ট্রুডো কাহিনী : যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান
নভেম্বর ১০, ২০১৫
প্রবাসী কন্ঠ প্রতিবেদন : জাস্টিন ট্রুডোর বয়স তখন মাত্র চার মাস। সময়টা ছিল ১৯৭২ সাল। অটোয়াতে এক রাষ্ট্রিয় সফরে এসেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। সফরকালে এক রাষ্ট্রিয় ভোজসভায় মিলিত হয়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডো ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ট্রুডোর সঙ্গে নিক্সনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ভাল ছিলনা। কিন্তু সেদিন সেই কোলের শিশুটিকে দেখে প্রেসিডেন্ট নিক্সন মজা করে একটি ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই শিশুটি একদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবে। ৪৩ বছর পর সেই মজা করে বলা ভবিষ্যতবাণীটি অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল! জাস্টিন ট্রুডো সত্যি সত্যি কানাডার প্রধানমন্ত্রী হলেন। সরকারও গঠন করলেন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। আর তিনিই হলেন কানাডার ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী যার বাবাও ছিলেন একজন প্রধানমন্ত্রী।
সুদর্শন ও সুঠাম দেহের অধিকারী জাস্টিন ট্রুডোর বয়স ৪৩। কেউ কেউ মজা করে বলছেন সেক্সিয়েস্ট প্রাইম মিনিস্টার অন আর্থ। জন্মেছিলেন বিশেষ একটি দিনে। ২৫ ডিসেম্বর। খ্রীস্টানদের বড় দিন। যীশু খ্রীস্টের জন্মদিন। এই ৪৩ বছর বয়সেই জাস্টিন ট্রুডো কানাডার প্রধান মন্ত্রী হয়ে দৃষ্টি কেড়েছেন কানাডাসহ বিশ্বের অনেক মানুষের।
জাস্টিন ট্রুডো অল্প বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন তা নয়। তিনি এমন এক পিতার সন্তান যার নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আধুনিক কানাডার ইতিহাস। তিনি হলেন কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের এলিয়েট ট্রুডো। কানাডার মাল্টিকালচারালইমজের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা। তবে পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি বা দলেরও প্রধান হননি। যেমনটি হয় পশ্চাদপদ ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমুহে। জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল দলের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন নিজ যোগ্যতাবলে এবং কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন নিজ কর্মগুনেই। পরাজিত স্টিফেন হারপার অবশ্য জাস্টিন ট্রুডোকে নানাভাবে অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন নির্বাচনের আগে তার নির্বাচনী প্রচারণার বিজ্ঞাপন গুলোতে। কিন্তু জনগণই প্রমাণ করে দিয়েছেন কে অযোগ্য আর কে যোগ্য।
জাস্টিন ট্রুডো রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই নানাভাবে নানা উপলক্ষে মিডিয়ার আলোচনায় এসেছেন বারে বারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর ছেলে এই পরিচয় ছাড়াও তার নিজেরও একটা ক্যারিশমাটিক পরিচিতি গড়ে উঠেছিল।
জাস্টিান ট্রুডো পিয়ের ট্রুডোর বড় ছেলে। জাস্টিনের মায়ের নাম মার্গারেট ট্রুুডো। পিয়ের ট্রুডো মৃত্যুবরণ করেন ২০০০ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর। মা মার্গারেট এখনো জীবিত। মার্গারেটও রাজনৈতিক পরিবারেরই মেয়ে। তাঁর জন্ম ভেঙ্গুভারে। বাবা জেমস সিনক্লেয়ার ছিলেন লিবারেল পার্টির এমপি। মৎস্য ও সমুদ্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সাইমন ফ্রেসার ইউনিভারসিটিতে ইংরেজী সাহিত্যে লেখাপড়া করেন মারর্গারেট। লেখালেখি, অভিনয়, ফটোগ্রাফী করা ছিল তার শখ। তিনি টিভি টক শো’র হোস্টও ছিলেন।
