা জানাতে কানাডা সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে আগামী ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডা সফর করবেন তিনি।

আধুনিক কানাডার জনক দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বড় রকমের সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শরণার্থীদের মানবিক সাহায্য অনুমোদন করেছিলেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে পিয়েরে ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ কানাডার অনেক মিত্র দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। ওই স্রোতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পিয়েরে ট্রুডো কানাডার পার্লামেন্টের তিনজন এমপিকে শরণার্থী শিবিরে পাঠান। তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, নগদ অর্থসহ বিপুল পরিমাণ সহায়তা পাঠান।

পিয়েরে ট্রুডো শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপক্ষে দাঁড়িয়েই ঝুঁকি নেননি বরং নিজের দেশেও রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েছিলেন। কেননা কানাডার কুইবেক প্রদেশে ওই সময় স্বাধীনতার আন্দোলন চলছিল। গোটা কানাডায় কুইবেক রাজ্যের আন্দোলনকে বলা হয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। ফলে ওই সময়টাতে যে কোনো দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে কানাডার জনগণ ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করেছে। ফলে ওই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সামান্যতম সহানুভূতি প্রকাশ করাও রাজনৈতিকভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল।

শেখ হাসিনা ও জাস্টিন

পিয়েরে ট্রুডো ১৯৮৩ সালে একবার বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ওই সময় বাংলাদেশের জনগণ এ অকৃত্রিম বন্ধুকে বীরের মতো সংবর্ধনা দিয়েছিল। দিল্লি­তে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদান শেষে একদিনের জন্য ঢাকায় আসার সময় তার পুত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-৭ সম্মেলনের আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে জাপান সফরকালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপ করেন। জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ওই সময়েই জাস্টিনকে শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, কানাডা এসে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জাস্টিনের পিতার সম্মাননা জানিয়ে আসবেন।

পিয়েরে ট্রুডোকে সম্মাননা দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে সম্পূর্ণ সোনা দিয়ে একটি ক্রেস্ট তৈরি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ক্রেস্টের সোনা নিখাঁদ কিনা সেটিও পরীক্ষা করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি এ ক্রেস্টটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে দেখানোর জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের কানাডা সফরকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হোসেনও সফরসঙ্গী হিসেবে যাবেন।

মন্ট্রিয়লে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার পিতার অসামান্য অবদানের সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিয়লে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বিশ্ব সম্মেলন আহ্বান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে এ তিন ব্যাধি নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্ব নেতারাও এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক করবেন কিনা তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত চাইতে পারে বাংলাদেশ। নূর চৌধুরী বর্তমানে কানাডায় পালিয়ে আছেন। কানাডায় মৃত্যুদন্ডের বিধান না থাকায় তাকে ফেরত দিতে চায় না দেশটি।

ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

-যুগান্তর