জাস্টিন ট্রুডো যে শুধু রাজনীতিতেই সফল তা কিন্তু নয়। প্রেমিক পুরুষ হিসেবেও একজন সফল ব্যক্তি। প্রেম করেই বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীর নাম সোফি গ্রেগওয়ার। জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৪ এপ্রিল। সোফিকে জাস্টিন চিনতেন সেই শৈশব থেকেই। কারণ তিনি ছিলেন জাস্টিনের ছোট ভাই মিশেল ট্রুডোর সহপাঠীনি। তবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে আরো অনেক পরে। সেটি ছিল ২০০৩ সালের ঘটনা যখন দুজনে একটি চ্যারিটি প্রগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন থেকেই একজন আরেকজনের প্রতি কৌতুহলী হয়ে উঠেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তা গভীর পরিনয়ে পরিনত হয়। ২০০৪ সালের অক্টোবরে এঙ্গেজমেন্ট এবং ২০০৫ সালের মে মাসে বিয়ে। বর্তমানে তারা তিন সন্তানের বাবা-মা।
সোফি তার শ্বাশুরীর মতোই টিভি হোস্ট ছিলেন। বিভিন্ন চ্যারিটি কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত। তার মা হাসপাতালের সেবিকা। বাবা স্টকব্রোকার। মন্ট্রিয়লেই জন্ম এবং সেখানেই তিনি বড় হয়ে উঠেন। ম্যাকগিল ইউনিভারসিটিতে পড়েছেন কামার্সে। উদ্দেশ্য ছিল বাবার পেশায় যোগ দিবেন। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে কমিউনিকেশন বিষয়ে ভর্তি হন এবং মন্ট্রিয়ল ইউনিভারসিটি থেকে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন।
ক্যারিয়ারের শুরুতে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার রিসেপশনিস্ট কাম এ্যাসিস্টেন্ট ছিলেন। পরে একাউন্ট ম্যানেজার পদে উন্নীত হন। কিন্তু সেই পেশা বেশীদিন ভাল লাগেনি। বছর তিনেকের মাথায় তিনি মিডিয়া জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেন। রেডিও টেলিভিশনের সাংবাদিকতা জগতের সঙ্গে নিজেকে ক্রমশ জড়িয়ে ফেলেন। পাশাপাশি টিভি অনুষ্ঠানের হোস্ট হিসেবেও কাজ করেন।
জাস্টিন ট্রুডো কানাডায় নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। তার গায়ে রয়েছে টাট্টু, গাঁজা বৈধ করার পক্ষে তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। বিরোধীরা তার এই গাঁজা বৈধ করার বিষয়টি নিয়ে নানান রকম ঠাট্রা করে আসছেন। তবে জরীপে দেখা গেছে সিংহভাগ কানাডিয়ান গাঁজাসেবনকে বৈধ করার পক্ষে অথবা অন্তত এটিকে অপরাধ হিসেবে না দেখার পক্ষে। ইতিমধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশ এই গাঁজাসেবনকে বৈধতা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলরেডো, ওয়াশিংটন স্টেট এবং আলাস্কা একে বৈধতা দিয়েছে আরো আগেই।
জাস্টিন ট্রুডো একজন সৌখিন বক্সারও। বছর দুই আগে কনজারভেটিভ দলের সিনেটর প্যাট্রিক ব্রাজিউর সঙ্গে বক্সিং খেলতে গিয়ে তার নাক ফটিয়েছিলেন। অটোয়াতে অনুষ্ঠিত ঐ খেলাটি ছিল ক্যান্সার গবেষণায় ফান্ড রেইজিং এর জন্য।
স্বতস্ফূর্ত চরিত্রের এই যুবা প্রধানমন্ত্রীর শৈশব জীবনে কিছুটা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলাও দেখা দিয়েছিল। কারণ তার বাবা পিয়ের ট্রুডো এবং মা মার্গারেটের সংসার জীবন খুব মসৃণ ছিল না যদিও তারা ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন একজন আরেকজনকে। দুজনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল অনেক বেশী। তারা যখন বিয়ে করেন তখন ট্রুডোর বয়স ছিল ৫২ এবং মার্গারেটের বয়স মাত্র ২২। ৩০ বছরের ব্যবধান। ট্রুডোর অবশ্য একটি সুবিধা ছিল। তিনি বয়সের তুলনায় দেখতে অনেক ইয়ং ছিলেন। এবং মহিলারা নাকি সহজেই তার প্রেমে পড়ে যেতেন। আর ট্রুডোও এ ব্যাপারে প্রতিদান দিতে কার্পন্য করতেন না।
পিয়ের ট্রুডো যখন ১৯৬৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তখনও তিনি অবিবাহিত। মার্গারেটের সঙ্গে অবশ্য তার আগে থেকেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ। শুরুতে এই দম্পত্তির মধ্যে কোন সমস্যা ছিল না। ভালই চলছিল সবকিছু। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই মার্গারেটের বিরক্ত হবার পালা শুরু হয়ে যায়। কারণ, পিয়ের ট্রুডো সরকারী কাজ ও রাজনীতি নিয়ে বেশী ব্যস্ত থাকতেন। সন্তানদের দেখাশুনার পুরো দায়িত্বই তখন মার্গারেটকে করতে হচ্ছিল। একপর্যায়ে কিছুটা বিষন্ন ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মাদকাশক্তও। প্রধানমন্ত্রীর লাগেজে করে মাদক আনার দায়ে একবার নিজউ হেডলাইনও হন মার্গারেট। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর টেড কেনেডির সঙ্গে সম্পর্কেও জড়িয়ে পরেন। এক পর্যায়ে ট্রুডোর সঙ্গে মার্গারেটের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সময়টা ছিল ১৯৭৭। ছাড়াছাড়ি হলেও আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয়নি তখনো। মার্গারেট তখন বেপোরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন আদালতের মাধ্যমে তিন সন্তানের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পান ট্রুডো । ছাড়াছাড়ির পর মার্গারেটকে ট্রুডো কোনরকম স্পাউজাল সাপোর্ট দেননি। বছর দুই পরে যখন ট্রুডো নির্বাচনে পরাজিত হন তখন সেই খবর পেয়ে মার্গরেট নিউয়র্কের একটি নাইটক্লাবে নৃত্য করছিলেন। সেই নৃত্যের ছবি তখন অনেক পত্রিকার ফ্রন্ট পেজে ছাপা হয়েছিল ফলাও করে। তাদের আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয় ১৯৮৪ সালে। এর কিছুদিন পরই মার্গারেট বিয়ে করেন অটোয়ার রিয়েল এস্টেড ডেভলাপার ফ্রেইড কেম্পারকে। এই ঘরে মার্গারেটের দুই সন্তানের জন্ম হয়।
মার্গারেটের জীবনে আরেকটি ধাক্কা আসে ১৯৯৪ সালে যখন তার প্রথম ঘরের তৃতীয় সন্তান মিশেল ট্রুডো ভেঙ্কুভারের একটি পাহাড়ে স্কি করার সময় তুষারধ্বসের তলায় পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ঐ ঘটনায় তিনি খুবই বিমর্ষ হয়ে পরেছিলেন এবং এটি একপর্যায়ে তার দ্বিতীয় বিয়ের ডিভোর্সের কারণ হয়ে দাড়ায়।
মার্গারেট অবশ্য পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন যে পিয়ের ট্রুডোর সঙ্গে ডিভোর্স হলেও তার প্রতি ভালবাসার কমতি ছিল না। ২০০০ সালে তার সাবেক স্বামী ট্রুডোর মৃত্যুর সময় তিনি তার শয্যাপাশেই ছিলেন দুই ছেলে জাস্টিন ও আলেজান্দারকে সাথে নিয়ে।
২০০৬ সালের মে মাসে মার্গারেট সবাইকে জানান যে তিনি বাইপোলার ডিজঅর্ডার নামক এক মানসিক রোগে ভুগছিলেন। পরে ভাল হয়ে তিনি মানসিক রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ এসোসিয়েশনের একজন অনারারী পেট্রোন। কানাডায় মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ করার জন্য মার্গারেট ২০১৩ সালে সম্মানসূচক ডিক্টর অব ল এর ডিগ্রি পান অন্টারিওর ওয়েস্টার্ন ইউনিভারসিটি থেকে।
জাস্টিন ট্রুডো কিন্তু পারিবারিক এই উত্থান-পতন বা দুর্যোগের মধ্য দিয়ে জীবন অতিক্রান্ত করলেও বিপথগামী হননি কখনো যেটি সাধারণত দেখা যায় ভঙ্গুর পরিবারের ক্ষেত্রে। বরং কঠিন মনোবল ও স্বতস্ফূর্ত মন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন বরাবরই। গ্রাজুয়েশন লাভের পর ভেঙ্গুভারে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। তার বাবার মৃত্যুর পর ক্রমশ রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন। ২০০৮ সালে মন্ট্রিয়লের পাপিনিউ থেকে প্রতিযোগিতা করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে লিবারেল পার্টির প্রধান নেতা নির্বাচিত হন। আর ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের নির্বাচনে যেখান লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৬ টি সেখানে এবারের নির্বাচনে তার দল আসন পেয়েছে ১৮৪টি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭০টি আসনের। তিনি তারচেয়েও ১৪টি বেশী আসন পান।
জাস্টিন ট্রুডোর পারিবারিক ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। তার দাদা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ফরাসী বংশোদ্ভূত। আর নানা ছিলেন এমপি এবং মন্ত্রী। আইরিশ বংশোদ্ভূত। তার নানার বাড়ীর পূর্বপুরুষদের কেউ কেউ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ছিলেন ব্রিটিশ কলনিয়াল যুগে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মেজর জেনারেল উইলিয়াম ফারকুআর। সিঙ্গাপুরে ছিল তার পোস্টিং।
জাস্টিন ট্রুডোর সৎ ভাই বোনের সংখ্যা তিন জন। মার্গারেটের দ্বিতীয় বিয়ের পর ঐ ঘরে জন্ম নেয় দুই জন। পিয়ের ট্রুডো বিচ্ছেদের পর আর বিয়ে করেননি। তবে রিলেশনশীপে জড়িয়েছিলেন এক মহিলার সঙ্গে। ঐ ঘরে জন্ম নেয় একজন।
জাস্টিন ট্রুডো রাজনীতি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও এডভোকেসী গ্রুপের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপর যখন নির্বাচনের ঘোষণা দেন তখন জাস্টিন ট্রুডো মন্ট্রিয়লের পাপিনিউ এলাকায় নিজের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন নির্বাচন প্রস্তুতি হিসেবে। প্রচারণা শুরুর মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হয়েছিল। তবে নিরাশ হতে হয়নি। ব্লক কুইবেকোর ক্ষমতাসীন প্রার্থীকে পরাজিত করে ঐ এলাকার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। সেই সময় কানাডার প্রভাবশালী পত্রিকা গ্লোব এন্ড মেইল এর প্রধান সম্পাদক এডওয়ার্ড গ্রিনস্পন তার সম্পাদকীয়তে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন এই বলে যে, অন্য কয়েকজন নতুন নির্বাচিত এমপির মতো জাস্টিন ট্রুডোরও সম্ভাবনা রয়েছে আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হবার। উল্লেখ্য যে, এই পত্রিকাটি কনজারভেটিভ ঘেষা হয়েও লিবারেল এর জাস্টিনের ব্যাপারে এই ভবিষ্যতবাণী করেছিল।
২০১১ সালের নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডো আবারো নির্বাচিত হন একই এলাকা থেকে। কিন্তু পার্টির সার্বিক জয়ের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। তৃতীয় স্থানে চলে যায় দলটি মাত্র ৩৪টি আসন পেয়ে। ঐ সময়ে দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাইকেল ইগনাটিফ। নির্বাচনে ভড়াডুবির পর মাইকেল পদত্যাগ করেন দলের নেতৃত্ব থেকে। তখন অনেকেই জাস্টিনকে নেতৃত্ব নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি রাজী হননি। পরে বব রে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু ২০১৩ সালে জাস্টিন ট্রুডো পার্টি লীডার পদে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন এবং বিপুল সমর্থন পেয়ে পার্টি লীডার পদে জয়ী হন। এর পরের ইতিহাস অতি সম্প্রতিক এবং সবাই তা জানেন।
জাস্টিন ট্রুডো একদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবেন এরকম ভবিষ্যতবাণী প্রথমে করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। সেটি ছিল নিছকই মজা করে বলা। এরপর বাস্তব অবস্থার বিচারে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন গ্লোব এন্ড মেইলের প্রধান সম্পাদক এডওয়ার্ড গ্রিনস্পন। তাছাড়া কানাডার সাধারণ মানুষেরও ধারণা ও বিশ্বাস ছিল জাস্টিন ট্রুডো একদিন সত্যিই কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। শেষ পর্যন্ত হলোও তাই।
এখন ভবিষ্যতের দিকে সকলের চোখ। কতখানি সফল হতে পারবেন অতীতের এক সফল ও ক্যরিসমাটিক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর সন্তান জাস্টিন ট্রুডো? পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত- সময়ই তা বলে দিবে। তথ্য সূত্র ও ছবি : অনলাইন ও উইকিপিডিয়া